হ্যাঁ সোনা, সত্যি কি রোমাঞ্চকর ব্যাপার তাই না মঁসিয়ে পোয়ারো। সামান্য সুযোগ পেয়েই সরব হলেন মিস ব্রুস্টার।
এরকুল পোয়ারো ক্ষীণ প্রতিবাদে হাত তুললেন, নিছক ভদ্রতাবশেই সে প্রতিবাদ এড়িয়ে চললেন মিসেস গার্ডেনার সাবলীলভাবে।
জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার সম্বন্ধে আমি অনেক কিছু শুনেছি কর্নেলিয়া রবসনের কাছে। আমি এবং মিঃ গার্ডেনার ব্যাডনহফে ছিলাম গত মে মাসে। সেই সময়েই লিটেন বিজওয়ে খুন হয়। কর্নেলিয়া মিশরের ব্যাপারটা আমাদের বলেছে। আপনাকে দেখার জন্য আমি একবারে পাগল, আপনি যেভাবে ঘটনাটার সমাধান করছেন তাই না ওডেল?
হ্যাঁ সোনা, মিস ডার্নলির কথা। পোষাকগুলোর একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে কারণ বেশিরভাগ জামাকাপড়ই রোজমন্ড থেকে কেনা। আর রোজমন্ডের মালিক উনিই। ওর দোকান থেকেই কেনা গত রাতের পোষাকটা। মেয়েটিকে সব দিক দিয়ে ভীষণ ভালো লাগে।
মেজর ব্যারী তার বিস্ফারিত চোখ ওপরে নিবদ্ধ রেখে বসেছিলেন মিস ব্রুস্টারের পেছনে। গম্ভীর স্বরে মন্তব্য করলেন, মেয়েটির চেহারায় বিশেষত্ব আছে।
মিসেস গার্ডেনারের উল বোনার কাঁটা সশব্দে সচল হলো।
মঁসিয়ে পোয়ারো, একটা কথা স্বীকার না করে পারব না। ভীষণ অবাক হয়েছি আপনাকে এখানে দেখে! মিঃ গার্ডেনারও সে কথা জানেন। আমি কি বলতে চাইছি, আশা করি বুঝতে পারছেনও। নিশ্চয়ই আপনার পেশার প্রয়োজনে এসেছেন এখানে। মিঃ গার্ডেনারও সেই কথাই বলবেন, আমার অনুভূতি প্রখর। আমি একেবারেই বরদাস্ত করতে পারি না, যে কোনো ধরনের অপরাধকে।
দেখতেই পাচ্ছেন, মিঃ গার্ডেনার গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলেন। বললেন, মিসেস গার্ডেনারের যষ্ঠেন্দ্রিয় সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি প্রখর। দুহাত শূন্যে বিক্ষিপ্ত হলো পোয়ারোর। মাদাম, আমাকে অন্তত একবার আশ্বাস দেবার সুযোগ দিন। কোনো অপরাধের কথা আমি এখন চিন্তাও করছি না; আপনাদের মতোই ছুটি কাটাতে আনন্দ করতে এসেছি।
স্মাগলার্স দ্বীপে কোনো দেহ নেই, রুক্ষ স্বরে মন্তব্য করলেন মিস ব্রুস্টার।
পুরোপুরি সত্যি নয়–এরকুল পোয়ারো বলেন। নিচের বেলাভূমির দিকে আঙুল তুলে নির্দেশ করলেন, সারি সারি শুয়ে থাকা শরীরগুলো তাকিয়ে দেখুন, কি ওগুলো, মহিলা কিংবা পুরুষ নয়। ওরা শুধুই দেহ ওদের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।
সপ্রশংস সুরে বললেন, মেজর ব্যারী, ওদের মধ্যে কয়েকটা মেয়ের চেহারা দেখবার মতো। যদিও একটু রোগার দিকে।
জোরালো কণ্ঠে পোয়ারো বললেন, মানছি সুন্দর চেহারা, কিন্তু কি আবেদন আছে এর, রহস্য আছে কি? আমি বৃদ্ধ সেকালের লোক, বড়জোর গোড়ালিটুকু দেখা যেত যখন আমি ছোট ছিলাম। লুব্ধ করার মতো সফেন সেমিজের। মেজর ব্যারী কর্কশ স্বরে বলে উঠলেন, দুষ্টু দুষ্টু।
মিস ব্রুস্টার বললেন, আজকাল আমরা যে সব পোশক পরি, তা অনেক বেশি মনোজ্ঞ।
মিসেস গার্ডেনার বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, জানেন আজকালকার ছেলেমেয়েরা বেশি স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। সুন্দর মনের পরিচয় পাওয়া গেল, মুখের রক্তিম আভাসে মিসেস গার্ডেনার, বুঝতেই পারছেন তো মেলামেশার ফলাফলের কথা চিন্তা করে না।
এরকুল পোয়ারো বললেন, রীতিমতো দুঃখের কথা, আপনি ঠিকই বলেছেন।
মিসেস গার্ডেনার তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন, দুঃখের কথা!
সব কিছুরই মানদণ্ড নির্দিষ্ট হয়ে গেছে আজকাল দুঃখের কথা নয়, তিনি হাত তুলে নির্দেশ করলেন অর্ধশায়িত দেহগুলোর। এ কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে প্যারিসের লাশ রাখা ঘর।
মিসেস গার্ডেনার অস্বস্তি অনুযযাগের সুরে বলে উঠলেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, অনেকটা মাংসের দোকানের মতো পাথরের ওপর সাজানো দেহগুলি। এ বড্ড কষ্টকল্পিত পোয়ারো, তাই না।
স্বীকার করলেন এরকুল পোয়ারো, হয়তো–হ্যাঁ।
আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত একটা বিষয়ে মিসেস গার্ডেনার দ্রুত হাতে বুনতে শুরু করলেন। তাদের হাতে পায়ে অতিরিক্ত লোম জন্মাতে বাধ্য। এভাবে খালি গায়ে মেয়েরা রোদে শুয়ে থাকে। মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি সেই কথাই বলেছি আমার মেয়ে আইরিনকে, ওকে বলেছি তুমি যদি এভাবে খালি গায়ে রোদে শুয়ে থাকো, সারা শরীর লোমে ছেয়ে যাবে, তোমার হাতে লোম হবে, পায়ে লোম হবে। তাহলে কি রকম দেখাবে বলতো তোমাকে। বলিনি ওডেল মিঃ গার্ডেনার বললেন, হ্যাঁ সোনা। তারা মনে মনে চেহারাটা কল্পনা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছুক্ষণ সকলেই চুপচাপ। সেলাই গুছিয়ে নিয়ে মিসেস গার্ডেনার বললেন, তাই ভাবছি।
কি হলো সোনা, মিঃ গার্ডেনার বললেন।
মিসেস গার্ডেনারের কাছ থেকে সেলাই ও সেলাইয়ের বইটা নিলেন। দোলনা চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন হাত বাড়িয়ে। মিস ব্রুস্টার আসবেন নাকি, জিজ্ঞেস করলেন। একসঙ্গে বসে একটু গলা ভেজানো যাবে।
নাঃ, ধন্যবাদ, এখন নয়।
গার্ডেনাররা হোটেলের দিকে এগিয়ে চললেন। মার্কিন স্বামীরা দারুণ চমৎকার, মিস ব্রুস্টার বললেন।
.
১.৩
মিসেস গার্ডেনারের শূন্যস্থান পূরণ করলেন ধর্মযাজক স্টিফেন লেন, শরীরের সতেজ আভাস সুস্পষ্ট দীর্ঘকায় পঞ্চাশস্পর্শী। মুখের রঙ তামাটে, পরনের গাঢ় ধূসর প্যান্টে অগোছালো ছাপ। লেদারকোম্ব উপসাগর থেকে হারফোর্ড পর্যন্ত গিয়েছিলাম, উৎসাহভরে বললেন। চমৎকার জায়গা পাহাড়ি রাস্তা ধরে ফেরার সময় এলাম। মেজর ব্যারী বললেন, আজকের দিনে পরিশ্রমের কাজ হেঁটে বেড়ানো। হাঁটাহাঁটি তিনি একদম পছন্দ করেন না।