হোরেস ব্ল্যাট বললেন, তার মানে তারা দু-এক বোতল চড়িয়ে টং হয়ে থাকে।
হাসলো প্যাট্রিক। এছাড়া আর কি ব্যাখ্যা হতে পারে বলুন। ব্ল্যাট চোখ রাখলেন হাত গাড়িতে, বললেন, এবার আমি চলি ডিনার সারতে। রেডফার্ন যা-ই বলুন, পিক্সিদের জলদস্যুদের আমি ঢের বেশি পছন্দ করি।
তিনি বেরিলয়ে যেতেই প্যাট্রিক রেডফার্ন সশব্দে হেসে বললো, আমার দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে ভদ্রলোকের কি দশা হয় পিক্সির পাল্লায় পড়ে।
পোয়ারো মন্তব্য করলেন আত্মগতভাবে, একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে মঁসিয়ে ব্ল্যাটের চিন্তাধারা একটু বেশি মাত্রায় কল্পনাবিলাসী।
তার কারণ ভদ্রলোক অর্ধশিক্ষিত, রেডফার্ন বললো। আমার স্ত্রী অন্তত তাই বলেন। এখন পর্যন্ত ভদ্রলোক যেসব বই পড়েন দেখুন, শুধু রহস্য রোমাঞ্চ আর কাউবয়দের কাহিনী।
আমার মন কি এখনও ছোট ছেলের মতো আপনি এই কথাই বলতে চান। আপনার কিন্তু তা মনে হয় না কেন? আমি ওকে কতটুকুই বা জানি। বারকয়েক তার সঙ্গে নৌকা নিয়ে বেরিলয়েছি। আমিও জানি না। একা একা থাকতেই ভালোবাসেন, সঙ্গীসাথী খুব একটা পছন্দ করেন না।
আমার কাছে ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগছে। তার ডাঙার ব্যবহারের সম্পূর্ণ বিপরীত।
রেডফার্ন সশব্দে হাসলো, বললো, জানি, ওঁর কাছ থেকে সর্বদা শত হস্তেন থাকতে আমাদের রীতিমতো অসুবিধেয় পড়তে হয়। জায়াটাকে ম্যারগেট এবং লা টোকে-র মাঝামাঝি কিছুতে তৈরি করতে পারলে তিনি খুশি হন।
পোয়ারো নীরব রইলেন কয়েক মিনিট; তিনি মনোযোগর সঙ্গে হাস্যময় মুখমণ্ডলে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তারপর আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বলে বসলেন, মঁসিয়ে রেডফার্ন আমার মনে হয় আপনি জীবনকে উপভোগ করতে ভালোবাসেন।
প্যাট্রিক তার দিকে চেয়ে রইলেন অবাক হয়ে, ভালোবাসি, নিশ্চয়; কেন বাসবো না? কেন বাসবো না কেন?
পোয়ারো সমর্থন করলেন, আপনাকে আমি এ জন্মের জন্যে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
রেডফার্ন মৃদু হেসে বললো, ধন্যবাদ এই প্রসঙ্গে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে।
অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে, ছোট উপদেশ দিতে সাহস করছি আপনাকে বলুন? পুলিস বাহিনীর বিচক্ষণ বন্ধু বহু বছর আগে বলেছিলেন আমাকে, ভাই এরকুল যদি তুমি শান্তি চাও তাহলে স্ত্রীলোকদের এড়িয়ে চলবে।
প্যাট্রিক রেডফার্ন বললো, আপনার একটু দেরি হয়ে গেছে, আমি বিবাহিতা আপনি তো জানেন।
হ্যাঁ, জানি আপনার স্ত্রী একজন সুন্দরী মহিলা, এক মার্জিত রুচির; তিনি আপনাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন, আমার ধারণা।
প্যাট্রিক রেডফার্ন বলে উঠলো তীব্র স্বরে–আমিও ওকে যথেষ্ট ভালোবাসি।
এ কথা শুনে বড় সুখী হলাম। বললেন এরকুল পোয়ারো। রাগে ফেটে পড়লো প্যাট্রিক, আপনি কি বলতে চাইছেন?
হেলান দিয়ে চোখ বুজে চেয়ারে বসলেন পোয়ারো। কিছু কিছু অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে ওদের সম্পর্কে। ওরা জীবনটাকে জটিল করে তুলতে পারদর্শিনী। তাদের ইংরেজরা প্রণয়ঘটিত ব্যাপারে বড় অদ্ভুতভাবে আচরণ করে। মঁসিয়ে রেডফার্ন, আসাটা যদি এতোই জরুরী ছিলো আপনার, আপনি তাহলে আপনার স্ত্রীকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন না কেন?
রেডফার্ন বললো রাগী সুরে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আপনি কি বলছেন।
এরকুল পোয়ারো শান্ত স্বরে বললো, স্পষ্টই বুঝতে পারছি আমি। তর্ক করার মতো নির্বোধ আমি নই; আমি শুধু আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি।
তাহলে আপনি ওই বেহদ্দ মেয়েছেলেগুলোর কথা শুনেছেন। মিসেস গার্ডেনার ওই রুস্টার মেয়েটা দিনরাত জিভ চালানো ছাড়া ওদের আর কোনো কাজ নেই। মেয়েটি যেহেতু ওদের মধ্যে বেশি সুন্দরী, সেহেতু ওকে ঘিরে যত সব নোংরা গাল-গল্প মুখিয়ে তুলেছে।
পোয়ারো উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বললেন, এখনও কি আপনার এ সব করার বয়স আছে? পোয়ারো মাথা নেড়ে পানশালা থেকে বেরিলয়ে গেলেন। প্যাট্রিক রেডফান আগুনঝরা দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইলো তার গমনপথের দিকে।
.
৩.৫
এরকুল পোয়ারো খবার ঘর ছেড়ে হলঘরে এসে দাঁড়ালেন থমকে। সবকটা দরজাই ভোলা। রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া এক ঝলক অনধিকার প্রবেশ করলো ঘরে।
ঘন কুয়াশাও মিলিয়ে গেছে। বৃষ্টি থেমে গেছে। তারা ঝলমলে রাত যেন আত্মপ্রকাশ করছে। পাহাড়ের কিনারায় ওর প্রিয় আসনে ক্রিস্টিন রেডফার্নকে আবিষ্কার করলেন এরকুল পোয়ারো। ওর পাশে দাঁড়ালেন। বললেন, মাদাম আপনি ভিজে আসনে বসছেন, ঠান্ডা লাগবে আপনার এখানে বসা ঠিক নয়।
কিছু হবে না আর হলেই বা কার কি আসে যায়।
মাদাম আপনি তো আর শিশু নন, একজন শিক্ষিত মহিলা আপনি। অন্তত আপনার সব বুঝে শুনে করা উচিত।
উত্তর দিলো শীতল স্বরে, মঁসিয়ে পোয়ারো নিশ্চিত থাকুন ঠান্ডায় আমার কিছু হয় না।
আজকের দিনটা ছিলো বৃষ্টি ভেজা দিন, পোয়ারো বললেন। উঠেছিলো ঝড়, বর্ষা এসেছিলো, ঘন কুয়াশা আমাদের করে দিয়েছিলো অন্ধ। এখন কিন্তু মিলিয়ে গেছে কুয়াশা, আগের মতো আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। চিকমিক করছে আকাশের তারারা জীবনটাও এইরকমের মাদাম।
ক্রিস্টিন চাপা স্বরে বললো, অসহ্য লাগে আমার সবচেয়ে কোন জিনিষটা বলবো।
মাদাম কি?
দয়া জিনিষটা। ওর শব্দটা যেন চাবুকের মতো আছড়ে পড়লো তীক্ষ্ণ স্বরে। ও বলে চললো, আমি কিছু বুঝিনা আপনারা ভাবেন? সর্বক্ষণ বলে বেড়াচ্ছে কিছু দেখি না? ইস্ বেচারা মিসেস রেডফার্নকে দেখে কষ্ট হয়, আমি এই জিনিষটা দেখে সহ্য করতে পারি না। আমাকে দেখে ওঁদের কষ্ট হচ্ছে। পকেট থেকে রুমাল বের করে সাবধানে পাথরের আসনে বিছিয়ে দিলেন পোয়ারো, বসলেন। তাঁর সুচিন্তিত বক্তব্য রাখলেন, মিথ্যে নয় আপনার একথাটা।