উঁহু এ ধরনের ছুঁড়ে ফেলার অভ্যেস রীতিমতো বিপজ্জনক। মিসেস গার্ডেনার বললেন, একবার আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু টুথপেস্টের টিন মাথায় পড়ে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। পঁয়ত্রিশ তলার জানলা দিয়ে কোনো বাড়ি থেকে কেউ ওটাকে ছুঁড়ে ফেলেছিলো। কিরকম সাংঘাতিক ভাবুন! অনেক ক্ষতি হয়েছিল এর জন্য আমার বন্ধুর। এবার তিনি তার উলের ভাণ্ডার হাতড়াতে লাগলেন, ওজেল, মনে হচ্ছে বেগুনী উলের বলটা আমি ফেলে এসেছি। ওটা শোবার ঘরের টেবিলের দ্বিতীয় কি তৃতীয় টানাতে আছে দ্যাখো তো একবার। হ্যাঁ সোনা দেখছি। অনুগতভাবে মিঃ গার্ডেনার উঠে দাঁড়ালেন এবং রওনা হলেন তার অনুসন্ধানের কাজে। সাদা জুতোজোড়া পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন পোয়ারো। এমিলি ব্রুস্টার বললেন, জুতো পরেই জলে নেমেছেন আপনি কি মঁসিয়ে পোয়ারো? মৃদু স্বরে পোয়ারো বললেন, অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে কাজ করার ফল। গলার স্বরকে খাদে নামিয়ে বললেন, এমিলি ব্রুস্টার আমাদের শ্রীমতী কোথায়? এখনও দেখছি না তাকে।
মিসেস গার্ডেনার সেলাই থেকে তার চোখ তুলে প্যাট্রিক রেডফার্নেনের দিকে তাকালেন। তাকে লক্ষ্য করতে করতে চাপা স্বরে বললেন, ওকে দেখে মনে হচ্ছে থমথমে মেঘ বলে। ওঃ বিশ্রী লাগছে না এই পুরো ব্যাপারটা। এ বিষয়ে কি ভাবেন কে জানে ক্যাপ্টেন মার্শাল। এত শান্ত মানুষ ভদ্রলোক এত চমৎকার। একজন সত্যিকারে ইংরেজ এবং বিনয়ী কোনো বিষয় তিনি কি ভাবেন, আপনি তা টের পাবেন না। উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রতীরে পায়চারি করতে লাগলো প্যাট্রিক। বিড়বিড় করলেন মিসেস গার্ডেনার, ঠিক যেন একটা বাঘ। রেডফার্নকে লক্ষ্য করতে লাগলো তিন জোড়া চোখ। তাকে যেন অস্বস্তিতে ফেললো তাদের পর্যবেক্ষণ। এখন শুধু গম্ভীর নয় তার মুখভাব, তাতে এসে মিশেছে চাপা ক্রোধের কালো ছায়া। এখুনি যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটবে। তাদের কানে এলো এই থমথমে আবহাওয়া। মূল ভূ-খণ্ড থেকে ভেসে আসা ঘণ্টার হাল্কা শব্দ।
মৃদু স্বরে বললেন এমিলি ব্রুস্টার, পূর্ব দিক থেকে আবার হাওয়া বইছে। এখানে সুলক্ষণ এটাই–গির্জার ঘণ্টা শুনতে পাওয়াটা। মিঃ গার্ডেনার বেগুনী উলের বল নিয়ে ফেরা পর্যন্ত কেউ আর কোনো কথা বললেন না। ওডেল, কি ব্যাপার এত দেরি হলো। কিন্তু দুঃখিত সোনা, এটা টেবিলের কোনো টানাতেই ছিল না। খোঁজাখুজির পর অনেক শেষে আনুমারির তাকে পেলাম। কিন্তু ওঃ আশ্চর্য, আমার ধারণা ছিলো, এটা আমি টেবিলের টানাতেই রেখেছি। আমার সত্যি সৌভাগ্যই বলতে হবে কখনও যে কোনো আদালতে সাক্ষী দিতে আমার ডাক পড়েনি। কোনো কথা ঠিকমতো সেখানে মনে করতে না পারলে অস্বস্তি আর চিন্তায় হয়তো আমি মরেই যেতাম। মিঃ গার্ডেনার বললেন, মিসেস গার্ডেনার অত্যন্ত নীতিবোধসম্পন্ন মহিলা।
.
৪.৫
প্যাট্রিক রেডফার্ন প্রায় মিনিট পাঁচেক পরে মুখ খুললো, আজ বেরোবেন না। মিস ব্রুস্টার নৌকা নিয়ে আপত্তি আছে আমি সঙ্গে গেলে। আপত্তি..বরং অত্যন্ত খুশি হলো। মিস ব্রুস্টার আন্তরিক সুরে বললেন, তাহলে চলুন আজ গোটা দ্বীপটাকে এক চক্কর দিয়ে আসা যাক। প্রস্তাব করলো রেডফার্ন।
অত সময় পাওয়া যাবে কি? হাত ঘড়ি দেখলেন মিস ব্রুস্টার, ও হ্যাঁ, এখনও সাড়ে এগারোটাই বাজেনি। চলুন বেরিলয়ে পড়া যাক, আর দেরি না করে।
ওরা নেমে চললো সমুদ্রের কিনারার দিকে। প্রথম বৈঠার কাছে বসলো প্যাট্রিক রেডফানই। সে বৈঠা বাইতে লাগলো সবল হাতে। গতিবেগ নিয়ে চলতে শুরু করলো নৌকো।
প্রশংসার সুরে বললেন এমিলি ব্রুস্টার। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে এভাবে বাইতে পারেন কিনা। রেডফার্ন মিস ব্রুস্টারের চোখে তাকিয়ে হাসলো। মানসিক অবস্থা তার আগের চেয়ে অনেক হাল্কা হয়ে গেছে।
নৌকো নিয়ে ফিরবো যখন আমরা দেখবেন ততক্ষণে আমার গায়ে এক-গাদা ফোস্কা গজিয়ে গেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে কপালে নেমে আসা কালো চুল স্বস্থানে ফেরত পাঠালো রেডফার্ন। ওঃ আজকের দিনটার তুলনা হয় না। যদি ইংল্যান্ডে কখনও একটা চমৎকার গ্রীষ্মের দিন পান, তাহলে তার চেয়ে ভালো আর কিছু হয় না। একটু রুক্ষ স্বরেই জবাব দিলেন এমিলি ব্রুস্টার, সব কিছুই ভালো ইংল্যান্ডের, ওই একটাই পৃথিবীতে থাকার মতো জায়গা।
ঠিক বলেছেন। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পশ্চিমে মোড় নিয়ে এগিয়ে চললো ওরা। প্যাট্রিক রেডফার্ন বাইতে বাইতে হঠাৎই চোখ তুলে তাকালো। কেউ গেছে নাকি সানি লজ-এ আজ। হু, একটা ছাতা দেখতে পাচ্ছি। তাই ভাবছি কে হতে পারে।
মিস ডার্নলি মনে হয়, এমিলি ব্রুস্টার বললেন। ওরকম জাপানী ছাতা ওঁর কাছে আছে। একটা। নৌকা বেয়ে চললো ওরা উপকূল ধরে। ওদের বাঁ দিকে উন্মুক্ত সমুদ্র। বললেন এমিলি ব্রুস্টার, উলটো দিক ধরে যাওয়া উচিত ছিলো আমাদের। এদিকে স্রোতের বিরুদ্ধে বাইতে হচ্ছে। না তেমনি বেশি নেই এদিকে স্রোত। এখানে সাঁতার কেটেছি, আমি তো কখনও টের পাইনি স্রোতের টান। আমরা যেতে পারতাম না ওদিকে। কারণ সেতুটা এ সময় জলের ওপরেই থাকবে। ঢেউয়ের ওপর নির্ভর করছে সেটা অবশ্য। কিন্তু সকলে বলে পিক্সি কোভে স্নান করতে নামলে বেশি দুর সাঁতরে যাওয়া বিপজ্জনক। প্যাট্রিক এখনও সমান উদ্যমে বৈঠা বাইছে। বেশ মনোযোগ সহকারে একই সঙ্গে বেশ পাহাড়ের কোলে প্রতিটি অংশে অনুসন্ধানী চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। এমিলি ব্রুস্টার হঠাৎ ভাবলেন, ও নিশ্চয়ই মিসেস মার্শালের খোঁজ করছে।