- বইয়ের নামঃ হাউস অব ডেথ
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ চন্দ্রছাপ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর
হাউস অব ডেথ
১. হলিউডের নাইট ক্লাব
হলিউডের অভিজাত একটা নাইট ক্লাবের সামনে একজন পায়চারি করছে। এখানে মদ, খাবার দাবারের দাম খুবই বেশী।
এখানে নর্তকী কাউকে শয্যাসঙ্গিনী করতে পারলে মানুষ বর্তে যায়। দেখা করে প্রথমে স্তোতবাক্য দিয়ে শুরু, পরে ফুল উপহার এবং মন-মেজাজ ভালো থাকলে অপরপক্ষ রাজী হয়ে যায়। তবে সচেতনভাবে বিপদ এড়িয়ে চলে তারা।
যাক এসব কথা। লোকটির পরণে নিখুঁত ইভনিং স্যুট, চকচকে জুতো, দামী ঘড়ি। বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেছে।
নাইট ক্লাবের সামনে পায়চারী করতে করতে সহসা ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এসে টাল খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল প্রায়। দেখলেই বোঝা যায় মদ খেয়ে চুর হয়ে আছে।
লোকটি এলোমেলো পায়ে বড় রাস্তার দিকে এগোতে থাকলো। কিছু দূরে একটি লোক দাঁড়িয়েছিল। হঠাত্র সে দেখলো একটি গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে মাতাল লোকটির দিকে এগিয়ে আসছে। সে তাড়াতাড়ি হ্যাঁচকা টানে তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালো। প্যাকার্ড গাড়ির চালক অশ্লীল ভাষায় কিছু বলে একই গতিতে বেরিয়ে গেল।
মাতাল লোকটি নিশ্চিত বিপদের আকস্মিকতায় কিছুটা হুঁশ ফিরে পেয়েছে।
মাতাল লোকটি ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আমার গাড়ি আছে, তাতে চেপে বাড়ি যাবো।
কিন্তু অপর লোকটি বলল, না না, এ অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না, বিপদ ঘটতে পারে।
মাতাল লোকটি বলল, তোমাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ বলে তো একটা কথা আছে, চলো তোমাকে মদ খাওয়াবো।
লোকটি ভাবে, মাতাল লোকটি বেশ বড়লোক হবে, পোশাক-আশাক সে কথা বলে দিচ্ছে। দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
মাতাল লোকটি তাকে জিগ্যেস করে, তা তোমার নামটা কি?
-ন্যাশ। গ্লিন ন্যাশ।
ন্যাশ সামনে দাঁড়ানো গাড়িটার দিকে তাকাল।রোলস-টা দামী বটে। স্টিয়ারিং হুইলে চোখ পড়ে। ওখানে লাগানো লাইসেন্সে মালিকের নাম লেখা আছে। সে থাকে হলিউডে, ঠিকানাটাও আছে।
মিঃ আর্ল ডেস্টার।
২৫৬, হিল ক্রেসুট অ্যাভেনিউ।
এদিকে ডেসটার নরম গদীতে গা এলিয়ে নাক ডাকা শুরু করেছে। ন্যাশ রাস্তার নাম, বাড়ির নম্বর মিলিয়ে নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে হাজির হয়।
–মিঃ ডেসটার, উঠুন বাড়ি এসে গেছে। ন্যাশ ওকে ধাক্কা মেরে বলে, সদর দরজা বন্ধ।
–ও সরি, বলে পকেট হাতড়ে ন্যাশের দিকে চাবিটা এগিয়ে দেয়।
ন্যাশ সদর খোলে। তারপর ডেসটারকে বৈঠকখানার দিকে নিয়ে গেল। ডেসটার আবার হুইস্কি খেতে চায় আর ন্যাশকেও এক পেগ নিতে বলে। নাছোড়বান্দা ডেসটারকে শেষপর্যন্ত হুইস্কি দিল আর নিজেও নিল। ন্যাশকে ডেসটার জিগ্যেস করল, সে কি করে?
–বিজ্ঞাপনের দালাল বলতে পারেন। কমিশনের কাজ।
–কত কমিশন পাও?
সপ্তাহে কোন ঠিক নেই। সময় ভালো গেলে সপ্তাহে কুড়ি ডলার পাই।
–এটা কিন্তু অন্যায়, ওতে কারুর চলে নাকি?
–হ্যাঁ, বড্ড কষ্টে আছি। একটা কোথাও ভালো কাজ পেলে বেঁচে যেতাম।
–ডেসটার তাকে ড্রাইভারের কাজ দিতে চায়। ন্যাশ আপত্তি জানায় না। সপ্তাহে পঞ্চাশ ডলার দেওয়া হবে ঠিক হল। সঙ্গে থাকা-খাওয়া ফ্রি। ঘরের টুকিটাকি আরো কিছু কাজ করতে হবে। ন্যাশ তার সঙ্গে আরো কথা বলে জানলো যে, লরেন্স বলে তার একজন ড্রাইভার ছিল। সে পালিয়েছে, কিছু চুরি-টুরি করেনি।
হঠাৎ ন্যাশ একজন মহিলার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। হলিউড মাপকাঠিতে ঠিক সুন্দরী পর্যায়ে তাকে ফেলা যায় না। বয়স বছর বাইশ হবে। দুধে আলতা গায়ের রং, সবুজ চোখ। স্লিম ফিগার।
ডেসটার জানালো সে তার স্ত্রী। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, এর নাম ন্যাশ। আজ থেকে ও আমাদের ড্রাইভার। আজ ও আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে।
হেলেনের মুখের ভাব দেখে মনে হল, তার আগমনে সে অপ্রসন্ন।
ন্যাশের মনে হল, ডেসটার কোনরকম বিপদে জড়িয়ে পড়েনি তো? এবং সে বিপদ হেলেনের তরফ থেকে আসছে না তো? এখানে ড্রাইভারের চাকরি নেওয়া মানে চব্বিশ ঘন্টা ঘুরঘুর করতে হবে ঐ হেলেনের পাশে।
ন্যাশের বয়স ছাব্বিশ সাতাশ হবে। পেটানো স্বাস্থ্য, চওড়া কাঁধ, গায়েরং রং তামাটে।
ন্যাশ ডেসটারের দিকে ফিরে বলে, মিঃ ডেসটার, চাকরিটা পেয়ে খুশী হলাম ধন্যবাদ।
–তুমি গ্যারেজে গাড়ি তুলে, গ্যারেজের উপরে একটা ঘর আছে, ওখানে শুয়ে পড়ো।
–ঠিক আছে, গুডনাইট।
–গুডনাইট!
ন্যাশ ঘরের বাইরে পা বাড়াতেই হেলেন চেঁচিয়ে বলে ডেসটারকে, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? তুমি আবার ড্রাইভার রাখলে? কদিন পরে বুঝবে।
–ডার্লিং, তুমি মিথ্যে রাগ করছে। দেখবে সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে।
–আর ঠিক হয়েছে! বলে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সে নিজে তো ডুবতে বসেছেই এবং অপরকেও ডোবাবে।
হেলেনের মাথায় নানারকম চিন্তা ঘুরপাক খায়। সে খাটে এসে বসে। রাগে উত্তেজনায় এখন তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে ন্যাশের ওপর। আসার আর জায়গা পেল না। এরপর ছুটে পালাবার পথ পাবে না।
সে পায়চারি করতে থাকে। ঘুম তার মাথায় উঠেছে।
ওদিকে ন্যাশ ডেসটারের দেওয়া চাবিটা দিয়ে গ্যারেজের দরজা খোলে। হেলেনের ওপর রাগে তার সারা শরীর জ্বলছে, মাথা টিপটিপ করছে।
গ্যারেজের আকার মন্দ নয়। তিনটে গাড়ি রয়েছে। লোহার একটা আলমারীতে টুকিটাকি কিছু যন্ত্রপাতি আছে।