- বইয়ের নামঃ হাউস অব ডেথ
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ চন্দ্রছাপ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর
হাউস অব ডেথ
১. হলিউডের নাইট ক্লাব
হলিউডের অভিজাত একটা নাইট ক্লাবের সামনে একজন পায়চারি করছে। এখানে মদ, খাবার দাবারের দাম খুবই বেশী।
এখানে নর্তকী কাউকে শয্যাসঙ্গিনী করতে পারলে মানুষ বর্তে যায়। দেখা করে প্রথমে স্তোতবাক্য দিয়ে শুরু, পরে ফুল উপহার এবং মন-মেজাজ ভালো থাকলে অপরপক্ষ রাজী হয়ে যায়। তবে সচেতনভাবে বিপদ এড়িয়ে চলে তারা।
যাক এসব কথা। লোকটির পরণে নিখুঁত ইভনিং স্যুট, চকচকে জুতো, দামী ঘড়ি। বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেছে।
নাইট ক্লাবের সামনে পায়চারী করতে করতে সহসা ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এসে টাল খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল প্রায়। দেখলেই বোঝা যায় মদ খেয়ে চুর হয়ে আছে।
লোকটি এলোমেলো পায়ে বড় রাস্তার দিকে এগোতে থাকলো। কিছু দূরে একটি লোক দাঁড়িয়েছিল। হঠাত্র সে দেখলো একটি গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে মাতাল লোকটির দিকে এগিয়ে আসছে। সে তাড়াতাড়ি হ্যাঁচকা টানে তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালো। প্যাকার্ড গাড়ির চালক অশ্লীল ভাষায় কিছু বলে একই গতিতে বেরিয়ে গেল।
মাতাল লোকটি নিশ্চিত বিপদের আকস্মিকতায় কিছুটা হুঁশ ফিরে পেয়েছে।
মাতাল লোকটি ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আমার গাড়ি আছে, তাতে চেপে বাড়ি যাবো।
কিন্তু অপর লোকটি বলল, না না, এ অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না, বিপদ ঘটতে পারে।
মাতাল লোকটি বলল, তোমাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ বলে তো একটা কথা আছে, চলো তোমাকে মদ খাওয়াবো।
লোকটি ভাবে, মাতাল লোকটি বেশ বড়লোক হবে, পোশাক-আশাক সে কথা বলে দিচ্ছে। দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
মাতাল লোকটি তাকে জিগ্যেস করে, তা তোমার নামটা কি?
-ন্যাশ। গ্লিন ন্যাশ।
ন্যাশ সামনে দাঁড়ানো গাড়িটার দিকে তাকাল।রোলস-টা দামী বটে। স্টিয়ারিং হুইলে চোখ পড়ে। ওখানে লাগানো লাইসেন্সে মালিকের নাম লেখা আছে। সে থাকে হলিউডে, ঠিকানাটাও আছে।
মিঃ আর্ল ডেস্টার।
২৫৬, হিল ক্রেসুট অ্যাভেনিউ।
এদিকে ডেসটার নরম গদীতে গা এলিয়ে নাক ডাকা শুরু করেছে। ন্যাশ রাস্তার নাম, বাড়ির নম্বর মিলিয়ে নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে হাজির হয়।
–মিঃ ডেসটার, উঠুন বাড়ি এসে গেছে। ন্যাশ ওকে ধাক্কা মেরে বলে, সদর দরজা বন্ধ।
–ও সরি, বলে পকেট হাতড়ে ন্যাশের দিকে চাবিটা এগিয়ে দেয়।
ন্যাশ সদর খোলে। তারপর ডেসটারকে বৈঠকখানার দিকে নিয়ে গেল। ডেসটার আবার হুইস্কি খেতে চায় আর ন্যাশকেও এক পেগ নিতে বলে। নাছোড়বান্দা ডেসটারকে শেষপর্যন্ত হুইস্কি দিল আর নিজেও নিল। ন্যাশকে ডেসটার জিগ্যেস করল, সে কি করে?
–বিজ্ঞাপনের দালাল বলতে পারেন। কমিশনের কাজ।
–কত কমিশন পাও?
সপ্তাহে কোন ঠিক নেই। সময় ভালো গেলে সপ্তাহে কুড়ি ডলার পাই।
–এটা কিন্তু অন্যায়, ওতে কারুর চলে নাকি?
–হ্যাঁ, বড্ড কষ্টে আছি। একটা কোথাও ভালো কাজ পেলে বেঁচে যেতাম।
–ডেসটার তাকে ড্রাইভারের কাজ দিতে চায়। ন্যাশ আপত্তি জানায় না। সপ্তাহে পঞ্চাশ ডলার দেওয়া হবে ঠিক হল। সঙ্গে থাকা-খাওয়া ফ্রি। ঘরের টুকিটাকি আরো কিছু কাজ করতে হবে। ন্যাশ তার সঙ্গে আরো কথা বলে জানলো যে, লরেন্স বলে তার একজন ড্রাইভার ছিল। সে পালিয়েছে, কিছু চুরি-টুরি করেনি।
হঠাৎ ন্যাশ একজন মহিলার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। হলিউড মাপকাঠিতে ঠিক সুন্দরী পর্যায়ে তাকে ফেলা যায় না। বয়স বছর বাইশ হবে। দুধে আলতা গায়ের রং, সবুজ চোখ। স্লিম ফিগার।
ডেসটার জানালো সে তার স্ত্রী। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, এর নাম ন্যাশ। আজ থেকে ও আমাদের ড্রাইভার। আজ ও আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে।
হেলেনের মুখের ভাব দেখে মনে হল, তার আগমনে সে অপ্রসন্ন।
ন্যাশের মনে হল, ডেসটার কোনরকম বিপদে জড়িয়ে পড়েনি তো? এবং সে বিপদ হেলেনের তরফ থেকে আসছে না তো? এখানে ড্রাইভারের চাকরি নেওয়া মানে চব্বিশ ঘন্টা ঘুরঘুর করতে হবে ঐ হেলেনের পাশে।
ন্যাশের বয়স ছাব্বিশ সাতাশ হবে। পেটানো স্বাস্থ্য, চওড়া কাঁধ, গায়েরং রং তামাটে।
ন্যাশ ডেসটারের দিকে ফিরে বলে, মিঃ ডেসটার, চাকরিটা পেয়ে খুশী হলাম ধন্যবাদ।
–তুমি গ্যারেজে গাড়ি তুলে, গ্যারেজের উপরে একটা ঘর আছে, ওখানে শুয়ে পড়ো।
–ঠিক আছে, গুডনাইট।
–গুডনাইট!
ন্যাশ ঘরের বাইরে পা বাড়াতেই হেলেন চেঁচিয়ে বলে ডেসটারকে, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? তুমি আবার ড্রাইভার রাখলে? কদিন পরে বুঝবে।
–ডার্লিং, তুমি মিথ্যে রাগ করছে। দেখবে সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে।
–আর ঠিক হয়েছে! বলে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সে নিজে তো ডুবতে বসেছেই এবং অপরকেও ডোবাবে।
হেলেনের মাথায় নানারকম চিন্তা ঘুরপাক খায়। সে খাটে এসে বসে। রাগে উত্তেজনায় এখন তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে ন্যাশের ওপর। আসার আর জায়গা পেল না। এরপর ছুটে পালাবার পথ পাবে না।
সে পায়চারি করতে থাকে। ঘুম তার মাথায় উঠেছে।
ওদিকে ন্যাশ ডেসটারের দেওয়া চাবিটা দিয়ে গ্যারেজের দরজা খোলে। হেলেনের ওপর রাগে তার সারা শরীর জ্বলছে, মাথা টিপটিপ করছে।
গ্যারেজের আকার মন্দ নয়। তিনটে গাড়ি রয়েছে। লোহার একটা আলমারীতে টুকিটাকি কিছু যন্ত্রপাতি আছে।
ন্যাশের প্রথম নজর যায় ক্যাডিলাকটার দিকে। টু-সিটার গাড়ি। ঝকঝকে নতুন।
এরপর ন্যাশ তাকালো বুইক টার দিকে। এটা ততটা নতুন নয়।
ন্যাশ রোল-টাকে জায়গামতো ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
শোবার ঘরটা তেমন পরিষ্কার নয়। কোণায় কোণায় নোংরা জমে আছে। যাক্, এখন তার একটু শোওয়া দরকার।
ন্যাশের বেরিলর কথা মনে পড়ল। বেরিল ওর বন্ধু। সে ওর ওখানে থাকতো। চাকরি-বাকরি মন্দ করে না। ছোট্ট একটা অ্যাপর্টমেন্টে থাকে। ইদানিং সে এসে জুটেছিল।
বেরি এই চাকরির কথা শুনলে খুশী হবে। একটা ফোন করতে পারলে ভালো হতো। কাল কালেই সে বেরিয়ে সুখবরটা দেবে।
ন্যাশ শোবার বন্দোবস্ত করে। ঘরটা ছোট হলেও মন্দ নয়। একটা আলনায় কিছু জামা-কাপড় ঝুলছে। হয়তো আগের ড্রাইভারের হবে। কেমন যেন একটা সন্দেহ জাগছে।
ন্যাশ ভাবে ঐ ড্রাইভারের খোঁজ তাকে করতেই হবে। জানতেই হবে তার আসল ঘটনা। ন্যাশ আরো ভাবে, হেলেন কি শুধু খরচের কথা ভেবেই তাকে ড্রাইভারী করতে দিতে চায় না? কিন্তু যাদের এত পয়সা..নাকি এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য কাজ করছে? বাড়িতে কি কোন ঝি-চাকর নেই? হয়তো কাল ভোরে আসবে। তাদের কাছ থেকে খবর পাওয়া যাবে। এবার সে শোবার জন্য তৈরী হচ্ছে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। সে ভেজানো দরজা খুলে দেখলো হেলেন।
-আপনাকে একটা অপ্রিয় কথা বলবো। তা শুনতে আপনার হয়তো খারাপ লাগবে, তবু না বলে পারছি না। হেলেন বলল, আমাদের ড্রাইভারের কোন দরকার নেই।
দরকার নেই?
–না।
–কিন্তু মিঃ আর্ল ডেসটার…।
–ওর কথা বাদ দিন, ও একটা মানুষ নাকি? আমি বলছি, আমাদের ড্রাইভারের কোন প্রয়োজন নেই।
–ম্যাডাম, আপনার হুকুম আমি মানতে পারছি না।
–তুমি জানো না, আমাদের টাকা-পয়সা কিছু নেই। সব ধারে চলছে।
–সে কি। কথাটা আমি মানতে পারছি না।
–দু-সপ্তাহ বাদে আর্ল-এর চাকরী থাকবে না। পাওনাদারদের দাবী মেটাতে এ বাড়ি পর্যন্ত বিক্রী করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেনাটা আন্দাজ করতে পারছো?
–আপনি হয়তো ঠিক জানেন না, তাহলে মিঃ ডেসটার আমাকে অ্যাপয়েন্ট করতেন না।
-এটা তোমার কোন পারমানেন্ট চাকরী নয়। যে কোন মুহূর্তে চলে যেতে বলা হতে পারে। আমি তাই বলছি।
-ম্যাডাম আপনার হুকুম আমি মানতে পারছি না। বৃথা ভয় দেখাবার চেষ্টা করবেন না। ডেসটার ছাড়া আমি কারুর কথা শুনতে নারাজ।
–আগের ড্রাইভার মাইনে না পেয়ে চলে গেছে।
–কিন্তু মিঃ ডেসটার বলেছেন ও পালিয়েছে।
-মাইনে না পেয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কথা শেষ করে হেলেন কোমরে গুঁজে রাখা একশো ডলারের একটা নোট ন্যাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই টাকাটা নাও, তোমার বখশিস, তুমি আমার স্বামীর প্রাণ বাঁচিয়েছে।
–মাপ করবেন, আমি নিতে পারবো না। আপনি আমাকে তাড়াবেন বলে এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। এসব আগে জানলে আমি মিঃ ডেসটারকে বাঁচাবার চেষ্টা করতাম না।
তার মানে?
–মানেটা কি আপনার কাছে স্পষ্ট নয়? যাক, ছাড়ুন ওসব, আমার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে। আপনি দয়া করে এ ঘর থেকে চলে যান, আমার ঘরে এত রাতে আপনাকে কেউ দেখলে আপনার মান-ইজ্জত সব যাবে।
-ঠিক আছে, আমি দেখে নেবো, বলে হেলেন চলে গেল।
হেলেন চলে যেতে ন্যাশ ভাবে, এখন থেকে তাকে হেলেন-এর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। তার সঙ্গে মেপে কথা বলতে হবে আর ওর গতিবিধির উপর নজর রাখতে হবে।
চোখে-মুখে জল দিয়ে ন্যাশ শুয়ে পড়ল। পরক্ষণেই কখন সে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন একটু দেরীতে ঘুম ভাঙায় ন্যাশ তাড়াতাড়ি কিচেনে চায়ের ব্যবস্থা করতে গেল।
হঠাৎ হেলেন ঘরে ঢুকে ঝাঁপিয়ে বলল, তুমি কিচেনে কেন? কে তোমাকে এখানে ঢুকতে বলেছে?
মিঃ ডেসটার আমাকে এ অধিকার দিয়েছেন। উনি আমার মনিব।
–রাখো তোমার মনিবের কথা! এ বাড়িতে আমি যা বলছি তাই হবে।
–আপনার কথা আমি শুনলাম, তবে মানতে পারবো না। বলে ন্যাশ কিচেন ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ফেরার পথে ফোন দেখতে পেয়ে তার বেরিলকে ফোন করার কথা মনে পড়ল। চারদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। ডায়াল করল।
-হ্যালো, বেরিল ফোন ধরেছে।
–আমি ন্যাশ বলছি।
–বল, বল। কাল থেকে একেবারে বেপাত্তা কেন? এরকম তো কোনদিন করিস না।
–একটা কাজ পেয়েছি। এখানে কতদিন থাকতে হবে জানি না। হেলেনের ব্যাপারটা খুলে বলল। তারপর বলল, কিন্তু এখানে এসে মহা ফাঁপরে পড়েছি। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।
–তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, ও একজন সংঘাতিক মেয়েছেলে। আচ্ছা, ও কি স্বামীসঙ্গ পায় না?
-মনে হয় না।
–কোন বয়ফ্রেণ্ড আছে কিনা খোঁজখবর নে।
–ঠিক আছে, যখন যেমন ঘটবে তোকে জানাবো। এখন ছাড়ছি।
ন্যাশ আস্তে আস্তে ঘরে গিয়ে ঢুকল। ওর নজরে পড়ল একটা ছোট টেবিলের ওপর জামাকাপড় উঁই করে চাপা পড়ে আছে একটা ফোন।
একটু পরে ফোনটা বেজে উঠল।
হেলেন ফোনে তার কাছ থেকে জানতে চাইল সে চলে যেতে রাজী আছে কিনা।
ন্যাশ জানালো, সম্ভব হচ্ছে না।
হেলেন ঝপাৎ করে রিসিভারটা নামিয়ে রাখে।
ন্যাশ ভাবতে লাগল, দুর্ঘটনাটা ঘটেনি বলে কি এখন হেলেনের সমস্ত রাগ তার ওপর গিয়ে পড়েছে?
-প্যাকার্ড-গাড়িটার নম্বর বা ড্রাইভারের মুখ সে স্পষ্ট মনে করতে পারল না।
ন্যাশ এরপর আলনার জামাকাপড়ের পকেটগুলো পরীক্ষা করল। বাজে কিছু কাগজপত্র পেল, কোন ঠিকানা পেল না। সে নিশ্চিত হল, ওগুলো আগের ড্রাইবারের।
ন্যাশ মনে মনে ঠিক করে নেয়, সে পাশের বাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপ জমাবে। তার সঙ্গে এ ড্রাইভারের নিশ্চয়ই দোস্তি থাকতে পারে, সেই সঙ্গে পেয়ে যেতে পারে ঠিকানাটাও। এরপর ডেসটার ফোন করে ন্যাশকে জানালে তাকে এগারোটা নাগাদ স্টুডিওতে পৌঁছে দিতে হবে আর চারটের সময় তুলে নিতে হবে। তারপর ঘরের কোন কাজ না থাকলে ন্যাশের ছুটি।
ন্যাশ বাড়তি কোন কথা না বলে থ্যাঙ্ক ইউ স্যার বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল।
হেলেন যাতে সাবধান হয়ে যেতে না পারে তার জন্য ন্যাশ ডেসটারকে হেলেনের কথা কিছু জানাল না।
তারপর নির্দিষ্ট সময়ে ন্যাশ ডেসটারকে প্যাসিফিক স্টুডিও-তে আনতে গেল। ডেসটার নামকরা পরিচালক ছিল একসময়ে, এখন বাতিল হয়ে গেছে।
এরপর ন্যাশ পাঁচটা নাগাদ বাড়ি ফিরে এসে কোন কাজ আছে কিনা জানতে হেলেনের ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ায়।
দরজায় টোকা মেরে সে বলে, আসতে পারি?
-কাম ইন, হেলেন বলল।
ন্যাশ ঘরে ঢুকে দেখল হেলেন ছোট্ট প্যান্ট আর ব্রেসিয়ার পরে আয়নার সামনে বসে প্রসাধন করছে। ন্যাশ ঘরে আসতে সে কয়েক সেকেণ্ড একনাগাড়ে তাকে দেখতে লাগল। অনেক ছলাকলা জানে। তার মনের মধ্যে একটা দাবান্ডল ধিকিধিকি করে অনেকদিন ধরেই জ্বলছে।
ন্যাশেরও শরীরের পারদ ক্রমশ চড়ছে। কিন্তু সে নিজেকে সংযত করে বলল, ম্যাডাম, এখন কি কোন কাজ আছে?
–না, কাজ নেই, হেলেন ন্যাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
–তাহলে আমি যাই?
–না থাকবে। আমি বড় নিঃসঙ্গ বোধ করছি।
ন্যাশ ভাবে, হেলেন ভাঙবে তবু মচকাবে না। সে দাঁড়িয়ে থাকে। হেলেন তাকে বসতে বলে, সে হেলেনের বিছানায় বসে পড়ল।
–তোমার আন্তরিকতায় আমি খুশী হয়েছি, তোমাকে তাড়াতে চেয়েছি, তাও তুমি যাওনি, তোমাকে আমার প্রয়োজন, হেলেন বলে।
–আমাকে? বিস্ময়ের সঙ্গে ন্যাশ জিগ্যেস করে।
–মিঃ ডেসটার সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ও আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। কি দিতে পেরেছে ও আমাকে? আমারও তো যৌবন বলে একটা জিনিষ আছে, বলে হেলেন ন্যাশের দিকে এগিয়ে আসে।
ন্যাশ কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। হেলেন এগিয়ে এসে ন্যাশকে তপ্ত বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বেশ কয়েকটা চুমু খেল এবং তাকে ভীষণভাবে আদর করতে থাকে।
ন্যাশ এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। কোনরকমে হেলেনের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ঘরের বাইরে থেকে সে শুনতে পেলো হেলেন তার যৌবনের উপেক্ষা সহ্য করতে না পেরে কাঁদছে।
ন্যাশ ভাবে, হেলেন কী তাহলে সত্যিই ভালো? ভালো না হলে কেউ নিজেকে এভাবে বিলিয়ে দিতে পারে? সংযত হয়ে তাহলে মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় পড়ে কাঁদতে পারতো না।
ন্যাশ ইন্টারকমের জন্যে অপেক্ষা করছিল। হয়তো হেলেন কোথাও বের হলে তার ডাক পড়বে। কিন্তু না, এলো না। এখন তার আর কোন কাজ নেই।
এই সুযোগে আগের ড্রাইভার লরেন্সের খোঁজ পেতে হবে। লরেন্স হেলেনের সবকিছু না জানলেও, এ ব্যাপারে বাড়ির কাজের লোক কাজে আসবে।
কিন্তু বাড়ির বাইরে যেতে গেলে তাকে সবকিছু দেখে সাবধানে বেরোতে হবে। তার আগে ড্রাইভারের মুখ খোলানোর জন্য একটা ছোট মদের বোতল সরাতে হবে।
ন্যাশ সারা বাড়ি, হেলেনর ঘর, বাথরুম সবকিছু দেখে নিল। হেলেনকে কোথাও দেখা গেল না। এবার সে বারে ঢুকে ছোট একটা মদের বোতল জামার ভেতরে ঢুকিয়ে নিল।
যাক, এবার ন্যাশ বাড়ি থেকে বের হয়ে বাঁ পাশের বাড়িটার কাছে এসে দাঁড়ায়। পাশের বাড়িটা একজন ব্যারিস্টারের। দোতলা, সুন্দর বাড়ি। ন্যাশ লোহার গেটের ভেতরে তাকিয়ে দেখতে পেল লনে একজন মাঝ বয়েসী মালী কাজ করছে।
ন্যাশ মালীর কাছে এগিয়ে তার নাম জিগ্যেস করল, সে জানাল তার নাম এনড্রুজ।
–ঐ বাড়ির ড্রাইভার লরেন্সকে তুমি চেনো?
–হ্যাঁ। ওকে তো কদিন ধরে দেখছি না।
–আচ্ছা, ও চাকরি ছাড়বে বলে কিছু বলেছিল?
উঁহু, হঠাৎই ওকে দেখছি না। বেশ ভালো লোক। কোন ঝামেলার মধ্যে সে থাকতো না।
–এ বাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দাওনা।
–সে এখন সাহেবের চেম্বারে গেছে।–ফিরতে রাত হবে। তুমি বরং একটু রাত করে এসে, দেখা পাবে।
-দেখি সময় পাই কিনা, বলে ন্যাশ বেরিয়ে এসে দক্ষিণের ফ্ল্যাট বাড়িটার কাছে এসে দাঁড়ায়।
ন্যাশ একটা গাড়ির ভেতর ড্রাইভারকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেল। ড্রাইভারের বছর পঞ্চাশ বয়স।
প্রাথমিক আলাপ সেরে ন্যাশ জানতে পারলো ঐ ড্রাইভার বছর চারেক কাজ করছে এখানে।
এবার ন্যাশ তার দিকে মদের বোতলটা এগিয়ে দিল। সে ছিপি খুলে খানিকটা মদ গলায় ঢেলে দিল। ড্রাইভার খুব খুশী।
–আমার আগের ড্রাইভার চাকরি ছেড়ে দিল কেন? ন্যাশ প্রশ্ন করল।
–ও চলে গেছে, তা তো জানি না।
–তুমি ওর বাড়ি চেনো? আমায় নিয়ে যাবে?
দুজনের ঠিক হল, সন্ধ্যের পর সাড়ে সাতটা নাগাদ সামনের কফি হাউসে ড্রাইভারের সঙ্গে ন্যাশ দেখা করবে।
বাড়ি ফেরার আগে ন্যাশ মদের বোতলটা ঝোঁপের মধ্যে ফেলে দিল।
ন্যাশ এবার বেরিলকে ফোন করল।
-হ্যালো, আমি ন্যাশ।
–তোর কথা ভাবছিলাম, কেমন আছিস।
-ভাল না, মনে হয় বিপদে জড়িয়ে পড়তে পারি। শোন, আমার এক ইনস্যুরেন্স এজেন্টের সঙ্গে আলাপ আছে। সে বছরে বহু টাকার কাজ করে আর ডেসটারকে চেনে। এ বাড়িটা ডেসটারের।
–জানি। বাড়ির কোন উইল আছে? ভবিষ্যৎ সম্পত্তির মালিক কে হবে? আর ইনস্যুরেন্সের নমিনি কে?
–সম্ভবত হেলেন।
–এটা কি তোর বন্ধু বলেছে?
–ও অনুমান করেছে।
–ওর অনুমানটা মিথ্যে।
–হঠাৎ তুই একথা বললি কেন?
–পরে তোকে সব বলবো। এখন রাখছি।
পরে ন্যাশ নির্দিষ্ট কফিবারে গিয়ে ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করে।
তারপর ড্রাইভার তাকে লরেন্সের বাড়িতে সাহেবের গাড়ি করেই পৌঁছে দেয়। ড্রাইভার কিছুক্ষণের জন্যে বাইরে বেরিয়ে যায়।
লরেন্সের বয়স বছর চল্লিশ হবে।
এক কামরার ফ্লাট। ঘরের মেঝেতে ফাটল, দেওয়ালে ছোপ আসবাব বলতে একটা লোহার খাট আর একটা আলনা।
লরেন্স বলে, তুমি কতদিন হল ও বাড়িতে কাজ করছো?
-এই তো কদিন হলো।
–খুব সাবধানে থাকবে।
–এ কথা বলছো কেন? তুমি ওখান থেকে স্বেচ্ছায় এসেছে না পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলে?
–আমি বাধ্য হয়েছিলাম।
–কেন?
–হেলেনের জন্যে।
–কেন ও তোমায় কি করেছিল?
করতে চেষ্টা করেছিল, পারেনি। সাহেবের মদে চুর হয়ে থাকাও ঐ হেলেনের জন্যে। ও একটা শয়তানি।
খুলে বল।
-কদিন চাকরি করার পর হেলেন একদিন আমার ঘরে এসে বলল, আমরা আর ড্রাইভার রাখতে পারছি না, তোমায় চলে যেতে হবে। তার জন্যে তোমায় একশো ডলারের এই নোটটা দিচ্ছি, তুমি ড্রাইভার ভালো, তোমার কাজ জুটে যাবে।
-নোটটা তুমি নিলে?
–না নিইনি, নিলে কপালে হাজতবাস ছিল।
–হেলেন আমাকেও একটা নোট দিতে চেয়েছিল। আমি নিইনি।
–ভাল করেছে। নোটটা আমায় দেবার সময় হেলেন আলপিন দিয়ে ওটা ফুটো করে দিয়েছিল।
–আলপিন দিয়ে কেন?
-একটা বদ উদ্দেশ্য ছিল, প্রথমটা আমি দেখতে পাইনি। পরে নোটের কোণের দিকে আমার চোখ পড়ে। বাণ্ডিল করার জায়গায় থাকলে তবু একটা কথা ছিল। নোটটা আমি পুড়িয়ে ফেলি। পুড়িয়ে ছাইটাও ফেলে দিয়েছি।
–একশো ডলারের নোট পুড়িয় ফেললে? এসবের কারণ কি?
-ওখানকার কাজের লোকটা আমায় বলেছে এবং আমার অনুমানই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
–কি বলেছে ও?
–আমার ওখান থেকে হেলেন পুলিশে খবর দিয়েছে। বলেছে, ওর একশো ডলারের একটা নোট চুরি গেছে। যথারীতি পুলিশ এল। হেলেনই আমায় দেখিয়ে দিয়েছিল। সত্যি বলতে কি, আমার কাছে নোটের কোন প্রমাণ না থাকলেও আমি বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম। পুলিশ হেলেনকে জিজ্ঞেস করেছিল নোটটা আপনি দেখলে চিনতে পারবেন?
নিশ্চয়ই। হেলেন বলেছিল, ওটা একেবারে চকচকে নোট ছিল। আর নোটের মাথার দিকে পিন দিয়ে ফুটো করা ছিল।
-ওটা কি আপনি করেছিলেন?
–না। নোটটা হাতে পাবার সময়ই আমি ওরকম দেখি।
পুলিশ তখন তন্নতন্ন করে আমার ঘর খুঁজলো, কিন্তু কিছুই পেল না। পুলিশ অফিসার দুঃখিত বলে বিদায় নিল। আমিও আর দেরী না করে পালালাম, কারণ হেলেন তখন রাগে জ্বলতে জ্বলতে আমাকে বলেছিল ঠিক আছে, এর প্রতিশোধ আমি নেব। না পালালে বিপদে পড়তাম।
-ন্যাশ গম্ভীরভাবে সব শুনলো৷ তারপরে বিদায় নিল। বাইরে বেরিয়ে চারদিকটা তাকিয়ে দেখে নিল। ধারে-কাছে কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বাড়ি ফিরে এসে ন্যাশের মনে একরাশ চিন্তা এসে জড়ো হলো।
ন্যাশ মনে মনে ঠিক করল যে, এবার হেলেন শয়তানি করলে সে কিছুতেই সহ্য করবে না। হেলেনকে কোনরকম অন্যায় করতে দেখলে, সে তার মুখের গ্রাস কেড়ে নেবে।
হঠাৎ ন্যাশের কি মনে হলো গ্যারেজে গিয়ে হাজির হল। গ্যারেজের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে দেখল হেলেনের স্ট্যাডিলক গাড়িটা ওখানে নেই।
বাড়িতে কেউ না থাকায় ন্যাশ সলিকে ফোন করল। সলি তার অফিসের বন্ধু। পুরো নাম জ্যাক সলি।
-হ্যালো, অপরপক্ষের গলা।
–আমি ন্যাশ বলছি।
–খবর কি তোমার?
–আমি মিঃ আর্ল ডেসটারের বাড়িতে ড্রাইভারের চাকরি নিয়েছি। ওর স্ত্রীর নাম হেলেন। বয়স ছাব্বিশের মতন।
-দেখতে কেমন?
–সহজে চোখ ফেরানো যাবে না। তবে হেলেন মোটেই সুবিধের নয়–খল, নিষ্ঠুর। অন্য জাতের মেয়ে।
–তাকে তোমার যৌবন দিয়ে তৃপ্ত করবে।
আমি শুনেছি, হেলেন ওর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। ওর তুলনায় বয়স অনেক কম। ওর পাশে বড় বেমানান লাগে।
-ঠিক আছে, তাহলে তুমিই হয়ে উঠলে নায়ক।
–শোন, গোপনে তোমাকে হেলেন, তার আগের স্বামী এবং মিঃ ডেসটারের সম্বন্ধে খোঁজ নিতে হবে। আর কদিনের মধ্যেই খবরটা তোমাকে জানাতে হবে।
-পারবে। তার জন্যে পারিশ্রমিক?
পাবে। পাঁচশো ডলার দেবো।
–রাজী। তবে একটা শর্ত আছে। এতে অফিসের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকবে না, টাকাটা পুরো আমাকেই দিতে হবে।
–আমার আপত্তি নেই। ছাড়ছি।
রিসিভার নামিয়ে রাখল ন্যাশ।
এরপর সে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
তারপরের দিন চারটে নাগাদ ন্যাশ গাড়ি নিয়ে স্টুডিওতে গেল। এসময় ডেসটার তাকে আসতে বলেছে।
এরপর নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে ন্যাশ দেখে ডেসটার টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।
হঠাৎ কি খেয়াল হতে ন্যাশ ডেসটারের ড্রয়ার ঘাঁটতে লাগল। প্ল্যাস্টিকের খাপে মোড়া একটা ফোল্ডারের ভেতর সে একটা দলিল পেল। ক্যালিফোর্ণিয়া জাতীয় বীমা কোম্পানীর সাড়ে সাত লাখ ডলারের একটা জীবনবীমা পলিসি। দারুণ ব্যাপার চমকে ওঠার মতো খবর।
ন্যাশ বুঝতে পারে, হেলেন কেন ডেসটারকে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল।
ন্যাশ ভাবলো হেলেন এবার ডেসটারের কোন ক্ষতি করতে চাইলে সেও ছেড়ে দেবে না। সে তক্কেতক্কে থাকবে।
এরপর ন্যাশ ডেসটারকে ডেকে কোনরকমে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে বাড়ির পথ ধরলো।
এর মাঝে দুদিন কেটে গেছে। ইতিমধ্যে ন্যাশ সলির অফিসে গিয়েছিল। সলির থেকে সে জেনেছে, হেলেনের আগের স্বামী হেলেনের জ্বালায় তিতিবিরক্ত হয়ে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ন্যাশ ভাবল, হেলেন যদি তার অজান্তে ডেসটারের ক্ষতি করতে চায় আর সে যদি তা জানতে পারে তাহলে সে হেলেনকে ভয় দেখাবে। হেলেন ভয় পেলে তখন রাজকন্যার সঙ্গে রাজ্যলাভ দুটোই হবে।
ন্যাশের চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল একটা গাড়ির আওয়াজে। সঙ্গে সঙ্গে গ্যারেজে এসে সে দেখল হেলেন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।
ন্যাশ ভাবে এই ফাঁকে ডেসটারের কাছ থেকে কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়া যাবে। এই ভেবে ন্যাশ ডেসটারের ঘরে প্রবেশ করল।
ন্যাশ দেখল ডেসটার বিছানায় শুয়ে একটা পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। তাকে দেখেই সেটা বালিশের তলায় চালান করল ডেসটার।
-স্যার, রাতে আপনি বেরোবেন?
–না।
–তাহলে আমি যাই।
–শোন, মিসেস ডেসটার তোমাকে চলে যেতে বলেছেন?
–হা স্যার, দুবার।
–আমি বললে তবেই যাবে। তুমি এখন এসো। ও হ্যাঁ, কাল সকাল দশটায় আমি বেরুবো। ন্যাশ ফিরে আসে, পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ে ডেসটারকে নিয়ে গাড়ি বের করে।
গম্ভীর মুখে ডেসটার বলে, আজ স্টুডিও যাবো না।
–স্টুডিওতে যাবেন না? তাহলে কোথায় যাবেন স্যার?
–এয়ারপোর্টে চল।
–বিস্ময়ের সঙ্গে ন্যাশ বলে, এয়ারপোর্ট? কোথায় যাবেন স্যার?
–সানফ্রান্সিসকো।
ন্যাশ জানে, বীমা কোম্পানীর হেড অফিস সানফ্রান্সিসকোতে।
ন্যাশ এবার আমতা আমতা করে বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলতাম।
-না না, বল কি বলবে?
–আমার টাকাপয়সার অবস্থা এখন ভালো নয়। সাহেবের অসুবিধা না হলে…
ডেসটার পকেট থেকে চেক বের করে তাতে পুরো দু-হাজার ডলার লিখে দিলো। ন্যাশ তো মহা খুশী।
এরপর ডেসটার জানায়, শনিবার থেকে আমি নিজেই বেকার। চাকরি আর জুটছে না। চাকরি গেলেই পাওনাদাররা আমায় ছাড়বে না।
ন্যাশ ভাবে, তাহলে হেলেনের কথাই ঠিক। আর বীমা কোম্পানীর টাকাটা পাবার জন্য হেলেন তার স্বামীকে খতম করে দিতে চাইছে। কিন্তু ন্যাশ তা কিছুতেই হতে দেবে না।
এরপর ন্যাশ ডেসটারকে বিমানবন্দরে ছেড়ে দিয়ে এসে ব্যাঙ্কে চেক ভাঙিয়ে নিজের নামে অন্য ব্যাঙ্কে জমা রাখে।
একসময় সে বাড়ি ফিরে আসে। শুয়ে পড়ে।
ইন্টারকমটা বেজে ওঠে খানিক বাদে।
–আমি হেলেন বলছি।
–বলুন ম্যাডাম।
–আল আজ রাতে আর বেরুবে না। তাই তুমি আমাকে সন্ধ্যেবেলা পামগ্রোভ ক্লাবে পৌঁছে দেবে।
–কটা নাগাদ?
–ঐ আটটা নাগাদ। তবে তোমার উর্দি পরে যাওয়া চলবে না। রাত একটায় ফিরিয়ে আনবে।
তবে কি পরে যাবো?
–ভদ্র জামাকাপড় পরে যাবে। সে ব্যবস্থা আমি করবো।
হেলেন ঝপাং করে রিসিভার নামিয়ে রাখে। ন্যাশ ভাবে, ডেসটার তাহলে হেলেনকে সানফ্রান্সিসকোর ব্যাপারে কিছু বলেনি? নিশ্চয়ই না।
পামগ্রোভ নাইট ক্লাবে অন্যদিন একাই যায় কখন ফেরে ন্যাশ জানতে পারে না। আবার ড্রাইভারের উর্দি পরতে বারণ করলে, কেন? ওর মাথায় কি দুষ্টু বুদ্ধি উঁকি মারছে?
দুপুরের পর আবার হেলেনের ফোন এল, সে জানালো ন্যাশের জন্যে সে নতুন পোশাক কিনে এনেছে।
আর পরের দিন ন্যাশ হেলেনের প্রকৃত রূপ জানতে সলির অফিসে গেল।
সলি তাকে জানায়, হেলেনের প্রথম স্বামীর নাম ছিল হার্বাট ভ্যান টমলিন।
–হেলেন কি ওর স্ত্রী ছিল? ন্যাশ জিগ্যেস করে।
–না রক্ষিতা হিসেবে রেখেছিল।
–আচ্ছা, হেলেন কাজকর্ম কিছু করত?
–হ্যাঁ, ফি ফি-ক্লাবে সিগারেট ফেরি করতো।
–বাঃ, চমৎকার কাজ।
–এরমধ্যে টমলিন বিশ-হাজার ডলারের জীবনবীমা করে। আর ওয়ারিশান করে হেলেনকে।
–উস!
–সবে কিস্তির প্রথম টাকা জমা দিয়েছে, তারপরই জানালা দিয়ে নীচে পড়ে ওর মৃত্যু হল।
–জানালা দিয়ে কিভাবে পড়ে গেল?
–জানালাটা ছিল বড়। তাতে মজবুত গ্রিল ছিল না। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হেলেনই ওকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দিয়েছে তাতেই ও মারা যায়। ছোট কোম্পানী, বেশীদূর এগোতে সাহস পায় না। তবু হেলেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, ঝামেলা এড়াতে ও সাত হাজারেই রাজী হয়ে যায়।
এরপর ন্যাশ সলির কাছে বিদায় নিল।
ওদিকে স্টুডিওতে আজ ডেসটারের শেষ দিন। দরকারী কাগজপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকী শুধু হুইস্কি বোতলগুলো আনা।
বড় স্যুটকেসে বোতলগুলো ভরে গাড়ি করে ন্যাশ ডেসটারকে বাড়ি পৌঁছে দিল।
বাড়িতে প্রবেশ করে ডেসটার ন্যাশকে একটা চিঠি দিয়ে বলে পোস্ট করে দিতে। চিঠিটা তার পকেটেই রয়ে গেছে।
এরপর গাড়ি গ্যারেজে তুলে, পোশাক বদলাতে গিয়ে ন্যাশ দেখে চিঠিটা সে পোস্ট করতে ভুলে গেছে।
তাতে ঠিকানা লেখা রয়েছে–
মিঃ এডুইন বার্নেট,
আইন উপদেষ্টা,
টোয়েনটিথ স্ট্রীট
লস এঞ্জেলস।
২. ন্যাশ ডেসটারের অনুরোধ
গত কয়েকদিন ধরে ন্যাশ ডেসটারের অনুরোধে তার পাশের ঘরে শুচ্ছে।
হয়তো ডেসটার নিজের নিরাপত্তার জন্যে কিংবা হেলেনের শয়তানীর কিছু আঁচ পেয়ে ন্যাশকে তার পাশের ঘরে শুতে বলেছে।
একদিন ন্যাশকে ডেসটার ডেকে পাঠায়। ডেসটারের ঘরে যেতে ন্যাশকে সে বসতে বলে। আর বলে, হেলেনকে আমি এখানে আসতে বলেছি?
ন্যাশ চলে যেতে চায় কিন্তু ডেসটার তাকে জানায়, তুমি আমাদের কথাবার্তার সাক্ষী থাকবে।
ন্যাশ ইতস্ততঃ করে, কারণ হেলেনের স্বভাবচরিত্র তার জানা আছে।
ইতিমধ্যে হেলেন ঘরে প্রবেশ করে। সে ন্যাশকে দেখে ডেসটারের কাছে তার এই ঘরে থাকার প্রতিবাদ জানায়, কিন্তু ডেসটার তাকে স্পষ্ট জানায়, ন্যাশ তাদের কথাবার্তার সাক্ষী থাকবে এবং এই ঘরে সে বসে থাকবে।
–সাক্ষী? হেলেন অসহিষ্ণুভাবে বলে কিসের সাক্ষী?
–তুমি কি কিছু আঁচ করতে পারছো না?
–তা কথাটা কি? স্পষ্ট করে বলবে?
–তোমার জন্যেই আমি মদ ধরেছি?
–আমার জন্য?
–হ্যাঁ। রাতদিন শুধু ক্লাবে ঘুরে বেরিয়েছে, বয়ফ্রেণ্ডেরও তো অভাব নেই।
–কি দিয়েছো তুমি আমায়? বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গে সময় কাটাতে আমি বাধ্য হয়েছি। তোমার কাছে আমার জীবন যৌবন উপেক্ষিত, এ ব্যাপারে তুমি কি দিতে পেরেছো?
–সে মন নিয়ে তুমি এসেছো কোনদিন? তুমি আমাকে বিয়ে করেছো আমার টাকার জন্যে। আর আমি তোমাকে ভুলবার জন্যে মদ ধরেছি। ফলে আমার কাজকর্মে ভাটা পড়েছে, চাকরী যেতে বসেছে। আর কেউ আমায় চাকরী দেবে। মদে ডুবে থাকার জন্যে বাজারে আমার বদনাম হয়ে গেছে।
ডেসটার একটু থেমে বলে, পাওনাদাররা আমাকে হেঁকে ধরবে। গাড়ি-বাড়ি বেচে কদিন চলবে?
–সে তো নিশ্চয়ই, হেলেন বলে।
-ডেসটার হেলেনের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে, তুমি আমার জীবনবীমার সাড়ে সাত লাখ ডলারের আশায় বসে আছো না? টাকাটা যাতে তুমি না পাও, তার ব্যবস্থা আমি করবো।
-তার আবার কী ব্যবস্থা করবে?
দুর্ঘটনা ঘটলেই টাকাটা তুমি পেয়ে যাবে, তা হবে না। আগেও তুমি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আমায় মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে, পারোনি।
–আমি? তোমাকে?
–হা হা, তুমি।
–মিথ্যে।
-মিথ্যে, ঠিক আছে মিথ্যে। জীবনবীমা পলিসির একটা শর্ত ছিল, একবছর প্রিমিয়াম দেবার পর সে আত্মহত্যা করলে, ওরা পুরো টাকাটা দিতে বাধ্য থাকবে। শর্তটা আমি সানফ্রান্সিসকো গিয়ে বাতিল করে এসেছি। আত্মহত্যা করলে বীমা কোম্পানী তোমাকে একপয়সাও দেবে না।
–তার মানে?
–তোমার আসল রূপ চিনতে আমার বাকী রইল না। আর বেকার জীবন কাটাতে আমি পারবো না। হাতে একটা পয়সা নেই, বেঁচে থেকে কি লাভ? এর চেয়ে আমার মরে যাওয়া হাজার গুণ শ্রেয়। তবে আত্মহত্যাকে দুর্ঘটনা বলে সাজাতে গেলে ফেঁসে যাবে। বীমা কোম্পানীর ম্যাডক্স একজন ঝানু গোয়েন্দা। তার চোখকে ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়।
হেলেন ডেসটারের এসব কথা সহ্য করতে না পেরে রেগেমেগে ঘর ছেড়ে চলে গেল। ডেসটার তখন ন্যাশকে বলে, তোমার ব্যবস্থা আমি করে যাবো।
-স্যার, একজনের ওপর রাগ করে জীবনটা শেষ করে দেবেন না, আমার এটা অনুরোধ। ন্যাশ বলে।
–ভেবে দেখব, ডেসটার বলে। এরপর ন্যাশ নিজের ঘরে চলে আসে।
ডেসটার রিসিভার তুলে ডায়াল করে। সে তার অ্যাটর্নিকে সব কথা জানাতে চায়।
মিঃ রোজারিওর গলা শোনা গেল, হ্যালো, গুড ইভিনিং মিঃ ডেসটার।
–আমি আপনাকে একটা জরুরী কথা জানাতে চাই, আমি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছি।
–সে কি?
এছাড়া আমার আর উপায় নেই।
–আমি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না, তবে সিদ্ধান্তটা নেবার আগে একটু ভেবে দেখবেন।
-আমি অনেক ভেবে দেখেছি। হ্যাঁ, আমি আত্মহত্যা করলে বীমা কোম্পানী যাতে এক পয়সাও না দেয়, সেটা আমি সানফ্রান্সিসকোতে গিয়ে ঠিক করে এসেছি। আর দেখবেন, আমার স্ত্রী আমার আত্মহত্যাকে যাতে অন্যকিছু বলে সাজাতে না পারে।
–আপনি এতটা এগিয়েছেন? আপনি একথা আর কাকে বলেছেন?
–আমার স্ত্রীকে আর গাড়ির ড্রাইভারকে। ড্রাইভারকে বলেছি আমার কথার সাক্ষী রাখার জন্যে।
–ঠিক আছে। তবে আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন।
ডেসটার রিসিভার নামিয়ে রাখে।
হেলেন তার নিজের ঘরে ডেসটারের চোদ্দপরুষ উদ্ধার করে গালিগালাজ করছে।
ঠিক তখনই বন্দুক ছোঁড়ার আওয়াজ। ন্যাশও গুলির শব্দটা পেল। হেলেন আর ন্যাশ দুজনেই ছুটে গিয়ে দেখল একটা চেয়ারে বসে ডেসটার রগের পাশে গুলি চালিয়েছে। রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে।
হেলেনের সাড়ে সাত লাখ ডলার পাবার স্বপ্ন মিটে গেল। সে উভ্রান্ত। সে ভাবে, পুলিশ সন্দেহ করতে পারে, টাকার লোভে সে তার স্বামীকে খুন করেছে। এটা আত্মহত্যা নয়।
-কিন্তু এটাকে খুনের ঘটনা বলে সাজাতে পারলে টাকাটা ঠিক হাতে চলে আসবে। এর জন্যে ন্যাশের সাহায্যের প্রয়োজন। ওকে হাতে রাখতে হবে। নইলে ও পুলিশে সবকিছু জানিয়ে দেবে।
এরপর হেলেন ন্যাশকে নানা ছলাকলায় কাছে বসিয়ে বলে, শোন, আমার কথা মন দিয়ে শোন, বীমার টাকাটা অন্যভাবে আমাদের হাতে আসবে। আর তার জন্যে তোমাকে আমার দরকার। যা পাবো তাতে তোমাকে আমাতে অর্ধেক ভাগ করে নেবো। আর তোমাকে ড্রাইভারী করে খেতে হবে না। তার জন্যে একটু বুদ্ধি খাঁটিয়ে কাজ করতে হবে।
-কিন্তু ধরা পড়লে? ন্যাশ বলে।
-ধরা পড়বো কেন? হেলেন তার দুরন্ত যৌবন উজাড় করে ন্যাশকে নিষ্পেষণ করতে করতে বলে, তাছাড়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।
–আমি? তুমি? রাজী হলাম। হেলেন ন্যাশকে চেপে ধরে চুমু দিতে থাকে।
তবে আমি যা বলবো তাই তোমাকে করতে হবে। আর সুবিধামত সাজাবার জন্য সময় চাই। ন্যাশ বলে।
-সে তো নিশ্চয়ই। এমনভাবে সব কিছু করতে হবে, যাতে কেউ কোন ব্লু না পায়। তবে যা করার তাড়াতাড়িই করতে হবে।
দুজনে ঠিক করল, ডেসটারের মৃতদেহটা কিচেনের পাশের ঘর স্টোররুমে একটা বড় ডীপ-ফ্রিজ আছে ওখানে রাখা হবে। তারপর একদিন রাতে এমন নির্জন স্থানে ফেলে রেখে আসা হবে যাতে হট করে লোকের নজরে পড়ার সম্ভাবনা কম।
ন্যাশ তার পকেটে হাত দিতে সেই বার্নেটকে লেখা ডেসটারের চিঠিটা তার হাতে ঠেকে। পোস্ট করা হয়নি।
চিঠিটা খুলে ন্যাশ পড়ল, তাতে স্পষ্ট লেখা জীবনবীমার টাকাটা যেন হেলেন না পায়, সেইজন্য সে আত্মহত্যা করেছে। হেলেন যাতে মিথ্যে কিছু সাজাতে না পারে। চিঠির সইয়ের সাক্ষী হিসাবে তার সেক্রেটারী মিস লেমক্স সই করেছে। চিঠিটা ন্যাশ হেলেনকে দেখালো না।
ন্যাশ ভাবে এই চিঠিটা এবং ডেসটারের রিভালবারটা নিজের কাছে, কোথাও নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে।
আপাতত ন্যাশ রুমাল দিয়ে মুড়ে ডেসটারের রিভালবারটা অন্য পকেটে রাখলো। ডেডবডিটা ডিপফ্রিজে রাখা হল।
এরপর ন্যাশ হেলেনকে বলল, একটু বেরোচ্ছি।
-কোথায় যাবে?
–রাতে কোথায় ডেড বডি ফেলে আসতে হবে, সেটা দেখে আসছি। তুমি এখন বাড়িতে থাকো ।
ন্যাশ গ্যারেজ থেকে গাড়ি বার করে সারা রাত খোলা থাকে এমন একটা ব্যাঙ্কে হাজির হলো।
তারপর ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে, ম্যানেজারের নির্দেশে একটা চিঠি লিখে, ব্যাঙ্কের লকারে ডেসটারের চিঠিটা আর রিভলবারটা জমা করিয়ে দিয়ে এলো।
ন্যাশকে হেলেন পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে সে এটা বুঝেছে, ও টাকার নেশায় মরিয়া হয়ে উঠছে। ফলে সহজে তাকে ঘাঁটবে না এবং তাকেও ওর মন জুগিয়ে চলতে হবে।
ন্যাশ বাড়িতে ফিরে আসতে হেলেন বলল, তুমি এখানেই শোবে।
ন্যাশ রাজী হয়ে গেল। এরপর দুজন দুরন্ত স্রোতে যেন ভেসে গেল।
সকালে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার সময় ন্যাশ হেলেনকে বলল, তোমাদের উকিল কে?
-ওর মুখে একদিন বার্নেটের কথা শুনেছিলাম।
–ওর ফোন নম্বর জানো?
–জানি। তবে কেন? এখনই ওকে খবর দিতে চাইছো কেন?
–ডেসটারের টাকাকড়ি কি আছে, তা জানা দরকার।
–তাহলে পাওনাদাররা যে খবর পেয়ে যাবে।
–ওদের মুখ বন্ধ করার জন্যে কিছু টাকার দরকার। অন্তত হাজার পাঁচেক ডলার দরকার।
শেষ রক্ষা করতে পারলে হয়।
–ঠিক হবে, তুমি শুধু আমার কথামতো চলো, তাহলেই হবে।
–আচ্ছা, ডেসটারের ব্যাপারে সকলে জিগ্যেস করলে কি বলবো? হেলেন জিগ্যেস করে ন্যাশকে।
–উত্তর আমার ভেবে রাখা আছে। বলবে, ডেসটার একটা টেলিভিশন কোম্পানীর চাকরির ব্যাপারে ইনটারভিউ দিতে গেছে। ব্যাপারটাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন নির্জন স্থানে ডেসটারকে কেউ খুন করেছে। তখন ইনস্যুরেন্স কোম্পানী পয়সা দিতে পথ পাবে না। এক চুল এদিক-ওদিক হলেই হাজতবাস।
-সে তো নিশ্চয়ই, হেলেন বলে।
-শোন, এখন আমার আর ডেসটারের সাক্ষী হিসেবে বাড়িতে একটা কাজের মেয়ে রাখতে হবে।
–একে টাকার অভাব, তাতে কাজের লোক রাখার কি দরকার?
–তাকে বলতে হবে ডেসটার অসুস্থ। কদিন বাদে ডেসটারকে স্যাটেরিয়ামে ভর্তি করা হবে।
–সে যদি ডেসটারকে দেখতে চায়?
–তখন বলবে, ও ঘরে ডাক্তার ছাড়া কারুর যাওয়া বারণ আছে এবং এই অসুখের কথা ও যেন চারদিকে বলে না বেড়ায়। তাহলে ডেসটারের টেলিভিশনের চাকরির কথা গোপন থাকবে না।
এবার একটা কথা, তোমায় কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
–টাকা আমার কাছে কোথায়? কি হবে টাকা?
–পাওনাদারদের দেনা মেটাতে হবে তো।
–হ্যাঁ, তা তো দরকারই। কিন্তু টাকা…।
-গ্যারেজে তিনটে গাড়ি আছে, ও থেকে একটা গাড়ি বেচে দিতে পারো। গাড়ি বেচেও আরো কিছু টাকা লাগবে। আমি কাজ করে আমার কিছু জমানো টাকা থেকেও কিছু দেব। তুমি তোমার গয়নাগাটি বেচে নয়তো বন্ধক দিয়ে কিছু টাকার জোগাড় করো।
-আমায় রাস্তায় দাঁড়াতে বলছো?
–হেলেন, পাঁচ হাজার ডলারের জন্যে তোমায় রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না। তোমার অনেক আছে। লক্ষ্মীটি অরাজী হয়ো না।
-না, না তা হয়না, কিছুতেই হয় না। হেলেন চীৎকার করে।
—ঠিক আছে, আমি চলি। পুলিশে গিয়ে বলবো, তুমি টাকার লোভে ডেসটারকে খুন করেছো। ঠিক আছে, তুমি যা বলছে তাই হবে। হেলেনের কথাটা বলতে বুক ফেটে যাচ্ছে।
থ্যাঙ্ক ইউ। প্রথমে গাড়ি বিক্রী করতে সানফ্রান্সিসকো যাবো। তারপর ফিরে এসে তোমার গহনা বন্ধক দেব, আমার ব্যাঙ্কের টাকাও তুলবো।
ন্যাশ বেরিয়ে গেল।
ন্যাশ বাড়ি ফিরে দেখে হ্যাঁমারস্টক নামের একজন লোক বসে। সে জানাল যে, সে মদের দোকান থেকে এসেছে। মিঃ ডেসটারের কাছে পাওনা টাকা নিতে এসেছে।
ন্যাশ জানালো, ডেসটার বাড়িতে নেই। একটা টেলিভিশন কোম্পানীতে ইন্টারভিউ দিতে গেছে। তবে আপনি বিল দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে পারেন। তবে আপনার সঙ্গে আমাদের কারবার এখানেই শেষ। অন্য দোকান থেকে মদ আনবো।
–থাক, থাক। আমার টাকা চাই না। ওনার মতো এমন শাঁসালো মক্কেল হাতছাড়া করা যায়!
-হ্যামারস্টক চলে গেল।
কিছু পরে হেলেন সঙ্গে করে একটি মেয়েকে নিয়ে এল।
ন্যাশ মেয়েটির দিকে তাকায়। বয়স উনিশ-কুড়ি। স্লীম, আকর্ষণীয়, সেক্সি ফিগার। পোশাকে আরো লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
জুলিয়ানকে ন্যাশকে দেখিয়ে হেলেন বলল, ওর নাম ন্যাশ। আমাদের ফ্যামিলি ফ্রেণ্ড।
হেলেন ন্যাশকে জুলিয়ানের কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বলল।
ন্যাশ বলল, কাজ বলতে তেমন কিছু নয়। মিসেস ডেসটারের স্বামী খুবই অসুস্থ। ওঁকে স্যানটোরিয়ামে ভর্তি করতে হবে। ডাক্তার দিনরাত ওঁকে ওষুধে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। বাইরের কেউ যাতে ওঁনার ঘরে না যায়, তা তুমি দেখবে। কারণ তাহলে উনি ভীষণ ক্ষেপে যাবেন। আর মিসেস ডেসটারকে তুমি একটু সঙ্গ দেবে, উনি খুবই অসহায় বোধ করছেন।
-ঠিক আছে।
তারপর নির্দিষ্ট দিনে বিকেলের দিকে ন্যাশ গাড়ি রাখার জায়গায় বুইক-টা রেখে পাহারার লোককে বলে, সে রাতে এসে গাড়ি নিয়ে যাবে।
ন্যাশ দৌড়ে বাড়ি এসে শুনল জুলিয়ান বাড়িতে নেই। ন্যাশ হেলেনকে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিতে বলে। এরপর সে দৌড়ে নিজের বাড়িতে যায়। আগেই সে নিজের জামাকাপড় স্যুটকেসে ভরে নিয়েছে। এখন সে ডেসটারের জামা, কাপড়, জুতো, উটের লোমের ওভারকোট এবং কান ও মুখের অনেকটা অংশ জুড়ে থাকা একটা বড় টুপী।
ন্যাশ এখন আর্ল ডেসটার-এ পরিণত হয়েছে। যাকে স্যাটেরিয়ামে ভর্তি করা হবে।
একটু পরেই জুলিয়ান এসে গেল।
হেলেন ওকে চিন্তিত মুখে বলল, তুমি এসে গেছ, ওদিকে ন্যাশের পাত্তা নেই। এদিকে মিঃ ডেসটার তৈরী হয়ে আছেন, তাকে এখুনি নিয়ে যাওয়া দরকার।
–আমি আপনাকে সাহায্য করবো।?
–না, তার কোন দরকার নেই, আমিই ওঁকে আস্তে আস্তে নিয়ে যেতে পারবো।
চমৎকার অভিনয় করছে হেলেন। জুলিয়ান তাকে কোন সন্দেহ করতে পারছে না।
তারপর জুলিয়ানকে বসবার ঘরে বসতে বলে ডেসটারকে আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে আনছে। ন্যাশ টুপিটা মুখের দিকে নামিয়ে দিয়েছে।
সিঁড়ির আলো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। জুলিয়ান শুধু ন্যাশের পিছন দিকটাই দেখছে।
তারপর হেলেন জুলিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ন্যাশ এলে বোলো ডেসটারকে নিয়ে স্যানটোরিয়ামে গেছে।
হেলেন গাড়িটা চালিয়ে খানিকটা অন্ধকার জায়গায় এসে গাড়িটা থামায়। স্যুটকেশ সঙ্গে আনা হয়েছে।
ন্যাশ তাড়াতাড়ি ডেসটারের পোশাক ছেড়ে নিজের পোশাক পরে একরকম হাঁপাতে হাঁপাতে ডেসটারের বাড়িতে হাজির হয়ে জুলিয়ানকে দেখে বলে, একটা দরকারী কাজে গেছিলাম। পথে বুইকটা বিগড়ে গেল। শেষে বাসে আসতে হলো।
ন্যাশ জুলিয়ানের মুখে শুনল, ম্যাডাম মিঃ ডেসটারকে নিয়ে স্যানটোরিয়ামে চলে গেছে।
-ম্যাডাম চলে গেছে? ন্যাশ অবাক হবার ভান করল।
–ঠিক আছে তাহলে আমি চলি।
–আমিও যাবো, এই ফাঁকা বাড়িতে আমি একা থাকব না, বলে জুলিয়ান জেদ ধরল। সে কিছুতেই একা থাকতে চাইল না। ন্যাশ অনেক বোঝাবার চেষ্টা করল। তখন ন্যাশ ওকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি দিয়ে দিল। ন্যাশ আবার গাড়িতে ফিরে এল। হেলেনকে বলল, মেয়েটা ঝামেলা করছিল, দরজা বন্ধ করে দিয়ে এলাম।
হেলেন স্যানটোরিয়ামের দিকে গাড়ি চালাল। ন্যাশ মাথাটা নামিয়ে বসেছে। যাতে চট করে কেউ তাকে দেখতে না পায়। কিছুদূর গিয়ে হেলেন দেখল মোটর সাইকেলে একজন পুলিশ এদিকে আসতে আসতে বাঁ-দিকের রাস্তায় ঢুকে গেল। ওরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
ইতিমধ্যে ওরা বন-বিভাগের এলাকায় প্রবেশ করেছে। নির্জন জায়গা, এ জায়গাটা ন্যাশ আগে দেখে গেছে। তারা একটা কুঁড়েঘরের কাছে এসে পৌঁছাল। ঘরটায় তালা দেওয়া আছে। কয়েকটা টান মারতেই তালাটা খুলে গেল।
তারা প্রবেশ করল ঘরে। ঘরের কোণের দিকে তারা কিছুটা দড়ি খুঁজে পেল। ন্যাশ প্ল্যান করেছে হেলেনকে দড়ি দিয়ে বাঁধবে। পরদিন সোমবার। বনবিভাগের লোকেরা এসে হেলেনকে উদ্ধার করবে। হেলেন যেন তাদের কাছে কেঁদে কেটে বলে, সে গুণ্ডাদের হাতে পড়েছিল।
আচমকা ন্যাশ হেলেনের চোয়ালে একটা ঘুষি মেরে বসল। হেলেন ছিটকে পড়ল। বিস্ময়ে হতবাক হেলেন। তার চোয়ালে ভীষণ চোট লেগেছে।
–এভাবে আমাকে মারার অর্থ কি? হেলেন বলে।
বাঃ, তোমাকে দেখাতে হবে না, গুণ্ডারা তোমাকে মারধোর করেছে এবং তুমি ধর্ষিতাও।
–এখন তুমি আমাকে ধর্ষণ করবে নাকি?
-ইচ্ছে তো আছে। কথা শেষ করেই ন্যাশ হেলেনকে আবার একটা ঘুষি মারে। এবারের ঘূষিটা একটু জোর হয়ে গেছে। আসলে সে এখন ভীষণ উত্তেজিত।
হেলেন জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল, ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরছে। ন্যাশ এটাই চাইছিল।
এরপর ন্যাশ অচৈতন্য হেলেনের দেহটা তুলে ধরে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। ওর স্কাটা খুলে ওর মুখটা বাঁধলো। ফ্রকটা কয়েক জায়গায় ছিড়লো। হেলেনের প্যান্টিটা ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
যদিও তাকে ধর্ষণের মানসিকতা এখন ন্যাশের নেই, তবুও সে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে অচৈতন্য হেলেনকে মিনিট খানেকের জন্য ধর্ষণ করেই পোষাক পরে নেয়।
এরপর কুঁড়ে থেকে বেরিয়ে এল। আগেই স্যুটকেসে ডেসটারের পোশাকগুলো ভরে নিয়েছে।
রোলস-টা অন্ধকার গলিতে ফেলে রেখে স্যুটকেশ হাতে বাসস্ট্যাণ্ডের দিকে এগিয়ে যায়। মাথায় চিরুনি বুলিয়ে খানিকটা ভদ্রস্থ হয়ে নিল সে।
বাস ডিপোয় গিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে, নমোন্যাল চার্জ দিয়ে, মিথ্যে পরিচয় দিয়ে ন্যাশ স্যুটকেসটা জমা করে দিলো। আগের রাতের বুইক-টায় সে চড়ে বসল। এরপর সে খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে ফিরল। ইন্টারকমটা বেজে উঠল।
ফোনে জুলিয়ান বলে উঠল, দরজা খুলে দাও।
-হ্যাঁ, এখুনি যাচ্ছি।
তারপর ন্যাশ এসে দরজাটা খুলে জুলিয়ানকে খুশী করার জন্যে ভীষণভাবে আদর করতে লাগল।
এরপর জুলিয়ান বলল, এখন পর্যন্ত হেলেন কোন ফোন করেনি।
-হেলেন ফোন করেনি? ন্যাশ অবাক হবার ভান করে।
–আমি স্যানটোরিয়ামে ফোন কোরেছিলাম, ওরা জানালো, এখনও পর্যন্ত ও নামে কেউ আসেনি। আমার যেন কেমন ভয় করছে।
–ভয়ের কি আছে?
–না, মনটা কু-ডাকছে। তুমি পুলিশে একটা ফোন করো। কেমন যেন গোলমেলে লাগছে।
ন্যাশ ভাবল পুলিশকে ফোন না করলে জুলিয়ান তাকে সন্দেহ করতে পারে, তাই সে ডায়াল ঘোরাতে বাধ্য হল।
পুলিশ ফোন ধরল, হ্যালো।
–আমি আর্ল ডেসটারের বাড়ি থেকে ফোন করছি।
–বলুন কি হয়েছে?
–মিঃ ডেসটারের সঙ্গে ওঁর স্ত্রী গেছেন ওঁকে স্যানটোরিয়ামে ভর্তি করানোর জন্যে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন খবর না পেয়ে নার্ভাস ফিল করছি।
-ঠিক আছে, আমরা দেখছি। আপনার নাম কি?
ন্যাশকে এবার নিজের সত্যি নাম জানাতে হল। কারণ জুলিয়ান সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর ন্যাশ বার্নেটকে ফোন করে ঐ একই কথা বলল। বার্নেট বলে, কি হলো আমায় খবর দিও।
–ঠিক আছে স্যার।
এই নাটকটুকু করতে হলো কেবল জুলিয়ানের মনে যাতে কোনরকম সন্দেহ না জাগে।
একটু পরে ইন্সপেক্টর ব্রমউইচ এবং সাব ইন্সপেক্টর লুইস এল।
ব্রমউইচ ন্যাশকে জিজ্ঞেস করল, এখন বাড়িতে কে কে আছেন?
–আমি আর জুলিয়ান।
–তুমি এখানে কি করো?
ড্রাইভারী করছি প্রায় মাসখানেকের মতো।
–দুজনেরই গাড়ি চালাও?
–হ্যাঁ, তবে মিঃ ডেসটারের বেশী।
–ওরা যখন স্যানটোরিয়ামে গিয়েছিল, তখন তুমি বাড়িতে ছিলে?
না, মিসেস ডেসটার তখন আমাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিল।
-তোমার কি মনে হয়, তারা স্যানটোরিয়ামে না গিয়ে অন্য কোথাও যেতে পারে?
-হা স্যার, মিঃ ডেসটার প্রচুর মদ খান। তার চাকরির খবরও ভালো নয়, আবার বাজারে প্রচুর দেনাও আছে। মিঃ ডেসটার আমায় একথা বলেছেন। আমাকে রাখা একটা বাড়তি খরচ মিসেস ডেসটার এ ব্যাপারে হুশিয়ার ছিলেন। তাই আমার মনে হয়, ওরা পালিয়েছে।
–পালিয়েছে? কোথায় যেতে পারে?
–তা বলতে পারছি না। আবার নাও পালাতে পারে। এটা শুধু আমার ধারণা।
–এর আগে তুমি কি করতে?
–এক বিজ্ঞাপন কোম্পানীতে কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করতাম। কোম্পানীর নামটাও ন্যাশ জানাল।
ব্রমউইচ এবার জুলিয়ানকে জিজ্ঞাসা করল, তোমার নাম?
-জুলিয়ান।
–তুমি এখানে কি করো?
–মিঃ ডেসটার অসুস্থ থাকায়, আমি মিসেস ডেসটারকে কাজে সাহায্য করতাম।
–তুমি মিঃ ডেসটারকে দেখাশুনা করতে না?
-না, স্যার। আমাকে প্রথম দিনেই বলে দেওয়া হয়েছে, ওষুধের জন্য মিঃ ডেসটার রাতদিন ঘুমিয়ে থাকেন। আমি যেন তার ঘরে গিয়ে তাকে বিরক্ত না করি। তাহলে উনি খুব চেঁচামেচি করবেন। আমিও যেতাম না ওঁনার ঘরে।
–আচ্ছা মিঃ ডেসটারকে স্যানটোরিয়ামে কে নিয়ে যায়।
–মিসেস ডেসটার।
–ন্যাশ তখন বাড়িতে ছিল?
–না। মিসেস ডেসটার তাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলেন। ও আমাকে একথা বলেছে।
–তুমি ন্যাশকে ভালোবাসো?
–না, আমার ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।
–আচ্ছা, মিঃ ডেসটারকে নিয়ে যাওয়ার সময় তুমি তার মুখ দেখেছিলে।
-না। আমি ওদের পেছনটা দেখেছি। সিঁড়ির আলো তখন কম থাকায়, আমি ভালো করে তাকে দেখতে পাইনি।
–তখন মিঃ ডেসটারের পরণে কি পোশাক ছিল?
জুলিয়ান তার নিখুঁত বিবরণ দিল।
এরপর ন্যাশকে ডাকা হয় আবার।
–তুমি কোথায় থাকো?
–গ্যারেজের উপরে একটা ঘরে।
–আর কেউ থাকে তোমার সঙ্গে।
–না স্যার। আমি একাই থাকি।
ব্রমউইচ ন্যাশের ঘর সার্চ করে সন্দেহজনক কিছুই পেল না।
এরপর ব্রমউইচ মিঃ এ্যাণ্ড মিসেস ডেসটারের ঘর দেখতে চাইল। জুলিয়ান তাকে নিয়ে গেল।
-তুমি রাতদিন এখানে থাকো?
–না। জুলিয়ান বলে।
অন্য সময় কি করো? এখানে কতদিন কাজ করছো?
–কলেজে পড়ি। এখানে দিন কয়েক হলো কাজ করছি।
–তোমার নিশ্চয়ই বয়ফ্রেণ্ড আছে?
–আছে।
–এ বাড়িতে কখনো এসেছে?
–না।
ইদানিং মিঃ এ্যাণ্ড মিসেস ডেসটারের সম্পর্ক কেমন ছিল।
-আমি বলতে পারবো না। আমি এসে থেকেই দেখি মিঃ ডেসটারের ঘর বন্ধ। সুতরাং তাদের আমি কথা বলতে দেখিনি।
ওদের কথার মাঝে ন্যাশ বলল, সম্পর্ক খুব একটা সুবিধের ছিল না। দেনা নিয়ে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারত না। তবে মিঃ ডেসটার বড় ভালো মানুষ। ওঁকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম বলে উনি আমাকে চাকরি দেন। ওঁরা দুজনে আলাদা ঘরে শুতেন।
মিঃ এ্যাণ্ড মিসেস ডেসটারের ঘরে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল না। এরপর মিসেস ডেসটারের ঘরটাও ব্রমউইচ দেখল। তার ঘরে ড্রয়ার খুলতে গহনাগাটি বেরিয়ে পড়ল। অনেক গহনা। মেয়েরা কোথাও পালাতে গেলে এগুলো আগে নেবেই। ব্রমউইচ মন্তব্য করলেন, তাহলে ওরা পালায়নি। দেখা যাক, কোথায় আছে। এরপর তারা আরো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে গেল।
জুলিয়ান ন্যাশকে বলল, আমি বাড়ি যাবো।
-তুমি চলে গেলে আমি একা হয়ে যাবো। হেলেন নিশ্চয়ই পাওনাদারদের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
–তাহলে তো মাইনেও মার গেল। জুলিয়ান বলে।
-আমারও কম টাকা লোকসান হবে না। তাহলে আমাদের দুজনের তো একই অবস্থা। ন্যাশ এগিয়ে গিয়ে চুমু খায় জুলিয়ানকে। বলে, বাড়িতে একটা খবর দিয়ে দাও ফোন করে।
জুলিয়ানও যেন এ সোহাগটুকু চাইছিল। সে ন্যাশের তপ্ত বুকের মধ্যে মিশে গেল। ন্যাশের যদিও এসব ভালো লাগছে না তবুও জুলিয়ানকে সে দেখাতে চায় যে ওদের চলে যাবার মধ্যে সে নেই। নেই তার মনে পাপও।
জুলিয়ান নিজেকে ন্যাশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে বাড়িতে ফোন করে এল।
পরের দিন সোমবার। বেলা গড়িয়ে গেছে।
ন্যাশ অশান্তভাবে ঘরে পায়চারী করছে। জুলিয়ান নগ্ন অবস্থায় শুয়ে ঘুমচ্ছে। তার দিকে তাকিয়ে ন্যাশের এতটুকু উত্তেজনা জাগছে না মনে।
ন্যাশ দেওয়াল ঘড়িতে দেখল অনেক বেলা গড়িয়ে গেছে। হেলেন না আসায় তার আকাশ পাতাল চিন্তা হচ্ছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বন-বিভাগের লোকেরা কাজে এসে হেলেনকে খুঁজে পেয়েছে।
ন্যাশ বারে গিয়ে হুইস্কি খেল। ভাবে, মনটাকে চাঙ্গা রাখা দরকার।
হঠাৎ কি খেয়াল হতে সে ডায়াল করতে থাকে।
ন্যাশ বার্নেটকে ফোন করে জানাল যে, মিসেস ডেসটার এখনো বাড়ি ফেরেনি। বার্নেট জানাল, তার সঙ্গে পুলিশের বড় কর্তার আলাপ আছে। তাকে সে বলে দেবে। ন্যাশ তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখল।
ন্যাশ এবার জুলিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখল, সে সাংঘাতিক লোভনীয় অবস্থায় এখনও ঘুমিয়ে আছে। ওর কাছে নিজেকে সঁপে দেবার ইচ্ছে ন্যাশের আদৌ নেই।
এখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজতে চলেছে। ব্রমউইচের সঙ্গে দেখা করলে হেলেনের কিছু খবর পাওয়া যেত। কিন্তু যাওয়ার আগে জুলিয়ানকে জানিয়ে না গেলে, সে ঘুম থেকে উঠে সন্দেহ করতে পারে।
ন্যাশ জুলিয়ানের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সে ও ন্যাশকে প্রবলভাবে আঁকড়ে নিজের দিকে টানতে থাকে। ও মেয়ে দারুণ সেক্সি।
ন্যাশ তাকে জানায়, হেলেন এখনও ফেরেনি।
–ফিরবে কিনা সন্দেহ আছে। জুলিয়ান বলে।
–একথা বলছো কেন?
–কিডন্যাপ করেছে কিনা কে জানে।
–শোন, আমি এখন থানায় যাচ্ছি। এখুনি চলে আসবো।
জুলিয়ান ন্যাশকে কিছুতেই ছাড়বে না। সে কামনার তীব্র আগুনে তাকে যেন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে চাইছে। ন্যাশও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তারও কামনা বাসনা আছে। ন্যাশ ঘন্টাখানেক জুলিয়েনের উষ্ণ সান্নিধ্যে থেকে থানায় গেল।
থানায় গিয়ে ব্রমউইচের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞেস করল, স্যার মিসেস ডেসটারের কোন খোঁজ পেলেন?
-না, এখনো কোন খবর পাইনি। কর্তা-গিন্নী একেবারে বেপাত্তা। ওঁরা দেনার দায়ে পালিয়েছে। তবে আমাদের দুজন সাইকেল পুলিশ ওদের দেখেছে।
–তখন ওরা কোথায় যাচ্ছিল?
–তা ওরা বলতে পারল না। তবে মিসেস ডেসটার রোলস গাড়িটা চালিয়ে যাচ্ছিল।
–স্যুটকেসটা পাওয়া গেছে?
–না, পাওয়া যায়ান।
–মিঃ ডেসটারের পক্ষে অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে যাওয়াও তো সম্ভব নয়।
তবে ধরা পড়ে যাবে।
–মিস জুলিয়ান বলছিল, কেউ ওদের কিডন্যাপ করতে পারে।
–না জানা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
–আমি চলি স্যার।
ন্যাশ থানা থেকে বেরিয়ে আসে।
রাস্তায় খানিকক্ষণ ঘুরে সে বাড়ি ফিরে আসে।
জুলিয়ান নগ্ন অবস্থায় একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল।
ন্যাশ জানতে চায় কেউ এসেছিল?
-না।
–কেউ ফোন করেছিল?
—উঁহু, বলে জুলিয়ান ন্যাশকে জড়িয়ে ধরে খাটের দিকে টেনে নিয়ে গেল। ন্যাশও তাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। ফলে একে অপরকে চরম সুখের মাঝে মিলিয়ে দিতে থাকল।
তবু ন্যাশের মনে উৎকণ্ঠা। ফলে আর এসময় জুলিয়ানের উষ্ণ সান্নিধ্য তার ভালো লাগছে না।
ন্যাশ বেরোবার জন্যে তৈরী হতে থাকলে জুলিয়ান তাকে ছাড়তে চায় না। জুলিয়ান জেদ ধরে তাকে খেয়ে-দেয়ে যেতে হবে। লাঞ্চের পর জুলিয়ান ন্যাশকে নিয়ে আবার মেতে উঠলো। এটা সে আগেই ভেবে রেখেছিল। ন্যাশ প্রথমটা না না করেও পরে ওকে তুষ্ট করে। তারপর ন্যাশ কখন ঘুমিয়ে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙলো অন্ধকার নেমে এসেছে। জুলিয়ানকে দেখলো, তখনও অকাতরে ঘুমচ্ছে।
ন্যাশ বুইক-টা নিয়ে বেরুলো এবং গাড়িটা একটা গোপন জায়গায় সে রাখবে যেখান থেকে সহজে কারোর নজরে আসবে না এবং কোথায় রাখবে তাও সে মনে ঠিক করে নিয়েছে।
ন্যাশ একটা ঢিপির আড়ালে বুইক-টা চালিয়ে রাখল। তার সঙ্গে সে একটা পেনসিল টর্চ এনেছে। ন্যাশ চারদিকটা আগে ভালো করে দেখে নিল। এত দূরে নিশ্চয়ই পুলিশ পাহারা থাকবে না। ধারে-কাছে কাউকে দেখতে না পেয়ে সে নিঃশব্দে হেঁটে বনবিভাগের নির্দিষ্ট ঘরটার সামনে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ ন্যাশের মনে হয়, ওখানে পুলিশ ওঁৎ পেতে বসে নেই তো? থাকলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করবে। তবু ন্যাশ ফিরে যেতে পারে না। এতটা পথ এসে কুঁড়েটা না দেখে সে ফিরে যাবে না, কপালে যাই থাক।
ঘরে ঢুকে ন্যাশ দেখল হেলেন ঘরের মাঝে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ন্যাশ বলে হেলেন কি এখন ঘুমচ্ছে? তার পায়ের শব্দ টের পায়নি?
ন্যাশ হেলেনের গায়ে হাত দিয়ে হাতটা সরিয়ে নেয়। সে চমকে উঠল। আবার সে হাত রাখে, যাচাই করার জন্যে।
ন্যাশ বুঝলো হেলেন আর বেঁচে নেই। আসলে তারই উত্তেজনার বশে জোরে মারা ঘুষিতেই হেলেন প্রাণ হারিয়েছে।
এখন তাকে এখান থেকে পালাতে হবে। ন্যাশের মধ্যে একটা মৃত্যুভয় দানা বেঁধেছে।
ন্যাশ বেরতে যাবে, এমন সময় দেখল একটা লাল আলো জ্বালিয়ে পুলিশের গাড়ি এদিকেই আসছে। এখন পালাতে যাওয়া মানে নিজেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া।
হঠাৎ ন্যাশের নজরে পড়ল দেওয়ালের দিকে চারটে মুখ খোলা পিপে রয়েছে। ওর একটাতে সে ঢুকে পড়ে।
ব্রমউইচ এবং লুইস এখানে এসে হেলেনকে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখল। তারা পরীক্ষা করে দেখল হেলেন মারা গেছে। ব্রমউইচ বলল, ভাবছি মিসেস ডেসটারকে কে বা কারা খুন করল। কেসটা যদি কিডন্যাপিং হয় তাহলে কাছে-পিঠে মিঃ ডেসটারের লাশ পড়ে থাকার কথা। ব্যাপার খুব জটিল মনে হচ্ছে।
কুঁড়ে ঘর হলেও পাশের ঘরে ফোন আছে। ব্রমউইচ বড়সাহেবকে ফোন করল।
–স্যার মিসেস ডেসটারের খোঁজ আমরা পেয়েছি। তবে সে মৃত।
–ডেড? বড় সাহেবের মুখ কুঁচকে ওঠে।
–হ্যাঁ স্যার, আমরা খুব চেষ্টা চালাচ্ছি। সংবাদ মাধ্যমগুলো যেভাবে আমাদের সমার্লোচনা করতে শুরু করেছে, তা বন্ধ করতে আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করবো না স্যার।
-খবর পাওয়া মাত্রই আমাকে জানাবে।
নিশ্চয়ই স্যার। এবার বডিটা সরাতে হবে।
–ঠিক আছে, আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি।
ব্যাপার খুব ইলেও পারের খোঁজ ওঠে।
–থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।
ব্রমউইচ ফোন রেখে দিল। ঘর ছেড়ে তারা বেরিয়ে যেতেই ন্যাশ পিপে থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। তাড়াতাড়ি ঝোঁপ-ঝাড়ের মধ্যে দিয়ে বুকে হেঁটে সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তার হাত-পা ছড়ে যাচ্ছে। রক্তও বের হচ্ছে দু-একটা জায়গা থেকে। একটা কাঁটার তারে বাঁ-হাতের জামাটাও ছিঁড়ে গেল।
পুলিশের গাড়িটাকে চলে যেতে দেখেই মাটি থেকে উঠে একরকম দৌড়তে থাকে ন্যাশ। কোনরকমে ঢিপিটার কাছে পৌঁছে, তাড়াতাড়ি বুইক-টায় উঠে সে স্টার্ট দেয়। ভীষণ জোরে গাড়ি চালাচ্ছে সে। অনেকটা পথ পেরিয়ে সে একটা ফাঁকা জায়গায় এল।
সে পার্কিং জোন খুঁজতে থাকে। ইতিমধ্যে চুলটাও সে আঁচড়ে নিল। এভাবে বাড়িতে ঢুকলে জুলিয়ান জেরায় জেরায় তাকে অস্থির করে তুলবে। যদিও ন্যাশ তাকে ভয় পায় না। জড়িয়ে ধরে কয়েকটা চুমু খেলেই সে উত্তেজিত হয়ে পড়বে। সে ওষুধ তার জানা আছে। কিন্তু জামা কাপড়ের এমন অবস্থার সপক্ষে একটা সঠিক উত্তর তাকে খাড়া করতে হবে।
কিন্তু কি কথা বলবে? ন্যাশ ভাবতে থাকে।
একটু আগে এক পশলা বৃষ্টির ফলে রাস্তায় দু-এক জায়গায় জল জমে আছে।
ন্যাশ তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে সামনের একটা সিগারেটের দোকানের দিকে এগোতে গিয়ে ইচ্ছে করে পড়ে গেল।
সিগারেট বিক্রেতা তাড়াতাড়ি ছুটে এসে তাকে তুলে ধরে। জিজ্ঞেস করে, লাগেনি তো?
-না, তেমন লাগেনি। দু-এক জায়গা ছিঁড়ে গিয়ে সামান্য জ্বালা করছে। আমি বাড়ি গিয়ে ফাস্ট-এইড করে নেব। বলে ধন্যবাদ জানিয়ে ন্যাশ আবার গাড়িতে উঠে গাড়িতে স্টার্ট দেয়। এখন তাকে সাক্ষী-সাবুত তৈরী রেখে কাজে এগোতে হবে। যাতে সে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে।
বাড়ি ফিরতে জুলিয়ান-কি করে তোমার অবস্থা হোল জিজ্ঞেস করায় ন্যাশ বলল, তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পিছল রাস্তায় পড়ে গেছি। সিগারেটের দোকানের লোকটা এসে আমাকে তুলল।
–এত তাড়াহুড়োর কি আছে?
-করবো না? তোমাকে বলে গেছি এখুনি আসবো। ঐ তাড়াতাড়ি আসতে গিয়েই যত গণ্ডগোল।
-তুমি আমায় খুব ভালোবাসো না? জুলিয়ান ন্যাশকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে। ন্যাশও শরীরের ভাষায় তা জুলিয়ানকে বুঝিয়ে দেয়।
এরই মধ্যে ন্যাশ জিজ্ঞেস করে, কেউ ফোন করেছিল। জুলিয়ান মাথা নেড়ে বলে, এক পাওনাদার। ন্যাশ তখন কেউ দেখা করতে এসেছিল কিনা জিজ্ঞেস করায় জুলিয়ান বলে, উঁহু, বলে সে ন্যাশকে নগ্ন করে নিয়ে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। খানিকক্ষণ খুশীর জোয়ারের উষ্ণ খেলায় মেতে থাকার পর ন্যাশ উঠে পড়ে পাশের ঘরের বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। শরীরটাকে চাঙ্গা রাখতে সে অনেকটা হুইস্কি খেয়ে নেয়।
হেলেন মারা গিয়ে তার সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে গেছে।
ন্যাশ ভাবে, ডেসটারকে ফ্রিজে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি। মৃতদেহটা বাগানে ফেলে রাখলে ক্ষতি কি হতো?
কোন ক্ষতি ছিল না। পুলিশ ভাবতো বউকে খুন করার পর অনুতপ্ত হয়ে ডেসটার আত্মহত্যা করেছে।
ন্যাশ আরো মদ খায়। এ মুহূর্তে সে সব কিছু ভুলতে চায়। কী দরকার ছিল ডেসটারকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর? সে তো পরবর্তীকালে নিজের মৃত্যু চাইছিল আর মরলোও। আর তাকেও ফাঁসিয়ে গেল। এখন ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সে নিজের জালেই নিজে জড়িয়ে পড়েছে।
ন্যাশ ভাবে। এখান থেকে কি সে পালিয়ে যাবে। কিন্তু সাড়ে সাত লাখ ডলারের লোভ ছেড়ে পালাতে তার মন চায় না।
হঠাৎ ন্যাশের মনে পড়ে ব্যাঙ্কের লকারের পিস্তলটার কথা। একটু পরে সে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে, সংশ্লিষ্ট কর্মীর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে জিগ্যেস করে যে, তার লকারের নাম্বারটার ব্যাপারে কেউ খোঁজ করতে এসেছিল কিনা।কর্মীটি জানায়, না।ন্যাশ পিস্তলটা ফেরৎ নিয়ে বুইক-টা চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এসে দেখল জুলিয়ান তখনো ঘুমোচ্ছে। ন্যাশ সেই সুযোগে বাইরের পোশাক বদলে বাড়ির পোশাক পরে জুলিয়ানের কাছে গিয়ে ওকে আদর করতে থাকে। জুলিয়ান জেগে ওঠে। তখন রাত নটা। দুজনে ডিনার খেতে বসলো। ন্যাশ নিজে অল্প অল্প খেলেও জুলিয়ানকে সে বারেবারে প্রচুর মদ খাইয়ে দিচ্ছে গল্পোচ্ছলে।
এরপর ন্যাশের মুখে প্রেমের বুলি শুনতে শুনতে জুলিয়ান একসময় অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে। ন্যাশ ওর মদের গ্লাসে ঘুমের হাল্কা ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল।
ন্যাশ চারদিকটা একবার তাকিয়ে নিয়ে ডীপ ফ্রিজের দিকে এগিয়ে যায়। ফ্রিজটা কিছুক্ষণ বন্ধ রাখলেই লাশটা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তারপরে বাগানে নিয়ে গিয়ে ঝোঁপের মধ্যে ফেলে রেখে শুন্যে একটা গুলি ছুঁড়ে ডেসটারের হাতে পিস্তলটা ধরিয়ে দিতে পারলেই হলো।
ন্যাশ ফ্রিজটা ফাঁক করে দেখে নেয় দেহটা অবিকৃতই আছে, তারপর বন্ধ করে দেয়। ফ্রিজের সুইচটা অফ করে দেয়।
বাগানে গিয়ে সে দেখে ডেসটারের দেহটা কোথায় ফেলে রাখা যায়। এরপর রাত প্রায় বারোটায় সে জুলিয়ানের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
পরের দিন দুজনেরই বেলা করে ঘুম ভাঙলো।
ন্যাশ জুলিয়ানকে ডেসটারের কাগজপত্র গোছানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে বলল।
জুলিয়ান রাজী হলো। কাগজপত্র ঘেঁটে তারা অনেকগুলো বিল আর একটা মুখআঁটা খাম পেল। জুলিয়ান জিগ্যেস করে, ওটা কি?
-উইল, ডেসটারের উইল। এটা বার্নেটকে দিতে হবে। ন্যাশ সাধু সাজে।
–হ্যাঁ। সেটা মনে হয় গণ্ডগোলে। নইলে স্বামী-স্ত্রী ওভাবে কখনো গা ঢাকা দেয়?
হঠাৎ বাড়ির সামনের দৃশ্যটা পাল্টে গেল। গাড়ি থেকে নামল উকিল বার্নেট, পুলিশের বড় কর্তা ইভান্স, ব্রমউইচ, সাব ইন্সপেক্টর লুইস, বীমা কোম্পানীর মিঃ ম্যাডক্স।
বার্নেট ন্যাশের সঙ্গে ম্যাডক্স-এর পরিচয় করিয়ে দিল।
-আচ্ছা মিঃ ডেসটার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাই না?
–হ্যাঁ।
সারাদিন উনি কি করতেন?
–প্রায় সারাক্ষণই উনি ঘুমিয়ে থাকতেন। বাইরের কেউ ওঁর ঘরে গেলে ক্ষেপে যেতেন।
–ওঁর দেখাশোনা কে করতেন?
–মিসেস ডেসটার, মাঝে মধ্যে আমিও।
–আপনাকে দেখলে উনি কিছু বলতেন না?
–না, আমি তো বাইরের লোক নই।
–মিঃ ডেসটারকে চিকিৎসার জন্যে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে?
—হ্যাঁ, স্যানটোরিয়ামে।
-কে নিয়ে গিয়েছিল তাকে?
–মিসেস ডেসটার।
–তখন আপনি সঙ্গে যাননি?
–না, কারণ তখন আমি বাড়ি ছিলাম না।
–কোথায় ছিলেন?
–মিসেস ডেসটারের জন্য ঘরের কিছু কেনাকাটা করতে গেছিলাম।
মিসেস ডেসটারকে কাজে কে সাহায্য করতে?
মিস জুলিয়ান।
একটু পরে জুলিয়ান এল।
-আপনি এ বাড়িতে কতদিন আছেন?
–বেশী দিন নয়, সপ্তাহখানেক।
–মিঃ ডেসটারকে কে স্যানটোরিয়ামে নিয়ে যায়?
–মিসেস ডেসটার।
–আপনি তখন বাড়িতে ছিলেন?
–হ্যাঁ।
–সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় মিসেস ডেসটার আপনার সঙ্গে কোন কথা বলেছিলেন?
–সিঁড়িতে বেশী পাওয়ারের আলো নিভিয়ে দিতে বলেছিলেন। কম পাওয়ারের আলো জ্বলছিল।
–তখন মিঃ ডেসটারের গায়ে কি ধরনের পোশাক ছিল?
–উটের লোমের কোট, চওড়া কানওয়ালা টুপী, ধূসর স্যুট, সোয়েডের জুতো।
মিঃ ন্যাশ তখন বাড়িতে ছিলেন?
–না। ওরা বেরিয়ে যাবার পর ফেরে। ওরা বেরিয়ে গেছে শুনে ও বেরিয়ে যায়।
–ঠিক আছে, আপনি যেতে পারেন। জুলিয়ান বিদায় নেয়।
ম্যাডক্স ব্রমউইচ বলে, মিঃ ডেসটার স্ত্রীকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি নিজেই আত্মহত্যার শর্ত বাতিল করেন। মিসেস ডেসটার টমলিন নামের একটা লোকের রক্ষিতা ছিলেন। টমলিন বিশ হাজার ডলারের বীমা করে প্রথম প্রিমিয়াম দেবার পরেই জানালা দিয়ে পড়ে মারা যান। নমিনি করে মিসেস ডেসটারকে। ঝামেলা এড়াতে মিসেস ডেসটার সাত হাজারেই তার দাবী মিটিয়ে নেয়।
এর আগে মিসেস ডেসটার এক বুড়ির সঙ্গিনী হিসেবে কাজ করতেন। বুড়ি পাঁচ হাজার ডলারের বীমা করেছিল এবং নমিনি ছিল মিসেস ডেসটার। কয়েকদিন বাদে দেখা গেল, বুড়ি সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে পড়ে রয়েছেন। মিসেস ডেসটার টাকা নিয়ে সরে পড়েন। অতএব মিসেস ডেসটার ডবল খুনী। তিনি যে মিঃ ডেসটারের জীবনবীমার ব্যাপারে কিছু জানবেন না এটা বিশ্বাস করা কঠিন। মিসেস ডেসটার যদি মিঃ ডেসটারকে খুন করতেন অন্য কথা, মিসেস ডেসটারকে কে খুন করলো? মিঃ ডেসটারই বা কোথায়? কিডন্যাপ করে তাকেও কি খুন করা হয়েছে? আমার ধারণা এই নিখুঁত পরিকল্পনার পেছনে তৃতীয় এক ব্যক্তির মাথা কাজ করছে। তাকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন। আর এ বাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করান। মিঃ ডেসটার কি উইল করে গেছেন? গেলে ওয়ারিশাণ কাকে করেছে, এগুলো জানা দরকার। ম্যাডক্স আবার ন্যাশকে ডেকে পাঠায়।
ম্যাডক্স তাকে জিজ্ঞেস করে, মিঃ ডেসটার কি কোন উইল করে গেছেন?
–উইল? না স্যার, তা আমার জানা নেই।
–ঠিক আছে, এবার আমরা উঠবো।
তারা সকলে বিদায় নেয়।
শেষটা ভালোয় ভালো না মেটা পর্যন্ত ন্যাশ ভালো করে ঘুমতে পারে না। বিছানায় ছটফট করে।
তার পরের দিন ব্রেকফাস্টের পর ন্যাশ জুলিয়ানকে বলে, চলো, ডেসটারের স্টাডিরুমে যাই।
-কেন ওখানে গিয়ে কি হবে?
দরকার আছে। ধরো উইলে ডেসটার যদি আমায় সমস্ত কিছু দিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো?
–ভালই তো হবে, তোমার আর কোনও অভাব থাকবে না।
–ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হবে আমাকে। কেন? ধরো, ডেসটার আমায় সমস্ত কিছু দিয়ে গেল, তাহলে ডেসটারের নিখোঁজ হওয়ার জন্য আমায় পুরোপুরি সন্দেহ করবে।
সন্দেহ? তোমাকে? কেন?
করবে এই কারণে যে, এর পিছনে আমার কোন গোপন হাত থাকতে পারে; এরকম একটা সন্দেহ করবে বই কি! ম্যাডক্স বলছে, এর মধ্যে তৃতীয় কোন ব্যক্তি চাল চেলে সাধু সেজে বসে আছে।
–তৃতীয় ব্যক্তি?
–হ্যাঁ, আমিও ভাবছি সে কে? সেজন্য উইলটা সবার আগে দেখা দরকার।
ন্যাশ একটু থেমে জুলিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবেগভরে বলে, জুলিয়ান, এইসব ঝামেলা মিটে গেলে, আমি…আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই। তুমি রাজী তো?
জুলিয়ান ন্যাশের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে সংঘাতিক ভাবে আদর করতে থাকে। মুখে বলে, ন্যাশ! রাজী! রাজী! রাজী!
ন্যাশ এরপর একটা খাম ছিঁড়ে উইলটা পড়ে এবং তার পরে তার চক্ষু চড়কগাছ।
–আমার মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না, ন্যাশ মুখ শুকনো করে বলে।
জুলিয়ান বলে, তুমি একথা বলছো কেন?
ন্যাশ তখন উইলটা পড়ে, ডেসটার লিখেছে–ন্যাশ তার জীবন বাঁচিয়েছে। হেলেন তাকে অনেকবার মারার চেষ্টা করেছে, পারেনি। দেনাপত্তর শোধ করে যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, তা সবই ন্যাশ পাবে। জীবনবীমা কোম্পানী যদি তার মৃত্যুর পর কিছু টাকা দেয় তাও ন্যাশ পাবে। পড়া হয়ে যেতে ন্যাশ ঠিক করে, এটা বার্নেটকে দেওয়া চলবে না।
তখন সে ঘরের মেঝেতে উইলটাকে পুড়িয়ে ফেলে ছাইটা পায়খানায় ফেলে, বেশ কয়েকবার সিসটেনে টান মারল। জলের তোড়ে ছাইটা কোথায় মিলিয়ে গেল।
এরপর খানিকটা স্বস্তি পেয়ে ন্যাশ জুলিয়ানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। করতে বাধ্য হচ্ছে কারণ উইলের ব্যাপারটা জুলিয়ান জেনে ফেলেছে। খামে কি আছে ওকে না জানালেও হয়তো একথা অন্যকে বলে বসতো।
জুলিয়ান আনন্দে বিভোর হয়ে ওঠে। ন্যাশ তাকে প্রেমের কথা বলে চলেছে আর বেশী করে মদ খাওয়াচ্ছে। একসময় ও বেহুশ হয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। ন্যাশের মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, যেটা জুলিয়ানকে জানানো ঠিক হবে ভেবেই এই ব্যবস্থা তাকে নিতে হয়েছে।
ন্যাশ লকারের পিস্তলটায় কয়েকটা গুলিও ভরে নিয়েছে। পরে কাজে লাগবে জেনে।
ন্যাশ ঘর থেকে বেরিয়ে দরজাটা ভেজিয়ে দেয়।
জানালা দিয়ে দেখে, ব্রমউইচ চলে গেল। যাবার আগে লুইসকে যেন ভাবভঙ্গীতে পাহারায় বসে থাকতে বলল। ন্যাশ মনে মনে ওদের চোদ্দ পুরুষ উদ্ধার করতে থাকে।
খানিকক্ষণ পরে ন্যাশ দেখে লুইস টুলে বসে ঝিমোচ্ছে।
ন্যাশ স্টাডিরুমে ফিরে এল। ডেসটারের কাগজপত্র একটু আগে ঘেঁটেছিল, সেগুলো গুছিয়ে রাখল। সে দরজাটা ভেজিয়ে দিল। একজোড়া দস্তানা হাতে পরে নিয়ে সে একটা চিঠি টাইপ করল। টাইপের বয়ান হল–হেলেনকে ডেসটার এত জোরে মারতে চায়নি। হেলেন মারা যেতে অনুশোচনায় তার মন ভরে যেতে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। চিঠিটা টাইপরাইটারে লাগিয়ে রেখে সে আলো নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। জুলিয়ানের ঘরে এল। সে এখনও ঘুমোচ্ছে।
হঠাৎ ন্যাশ দেখল, লুইস বাড়ির মধ্যে চলে এসেছে। সে মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে এক গাল হেসে বলল, আসুন স্যার। স্যার বলায় লুইস খুশী হলো। ন্যাশ তাকে স্যাণ্ডউইচ হুইস্কি খাওয়ালো। এমন অভ্যর্থনা লুইস মোটেই আশা করেনি। এরপর সে চলে গেল।
লুইস চলে যাবার পর জুলিয়ান ন্যাশকে জিজ্ঞেস করল, লুইস এসেছিল কেন?
–কি জানি কি মতলবে এসেছিল।
–আমার পুলিশ-টুলিশ বড্ড ভয় করছে। আমার এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
-ও কথা বলে না ডার্লিং, মুখে ন্যাশ একথা বললেও মনে মনে সে চাইছে জুলিয়ান বাড়ি চলে যাক। কিন্তু এককথায় রাজী হয়ে গেলে ও আবার সন্দেহ করতে পারে। এরপর ন্যাশ বলে, জুলিয়ান তুমি কোথায় থাকতে চাও বলো।
জুলিয়ান ইতস্তত করে বলে, আমি…আমি…তোমার গ্যারেজ ঘরে থাকতে চাই।
–গ্যারেজ? তুমি শোবে? না না তা হয় না।
–কেন হয় না? জুলিয়ান বলে।
–ঠিক আছে, মানতে পারি, তবে শুধু আজকের দিনের জন্য।
ডিনারের পর জুলিয়ানকে গ্যারেজের ঘরে ছেড়ে দিয়ে আসে ন্যাশ।
বাড়ি ফিরে ন্যাশ ঘরে পায়চারী করতে থাকে। কখন লুইস ঘুমিয়ে পড়বে সেই অপেক্ষায় আছে সে। এখন রাত একটা। একসময় লুইস ঘুমিয়ে পড়ল। ন্যাশ খুব আস্তে আস্তে নীচে নেমে এসে ফ্রিজ থেকে ডেসটারের মৃতদেহ বার করে মেঝেতে রাখে। তারপর রান্নাঘর থেকে পেরিয়ে ডেসটারের স্টাডিরুমের আলো জ্বালিয়ে রেখে এসে ওর দেহটা কোনরকমে টেনে ঐ ঘরে বয়ে নিয়ে আসে। ফ্রিজ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে লাশটা ক্রমশ নরম হয়ে আসছে। ডেসটারের কপালের ক্ষত চুঁইয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এরপর সে আলো নিভিয়ে রান্নাঘরে ফিরে আসে।
ন্যাশ ফ্রিজটা খোলে। ফ্রিজের মধ্যে, কার্পেটের উপর দু-এক ফোঁটা রক্ত পড়েছে। সে একটা কাপড় দিয়ে রক্তগুলো মুছে দিল।
হঠাৎ কাঁচ করে একটা শব্দ হতে ন্যাশ সাবধান হয়ে ওঠে। রান্নাঘরের আলো নিভিয়ে ভাড়ার ঘরের দরজার আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। হাতে একটা হুইস্কির বোতল। ভাবটা এমন যেন এই রাতে সে মদ খেতেই এখানে এসেছে। তার মনের মধ্যে কোন কিছু পাপ নেই।
লুইস দরজায় আচমকা ধাক্কা দেয়। তার হাতে পিস্তল। দরজাটা খুলে যায়। সে পিস্তল উচিয়ে ভাঁড়ারের দরজার দিকে ঘুরে চেঁচিয়ে ওঠে, মিঃ ডেসটার, মাথার ওপর হাত তুলে বেরিয়ে আসুন। কোন সাড়া-শব্দ নেই। লুইস একটু অপেক্ষা করে কোন জবাব না পেয়ে দু-এক সেকেণ্ড অপেক্ষা করে সে ভঁড়ার ঘরের দরজায় লাথি মারে। ফলে দরজাটা খুলে গেল। ওর পিছনটা ন্যাশের দিকে ফেরানো।
ন্যাশ মরীয়া হয়ে ভাবে তার এখন একটা কিছু করা দরকার। সে লুইসের মাথার ওপর দিয়ে হুইস্কির বোতলটা অপর দিকের দেওয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারে। এতে লুইস হকচকিয়ে যায়। চকিতে ন্যাশ তার পিস্তলের বাঁট দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করে। লুইস পড়ে যায়। ন্যাশ আবার আঘাত করতে সে লুটিয়ে পড়ে।
এরপর ভাঁড়ার ঘরের ছিটকিনি তুলে ন্যাশ স্টাডিরুমে ঢুকে ডেসটারের গায়ে হাত দিয়ে দেখে দেহ নরম হয়ে আসছে। কপালের ফুটো দিয়ে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে।
ন্যাশের হাতে দস্তানা পড়াই আছে। সেই হাতে পকেট থেকে পিস্তল বের করে খোলা জানালা দিয়ে একটা গুলি ছোঁড়ে।
তারপর ন্যাশ দ্রুত জানালার ছিটকানি লাগিয়ে ডেসটারের মৃতদেহের পাশে পিস্তলটা রেখে দরজাটা বন্ধ করে বেরিয়ে আসে। নিজের ঘরে চলে আসে, তার দস্তানা, পাজামায় রক্ত লেগেছে। সে তাড়াতাড়ি সেগুলো জাজিমের তলায় রেখে দেয়। এরপর পোশাক পাল্টে নেয়। নীচে নেমে এসে জুলিয়ানকে ফোন করে ডেসটারের আত্মহত্যার কথা জানালো। জুলিয়ান তার কাছে আসছে বলে জানাল। সে খুব চমকে গেছে।
এরপর ন্যাশ ব্রমউইচকে ফোন করল। একই খবর তাকে দিল।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ব্রমউইচ পুলিশ ভ্যানে হাজির হলো। লুইসকে পাহারায় দেখতে না পেয়ে সে অবাক হলো। পরে সে তাকে খুঁজে বার করল।
এরপর ব্রমউইচ জুলিয়ানের খোঁজ করতে ন্যাশ জানালো সে গ্যারেজ ঘরে শুতে গিয়েছে। আজই ওখানে গেছে। তার এখানে শুতে ভয় করছিল তাই ওখানে শুতে গেছে। প্রথমে সে চলে যেতে চাইছিল, শেষে আমি অনেক করে বলতে তবে ওখানে শুতে রাজী হলো। জুলিয়ান আসতে ওকে জিগ্যেস করায় ও একই কথা জানালো।
–তুমি কোন গুলির আওয়াজ শুনেছো?
–শুনেছি। জুলিয়ান বলে।
–কাল তোমার সঙ্গে ন্যাশ ছিল।
–না।
এরপর ন্যাশের দিকে তাকিয়ে ব্রমউইচ জিগ্যেস করে, তুমি গুলির আওয়াজ শুনেছো?
–নিশ্চয়ই স্যার, ন্যাশ ভেতরে ভেতরে কাঁপছে।
–তারপর কি করলে।
–স্টাডিরুমে গিয়ে দেখি মিঃ ডেসটার এলিয়ে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে জুলিয়ানকে ফোন করলাম। তারপর পুলিশে ফোন করি।
তারপর ডাক্তার ব্রমউইচের নির্দেশে মৃতদেহ পরীক্ষা করে এবং এক সময় ওরা লাশ নিয়ে চলে গেল।
পুলিশ চলে যেতে জুলিয়ান ন্যাশকে বলল, তুমি এখানেই থাকো, কোথাও চলে গেলে পুলিশ আরো বেশী সন্দেহ করবে।
–ঠিক বলেছো। ঝামেলা মিটলে আমি রোমে চলে যাবো। তুমি আমার সঙ্গে যাবে তো। ন্যাশ জুলিয়ানকে আদর করে বলে। জুলিয়ান এতে উত্তেজিত হয়ে ওকে বেডরুমের দিকে টানতে থাকে। জুলিয়ানকে সে অখুশী করতে পারে না। জুলিয়ান ঘুমিয়ে পড়ে।
এরপর ন্যাশ বৈঠকখানায় আসে। সে থমকে দাঁড়ায়। দেখে একটা ঢ্যাঙা লোক ওখানে বসে আছে। মুখে সিগারেট, হাতে মদের গ্লাস। কে লোকটা? ন্যাশ লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার নাম জানতে পারি? কোত্থেকে আসছেন?
–নিশ্চয়ই। আমি স্টিভ হারমাস। বীমা কোম্পানী থেকে এসেছি। ইনভেস্টিগেশনের ব্যাপার।
ইতিমধ্যে ম্যাডক্স এসে হাজির হলো।
ন্যাশকে দেখে ম্যাডক্স বলল, তুমি কোথাও বেড়িও না, বাড়িতেই থাকো। পরে তোমাকে দরকার হতে পারে।
ন্যাশ মাথা নেড়ে চলে গেল।
ম্যাডক্স এবার স্টিভকে বলে, বলো তোমার কি জিজ্ঞাস্য?
স্টিভ বলে, আমার প্রধান প্রশ্ন হলো, এটা খুনের না আত্মহত্যার ঘটনা? আত্মহত্যার ব্যাপারে বীমা কোম্পানীকে কোন টাকা দিতে হবে না। তবে খুনের কেসে টাকা দিতে হবে।
ম্যাডক্স বলে, দাবী ন্যায্য হলে, টাকা মিটিয়ে দিতে হবে, তাতে কোম্পানীরই সুনাম বাড়বে। তবে খুনের কেসে খুনীকে খুঁজে বার করতে হবে।
স্টিভ জানালো, এ বাড়ির সব জানালাগুলো বন্ধ ছিল, কেবল ছাতা-বর্ষাতি রাখার ঘরের একখানা জানালা ছাড়া। তবে সারারাত সে ঐ জানলার কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকায়, সে নিশ্চিত যে ঐ জানালা দিয়ে কেউ ঢোকেনি। তবে ব্যাপারটাকে যদি কেউ আত্মহত্যার ঘটনা বলতে চায়, তবে সে মানতে নারাজ, কারণ মাথায় গুলি করলে সারা ঘর রক্তে ভেসে যেত। এক্ষেত্রে রক্ত পড়েছে সামান্যই।
ম্যাডক্স মাথা নাড়ে। বলে, আমি তোমার কথা মানতে নারাজ, কারণ আমার প্রথম থেকে মনে হচ্ছে টাকার লোভে এটা একটা জালিয়াতির চেষ্টা। তোমার কিছু বলার আছে?
–আঙুলের ছাপের প্রশ্ন। জানালা দিয়ে যদি ডেসটার ঢুকতো তাহলে তার আঙুলের ছাপ থাকতো। আত্মহত্যার চিঠি, টাইপরাইটার, মদের গ্লাসে, বোতেলে, পিলে কেহও আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। ডেসটার যদি দস্তানা পরা অবস্থায় এটা করে থাকে, তাহলে দস্তানা গেল কোথায়?
—হ্যাঁ, এটা চিন্তার কথা।
তাছাড়া ডেসটার বউয়ের সঙ্গে যে পোশাকে বেরিয়েছিল, মৃত ডেসটারের পরণে কিন্তু সে পোশাক নেই।
স্টিভ বলে, এ ব্যাপারে বলবো, বনবিভাগের কুঁড়েতে যদি ডেসটার হেলেনকে খুন করার আগে পোশাক বদল করে, তবে সেই পোশাকগুলোই বা গেল কোথায়? পুলিশ বনদপ্তরের আশেপাশে এ জামাকাপড় খুঁজছে। স্টিভ একটু হেসে বলে, এটা মিসেস ডেসটারের কোন গুপ্ত প্রেমিকার কাজ নয়তো?
স্টিভ বলে, খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে সাজাতে পারলে কোম্পানীকে সাড়ে সাত লক্ষ ডলারের দাবী মেটাতে হবে না ঠিকই কিন্তু প্রিমিয়াম যা দেওয়া আছে, তাতে এক লাখ চার হাজার জলার ফেরৎ দিতেই হবে।
ম্যাডক্স বলে, এখন বীমার টাকাটাই আসল লক্ষ্য নাও হতে পারে। ঐ এক লাখ চার হাজার ডলারই লক্ষ্য। এখন দুটো জিনিষ জানা খুব প্রয়োজন, এক মিসেস ডেসটারের কোন গুপ্ত প্রেমিক ছিল কিনা। দুই ডেসটারের ওয়ারিশান কে?
এবার ম্যাডক্স ন্যাশকে ডেকে পাঠায়।
–আচ্ছা, মিঃ ন্যাশ, মিসেস ডেসটারের সঙ্গে পুরুষ বন্ধুকে ইদানিং ঘোরাফেরা করতে দেখছো?
ন্যাশের গলা শুকিয়ে আসে, সে বলে, হ্যাঁ, সপ্তাহখানেক আগে ব্রাউন ডার্বি–নামের রেস্তোরাঁ থেকে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে মিসেস ডেসটারকে বেরুতে দেখেছি। বয়স বছর পঁয়ত্রিশ হবে। লম্বা, ফর্সা দেখতে বেশ সুন্দর।
–তুমি তার নাম জানো?
–না স্যার।
ম্যাডক্স স্টিভের দিকে তাকিয়ে এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলে। তারপর সে চলে যায়।
ওরা চলে যেতেই ন্যাশ রক্ত মোছা ন্যাকড়া, রক্ত মাখা জামাকাপড় ইত্যাদি স্যুটকেসে ভরে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ছোট একটা গলি দিয়ে পুলিশের নজর এড়িয়ে একটা চলন্ত বাসে বিপজ্জনকভাবে উঠে ফায়ারস্টোনের মোড়ে নামে।
তারপর ভিড়ের মধ্যে নিজেকে মিশিয়ে দেয়। সেফ ডিপোজিট লকারের উল্টো দিকে এসে দেখে একটা কালো গাড়ি ও ভেতরে জনাকয়েক শক্তসমর্থ লোক বসে আছে। এরা নিশ্চয়ই পুলিশের লোক, ন্যাশ ভাবে।
এরপর সে ব্যাঙ্কে যায়, সেখানেও পুলিশের গাড়ি আর পুলিশের লোকজন। ন্যাশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
ন্যাশ বোঝে পুলিশ চারদিকে জাল বিস্তার করে ফেলেছে। না পালালে উপায় নেই। কিন্তু তার হাতে আছে মাত্র পাঁচ ডলার। এ নিয়ে সে কতদূর যাবে?
সামনে একটা রেস্তোরাঁ দেখে ঢুকে সে সলিকে ফোন করে।
ও প্রান্ত থেকে গলার আওয়াজ ভেসে এল, সলি এখন অফিসে নেই।
-কোথায় গেছে?
–ওকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। কিছু বলার থাকলে আমাকে বলতে পারেন।
-ন্যাশ কিছু না বলে রিসিভার নামিয়ে রাখে। সে ভাবে, সলি নিজেকে বাঁচাবার জন্যে নিশ্চয়ই পুলিশকে সব বলে দেবে। তা থেকে পুলিশ ধরে নেবে যে, সে হেলেনকে ব্ল্যাকমেইল করছিল।
কফি খাওয়া ন্যাশের মাথায় উঠেছে। সে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে তার স্যুটকেসটা পাশের মাল রাখার দপ্তরে জমা রাখে। এখানে নিজের আসল নাম সে গোপন করে।
ন্যাশ এখান থেকে বেরিয়ে সানফ্রান্সিসকো যাবার জন্য বাসস্ট্যাণ্ডে গেল। টিকিট কাটার সময় এমন একটা ঘটনা ঘটলো, যার জন্যে সে সত্যিই প্রস্তুত ছিল না। ফলে ন্যাশ রীতিমত হকচকিয়ে গেল।
হঠাৎ যেন মাটি খুঁড়ে বিশাল চেহারার একজন তার সামনে দাঁড়ায়, চলুন মিঃ ন্যাশ। আমরা আপনাকেই খুঁজছি। বলে ন্যাশকে সে থানায় নিয়ে এল।
ঘণ্টা চারেক ন্যাশ একটা নোংরা ঘরে থাকার পর ব্রমউইচ তাকে ডেকে পাঠায়।
ন্যাশ সেখানে গিয়ে দেখে ম্যাডক্সও সে ঘরে হাজির।
ম্যাডক্সই বলে ওঠে, মতলবটা ভালো কেঁদেছিলে ন্যাশ। কিন্তু কাজটা একেবারে কাঁচা করে ফেলেছ। কোথাও আঙুলের ছাপ বা কোন প্রমাণ নেই। সবই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে যে এটা একটা আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে।
ওদিকে মাল-গুদাম থেকে পুলিশ স্যুটকেস পেয়েছে। তার মধ্যে ওভারকোট, টুপি ও জুতো পাওয়া গেছে।
ঐসব দেখিয়ে ম্যাডক্স ন্যাশকে বলে, এখন আর কোন কৈফিয়েত দিয়ে লাভ নেই আমার কাছে। যা বলার তা জুরীদের বলতে পারো।
ন্যাশ এর কোন উত্তর খুঁজে পায় না। সে দরদর করে ঘামতে থাকল।
–আমার চেনাজানা ভালো উকিল আছে, পাঠিয়ে দেবো। তবে সেও বোধহয় তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। যাক, চলি। কথা শেষ করে ম্যাডক্স চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যায়।
ব্রমউইচ এবার ন্যাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তবে ন্যাশ উকিল না আসা পর্যন্ত মুখ খুলবে না। সে এও জানে, তাতে কোন লাভ হবে না। অনিচ্ছাকৃত হলেও হেলেনকে সে খুনই করেছে। ঘূষিগুলো বেশী জোরে হয়ে গেছে।
ন্যাশ ভাবে এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই। চোখের সামনে সে ফাঁসির দড়ি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
ন্যাশের হঠাৎ জুলিয়ানের কথা মনে পড়ে। তার জন্যে ন্যাশের কষ্ট হতে থাকে। তার মুখ দিয়ে একটা চাপা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে, আর ন্যাশ ভাবে, কোন শুভক্ষণে তার সঙ্গে ডেসটারের পরিচয় ঘটেছিল। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে ঘটনানুক্রমে আজ তার এই অবস্থা। সবই অদৃষ্ট।