.
০৭.
হ্যানসন হতবাক।
ডুরেল বলল, ব্যাপার কি?
সত্যি মরে গেল ব্রুনোটা?
ডুরেল বলল, অনেক খবর বার করা যেত ব্যাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে।
তা, ঠিক
পুলিশের কাছে খবর যাবার আগে, এক্ষুনি ব্রুনোর ডেডবডি প্যাকেট করে ফেল। তারপর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আবার পৌঁছে যাব রোমে। জ্যাকুমেলার ওখানেই সব খবর পেয়ে যাব। ট্যালবট সম্পর্কে হুঁশিয়ার। হঠাৎ ভয়াল হয়ে উঠল সীর চোখ দুটো।
শুধু এইটুকু জেনে রাখ আমরা ইটালীর এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে জড়িয়ে আছে যার নাম কাউন্ট এ্যাপোলিও। সবার আগে এখন এয়ারপোর্টে চলল। যদি হঠাৎ মহিয়সী ফ্রান্সিসকার সঙ্গে মোলাকাৎ হয়ে যায়, খুব ভালো হয়।
.
০৮.
ঠিক সেইসময়, ভয় এবং উদ্বেগ নিয়ে ফ্রান্সিসকা যেন ঘুম ভেঙে জেগে উঠল।
সীজার এখনো বিছানায়, মাদকীয় অশালীনতা ঢাকতে সকালের রোদ ততখানি বিচলিত নয় বোঝা গেল। তিনি বার্নাড এ্যপোলিওর সঙ্গে কি পাশবিক মজাটাই না করেছেন।
ফ্রান্সী স্মিথ—
সীজার, ও নামে আমাকে ডাকবেন না।
অস্ফুট রব তুলল সীজার, কী?
তখনো আবার সেই একই গলায় বলল, আগে ঠিক নামে ডাকো আমায়। আর তা না হলে উত্তর না।
সীজার বলল, সত্যি। আমাকে ভীষণ ভালোলাগায় তোমার ভেতরের অভিজাত মেজাজটা। এসো কাছে এসো, একবার
আমাকে আবার তুমি আর কিছু করতে বলল না। দ্যাখো খুব দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। জেনেভাতে তোমার যা ইচ্ছা তাই করছো। ট্যালবটকেও ঘোল খাইয়েছ। আমার ভাই ব্রুনো কি টেলিফোন করেছিল?
জানি না। তাকেই জিজ্ঞেস করো। আমি এখন যাব
সীজার আর বাধা দিল না।
তোমার কি ধরনের স্বামী এ্যাপোলিও? তোমার স্বামীর চরম শত্রুর সঙ্গে রাত কাটালে বিছানায়–তার থেকেও বড় কথা তুমি কি তাকে খুন করতে চাও?
সীজার বলল, না। আমার কোন দিনই সে ইচ্ছে নেই–তার কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে উঠল। ফ্রান্সিসকা বাস্তবিকই বারবণিতা। কিন্তু বার্নার্ড এ্যাপোলিওর কাছে এসে অবদমিত মনের সব সংশয় অন্যভাবে ঘটে গেল। এ্যাপোলিও তাকে হাত ধরে অন্য রাস্তায় পৌঁছে দিল। ধনে মানে সবচেয়ে উঁচুস্তরের সেই মানুষ যার আদি এবং অস্তে কোন সংখ্যা নেই। দ্যাখো। সেই যে ব্রুনো গেল আর কোন পাত্তা নেই। একবার তোমাকে সেন্টসীতে যেতেই হবে–
আমাকে?
আমার ভাবনা হচ্ছে শুধু ব্রুনোর জন্য। তুমি কি ঠিক জানো, জেনেভা থেকে স্ক্রলগুলো হোটেলের ঠিকানায় পাঠিয়েছিল।
হ্যাঁ, ফ্রান্সি বলল। ট্যালবট ওগুলো আমাকে দেবার পর আমি নিজে ব্রুনোর সঙ্গে জেনেভা পোস্টঅফিস থেকে ওগুলো পোস্ট করি। সবই ঠিক ছিল, ব্রুনো ভুল করে রশিদটা ভিলাতে কোথায় যে রাখলো আর খুঁজে পেল না। সেইজন্যেই তো বুনো ওখানে গেছে। আমরা এমন কিছু রাখিনি যাতে আমেরিকানদের সুবিধে হয়। আমি ওকে জুতোর মধ্যে রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু যতদূর মনে হচ্ছে সে বেডরুমের টেবিলের ওপরই রেখেছিল এবং তাড়াহুড়োতে ফেলে রেখে এসেছে। সীজার বলল, নিশ্চয়ই পেইন্টিংগুলো সেন্টসীতে আছে। সাবধান আমরিকানরা ভীষণ কড়া নজর রাখছে। ওরা ট্যালবটকেই খুঁজছে। যদি ট্যালবটকে ধরতে পারে তাহলে তোমাকেও জানাবে আর আমাকে তো বটেই। সুতরাং আর দেরী নয়। এক্ষুনি মানে মানে বেরিয়ে পড়ো। ছবিগুলো চাইই-চাই।
৯. সীজারের কাছ থেকে মুক্ত
০৯.
ঘড়িতে এখন সকাল চারটে।
ফ্রান্সিসকা নিজেকে সীজারের কাছ থেকে মুক্ত করে যখন উঠে দাঁড়াল; ঠিক সেই মুহূর্তে ডুরেল রোমের কিউ মিসিনো বিমানবন্দরে জেকুমেলার কাছে থেকে প্রচণ্ড দুঃসংবাদ পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। কে সেকসনের কাজ নিয়ে জেকুমেলারকে খুবই ব্যস্ত থাকতে হতো। সে একজন রোমান বিশিষ্ট ভদ্রলোক।
জেকুমেলার এসে জানাল, প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে ট্যালবটকে পেলাম না।
তবে কি হলো? প্লেনটা কি মিলানে থেমেছিল? আর ওখান থেকেই অন্য কোথাও চম্পট দিয়েছে। তা হলেও হতে পারে।
ডুরেল বলল, যাইহোক ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে ট্যালবট ইটালী ছেড়ে কিছুতেই যেতে পারবে না। আর দেরী নয়, সী–তুমি এক্ষুনি মিলানের দিকে চলে যাও। সেখানকার হোটেল, ট্যাক্সি, বাস তন্নতন্ন করে খোঁজো। পেতেই হবে তাকে। আর আমি সেন্টসী হোটেলেই থাকব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কাউন্টেস এ্যাপোলিও তার খপ্পরেই আছে। আর বিশ্বাস করে তার কাছেই জমা দিয়ে রেখেছে পেইন্টিংগুলো।
রাত ক্রমশ কেটে ফর্সা হতে লাগল আকাশ। রাস্তাঘাট নির্জন। গাড়ি থেকে নেমে ডুরেল সেন্টসী হোটেলের ভেতর সটান ঢুকে গেল।
ডুরেলের মালপত্র নিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে লাগল লম্বা ছিপছিপে চাপরাশি।
ডুরেল ঠিক সেই অবসরে তার কাছে থেকে সতর্কতার সঙ্গে জেনে নিতে চেষ্টা করল সেন্টসী হোটলের মালিক কি কাউন্ট এ্যাপোলিও?
চাপরাশি বলল, না। কখনো সীজার এখানে আসে না।
তখন ডুরেল যথেষ্ট টাকার লোভ দেখিয়ে বলল, কাউন্টের চাকর-বাকররা থাকে কি?
সে বলল, আমায় মাপ করবেন। আমি অত খবর বলতে পারবো না।
ডুরেল বলল, আমি ব্রুনো বেলারিওর একজন বন্ধুই বলতে পারো। এখানে আসবার কথা ছিল। সে একটা ব্যাবসার কাজে বাইরে বাইরে ঘুরছে। আচ্ছা তার নামে কোন পোস্টাল পার্সেল এসেছে কি না, দেখো তো। তার বদলে প্রচুর টাকা তোমায় দেব।
লোকটি বলল, একটু সবুর করুন। দুএক মিনিটের মধ্যে আমি আসছি
তারপর লোকটি ঘুরে এসে বলল, চারশো দু নম্বর রুম বুক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনো পার্সেল-টার্সেল নেই।