কটার সময় আপনারা রওনা হয়েছিলেন?
সাড়ে দশটার মিনিট তিনেক আগেই রওনা হয়ে যাই।
পোয়ারো বললেন, গাল কোভে আপনারা কি করলেন?
আমি গিয়ে সোজা তেল মেখে সূর্যস্নানে মন দিই। আর মিসেস রেডফান আপন মনে ছবি আঁকেন। তারপর আমি সমুদ্রে স্নান করতে নামি। আর ক্রিস্টিন হোটেলে ফিরে যান টেনিস খেলার জন্য পোশাক পালটে প্রস্তুত হতে।
সেই সময়টা আপনার মনে আছে।
কখন, যখন মিসেস রেডফার্ন হোটেলে ফিরে যান?-পৌনে বারোটা। আমি ঘড়ি দেখেছিলাম।
যে ঘড়িটা আপনি এখন পরে আছেন?
হা।
ঘড়িটা একবার দেখতে পারি?
লিন্ডা ওর মণিবন্ধ এগিয়ে ধরলো। ঘড়িটা মিলিয়ে হেসে বললেন, সেকেন্ড পর্যন্ত নির্ভুল… আচ্ছা–মিসেস রেডফার্ন যাওয়ার পর আপনি স্নান করতে নামেন? তারপর হোটেলে ফিরলেন কখন? প্রায় একটা নাগাদ। আর ফিরেই শুনলাম–আর্লেনা-মারা গেছে…
আশাকরি সম্মায়ের সঙ্গে মানিয়ে চলতে আপনার–ইয়ে–মানে অসুবিধা হতো না।
না-হতো না।
পোয়ারো বলেন, আপনি কি তাকে পছন্দ করতেন?
হ্যাঁ–আর্লেনা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো।
ওয়েস্টন বললেন, ভালো কথা। কখনও কখনও ঈর্ষা–সংসারে অশান্তির কারণ হয়। ধরুন মেয়ে ও বাবার মধ্যে মধুর সম্পর্ক। বাবা নতুন বিয়ে করাতে মেয়ে একটু বিরক্ত বা ক্ষুব্ধ হলেও হতে পারে। নিশ্চয়ই আপনার ক্ষেত্রে তা হয়নি? আমার ধারণা, আপনার বাবা ইদানীং তার স্ত্রীকে নিয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত ছিলেন।…
আমি ঠিক জানি না।
মিস লিন্ডা, এবারের প্রশ্নটা খুব ভেবেচিন্তে উত্তর দিন। আপনার সম্মাকে কে খুন করতে পারে? এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য হয় এমন কিছু কি আপনি জানেন?
অনেক ভেবে বললো, না, আর্লেনাকে কে খুন করতে চেয়েছে জানি না, অবশ্য মিসেস রেডফান ছাড়া।
কিন্তু কেন?
কারণ তার স্বামী আর্লেনার প্রেমে পড়েছিলেন। হয়তো তার মনে হতো আর্ণেনা মরে গেলে ভালো হয়–এই চিন্তা আর সত্যি খুন করা এক জিনিষ নয়। তাছাড়া, মিসেস রেডফার্নের পক্ষে এ ধরনের কাজ করা অসম্ভব, মানে তিনি উগ্র প্রকৃতির নন।
পোয়ারো বললেন, আমি আপনার সঙ্গে একমত। মানসিক আবেগসঞ্জাত কোনো ঝায় তিনি বিচলিত হবেন না–যদিও সর্বদা একটা ঘৃণা মায়াবী মুখমণ্ডল তার চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে–অথবা অনুভব করছেন নিজের আক্রোশে মুষ্টিবদ্ধ হাত–তা সত্ত্বেও তিনি বিচলিত হবেন না
কাঁপা স্বরে লিন্ডা বললো, আমি তাহলে এখন যাই। আপনাদের আর কিছু জিজ্ঞাসা আছে?
হ্যাঁ, যাবেন। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ।
কর্নেল ওয়েস্টন হাফ ছেড়ে বললেন, বড় বিশ্রী আমাদের এই পুলিসের চাকরি। ওর বাবা ও সত্যয়ের সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে নিজেকে খুব ছোট লাগছিলো। খুন সবসময়েই খুন। এক্ষেত্রে লিন্ডাই একমাত্র ব্যক্তি যার পক্ষে সমস্ত ঘটনার চরিত্র জানা সম্ভব।
পোয়ারো বললেন, আমিও সেরকম অনুমান করি।
ওয়েস্টন বললেন, ওর কাছ থেকে আমরা খুব কম কথাই জানতে পেরেছি। শুধু রেডফার্ন মহিলাটির একটা অ্যালিবাই পাওয়া গেলো।
পোয়ারো বললেন, মিসেস রেডফার্নকে সন্দেহভাজনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কারণ দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে কাউকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা তার পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া তার হাতের গড়ন অস্বাভাবিক রকম হালকা ও ছোট।
কলগেট বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। মিসেস রেডফার্নকে আমরা স্বচ্ছন্দে বাদ দিতে পারি। ডাঃ নিসডন বলেছেন যে দুটো হাতের চাপে শ্বাসরোধ হয়ে মিসেস মার্শাল মারা গেছেন, তাদের হাতের গড়ন মোটেই হালকা ও ছোট নয়।
ওয়েস্টন বললেন, এবারে তাহলে রেডফার্নদের ডাকা যাক।
.
৬.৩
ইতিমধ্যে প্যাট্রিক রেডফার্ন পুরোপুরি সামলে উঠছে।
আপনিই মিঃ প্যাট্রিক রেডফার্ন! তা মিসেস মার্শালের সঙ্গে আপনার পরিচয় কতদিনের?
তিন মাসের;
ক্যাপ্টেন মার্শাল বলেছেন, একটা ককটেল পার্টিতে মিসেস মার্শালের সঙ্গে আপনার প্রথম আলাপ হয়।
হা–প্রথম পরিচয় এইভাবেই হয়।
ক্যাপ্টেন মার্শালের অজান্তে আপনাদের কি দেখা-সাক্ষাৎ প্রায়ই হতো?
রক্তিম মুখে রেডফার্ন বললো। হ্যাঁ, তবে তিনি জানতেন কি না–তা আমি বলতে পারছি না।
পোয়ারো বললেন, আশা করি আপনার স্ত্রীও এ সম্পর্কে কিছু জানতেন না?
আমি ওকে একদিন কথায় কথায় বলেছিলাম, বিখ্যাত আর্লেনা স্টুয়ার্টের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে।
ওয়েস্টন বললেন, আপনাদের এই দ্বীপে দেখা হওয়ার কথা কি আগে থাকতেই ছিলো?
দেখুন–ব্যাপারটা আজ না হয় কাল জানাজানি হবেই। আর্লেনার জন্যে আমার বিচারবুদ্ধি হিতাহিতজ্ঞান সবই যেন লোপ পেয়েছিলো–ও চেয়েছিলো আমিও এই দ্বীপে বেড়াতে আসি–ওর অনুরোধ এড়াতে পারিনি। পুরুষদের ওপর ওর প্রভাব ছিলো এতই মারাত্মক।
পোয়ারো বললেন, যা, তিনি ছিলেন পুরুষদের কাছে আকর্ষণের বস্তু-রূপোলী জলকন্যার মতো।
আপনাদের সঙ্গে আমি খোলাখুলি আলোচনা করছি–আর্লেনা আমাকে যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। ও সেই ধরনের মেয়ে যারা কোনো পুরুষদের দেহ-মন জয় করার পর তার সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়ে। আজ সকালে, পিক্সি কোভের সৈকতে, আমি যখন ওর মৃতদেহ আবিষ্কার করি তখন মনে হয়েছিলো–যেন আমার মাথায় সারা আকাশ ভেঙে পড়েছে।
পোয়ারো ঝুঁকে বললেন, আর এখন?
যা সত্যি, সবই আপনাদের বললাম। আর্লেনার মৃত্যুর সঙ্গে এ সবের তো আর কোনো যোগাযোগ নেই। আর এ ব্যাপারটা আলোচিত হলে আমার স্ত্রী ভীষণ কষ্ট পাবে। আপনারা ভাবছেন, এতদিন আমার স্ত্রীর খেয়াল কোথায় ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি। আর অন্য ব্যাপারটা নিছক একটা পাগলামো-পুরুষরা মাঝে মাঝে মোহাচ্ছন্ন হয়ে ভুল করে করুণ কণ্ঠে বললেন, এ কথাগুলো যদি আপনাদের বিশ্বাস করাতে পারতাম।