মিস ব্রুস্টার বললেন, ভালো ব্যায়াম, আমার নৌকো নিয়ে বেরোনো হলো না। নৌকো চালানোর চেয়ে ভালো ব্যায়াম আর নেই, পেটের পেশীর পক্ষে।
নিজের স্ফীত মধ্যপ্রদেশের দিকে পোয়ারোর বিষণ্ণ দৃষ্টি ধীরে ধীরে নেমে এল।
মিস ব্রুস্টার সেটা লক্ষ্য করে সান্ত্বনার সুরে বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, রোজ যদি নৌকো নিয়ে বেরোন, আপনার ভুড়ি দিন কয়েকের মধ্যেই মিলিয়ে যাবে।
আমি অত্যন্ত অপছন্দ করি ঘোট নৌকো, মাপ করবেন। মাদমোয়াজেল চোখ বুজে শিউরে উঠলেন ছোট বড় সব রকমের নৌকো। মোটেই সুখের নয় সমুদ্রের দুলুনি। পুকুরের মতো শান্ত সমুদ্র আজ। উত্তর দিলেন পোয়ারো প্রত্যয়ের সুরে-সমুদ্র বলে সত্যি কিছু নেই, মাদমোয়াজেল। সেখানে সব সময় রয়েছে আলোড়ন। মেজর ব্যারী বললেন, যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে বলবো-সমুদ্র রোগের দশভাগের ন ভাগই হচ্ছে স্নায়ুর ব্যাপার। মেজর ঠিক বলেছি তো, সামান্য হেসে ধর্মযাজক বললেন, একজন অভিজ্ঞ নাবিকের কথা শুনুন। ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সমুদ্র-রোগ জিনিষটাকে মনে একেবারেই আমল দেবেন না। আমার মত এই সমুদ্র রোগটা ভারী অদ্ভুত। মিস ব্রুস্টার আনমনা সুরে বললেন, এ ভারি অন্যায়, সবার হয় না কারো কারো হয় কেন? নিজের স্বাস্থ্যের উপর কারোর হাত নেই। রীতিমতো রুগ্ন চেহারার লোকও দক্ষ। আমাকে একজন নাবিক বলেছিলো। শিরদাঁড়ার কি একটা রোগের সঙ্গে নাকি এটার যোগ আছে। আবার অনেকে উঁচু জায়গা একেবারে সহ্য করতে পারে না। আমিও ঐ দলের কিন্তু মিসেস রেডফার্মের আরও অবস্থা খারাপ। এই তো সেদিন হারফোর্ডের পাহাড়ি পথে মাথাঘুরে গিয়ে তিনি আমাকে জড়িয়েই ধরলেন। তাঁর মুখেই শুনেছি, মিলান গির্জা পথে মাঝ-সিঁড়িতে আটকে পড়েছিলেন। চিন্তা না করেই উঠে গেছেন ওঠবার সময়। বিপদ হয়েছে নামার সময়।
মন্তব্য করলেন স্টিফেন লেন, পিক্সি কোভে নামার মইটা ব্যবহার না করাই উচিত, মুখভঙ্গী করলেন, মিস ব্রুস্টার কাওয়ান আর মাস্টারম্যানদের ছেলেরা দৌড়ে ওঠানামা করতে ভালোবাসে। ওটাকে আম ভয় করি। ছোটদের পক্ষে মইটা ঠিক আছে।
মিসেস রেডফার্ন স্নান সেরে ফিরে আসছেন, লেন বললেন।
উনি সূর্যস্নান করেন না। ওঁকে মঁসিয়ে পোয়াবোর পছন্দ হওয়া উচিত। মিস ব্রুস্টার মন্তব্য করলেন।
তরুণী মিসেস রেডফার্ন মাথা থেকে টুপিটা খুলে চুল ঝাড়ছিলো। মাথার চুল ছাইরঙা, ত্বকের রংও চুলের সঙ্গে মানানসই। অত্যন্ত সাদা হাত পায়ের রং। অন্যদের তুলনায় রোদে কম ভাজা হয়েছেন, তাই না। মেজর ব্যারী চাপা হাসিতে মুখ খুললেন। ক্রিস্টিন রেডফার্ণ বেলাভূমি ধরে এগিয়ে এলো, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলো দীর্ঘ স্নান-পোশাকে নিজেকে আবৃত করে। মুখের ছায়া সুন্দর গম্ভীর হাত পায়ের গড়ন ছোট হলেও নিখুঁত। স্নান পোষাকটাকে ভালো করে জড়িয়ে ওদের পাশে এসে বসলো।
আপনি মঁসিয়ে পোয়ানোর মূল্যবান প্রশংসা অর্জন করেছেন। মিস ব্রুস্টার বললেন। তিনি একদম পছন্দ করেন না সূর্যস্নান করা। কসাইয়ের দোকানে সাজানো মাংসের মতো দেখায় যদি সত্যিই সূর্যস্নান করতে পারতাম।
ক্রিস্টিন রেডফার্ন বিষণ্ণভাবে হাসলো, বললো, আমার গায়ের রং বাদামী হয় না, ফোস্কা পড়ে শুধু ফোঁটা ফোঁটা দাগ পড়ে যায় বিশ্রী, সারা হাতে।
মিস স্টার বললেন, মিসেস গার্ডেনারের মেয়ে আইরিনের মতো সারা গায়ে চুল গজানো তবু ভালো, সপ্রশ্ন দৃষ্টির উত্তরে ক্রিস্টিন বলে চলেন, আজ সকালে দারুণ মেজাজে ছিলেন মিসেস গার্ডেনার। এক নাগাড়ে একেবারে চালিয়ে গেছেন। তাই না ওডেল? হ্যাঁ সোনা। একটু থেমে গিয়ে-মঁসিয়ে পোয়ারো আমার মনে হচ্ছে, একটা চালাকি করলে ওঁর সঙ্গে পারতেন। করলেন না কেন? আপনি এখানে একটা খুনের সমাধান করতে এসেছেন বলবেন না কেন, সেই হোটেলের অতিথিদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে উন্মাদ হত্যাকারীকে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, বললেন, পোয়ারো। সেটা হয়তো তিনি বিশ্বাস করে বসতেন।
মেজর ব্যারী সশব্দে হেসে উঠলেন, নির্ঘাত বিশ্বাস করতেন তিনি।
মিসেস গার্ডেনারের মতো মানুষও বিশ্বাস করতেন এমন খুনের কথা। কারণ এটা ঠিক জায়গা নয় আপনি মৃতদেহ পাবেন। এমিলি ব্রুস্টার বললেন, আমার মনে হয় না।
সামান্য নড়েচড়ে বসলেন পোয়ারো চেয়ারে। মাদমোয়াজেল, প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, কেন নয়, আমার স্মাগলার্স দ্বীপে মৃতদেহ পাওয়া কোনো অসুবিধেটা দেখলেন আপনি।
কতগুলো জায়গা খুনের পক্ষে উপযুক্ত নয়, এমিলি ব্রুস্টার বললেন, নিজের বক্তব্যকে ঠিক ভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে চুপ করে গেলেন তিনি।
এরকুল পোয়ারো বললেন, জায়গাটা স্বপ্নময় মানছি। শান্তি রয়েছে এখানে গভীর নীল সমুদ্র রয়েছে, উজ্জ্বল সূর্যের কিরণ, ভুলে যাচ্ছেন আপনি। পৃথিবীতে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে অশুভ শক্তির ছায়া। মিস ব্রুস্টার নড়েচড়ে বসলেন, ধর্মযাজক ঝুঁকে এলেন সামনে। তার গভীর নীল চোখ চকচক করে উঠলো।
কাঁধ ঝাঁকালেন মিস ব্রুস্টার। ও হ্যাঁ, সে কথা মিথ্যে নয়। কিন্তু তবুও আমার মনে হচ্ছে, এ জায়গাটা ঠিক উপযুক্ত নয় কোনো অপরাধ সংঘটিত হবার পক্ষে।
মাদমোয়াজেল, একটা কথা ভুলে যাচ্ছেন।