কতজন তারা সঙ্গে ছিল?
জনা চারেক হবে।
ডুরেল বলল, ফ্ৰীমন্ট ক্রুর লোকেরা তো কে সেকসনের লোক?
আর কোন কথা বলতে পারলো না এলেন।
অদূরে টেলিফোন বেজে উঠল।
মনে হয় প্যাসেক–
না। হ্যানসন জানাল। বাইরে আমি আমাদের লোকদের প্রয়োজনবোধে ফোন করতে বলেছিলাম
ডুরেলের হাত থেকে হ্যানসন রিসিভার টেনে কানের কাছে ধরল। এবং বলল, অপরপক্ষকে রোম এবং নেপলসের জন্য ২৩০০ সুইস এয়ারলাইন্সের দুটো টিকিট কাটতে।
কার ফোন? দানিয়েল?
হা। এতক্ষণে জ্যাক ২৩০০ এয়ার ফ্লাইট ধরে রোমে চলে গেছে।
হঠাৎ এ্যালেন বলে উঠল, দেখ স্যাম ওকে মেরে ফেল না। আমার অনুরোধ।
তারপর এ্যালেনের মৃত্যু ঘটে।
.
০৬.
হ্যানসন বলল, স্যাম, এ্যালেন আমার বড় প্রিয় ছিল।
বাজে কথা ভাল লাগে না। ডাক্তার এসে গেলে তার কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে সকারের ব্যবস্থা করো।
মুহূর্তে তার কাজে তৎপর হয়ে উঠল ডুরেল। এ বাড়ির সঙ্গে যাতে কে.জি ইউর লোকেরা আর কোন যোগাযোগ না করতে পারে এটাই এখন ডুরেলের দুরন্ত দুর্ভাবনা ভয়ানক কাজ করতে শুরু করল। ওপর তলায় গিয়ে ডুরেল দ্রুত রেডিওসেটগুলো ভেঙে চুরমার করে দিল।
তারপর শ্লথ পায়ে নীচে নেমে এলো।
সী জিজ্ঞাসা করল, যে প্লেনটা একটার সময় রোমে যায় আমরা কি ওটাই ধরব?
ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই। আমরা তার আগে একবার ভিলা-ডেল-সল যাব।
ওরা দুজন তখন লাল গাড়ির গতিপথ জেনেভার উত্তর দিকে ঘুরিয়ে দিতে হাইওয়ের পথে স্পীড তুলল। একটাই মাত্র এখন উদ্দেশ্য। যেভাবে তোক ট্যালবটকে পাকড়াও করে স্ক্রলগুলো উদ্ধার করতেই হবে। এবং প্যাসেকের খপ্পর থেকে তাকে চিরদিনের মতো মুক্ত করতে হবে।
একসময় অপরিচিত একটা জায়গায় হানসান সী গাড়ি থামল। মিস্টার ডুরেল, ঐ যে দূরে এ্যাপোলিওর বাগানবাড়ি।
ডুরেল বলল, এখানে কেউ আছে বলে তো মনে হয় না। নিঃসঙ্গ প্রাসাদপুরী।
হ্যানসন বলল, কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আছে।
কি করে বুঝলে?
ট্যালবটের কাছে খুব সম্প্রতি এ বাড়ির টেলিফোন নম্বর পাওয়া গেছে।
আর দেরী নয়। ভেতরে ঢোকা যাক।
ডুরের বলল, না! একজনকে বাইরে থাকা দরকার। বরং আমি ভেতরে যাই।
মোরামের পথ ঘুরে ডুরেল বাগানের উল্টোদিকে বাড়াল।
খানিক দূরে দোতলায় ব্যালকনির তলায় নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে একখানা ওপেন সীডান চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে কেউ নেই।
অথচ কাঁচের ভেতর থেকে কড়া তামাক পাতার পোড়া গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে আছে। বারান্দার ঈশান কোণের দিক থেকে মনে হলো একটুখানি আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে।
আরো একটা সতর্কতা অবলম্বন করে ডুরেল এগোতে থাকল।
ডুরেল আরো কিছুটা ঘুরপাক দিয়ে উঠতেই সী হঠাৎ পেছন থেকে লাফ মেরে বলল, ঘাবড়ে যেও না। এফ. বি. আই-এর লোক সামনে। টেক ইট ইজি। আস্তে আস্তে ডুরেল মেহগনি কাঠের দরজা ঘেঁষে দাঁড়াল।
ভেতরে একটা পায়ের পাতার ধ্বনি চৌকাঠ ছুঁয়ে গেল।
আরো একটু সামনের দিকে ডুরেল এগোলো।
আরো একটু এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই বড় হলঘরের পেছন দিকের লোহার দরজাটা প্রচণ্ড ঝড়ের তাণ্ডবে যেন খুলে গেল।
আর সেই তীব্র ধ্বংসের মুখে মরিয়া বেগে হিংস্র পাশবিক চাউনি নিয়ে একটা দৈত্যাকৃতি লোক এগোতে থাকল ডুরেলের দিকে।
এমন একটা ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটে যাবে যার জন্য সে সবসময় প্রস্তুত
সে একটা ধারালো অস্ত্র ডুরেলের দিকে ছুঁড়ে মারবার উপক্রম করল। ডুরেল তৎক্ষণাৎ দ্রুত নিজেকে পেছন দিকে সরিয়ে বলল, ওভাবে ছুরি চালাতে নেই। আমি পুলিশের লোক নই।
হঠাৎ লোকটি ইস্পাতের ফলাটা ছুঁড়ে মারতেই ডুরেলের মোটা কোটের হাতা ছুঁয়ে কিছুটা কেটে বেরিয়ে গেল। তারপর লোকটা ছুটতে শুরু করল। ডুরেলও পেছন পেছন ধাওয়া করল। এবং হ্যানসনের কাছে পৌঁছতে নির্দেশ দিল। আর নিজের পিস্তলটা বাগিয়ে ধরল। তার ময়লা ধূসরিত ঘেঁড়া পকেট হাতড়ে কাগজপত্র বার করল সাইলাস।
প্রথমটা একখণ্ড ইতালীয় পাশপোর্ট, তারপর বর্ডার স্লীপ, ফ্রেঞ্চ বডার দিয়ে যাবার একটা স্ট্যাম্প। আর গতকালকার সুইজারল্যাণ্ড প্রবেশ পথের একটা তারিখ। সে নাম পড়লো ব্রুনো বেলারিও। বাস করে ফিলিবেশে দ্বীপে। যদিও দ্বীপটা এ্যাপেলিওর একটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এদিকে কেন যে ব্যাটা মরতে এসেছিল। সী পকেটের ভেতরে থেকে আরো একটা এনভেলাপ করল। তাতে ছিল ত্রিশ হাজার লিরা। আর খামের ওপরে হোটেল সেন্টসীয় ছাপা মারা পাবেশেপী ১৪২ নেপলস।
এখানে ওখানে জিনিসপত্তর উল্টোপাল্টে, হাজার খোঁজাখুঁজি করে, আলমারীর মাথায়, খাটের তলায়, কিচেনে, সিঁড়ির ঘুরুনী ঘরের কোণে–কোথাও চিহ্ন পাওয়া গেল না স্ক্রল পেইন্টিংগুলোর।
তবে এটা ঠিক, কোন মহিলা এখানে দু-একদিনের জন্য রাতবিরেত কাটিয়ে গেছে সে কি এ্যাপোলিওর স্ত্রী? না অন্য কেউ, কেননা হ্যাঁঙারে ঝুলছে কিশোরী মেয়ের খাটো স্কার্ট। না কোন ভুল নেই। এখানে জ্যাক নিশ্চয়ই সিক্ত লালা ঝরিয়ে গেছে।
বুনো কি পাহারা দিতে পাঠিয়েছিল এ্যাপোলিওর প্রেরিত স্ত্রী অবৈধ প্রণয়লিপ্সার লীলাক্ষেত্রেকে। তার উত্তর আপাতত পাওয়া সম্ভব নয়।
যাইহোক, আর দেরী না করে নীচে নামল দুজন। নীচে নেমে দেখল লোকটির কোন হৃদস্পন্দন হচ্ছে না।
সাবাস, হ্যানসনের মার জব্বর মার।
সাবাস, সাবাস হ্যানসন, সাবাস।