আপনি এর উল্টোটাই বা ভাবছেন কেন? পোয়ারো প্রশ্ন করলেন। মিঃ ব্ল্যাট মশাই ঘোড়েল লোক, চোখ টিপে বললেন। চরিত্র চেহারা দেখেই বুঝতে পারি। স্বাভাবিক ছিলো আপনার মতো লোকের পক্ষে দভিল লা টোকে অথবা জুয়ান-লা-পিন্স আত্মিক যোগ থাকা সম্ভব। জায়গাগুলোর সঙ্গে আপনার মন কি বলে? দীর্ঘশ্বাস ফেললেন পোয়ারো, তিনি জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রাখলেন। অঝোর বর্ষণ কুয়াশা ঘেরা দ্বীপে শুধু হয়েছে। আপনার কথাই ঠিক, তিনি বললেন। সেখানে বর্ষার আবহাওয়ার আয়োজন রয়েছে ভিন্ন। জুয়ার আড্ডা আমার প্রিয়, মিঃ ব্ল্যাট বললেন। কঠোর পরিশ্রমে বেশির ভাগ সময় কেটে গেছে, জীবনের কোনো সময় নেই আজ তা পেয়েছি, চেয়েছিলাম সম্মান, আমার টাকার দাম কারোর থেকে কম না, আমার যা মন চাইবে তাই করব বা করতে পারি। এটুকু বলতে পারি এ বছরে কিছু কিছু সুখ আনন্দ আমি দেখেছি।
অস্পষ্ট স্বরে পোয়ারো বললেন, তাই নাকি? মিঃ ব্ল্যাট বলে চললেন, কেন আমি এলাম। আমিও ভেবে অবাক হয়েছি, পোয়ারো বললেন। কি বললেন আঁ?
অর্থপূর্ণভাবে হাত নাড়লেন পোয়ারো। পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কিঞ্চিৎ আমারও নেই তা না নয়। আমার পছন্দের প্রশ্ন উঠলে, এ জায়গার চেয়ে আপনি সহজেই ভিল বেছে নিতেন। আর আমরা তার বদলে দুজনে এসে হাজির হয়েছি এখানে। মিঃ ব্ল্যাট কর্কশ স্বরে হেসে উঠলেন। কেন এলাম সত্যিই ভেবে পাই না। তিনি বলে চললেন আনমনাভাবে, মনে হয় নামের সঙ্গে কেমন যেন অলীক গন্ধ জড়িয়ে ছিলো। জলি রজার হোটেল, স্মাগলার্স দ্বীপ আপনাকে চঞ্চল করে তোলে, ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয় তাই না। চোরাচালান, জলদস্যু এই সব।
নৌকা নিয়ে প্রচুর ঘুরে বেরিলয়েছে ছেলেবেলা থেকেই। পূর্ব উপকূল অঞ্চলে। এমনই পেশা এক পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায় না। ইচ্ছে করলে প্রমোদতরীও কিনে ফেলতে পারতাম একটা সাজানো গোছানো। আমার মনে ধরে না, এই জিনিষটা ঠিক তার চেয়ে ভালো নৌকায় ভেসে বেড়ান। রেডফার্নও ভালোবাসে নৌকা বইতে। এখন তো পাত্তা নেই ওর, বার তিনেক আমার সঙ্গে বেড়িয়েছে, মার্শালের বউয়ের পিছনে শুধু দিনরাত ঘুরছে।
ব্ল্যাট গলা নামিয়ে বলে চললেন, বেশির ভাগ লোক হোটেলের রসকষহীন শুকনো মাল। মিসেস মার্শালের প্রাণের ছোঁয়া একটু পাওয়া যায়। ওর পুরো দিনটা পার হয়ে যায় ওর বউয়ের পিছনে। মিসেস অভিনয় জগতে যখন ছিলেন গপ্পো চালু ছিল তার নামে। এখন যে নেই তা নয়। পুরুষদের মাথার ঠিক থাকে না ওকে দেখলে; কেলেঙ্কারী না বাধিয়ে ছাড়বে না এখানে।
কি কেলেঙ্কারী? প্রশ্ন করলেন পোয়ারো। সেটা অবস্থার উপর নির্ভর করছে, হোরেস ব্ল্যাট উত্তর দিলেন। আমার মনে হয় মার্শাল একটু বদ মেজাজের লোক। আমি এটা ভালোভাবেই জানি। ওর সম্বন্ধে কয়েকটা কথা আমার কানে এসেছে, এদের মুখভাব দেখে কিছু বোঝা যায় না। শান্ত লোক আর খুব কম কথা বলে সাবধান থাকা উচিত। গল্পের নায়ককে পানশালায় প্রবেশ করতে দেখেই থেমে গেল মাঝপথে তিনি।
বলেছিলাম না আপনাকে, সমুদ্রে নৌকা চালিয়ে সত্যিই মজা আছে..আসুন রেডফার্ন এক গ্লাস হয়ে যাক। আচ্ছা ড্রাই মার্টিনি খাবেন মঁসিয়ে পোয়ারো আপনি? মাথা নেড়ে পোয়ারো অসম্মতি প্রকাশ করলেন। প্যাট্রিক রেডফার্ন বললো, পৃথিবীতে নৌকা চালানোর মতো নেশা আর কিছু নেই; এর পেছনে আমি অনেক সময় দিতে পারি। ছেলেবেলা থেকেই আমার এই সখ ছিলো। বেশির ভাগ সময়ই তো এই নৌকা নিয়ে থাকতাম। এ দিকটা তাহলে আপনি ভালোভাবেই জানেন, পোয়ারো বললেন। বলতে পারেন, হোটেল তৈরি হবার আগেই জায়গাটা চেনা আমার। এই দ্বীপে কেউ ছিলো না। লেদারকোম্ব উপসাগরে পুরানো আমলের বাড়ি। বাড়ি ছিলো এখানে একটা। এক পোডড়া বাড়ি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। প্রায় ধ্বংসাবশেষই বলা যায়। নানারকম গল্প চালু ছিলো, ওই বাড়ি থেকে পিক্সির গুহায় অনেকগুলো যাওয়ার পথ নাকি আছে। গুপ্ত পথ খুঁজে বেড়াতাম সব সময় মনে পড়ে। হোরেস ব্ল্যাটের গ্লাস কেঁপে উঠলো, পানীয় ছলকে পড়লো। তিনি প্রশ্ন করলেন, এই পিক্সির গুহাটা কি জিনিষ?
ও আপনি জানেন না? প্যাট্রিক বললো, চট করে খুঁজে পাবেন না গুহার ঢোকবার পথটা, পিক্সি কোভে আছে। পথটা একগাদা পাথরের মাঝে লুকানো রয়েছে। শুধু লম্বা একটা সরু ফাটল। কোনো মতে একজন ঢুকতে পারবে। গুহাটা সৃষ্টির কারণ, গুহার ভেতরটা বেশ বড়বড় চওড়া। ছোট ছেলেদের কাছে কেমন মজার ছিল বুঝতেই তো পারছেন, আমাকে বলে দিয়েছিল এক বুড়ো জেলে। ওখানকার জেলেরাও এ খবর জানে না। কেউ জবাব দিতে পারে না কেন এই জায়গাটাকে পিক্সি কোভ বলা হয়।
এরকুল পোয়ারো বললেন, ঠিক এখনো আমি বুঝে উঠতে পারিনি কি জিনিষ?
প্যাট্রিক রেডফার্ন বললো, খাস ডেভনশায়ারের চীজ বলতে পারেন আপনি। শীপস্টোরের জলাভূমিতেও পিক্সির গুহা আছে একটা। পিক্সির জন্যে উপহার হিসেবে লোকে একটা করে আলপিন রেখে আসে। এ ধরনের আত্মা হল পিক্সি জলাভূমিতে বাস করে যারা।
হুঁ, বেশ কৌতূহলের ব্যাপার, এরকুল পোয়ারো বললেন।
প্যাট্রিক রেডফার্ন বলে উঠলেন, ডর্টমুরে এই পিক্সি নিয়ে অনেক কিংবদন্তী চালু আছে। মনে করা হয় পাহাড়ের চূড়ায় অনেক পিক্সি আছে। শোনা গেছে, কৃষকরা কুয়াশা ঘেরা রাতে দেরি করে বাড়ি ফেরার পথ ভুলিয়ে দিয়েছিলো।