ডুরেল বলল, আপনি কি নিশ্চিত ট্যালবটই সম্পূর্ণ দায়ী?
সুভানা বললে, আমাদের কাছে তো তেলরঙের ছবিগুলোর আর্থিক মূল্যের চেয়েও ধর্মীয় মূল্য অনেক বেশী। আর জ্যাককে শুধু এ ব্যাপারে নয়, মাইনিং লীজের ব্যাপারেও বিশ্বাস করেছিলাম আমেরিকান শিল্পপতিদের প্রতিনিধি হিসেবেই।
ডুরেল সেই মুহূর্তে জিজ্ঞেস করল, তা হলে সব আমেরিকানদেরই আপনি ট্যালবটের মতো একজন চোর বলে ভাবেন?
সুভানা বললেন, অনেক কিছু মূল্যবান জিনিষের বদলেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। ডুরেল জানাল, আপনার ভৃত্যের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।
কি লাভ। তার সঙ্গে কথা বলে।
হঠাৎ দ্বাররক্ষী এসে খবর দিল একজন জনৈক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছেন।
প্যাসেক মুহূর্তের মধ্যে একদম ভেতরের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
ঠিক এই মুহূর্তে প্যাসেককে এইখানে দেখে ডুরেল চমকে উঠল। প্যাসেক চাতুরীপূর্ণ চাউনির ফাঁকে মৃদু হাসল।
প্যাসেক বলল, ডুরেল এটা কিন্তু নিরপেক্ষ অঞ্চল। যা হোক, কি মনে করে এখানে–জানতে চাইল ডুরেল।
ব্যবসা।
কিসের ব্যবসা।
খনিসংক্রান্ত এগ্রিমেন্ট আর কি।
প্যাসেক, মস্কোতে কে.জি.ইউ ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাকা গোয়েন্দা ডুরেলকে বাইরে ডেকে এনে আলোচনা আমন্ত্রণ জানাল। দুজনে এসে থামল একটা অজানা সেতুর কাছে।
ট্যালবটকে খুঁজে পেলে। তোমাদেরই একজন লোক এমনি করে তোমাদের ভরাডুবি করল?
ডুরেল বলল, তার বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই।
প্যাসেক বলল, তোমাদের অতি বিশ্বস্ত অনুচর, বন্ধু, সেই আবার যা নয় তাই বলে বেড়াচ্ছে। প্রিন্স যার ফলে প্রত্যেকটা আমেরিকানদের ওপরে দারুণ চটে গেছেন
ডুরেল বলল, বছর কয়েক আগে আমস্টারডামে ছিলাম।
প্যাসেক বলল, বুঝেছি, তুমি রবার্ট লঙস্ট্রমের কথা বলতে চাইছ
ডুরেল বলল, সে আমার খুবই বন্ধু ছিল।
আমাদের ইচ্ছের বাইরে ওর মৃত্যুটা ঘটে যায়।
ট্যালবট এখন কোথায়?
যতদূর মনে হয় তার পাত্তা এখানকার ত্রিসীমানায় পাওয়া যাবে না। আর তোমাকেও আদেশ করছি এখনই জেনেভা পরিত্যাগ করতে। প্যারিস যেতে আমি তোমায় সাবধান করছি। যেখানে খুশী যাও কিন্তু জেনেভায় থেকো না।
.
০৪.
ডুরেল তারপর অন্য পথ ধরে পাবলিক টেলিফোন থেকে হ্যানসনকে খবর দিল।
হ্যানসন বলল, কি ব্যাপার?
ডুরেল বলল, এ্যালেনকে ফোন করলাম। কেউ ধরল না।
ঠিক আছে। তোমার কাছে আমি যাচ্ছি। কোথায় আছ এখন? নির্দিষ্ট একটা জায়গার নাম করে ডুরেল সেখানে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে লাগল। যথারীতি একসময় হ্যানসন এসে পৌঁছতে তারা দুজন স্মিক্সিথভিল পাড়ি দিল।
ডুয়েল বলল, চলো তার আগে ট্যালবটের কামরাটা সার্চ করি
হ্যানসন বলল, আমি তন্নতন্ন করে দেখেছি। কোন হদিস নেই। এখন বুঝতে পারছি ও সব কাজই করতে পারে টাকার জন্যে।
ডুরেল বলল, টাকাই যদি তার একমাত্র লক্ষ হয় তাহলে সে শুধুমাত্র ঐ পেইন্টিং চুরি করবে কেন বুঝছি না।
ডুরেল বলল, আমার ধারণা ফ্রান্সিস এ্যাপোলিও এর মধ্যে জড়িত আছে। এ্যালেন একটা ঠিকানা দিয়েছিল ভিলা-ডেল-সলের। যেটা নিঃসন্দেহ কাউন্ট এ্যাপোলিওর।
ডুরেল অবশেষে রুসেন্ট পিয়েরে ফিরে এলো। ডুরেল কিছুক্ষণের মধ্যেই নিঃশব্দে এ্যালেনের বাড়িতে ঢুকল কিছুক্ষণ আগে যে কেউ এসে এখানে তোলপাড় করে গেছে তার চিহ্ন প্রভূত বিদ্যামান।
রক্তাক্ত শয্যার পাশে মেহগনি কাঠের ডেস্ক ভেঙেচুরে খানখান।
হ্যানসন একটা হলঘর পেরিয়ে মাঝখান বারবার সেই বিছানার কাছে গিয়ে দেখল একটা বাদামী স্কার্ট আর রক্তাক্ত ব্লাউজের পাশে ২৮কোল্টের হাতীর দাঁতের বাঁটযুক্ত ছোট একটা বন্দুক নিঝুম ঘুমিয়ে রয়েছে যেন।
ডুরেল বছর তিন আগে এই রমণীর আগ্নেয়াস্ত্রটি এ্যালেনের কাছে দেখেছিল। তারপর ডুরেল মাথানীচু করে বেডরুমের দিকে এগিয়ে চলল।
.
০৫.
তথন এ্যালেন প্রায় মৃত্যুমুখে। দেওয়াল, ডেস্ক, বিছানা সর্বত্র রক্তের ফোঁটা ফোঁটা দাগ বর্তমান ইতস্ততঃ ছড়ানো। অতীব ক্ষীণ শব্দ তুলে সে ডাকল, স্যাম–
ডুরেল বলল, এ্যালেন আমি ভীষণ দুঃখিত, আমার আসতে খুব দেরী হয়ে গেল-এই নারকীয় কাজ কে করেছে আমাকে বলো।
স্যাম-সে বলার চেষ্টা করল, পারল না।
বলো, বলল, এ্যালেন।
অসহায় বোধ করে ডুরেল বলল, তবে কি প্যাসেক–
না।
তবে কি জ্যাক ট্যালবট—
এ্যালেন চুপ করে থাকাতে ডুরেল বুঝতে পারল কোথায় যেন ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছে অবিরত, যা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ডুরেল বলল, এখানে জ্যাক ফিরে এসেছে। জেনেভায় সারা দিন ছিল। স্ক্রলগুলো কি তার কাছেই আছে?
এ্যালেন বলল, হা হা। আমি ক্লান্ত স্যাম—
ডুরেল বলল, এ্যালেন তুমি ভাল হয়ে যাবে।
না। আর মিথ্যে বলল না স্যাম
ডুরেল বলল, কতক্ষণ এভাবে পড়ে আছো?
আধঘণ্টা হবে। আমি এমন কাজকে চিরকালই ঘৃণা করতাম স্যাম–আমার ভেতরটা এক্কেবারে এখন ফতুর হয়ে গেছে।
তা ঠিক–ডুরেল বলল, জ্যাক পেশাদার খুনে
এ্যালেন জবাবে বলল, তার থেকেও জঘন্য। প্যাসেকের চামচা
তোমাকে বলতে আমার বাধা নেই স্যাম। আমার লাইফ ইনসিওর করা আছে।
ইনসিওর!
স্যাম, সব কিছুই জ্যাক জানত। এ্যালেন বলল, অর্থাৎ আমার সবকিছু, সব কাজকর্ম গোপনীয়তা
তাছাড়া আর কিছু। সে আর কি মধু পেতে চেয়েছিল?
জানি না। হঠাৎ মিডল য়ুরোপের ফ্রীমন্ট নাবিকশ্রেণীর বাজে লোক নিয়ে বন্যজন্তুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর