একটা সাংকেতিক শব্দ হঠাৎ-বাজল। কোন দিক থেকে তা বুঝতে পারা গেলো না।
ডুরেল বলে উঠল, সীজারের আবির্ভাব নিশ্চয়ই।
ফ্রান্সি জানাল না। পেছনের দরজা দিয়ে সীজার আসে
ডুরেল বলল, তোমার মরণ অবধারিত ট্যালবটের হাতে। নড়বার চেষ্টা করো না। সহসা নীচে পায়ের শব্দে সব নীরবতা ভেঙ্গে দিল। ডুরেলের দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে এল। মাথায় ওপর বন্দুকের নল। অপরপ্রান্তে ছুটে এসে দেওয়ালে বিধল ধারালো অস্ত্র। ছিটকে গেলো লৌহখণ্ড। জ্বলন্ত সীসার বুলেট।
ডুরেল আচম্বিতে আততায়ীকে প্রবল আঘাতে কাবু করে দিতেই ফ্রান্সিসকা চিৎকার তুলল।
.
১৪.
ডুরেল বলল, তোমার কি হয়েছে সাইলাস?
সে জানাল, যাক, আপতত তুমি যে বেঁচে গেছ। আশ্বস্ত হলাম। তোমাকে একটা বিরাট পাথর ছুঁড়ে মেরেছিল লোকটা।
কে বলো তো লোকটা?
মনে হয় ট্যালবট।
ডুয়েল বলল, অন্যদিকে থেকে আর-একজন ধারালো ছুরি ছোঁড়ে। হাতের টিপ দারুণ।
সে বলল, মনে হচ্ছে ওটা নির্ঘাৎ সীজারের অস্ত্র। এখান থেকে আমরা এক্ষুনি চলো বেরিয়ে পড়তে চাই। অতঃপর তারা তিনজন এই অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ল।
হঠাৎ ফ্রান্সিসকা বলে উঠল, সত্যি, সীজার যে অবস্থায় আমাকে ফেলে রেখে পালাল ভাবতেই পারছি না–
বীরপুরুষ। ডুরেল বলল–বুঝলে, এই হচ্ছে ইটালীয়ান প্রেমের ধরন।
সবাই এক সঙ্গে অন্ধকার পথ ধরে হোটেলের পথে এগিয়ে চলল।
ফ্রান্সিসকে ডুরেল তার ঘরের নম্বর আর চাবি দিয়ে পনাশালার নির্দিষ্ট কামরায় ঢুকতে যাবার আগে কে যেন তার নাম ধরে ডাকল।
ডুরেল চারপাশে তাকাল।
মেজর প্যাসেক অদূরে দাঁড়িয়ে। বলল, কাত রাতটা মনে হচ্ছে ভালো কাটেনি?
ডুরেল বলল, এমন সময়ে এ জায়গায় কি মনে করে
প্যাসেক বলল, পেইন্টিংগুলো হাতানো গেল না
ডুরেল দেরী না করে তার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো।
ডুরেল তার নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখলো বাথরুমে নগ্ন ফ্রান্সিসকা তোয়ালেতে মুখ মুছছে। বলল, তোমাকে সমুদ্রের পরী বলে মনে হচ্ছে–
সে বলল, এসো না আমরা মিলেমিশে থাকি।
দুজনে দুজনের অতি নিবিড় স্পর্শ ছুঁড়ে দিয়ে ডুরেলই আবার প্রথম কথা বলল, আচ্ছা পেইন্টিংগুলো ঠিক কোথায় বলতে পারো? আর সীজার ওগুলো নিয়ে আসলে কি করতে চায়?
আমার মনে হয় সেগুলো এখন ওর কাছেই। কিন্তু সে কি করবে। আর বেচবেই বা কোথায়?
ফ্রান্সি বলল, কোথায় আর, শেষমেষ কাউন্টের কাছেই আসবে
ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমার সাহায্য পেতে পারি ফ্রান্সি, সীজার কি ফিলিবেনো দ্বীপে যাচ্ছে। আজ কি কাল। তুমি কি স্বামীর কাছে তার আগেই পৌঁছে যেতে চাও
ঠিক এই সময় দাদ্রের আবির্ভাব হল। ফ্রান্সিসকা বলে উঠল, তুমি যা ভাবছো তা নয়। এখানে কাজের কথাই হচ্ছে।
তবুও দাদ্রে ডুরেলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে একপলক চেয়ে রইলো।
দাদ্রে বলল, আশাকরি ফিলিবেনোতে আবার কোন না কোনদিন দেখা হবে
দাদ্রে বলল, মেয়েরা এইভাবে তোমাকে ফেলে পালায়?
ডুরেল হাসল–মনে করো তাই।
গত কয়েক বছর ধরেই তুমি আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে শুধু বলে এলে। সে কি শুধু স্তোক। নাকি আমার সাহায্য পাবার খাতিরে খালি ফিকির।
ফিলিবেনো যেতে আমাকে সাহায্য করে। আর কিছু চাই না। আর চাই কাউন্ট এ্যাপোলিওকে।
দাদ্রেকে জানাল পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ডন এঞ্জেলোকে। ও আমার সব কথাই রাখে। তোমার ফিলিবেনো যাবার সব ব্যবস্থাই নিশ্চিয়ই সে করে দেবে–কারণ, এঞ্জেলো আমাকে প্রায়ই বিয়ে করতে চায়।
ডুরেল পরদিন সকাল ঠিক দশটা নাগাদ এঞ্জেলোর সঙ্গে ফিলিবেনো দ্বীপে পৌঁছে গেছে।
ছোট্ট দ্বীপ। কাছে, দূরে অনেক ছোটখাটো নৌকো দাঁড়িয়ে আছে। আঙুল দেখিয়ে ডুরেল জিজ্ঞেস করল ঐ যে দূরে যে বোটটা দেখা যাচ্ছে ওটা কি কাউন্টেস-এর?
না। ওটা সীজারের। তাকে নিয়ে সমস্যা নয়। যত ঝামেলা ঐ কাউন্ট এ্যাপোলিও।
এঞ্জেলো চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। জিজ্ঞেস করল, চেনেন নাকি সীজারকে।
হা। গতরাতেই দেখা হয়েছে এ্যাপোলিওর অভিন্ন হৃদয়েষু।
কাউন্টের বাড়ি দূর পাহাড়ের শেষ মাথায়।
ট্যালবট অথবা প্যাসেক কারুর কোন হদিশ নেই। সমুদ্র, পাহাড় তার মধ্যে একদিক দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে। সেই পথ ধরে ডুরেল একা এগুতে থাকলো। আরো কিছুদূরে হাঁটতেই এক সময় সীজারের অতি মনোরম বোটের প্রায় কাছাকাছি এসে পড়লো।
কিছুটা এগিয়ে পেছন থেকে ঢুকে গেলো বোটের ভেতর। স্থলভাগের দিকে একবার তাকালো। না, কোথাও তেমন ভয়ের কিছু নেই।
অথচ গুলির শব্দে আবার চারপাশ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। ডুরেল পেছন দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে ছুটতে আরম্ভ করল। ছুটতে ছুটতে একটা চার্চের কাছে এসে হাঁফ ছাড়ল। দাদ্রে সেখানে কোথা থেকে এল তা মনে করার প্রয়োজন হল না। তারা দুজন দ্রুত সামনে এগুতে থাকল। হঠাৎ প্যাসেকের কণ্ঠস্বর সে শুনলো।
সে পরিত্রাহী দাদ্রের নাম ধরে ডাকছে।
এই যে এদিকে মিস দাদ্রে
তার প্রায় সামনাসামনি ডুরেল থমকে পড়ল। প্যাসেক বলল, কি, আপনাকে যে আজকাল আর বড় একটা দেখাই যায় না।
দাদ্রে তখন ডুরেলকে ফিসফিসিয়ে বলল, এই সেই লোকটা না। নেপলসের বারে যাকে দেখেছিলাম?
বলল, হ্যাঁ, মেজর প্যাসেক। ও সবই জানে। আর তোমাকেও দারুণভাবে নজর রেখেছে। সামনে বাড়িতে চলল। ওটা আমার চেনা জানা
এক বুড়ো ডুরেলকে বলল, দুঃখিত। এটা তো টুরিস্টদের থাকবার জায়গা নয়।