হ্যাঁ, ব্ল্যাকমেলার কখনও তার শিকারকে খুন করে না। কিন্তু মিসেস মার্শাল আজ সেই অজ্ঞাত ব্ল্যাকমেলারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন এবং সঙ্গত কারণেই তিনি চাননি, এ ঘটনা তার স্বামী বা রেডফার্ন জানতে পারুক। উপযুক্ত কাজের উপযুক্ত স্থানই বটে। মিসেস মার্শাল তার নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাস মতো ভেলায় ভেসে পড়লেন। তিনি পিক্সি কোভে গোপন সাক্ষাৎকারের জন্য রওনা হন।
পোয়ারো বলেন, হ্যাঁ, গোপন সাক্ষাৎকারের পক্ষে জায়গাটা আদর্শ স্থান। দ্বীপের দিক থেকে পৌঁছবার একমাত্র পথ, ঝোলানো ইস্পাতের মইটা। ঝুলন্ত পাহাড়ের নিচে বলে ওপর থেকে বেলাভূমি থেকে পাহাড়ের আড়ালে। তাছাড়া ওখানে না কি একটা গুপ্ত গুহা আছে। যার প্রবেশ পথ পাওয়া মুস্কিল। সেখানে যে কেউ আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে।
ওয়েস্টন বললেন, হ্যাঁ, পিক্সি গুহার কথা শুনেছি বটে।
কলগেট বললেন, জায়গাটা আমাদের–একবার সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা উচিত, হয়তো কোনো সূত্র পেলেও পেতে পারি।
হ্যাঁ, কলগেট, তোমার কথাই ঠিক। মিসেস মার্শাল পিক্সি কোভে কেন গিয়েছিলেন? সেখানে কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
হোটেলের চাকর-বাকরদের বাদ দিয়ে থাকেন মার্কিন ভদ্রলোক গার্ডেনার, মেজর ব্যারী, মিঃ ব্ল্যাট, ধর্মযাজক স্টিফেন। মার্কিন ভদ্রলোক তো সারাটা সকাল সমুদ্রতীরেই ছিলেন, শুধু মাঝে একবার স্ত্রীর জন্য একটা উলের গোছ নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। মেজর ব্যারী আজ সকাল দশটায় বেরোন, ফিরে আসেন দেড়টা নাগাদ।মিঃ লেন বেরোন আরও সকালে। আটটার সময় তিনি প্রাতঃরাশ সেরে বলেন একটু পদব্রজে ভ্রমণে যাচ্ছেন। মিঃ ব্ল্যাট রোজকার মতো সাড়ে নটা নাগাদ নৌকা নিয়ে বেরোন। এখনো কেউ ফেরেননি।
ইনসপেক্টর বলেন, নৌকো নিয়ে বেরিলয়েছিলেন, আমাদের সন্দেহের কাঠামোয় এই ভদ্রলোক চমৎকার মানিয়ে যাচ্ছেন, স্যার।
আচ্ছা, এই ব্ল্যাট ভদ্রলোকের সঙ্গে একবার কথা বলবো। একবার রোজামন্ড ডার্নলি আর ওই ব্রুস্টার মহিলা, যিনি রেডফার্নের সঙ্গে মিসেস মার্শালের মৃতদেহ আবিষ্কার করেন।
বেশ বুদ্ধিমতী মহিলা স্যার। পরিচ্ছন্ন পরিপাটি।
এই মৃত্যু সম্পর্কে তার বক্তব্য কি?
যদ্দুর জানি কোনো খবর তার কাছে নেই। এছাড়া রয়েছেন মার্কিন ভদ্রলোক ও তার স্ত্রী।
ওদের সবাইকে এখানে আসতে বল; যত তাড়াতাড়ি পার ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা যাক। হয়তো এই ব্ল্যাকমেল সম্পর্কে কিছু জানা যাবে।
.
৭.৩
মিসেস গার্ডেনার তার বিশদ ব্যাখ্যা শুরু করলেন। আমাদের অবস্থাটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কর্নেল, এই ঘটনায় আমি মানসিক আঘাত পেয়েছি। আর মিঃ গার্ডেনার আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে বরাবরই সতর্ক–তিনি আমাকে বললেন, ব্যারি তুমি একা যাবে না। আমি সঙ্গে যাবো। তদন্তের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পুলিশের পদ্ধতি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও উন্নতমানের আমি তা বিশ্বাস করি। যখন স্যাভয় হোটেলে আমার ব্রেসলেট হারিয়ে গেলো তখনকার তদন্তের সময় আমি বুঝতে পেরেছি। ব্রেসলেটটা সত্যি হারায়নি, আমি ভুল করে রেখেছিলাম। আর মিঃ গার্ডেনারও আমার সঙ্গে একমত হবেন, ব্রিটিশ পুলিশকে সাহায্য করার জন্য আমরা সর্বদাই উদগ্রীব।
কর্নেল ওয়েস্টন বলেন, মিসেস গার্ডেনার, শুনলাম আপনি ও আপনার স্বামী সারা সকালটা আজ সমুদ্রতীরেই কাটিয়েছেন?
হ্যাঁ, সেখানেই তো ছিলাম আমরা–কি সুন্দর, শান্ত ছিলো আজকের সকালটা। আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। বাঁক পেরিয়ে ওই নির্জন সৈকতে কি কাণ্ডটাই না ঘটে চলেছে।
মিসেস মার্শালকে আজকে দেখেছেন কি?
না, সেইজন্যই তো ওডেলকে বলছিলাম–মিসেস মার্শালকে তো দেখছি না। প্রথমে তার স্বামী খোঁজ করল, তারপর এলো ঐ সুদর্শন যুবকটি। সে ছেলেটির যে কি অধৈৰ্য্য কি বলবো। মিসেস মার্শালকে আমরা সাংঘাতিক মেয়ে বলে মনে করি। ক্যাপ্টেন মার্শালের মতো এমন চমৎকার ভদ্রলোক কি করে যে ওকে বিয়ে করে বসলেন, তাছাড়া তার মেয়ে এখন বড় হয়েছে। ক্যাপ্টেন মার্শালের যদি সামান্যতম বাস্তববুদ্ধি থাকতো। তাহলে তিনি ডার্নলির মতো মহিলাকেই বিয়ে করতেন। রোজামন্ড ডার্নলির দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন, তার বুদ্ধির অভাব নেই। যে কোনো কাজ পরিকল্পনা মাফিক শেষ করবে। আমি যে তাকে কতখানি শ্রদ্ধা করি। মিস ডার্নলি তো মার্শালের প্রেমে অন্ধ। শুনেছি ওরা নাকি ছোটবেলা থেকেই পরস্পরকে চিনতেন। আমাকে সংকীর্ণমনা ভাববেন না, আমি অভিনয় পছন্দ করি। কিন্তু ওই মেয়েটার মধ্যে কোথায় যেন একটা অশুভ ছায়া লুকিয়েছিল।
কর্নেল ওয়েস্টন মরিয়া হয়ে বললেন, আচ্ছা ধন্যবাদ। মিসেস গার্ডেনার তাহলে আপনারা কেউই কিছু দেখেননি।
উঁহু-সেরকম কিছুই না। মিসেস মার্শাল বেশিরভাগ সময়েই রেডফার্নের সঙ্গে ঘুরতো সে তো সবাই জানে।
কিন্তু তার স্বামী কি তাতে অসন্তুষ্ট হতেন?
ক্যাপ্টেন মার্শাল খুব চাপা স্বভাবের, বাইরে থেকে দেখে তার মনের কথা বোঝা যায় না।
.
৭.৪
মেজর ব্যারী যে সত্যি সত্যিই বিস্মিত ও আতঙ্কিত তা তার স্বরেই বোঝা যাচ্ছিল, যে কোনোভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারলে আমি খুশি হবো। অবশ্য পাত্রপাত্রী কারো সঙ্গেই অমার পরিচয় নেই, আমি কিছু জানি না। বস্তুত এই ঘটনাটা আমাকে সিমলার একটা ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। লোকটির নাম ছিলো রবিনসন নাকি ফ্যালেকনার। সে ছিলো ইস্ট উইস্টশ অথবা নর্থ সারেস-এর লোক। শান্তবিষ্ট মানুষ বইয়ের পোকা–মনে হয় একেবোরে ভিজে বেড়ালটি। একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ নিজের স্ত্রীকে গলা টিপে ধরে। বউটা না কি অন্য কার সঙ্গে ইয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলো। অল্পের জন্য মেয়েটা প্রাণে বেঁচে যায়। আমরা কখনো ভাবিনি, লোকটার ভেতর এত তেজ আছে।