তুমি ঠিক দেখে বলছো তো।
আজ্ঞে হ্যাঁ।
বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল ডুরেল।
ভাবল ব্রুনোর শেষ পরিণতি কোথায় কে জানে। আর হ্যানসন।
নীচে নেমে এসে একটা চলন্ত ট্যাক্সি ধরে স্থানীয় কাগজের অফিসের কাছ বরাবর ট্যাক্সি থামিয়ে সেখানে নামল। হেডলাইন দেখল। তারপর কিছু কাহিনী পড়ল এ্যাপোলিওর। কিন্তু এমন প্রয়োজনীয় বিশেষ তেমন কিছু চোখে পড়ল না।
সে চেষ্টা করল এক বিস্মৃতির বিবর্ণ কয়েকটা মাস পেছিয়ে যেতে।
এখানকার সব খবর সম্পর্কে নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল এবং শক্তিশালী।
সেন্টসীতে একটা ফোন করল কাগজের পাতা থেকে চোখ ফিরিয়ে।
কাকে চান? সিগনোরিনা পাডগেট দাদ্রে? একটু ধরুন।
দাদ্রে বলল, কে? স্যাম। আরে তুমি এখানে?
ডুরেল বলল, তুমি ব্যাংককে থাক আমি জানতাম।
দিন কয়েকরে জন্যে এখানে এসেছ।
হ্যাঁ, দিন তিনেক হবে সেন্টসীতে আছি।
হ্যাঁ, কাগজে এইমাত্র খবর দেখে ফোন করলাম
দাদ্রে বলল, দীর্ঘকাল তোমার পথ চেয়ে আমি বসে আছি। যত তাড়াতাড়ি পার সেন্টসীতে চলে এসো। এখন আমি ব্যালকনিতে বসে আছি, প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছে তোমার জন্য।
ডুরেল বলল, ঠিক আছে। নিশ্চয়ই আমি এক্ষুনি যাবো।
তোমার কাউন্টেস এ্যাপোলিওকে মনে আছে?
সে সহসা বলল, ওহো। সে তো এখন নেপলসে, মন্টিকালোতে তার ভিলা। সোবরান্টোর খুব কাছে। তুমি কি যেতে চাও
ডুরেল বলল, না। তোমার সাহায্য আমি শুধু চাই। দাদ্রে বলল, স্যাম সত্যি কথা বলতে কি জানো, আমরা আজ একটা নতুন ছবির শুটিংয়ে এখানে এসেছি। ডুরেল জানাল, আমার ধারণা কাউন্টের অনুমতি ছাড়া ঐ দ্বীপে কেউই ঢুকতে পারে না
দাদ্রে বলল, ওটা ঠিক কথা নয়। এ্যাপোলিওর ক্ষমতার আধিপত্যও কম নয়। তবে এটা ঠিক এ্যাপোলিওর দাপট থেকে তা বাঁচানো খুবই কঠিন।
কিছুক্ষণের মধ্যে ডুরেল দ্রুত সেন্টসীতে পৌঁছে সোজা পাঁচতলায় চারশো দুনম্বর কামরার সামনে এসে উপস্থিত হলো। বিছানার ওপর সাদা একটা ব্যাগ লক্ষ্য করল।
সোজা এগোলো ডুরেল। কাউন্টেস এ্যপোলিও ছাড়া কেউ নয়। সমস্ত ঘটনার সূত্রগুলো মিলে যাচ্ছে, একটার পর একটা।
ডুরেল বলল, কে আপনি?
কাউন্টেস এ্যাপোলিও? আপনি কে?
ডুরেল বলল, ভয় পাবেন না। আপনি কি ব্রুনোকে খুঁজছেন?
হা।
ডুরেল বলল, সে এখনও ফেরেনি?
কাউন্টেস হেসে বলল, যতদূর মনে হচ্ছে আপনি একজন আমেরিকান। আপনি ব্রুনোকে জানেন কি ভাবে।
ডুরেল বলল, আপনার সঙ্গে ওর ছাড়াছাড়ি হবার পরেই জেনেভাতে
কিন্তু আমি তো জেনেভাতে কোনদিনই ছিলাম না–
আমার চোখ নিশ্চয়ই ভুল দেখেনি ম্যাডাম।
ডুরেল আর বিলম্ব না করে এক আঘাতেই মাটিতে ফেলে দিল। তার শরীরের পারফিউমের গন্ধ সেই রাতে বুনোর চুলেও লেগেছিল। এখন কি সব সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে।
ডুরেল বলল, তোমাকে জানতে আমার বাকী নেই মিশরীয় ফ্রান্সী স্মিথ।
কে তুমি? ব্রুনো এখন কোথায়?
ব্রুনো-ডুরেল বলল, দ্যাখো গে এতক্ষণে জেনেভার হ্রদের তলায় জলের পোকারা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে।
ডুরেল বলল, ট্যালবট কোথায়? পেইন্টিং স্ক্রলগুলো কোথায় জমা রেখেছো?
আমি জানি না।
হঠাৎ সব নিস্তব্ধতা ভেঙে আকস্মিকভাবে ট্যালবটের আবির্ভাব ঘটল।
ভয়ে চিৎকার করে উঠল ফ্রান্সিসকা। ট্যালবট ডুরেলকে জোরালো এক ঘুসি মারতেই ঘটনা অন্যদিকে ঘুরে গেল।
ট্যালবট বলল, বেলারিও কোথায়? ফ্রান্সিসকা কোথায় তাকে খুঁজতে যাচ্ছে। তুমি সুইজারল্যাণ্ড থেকে আসছো? সরকারী লোক।কে সেকসনে কাজ করো। তাহলে তোমাকে খুন করতেই হবে।
ডুরেল বলল, তাহলেই কি তুমি স্ক্রল পেইন্টিংগুলো পেয়ে যাবে। আমার মনে হয় মেজর প্যাসেক সেসব এতক্ষণে হাতিয়ে নিয়েছে।
ট্যালবট বলল, প্যাসেক যে আমার সঙ্গে ধোঁকাবাজী খেলছে এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি
ডুরেল সেই মুহূর্তে মূৰ্ছা যাবার ভান করল। আর ঐ অসহায় ভাবের মূর্ঘনায় ট্যালবট অসতর্ক হতেই ডুরেল মাথা নিচু করে তার তলপেটে একটা বড় রকমের ঘুষি মারলো।
ট্যালবটের পিস্তলটাও সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল।
গলা ঘেঁষে বুলেটটা বেরিয়ে গেলো। তার বেশি কিছু নয়।
.
১০.
তুমি কি কাউন্টেসকে দেখেছো?
ভয়ে বেলবয়ের চোখদুটো ছোট হয়ে গেলো।
পনেরো মিনিট আগে লবিতে মেলব্যাগ ঘাটাঘাটি করছিল।
তাতে কি ধরনের পার্সেল দেখলে?
বেশ বড়োসড়ো। তাকে আরো কিছু লিরা দিয়ে ডুরেল ডেক্স ক্লার্কের কাছে এসে জানাল, ফ্লান্সিসকা কয়েক মিনিট আগেই বেরিয়ে গেছে। আর ট্যালবটের কোন হদিসই সে জানে না। কে জানে তার গতি কোথায়?
দাদ্রে ডুরেলের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু একঘণ্টা পার হয়ে গেলো।
কোথায় ডুরেল, কোথায় কে।
কামরা থেকে দাদ্রে বেরিয়ে পড়লো। শান্তা লুসিয়ে বীচের দিকে সেই রেস্তোরাঁয় একটা দেশীয় নৌকোতে জনা কয়েক ভদ্রলোক আর মহিলাকে ছবি তুলতে দেখলো।
তীরভূমির নীচে ডুরেল নামতে লাগলো। সেখানে যদি দাদ্রের দেখা পায়, বলা যায় না। কি তাই।
ডুরেল এগুতে থাকলো। দাদ্রে বলল, কি ব্যাপার স্যাম। তোমার কানে চোট লাগল কিসে?
ওসব কথা থাক। চলো কোথাও গিয়ে দুদণ্ড বসে প্রাণখুলে কথা বলি।
তারা একসময় একটা পানশালায় ঢুকে গেলো।
দাদ্রে বলল, এবার বলো তো আমার কাছে তুমি কি চাও।
ডুরেল বলল, তুমি কি কাউন্টেস এ্যাপোলিওকে চেনো।
দাদ্রে জানালো, শিগগিরি পরিচয় ঘটলেও ঘটে যেতে পারে।