এরকুল পোয়ারো বললেন, প্রথমে বলুন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি কি করেছেন?
আজ সকালে উঠে প্রাতঃরাশ সারতে যাওয়ার পথে আমি লিন্ডা মার্শালের ঘরে গিয়ে ওর সঙ্গে গাল কোভে যাওয়ার কথা ঠিক করি। সাড়ে দশটায় নিচে হলঘরে আমরা দেখা করবো কথা হয়।
আপনার স্বামী তো প্রাতঃরাশেই স্নান সারেন; আপনি প্রাতঃরাশের আগে স্নান করেননি?
না। আমি একটু শীতকাতুরে। রোদের তাপে সমুদ্র বেশ গরম না হওয়া পর্যন্ত আমি জলে নামি না।
আচ্ছা, আপনি যখন লিন্ডা মার্শালের ঘরে যান, তখন কটা বাজে।
সাড়ে আটটা বা একটু বেশি হবে।
মিস মার্শাল কি তখন ঘুম থেকে উঠেছিলেন?
হ্যাঁ, ও কোথায় যেন বেরিলয়েছিলেন, ফিরে এসে বললো, ও নাকি স্নান করতে গিয়েছিলো।
তারপর?
তারপর নিচে থেকে প্রাতঃরাশ সেরে ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে আমরা হোটেল ছেড়ে বেরিলয়ে পড়ি।
তখন কটা বাজে?
সাড়ে দশটা হবে। তারপর গালকোভে গিয়ে দ্বীপের পূর্বদিকে, সমুদ্রের কোণ ঘেঁষে যে জায়গাটা আছে সেখানে গিয়ে আয়েস করে বসে ছবি আঁকতে শুরু করি আর লিন্ডা সূর্যস্নানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আপনারা ফিরলেন কখন?
পৌনে বারোটা নাগাদ। কারণ বারোটায় আমার টেনিস খেলার কথা ছিলো।
আপনার সঙ্গে ঘড়ি ছিলো?
না, আমি লিন্ডাকেই সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারপর ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে হোটেলে ফিরে আসি। আর লিন্ডা সমুদ্রে স্নান করতে নামে।
আপনি সৈকত ছেড়ে আসার আগেই কি লিন্ডা মার্শাল জলে নেমেছিলেন?
একটু ভেবে দেখি। ও সমুদ্রতীর ধরে ছুটে গেলো। আমি বাক্স বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালাম-হ্যাঁ, ফিরে আসার সময় ওর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার শব্দ শুনেছিলাম।
এ নিয়ে আপনার কোনো সন্দেহ নেই তো মাদাম? বলে যান মিসেস রেডফার্ন–তারপর?
আমি হোটেলে ফিরে খেলার পোশাক পরে টেনিস কোর্টে গিয়ে অন্যান্যদের সাথে দেখা করি।
অন্যান্যরা বলতে?
ক্যাপ্টেন মার্শাল, মিঃ গার্ডেনার এবং মিস ডার্নলি। আমরা দু সেট শেষ করে সবে তৃতীয়টা ধরেছি। এমন সময় খবরটা এলো-মানে মিসেস মার্শালের মৃত্যু সংবাদটা।
পোয়ারো বললেন, খবরটা শুনে আপনার কি মনে হলো?
খবরটা শুনে–ঘটনাটা একটা জঘন্য বীভৎস ব্যাপার বলে মনে হয়েছিলো।
ক্রিস্টিন চকিত নয়নে পোয়ারোর দিকে তাকায়। ওর দৃষ্টিতে অনুরোধের ইশারা।
মাদাম, বুদ্ধিমতী বিচারবুদ্ধিসম্পন্না মহিলা হিসেবে বলছি। মিসেস মার্শাল কি ধরনের মহিলা ছিলেন, সে সম্পর্কে কিছু যদি বলেন।
আপনি কি বলতে চান সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। মিসেস মার্শালের আকস্মিক মৃত্যুতে আমি অবাক হইনি বরং আকস্মিক আঘাত পেয়েছিলাম। কিন্তু উনি ছিলেন সেই ধরনের মহিলা
পোয়ারো বললেন, সেই ধরনের মহিলা যাদের জীবনে এই পরিণতিই স্বাভাবিক…হ্যাঁ মাদাম, আজ সারা সকাল এ ঘরে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও চরম সত্য বক্তব্য এটা। মাদাম, মৃতা মিসেস মার্শাল সম্পর্কে আপনি সত্যি সত্যি কি ভাবেন, বলুন তো।
কিন্তু আমি কিই বা বলবো? উনি ছিলেন সেই ধরনের মহিলা যারা আমার মতে একেবারে অপদার্থ। ওর মন বলে কিছু ছিলো না। বুদ্ধি তো দূরের কথা। শুধু ভাবতেন পুরুষ, পোশাক ও প্রেম। উনি ছিলেন সমাজের এক স্বার্থপর পরগাছা মাত্র। পুরুষের কাছে ওর আকর্ষণ ছিলো ওর একমাত্র গুণ। ওর মতো চরিত্রের মেয়েরাই ব্ল্যাকমেল–ঈর্ষা প্রভৃতি নোংরা আবেগসংক্রান্ত জঘন্য ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ে। মানুষের নিচ প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তুলতে ওর জুড়ি ছিলো না…।
তিনি সামনে ঝুঁকে বললেন, মিসেস রেডফার্ন। মিসেস মার্শালের কথা বলতে গিয়ে আপনি হঠাৎ ব্ল্যাকমেল শব্দ উল্লেখ করলেন কেন?
০৭. অভিব্যক্তিহীন চোখে
৭.১
কর্নেল ওয়েস্টনের দিকে অভিব্যক্তিহীন চোখে তাকিয়ে ক্রিস্টিন বললো, না-মানে, কেউ হয়তো ওকে ব্ল্যাকমেল করছিলো।
কিন্তু আপনি কি তা জানেন?
ঘটনাচক্রে ব্যাপারটা আমি জানতে পারি। একদিন হঠাই কিছু কথা আমার কানে আসে। ঘটনাটা ঘটে দুদিন–না তিনদিন আগে রাতে। আমরা তখন ব্রীজ খেলছিলাম। মনে আছে মঁসিয়ে পোয়ারো? আমি ও আমার স্বামী। আর আপনি এবং মিস ডার্নলি–এই চারজনে তাস খেলছিলাম। ঘরের বদ্ধ হাওয়ায় আমার শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই একটু খোলা হাওয়ার লোভে বাইরে যাই। সমুদ্রতীরের উদ্দেশ্যে নামছি। হঠাৎ আর্লেনা মার্শালের কণ্ঠস্বর কানে এলো। আমাকে শুধু শুধু চাপ দিয়ে কোনো লাভ নেই। আর টাকার জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার স্বামী সন্দেহ করবে। তারপর কোনো পুরুষের কণ্ঠস্বর ভেসে উঠলো। ওসব হেঁদো কথায় আমি ভুলছি না। যেমন করে তোক টাকা আমার চাই। আর্লেনা বললো, নিচ, ইতর জানোয়ার কোথাকার? লোকটা বললো, জানোয়ার হই আর যাই হই, দেবী। টাকা তোমাকে দিতেই হবে। আমি তখন হোটেলের দিকে ফিরলাম। আর্লেনা ঝড়ের বেগে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। বিচলিতভাবে।
আর লোকটা, তাকে চিনতে পেরেছেন?
না, সে খুব নীচু গলায় কথা বলছিলো। তার গলার স্বর খুব অস্পষ্ট এবং কর্কশ ছিলো।
ধন্যবাদ, মিসেস রেডফার্ন।
.
৭.২
ইনসপেক্টর বললেন, যাক এতক্ষণে একটু আলোর ইশারা পাওয়া গোল। এই হোটেলেরই কোনো বাসিন্দা মৃতা মহিলাটিকে সযত্নে ব্ল্যাকমেল করছিলো।
পোয়ারো বললেন, কিন্তু সেই ব্ল্যাকমেলার নিহত হয়নি। মারা গেছে তার শিকার।