কোনোকালেই সুন্দর ছিলো না তোমার স্বভাব। বৎসে তার পরিচয় আমি পাই। তুমি মাঝে মাঝে যে ভাবেই রেগে উঠতে একদিন তো আমার গলাই টিপে ধরেছিলে রাগে ঝাঁপিয়ে।
সশব্দে হাসলো রোজামন্ড, সেদিন ভোঁদর ধরতে গিয়েছিলাম, টোবিকে নিয়ে। তোমার মনে আছে সেদিনটা। বেশ কিছু সময় কেটে গেল অতীত অভিযানের স্মৃতিচারণে। কয়েক মুহূর্তের নীরবতা অবশেষে নেমে এল। রোজামন্ড ব্যাগের ফিতে নিয়ে খেলা করতে লাগলো, কেনেথ, অবশেষে বললো। অস্পষ্ট স্বরে উত্তর এলো কেনেথ মার্শালের, তখনও তিনি সবুজ ঘাসে মুখ লুকিয়ে আছেন।
এমন কিছু বলি আমি হয়তো যা পুরোপুরিই অনধিকার চর্চা তুমি তাহলে কি আমার সঙ্গে আর কথা বলবে না, ঘুরে উঠে বসলেন কেনেথ মার্শাল। আমার মনে হয় না, আন্তরিক সুরেই বললেন তিনি। তোমার কোনো কথাকেই অনাধিকার চর্চা বলে ভাবতে পারি? তোমার সে অধিকার আছে, তুমি তো জানেনা।
কেনেথ মার্শালের শেষ কথাগুলোর অর্থ মেনে নিলো রোজামন্ড, ও গোপন করলো ক্ষণিকের পাওয়া সুখটুকু।
কেনেথ তুমি বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছ না কেন তোমার স্ত্রীর কাছে? কেনেথ মার্শালের মুখমণ্ডলে পরিবর্তন এলো। খুশি খুশি অভিব্যক্তিটুকু ধীরে ধীরে মিলিয়ে গিয়ে নেমে এলো কঠিনতার ছোঁয়া। তামাক ভরতে লাগলেন পকেট থেকে পাইপ বের করে। রোডমন্ড বললো, দুঃখিত তোমায় আঘাত দিয়ে থাকলে।
তিনি বললেন শান্ত স্বরে, না আঘাত তুমি দাওনি। কেন তা করছি না, বুঝবে না তুমি।
খুব ভালোবাসো তুমি কি ওকে?
আমি ওকে বিয়ে করেছি, এটা শুধু ভালোবাসার প্রশ্ন নয়, ওর অনেক বদনাম আছে জানি। কিছুক্ষণ কথাটা ভাবলেন তিনি সতর্ক হাতে তামাক ঠুকতে ঠুকতে। হয়তো আছে, কি জানি তুমি ওকে ডিভোর্স করতে পারো না কেন।
মার্শাল বললেন, সোনা এ নিয়ে তোমার মাথা না ঘামানোই ভালো। এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই। পুরুষরা ওকে দেখে জ্ঞানগম্যি হারিয়ে ফেলে বলে, ওর ঐ একই অবস্থা হয়। মুখের মতো একটা জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেলো রোজামন্ড। তারপর বললো, এমন একটা ব্যবস্থা করো, যাতে তোমাকে ডিভোর্স করে তুমি যেভাবেই চাও।
সম্ভব নয় বোধহয়।
পারতেই হবে তোমাকে ঠাট্টা করে বলছি না। মেয়ের কথাটা তত তোমায় ভাবতে হবে। লিন্ডা, লিন্ডা হা। লিন্ডার সঙ্গে এর কি সম্পর্ক? আর্লেনা মোটেই ভালো নয় লিন্ডার পক্ষে। আজকাল লিন্ডা অনেক কিছু বেশ বুঝতে পারে।
দেশলাই জ্বেলে পাইপে অগ্নিসংযোগ করলেন কেনেথ মার্শাল। সে মিথ্যা কথা নয়, ধোঁয়া ছাড়বার ফাঁকে তিনি বললেন। আমার মনে হচ্ছে আর্লেনা ও লিন্ডা মানিয়ে চলতে পারছে না। এটা ভালো নয়, ছোট মেয়ের পক্ষে। দুশ্চিন্তা সেই জন্য আমার।
লিন্ডাকে আমার খুব ভালো লাগে। রোজামন্ড বললো, ওর মধ্যে ভালো লাগার মতো কি যেন একটা আছে।
ও ঠিক ওর মায়ের মতো, কেনেথ বললেন, সব কিছুই ভীষণ গভীরভাবে নেয়, যেমন রুথ নিতো। এরপর মনে হয় না, রোজামন্ড বললো, আর্লেনাকে ত্যাগ করা উচিত তোমার মামলা সাজিয়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের। হা, সবাই তাই করে আজকাল। কেনেথ মার্শাল রুক্ষ স্বরে বলে উঠলেন। হ্যাঁ, এ জিনিষটা সব চেয়ে ঘেন্না করি। ঘেন্না করো? ও ভীষণ চমকে গেলো। আজকাল জীবন যেন বড়ো খেলো হয়ে গেছে। যদি কোনো জিনিষ নিয়ে পড়ে সেটা ভালো লাগে না। সেটাকে ত্যাগ করতে আজকাল আর বাধা নেই। আশ্চর্য, মানুষের মনে বিশ্বাস বস্তুটা থাকা উচিত। একমাত্র তোমারই দায়িত্ব যদি কোনো মেয়েকে বিয়ে কর তাহলে তার ভরণপোষণের ভার একমাত্র তোমার। কারণ এ খেলা তুমিই শুরু করেছে। আমার ঘেন্না ধরে গেছে, বিয়ে হচ্ছে সহজ এবং আরও সহজ বিবাহ বিচ্ছেদ। আমার কাছে সব চেয়ে বড় কথা আর্লেনা আমার স্ত্রী।
রোজামন্ড সামনে ঝুঁকে নিচু স্বরে বললো, ব্যাপারটা অনেকটা সে রকমের তোমার কাছে অনেকটা। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন কেনেথ মার্শাল। হ্যাঁ ঠিক তাই, তিনি বললেন। ও রোজামন্ড বললেন।
.
৩.২
একটা সঙ্কীর্ণ সর্পিল পথে লেদারকোম্ব উপসাগরে ফেরার পথে একটা বাকের মুখে মিসেস রেডফার্নকে একটু হলেই চাপা দিচ্ছিলেন হোরেস ব্ল্যাট। ক্রিস্টিন রাস্তার পাশে সারি দেওয়া গা ঘেঁষে দাঁড়াতেই সশব্দে ব্রেক কষে থামলেন মিঃ ব্ল্যাট। বিশাল চোহারার পুরুষ মিঃ ব্ল্যাট। লালচে আভাস মুখের রঙে, তার চকচকে টাককে বৃত্তাকার পথে ঘিরে রেখেছে হালকা লাল চুলের আস্তরণ। সে জায়গার মধ্যমণি হয়ে থাকার ইচ্ছেটাই মিঃ ব্ল্যাটের একমাত্র উচ্ছ্বাস। যে জায়গাতেই নিয়ে যাক না কেন, তিনি এ মত প্রকাশ করেছেন সোচ্চারই। জলি রজার আনন্দ সঞ্জীবনীসুধার কিঞ্চিত প্রয়োজন আছে। ঘটনাস্থলে যখনই উপস্থিত হন, সেখানকার লোকেরা যে পদ্ধতিতে নিজেদের ক্রমশ অদৃশ্য এবং দ্রবীভূত করে ফেলে। রীতিমতো অবাক লাগে তার।
স্ট্রবেরিলর আচার বানিয়ে ফেলেছিলাম, আরেকটুকু হলেই বলেন কি? মিঃ ব্ল্যাট খুশির সুরে বললেন, হ্যাঁ সে আর বলতে, ক্রিস্টিন জবাব দিলো। মিঃ ব্ল্যাট বললেন, ঝটপট উঠে আসুন। আমার হাঁটতে ভালো লাগছে, ধন্যবাদ।
মিঃব্ল্যাট বললেন, যত্তো সব। তাহলে গাড়ির জন্ম হয়েছে কি করতে? ক্রিস্টিন রেডফার্ন নিরুপায় হয়েই উঠলো গাড়িতে।
ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো আচমকা ব্রেক কষে রাখার ফলে। বোতাম টিপে আবার চালু করলনে। মিঃ ব্ল্যাট প্রশ্ন করলেন, আপনি একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কেন বলুন তো? আপনার মতো সুন্দরী মেয়ের পক্ষে ব্যাপারটা ঠিক নয়।