ওয়েস্টন বললেন, এটা কোনো সন্দেহের প্রশ্ন নয়। ক্যাপ্টেন মার্শাল এ দ্বীপে উপস্থিত প্রত্যেকেই সকাল পৌনে এগারোটা থেকে এগারোটা চল্লিশ পর্যন্ত গতিবিধির জবাবদিহি দিতে হবে। আর আপনার স্ত্রীর নিজস্ব কোনো বিষয় সম্পত্তি থাকলে সেগুলো সম্পর্কে আপনি কি কিছু জানেন?
আপনি কি কোনো উইলের কথা বলছেন? একবার ও আমাকে বলেছিলো, এইসব উইল-টুইল করার কথা শুনলে ওর জ্বর আসে।
সেক্ষেত্রে স্বামী হিসাবে তার সমস্ত-সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব আপনার ওপরেই বর্তাচ্ছে। তার কাছাকাছি কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিলো।
সম্ভবত না। শুনেছি ছোটবেলাতেই ওর মা-বাবা দুজনেই মারা গেছে–ওর কেনো ভাই বোন নেই।
তাহলে রেখে যাওয়ার মতো তেমন বিষয় সম্পত্তি তার ছিলো না।
বরং তার উল্টো। বছর দুয়েক আগে ওর এ পুরনো বন্ধু, স্যার রবার্ট আরস্কিন মারা যান। তার প্রায় পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড তিনি আর্লেনাকেই উইল করে দিয়ে যান।
ইনসপেক্টর কলগেট এবারে মুখ খুললেন। তাহলে আপনার স্ত্রী একজন ধনী মহিলা ছিলেন। আর তা সত্ত্বেও আপনি বলতে চান তিনি কোনো উইল করে যাননি?
ওর সলিসিটার–বার্কেট, মার্কেট অ্যান্ড অ্যাপলগুড রেডফোর্ড স্কোয়ার। ওর কাছে জানতে পারেন। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে জানি ও কোনো উইল করেনি, এটাকে ও অমঙ্গলসূচক মনে করতো।
ওয়েস্টন বললেন, আপাততঃ প্রশ্নের পালা শেষ ক্যাপ্টেন মার্শাল। আপনার এই আকস্মিক ক্ষতিতে আবার আপনাকে সমবেদনা জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ বলে মার্শাল বেরিলয়ে গেলেন।
.
৫.৫
তিনজনেই পরস্পরের দিকে তাকালেন। ওয়েস্টন, ঠান্ডা মাথার মক্কেল। সহজে ধরা দেবার পাত্র নয় তাই না?
ইনসপেক্টর বললেন, বলা শক্ত। এ ধরনের লোকেরা সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও জুরিদের সহানুভূতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। সোজা কথায়, অভিব্যক্তি প্রকাশে তারা সম্পূর্ণ অক্ষম। ঠিক এই ধরনের স্বভাবের জন্যেই ওয়ালেসের বিরুদ্ধে জুরিরা অপরাধী রায় দিতে বাধ্য হয়। আপনি কি বলেন মঁসিয়ে পোয়ারো।
কিই বা বলা সম্ভব। ক্যাপ্টেন মার্শাল হলেন অবরুদ্ধ সিন্দুক। তিনি কিছুই শোনেননি, দেখেননি। কিছুই জানেন না। তবে খুনের কতগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমতঃ ঈর্ষা, আর রয়েছে মিসেস মার্শালের রেখে যাওয়া প্রচুর অর্থ। অবশ্য এমনিতেই স্ত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্বামীই প্রথম সন্দেহভাজন ব্যক্তি। আমার মনে হয় স্ত্রীর কথা তিনি সবই জানতেন, পোয়ারো বললেন।
আপনার এ ধারণার কারণ?
কারণ, গতরাত্রে আমি সানি লজে মিসেস রেডফার্নের সঙ্গে কথা বলে হোটেলে ফেরার পথে মিসেস মার্শাল ও রেডফার্নকে দেখতে পাই। কয়েক সেকেন্ড পরেই ক্যাপ্টেন মার্শালের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার অভিব্যক্তিহীন কঠিন মুখ দেখেই বোঝা গেলো যে, তিনিও ওদের দেখতে পেয়েছেন।
কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, স্ত্রীর মৃত্যুকে তিনি বড় সহজেই মেনে নিয়েছেন।
ইনসপেক্টর বললেন, এইসব শান্ত লোকেরা ভেতরে ভেতরে ভীষণ উগ্র হয়। ক্যাপ্টেন হয়তো তার স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন–কিন্তু সেই অনুভূতি বাইরে প্রকাশ করার মত লোক তিনি নন।
পোয়ারো বললেন, ক্যাপ্টেন মার্শাল বড় অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ। তার প্রতি আমার যথেষ্ট কৌতূহল হয়েছে যেমন রয়েছে তার অ্যালিবাই সম্পর্কে।
টাইপরাইটার অ্যালিবাই। এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি কলগেট?
স্যার, অ্যালিবাইটা আমাকে সন্তুষ্ট করেছে কারণ ওটা নিখুঁত তো নয়ই বরং স্বাভাবিক।
কর্নেল বললেন, তাহলে কোনদিকে নজর দেবে?
.
৫.৬
নীরবতা ভঙ্গ করে কলগেট বললেন, কাজটা কি কোনো বাইরের লোকের না হোটেলের কোনো অতিথির? তাছাড়া প্রথমে আসে খুনের উদ্দেশ্য। এখানে সেটা আর্থিক লাভ। এই আকস্মিক মৃত্যুতে লাভবান হচ্ছেন তার স্বামী।
পোয়ারো বললেন, মানুষের মনের অসংখ্য আবেগের প্রকৃত চরিত্র কজন জানে–
ইনসপেক্টর ও পোয়ারোর একই মত যে মিসেস মার্শালের মতো মহিলার প্রচুর শত্রু থাকাটাই স্বাভাবিক।
কর্নেল সম্মতিসূচক একটা শব্দ করে বললেন, এই দ্বীপে মার্শালের একমাত্র শত্রু মহিলারা
পোয়রো বললেন, মনে হয় না যে, এই খুনটা কোনো মহিলার পক্ষে করা সম্ভব। আপনাদের ডাক্তারী সাক্ষ্য কী বলছে?
ওয়েস্টন বললেন, মিসেস মার্শাল যে কোনো পুরুষের হাতে শাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, নিসডনের ওতে কোনো সন্দেহ নেই, বিশাল শক্তিশালী একজোড়া হাতের কঠিন নিষ্পেষণ।
তিনি বললেন, আর্লেনা মার্শালকে অপসারিত করে নিজের পথ নিষ্কণ্টক করতে চেয়েছেন এই হোটেলেরই দুজন মহিলা।
কর্নেল বললেন, তার মধ্যে একজন নিশ্চয়ই মিসেস রেডফার্ন।
হ্যাঁ, অবশ্য তার কারণও ছিলো। কিন্তু এই বিশেষ হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ তার চরিত্র বিরোধী। তবে মানসিক অশান্তি ও ঈর্ষার কথা ভেবেও বলবো তিনি আবেগ তাড়িত মহিলা নন। চায়ের কাপে আর্সেনিক হয়তো সম্ভব–কিন্তু শ্বাসরোধ করে হত্যা, সম্পূর্ণ অসম্ভব।
ওয়েস্টন বললেন, না, এ কোনো মহিলার কর্ম নয়। আসামী নিঃসন্দেহে পুরুষ।
ইনসপেক্টর কেশে বললেন, ধরে নেওয়া যাক, এই, মিঃ রেডফার্নের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে জনৈক পুরুষের সঙ্গে মিসেস মার্শালের একটু ইয়ে ছিলো, ধরা যাক, তার নাম এক্স। মিঃ রেডফার্ন রঙ্গমঞ্চে ঢোকা মাত্রই মিসেস মার্শাল এক্স-কে বিদায় দিলেন। তাই এক্স ঈর্ষায় অপমানের জ্বালায় উন্মাদ হয়ে উঠলো। সে তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে অনুসরণ করে এই দ্বীপে এসে তার অপমানের প্রতিশোধ নিল।