হ্যাঁ, এখনও বাসি।
যাক, আর রক্ত পড়ছে কি?
না। আপাতত এখন ভালোই মনে হচ্ছে–
এখন আপনি হাঁটবেন না–বরং আমি একাই যাই। আপনি শুধু পথের নির্দেশটা দিন। তারপর কাছ থেকে বিদায় নিল।
.
২০.
ডুরেল চলতে শুরু করল সব সংকীর্ণতার আবরণ ভেঙে দুমদাম পা ফেলে। চারদিকে বীভৎসভাবে জমে রয়েছে চুন, বালী, সুরকী। কোথাও কোন প্রাণের সাড়া নেই। জায়গা যত সাংঘাতিক তার থেকেও মৃত্যুফঁদ ততখানি গভীর বলে মনে হতে লাগলো।
তবু দাদ্রেকে তাকে রক্ষা করতেই হবে। একথা ভাবতে ভাবতে দ্রুত এগুতেই হঠাৎ কোন এক অতল গহ্বর ভয়ার্ত রব ভেসে উঠল।
দাদ্রে। আমি এখানে।
ডুরেল চিৎকার তুলতে বিকট বন্দুকের গুলি দেওয়াল বিদীর্ণ করল!
স্যাম এখানে আমি।
-পিস্তল খাড়া করে ডুরেল বলল, জ্যাক। তারপর আবার স্বর তুলল দাদ্রে
চারদিকে থেকে সেই মৃত্যুদূতের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক ধোঁয়া ধুলোবালি সমেত ঘোর আচ্ছন্নতা ঘিরে ফেলতে লাগলো।
সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। শুনতে পাচ্ছে না। সে বুঝতে পারলো আর কোথাও পালাবার পথ নেই। সেখানে পরাক্রম ট্যালবট সামনাসামনি চিৎকার করে ডাকল, ডুরেল। দাদ্রের মাথা আমার রাইফেলের পয়েন্টের মধ্যেই আছে।
ট্যালবট জানালো, পেইন্টিংগুলো। কোথায়? সীজারই বা কোথায়?
ডুরেল বলল, সীজারের কথা বলতে পারি না। কিন্তু প্যাকেট আমার হেপাজতে। আমার কথা কি দাদ্রে শুনতে পাচ্ছে? ট্যালবট বলল, বিলক্ষণ শুনতে পাচ্ছে।
ডুরেল বলল, দাদ্রেকে ছেড়ে দাও।
ট্যালবট বলল, তাহলে আগে তোমার সাইলেন্সারের মুখ নামিয়ে দাও—
ডুরেল কিছুটা শব্দ করে মাটিতে নামিয়ে রাখলো।
ট্যালবট বিশ্বাসঘাতকতার ভূমিকা পালন করতে বিলম্ব করলো না। ট্যালবট তার দিকে রাইফেল উঁচিয়ে ধরতেই ডুরেল পকেটে হাত ঢুকিয়ে ৩৮ বোরের পিস্তলটা বাগিয়ে ধরলো।
দাদ্রে বলল, স্যাম। পালিয়ে যাও আমার অনুরোধ। শ্বাসরোধকারী মুহূর্তে ট্যালবট প্রাণের আকুলি জানিয়ে উৎকট কাশতে শুরু করতেই সেই প্রাণান্তক অবস্থার সুযোগে ডুরেলের হাতের আঙুলে গর্জে উঠলো ট্রিগার। ট্যালবটের রাইফেল মুহূর্তে ততোধিক পরিমাণে শব্দ তুলতে অন্ধকার আর ধোঁয়ার মধ্যে সমস্ত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।
প্রথমে আর্তনাদ উঠল ট্যালবটের।
ডুরেল বুঝতে পারলো তার লক্ষ্যভেদ তখন নিখুঁত।
ডুরেল বলল, দাদ্রে তুমি কেমন আছ
খুব ভালো আছি-স্যাম
ট্যালবট তখন মাটিতে পড়ে গুমরে উঠলো মিস্টার ডুরেল, আমাকে এই নোংরা কাজে লাগিয়েছিল শয়তান প্যাসেক। ঠিক সেই মুহূর্তে ডুরেল পিছন ফিরতেই দেখলো মেজর প্যাসেক নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।
.
২১.
প্যাসেক উদ্ভট গলায় বলল, আশাকরি মেহমান এবার বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে নিজেকে সংযত করবেন।
ডুরেল বলল, এ্যালেনকে খুন করেছিল কে?
প্যাসেক জানালো, আমি। সে কথা থাক। এখন পেইন্টিংগুলো কোথায়?
ডুরেল বলল, আমার ঠিকই জানা আছে। যদি কিছু টাকার দরকার থাকে তা এক্ষুনি নিতে পারেন।
প্যাসেক বলল, চুপ করুন।
খানিকক্ষণ নীরবতার পর প্যাসেক ট্যালবটের দিকে চেয়ে বলল, এখন নিশ্চিত এ্যাপোলিওর প্রাসাদেই পেইন্টিংগুলো আছে। শেষ কাজ তোমাকেই শেষ করতে হবে ট্যালবট যেনতেনপ্রকারেণ আমার পেইন্টিংগুলো চাই-ই।
ট্যালবট শুধু তার দিকে তাকালো কিন্তু কোনো কথা বলল না।
আগামীকাল আমরা এখানেই সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকব। তারপর যতদূর জানি সুভানা ফঙের সঙ্গে আমেরিকানদের চুক্তির শর্ত শেষ হয়ে যাবে। তার তারপরই আমার জেনেভা মিশন। আর টিনখনি চুক্তি
ট্যালবট বলল, সবই ঠিক আছে কিন্তু আমি নিজের হাতে ঐ হতচ্ছাড়া লোকটাকে খুন করতে চাই।
প্যাসেক বলল, আর এই যুবতী তন্বীটি কে–চিরকালের মতো ওকেও স্তব্ধ করতে পারলেই আমার পথ চলা সহজ হবে। সুস্থ হয়ে তুমি আবার আগের মতো কাজে নেমে পড়বে। আমি তোমার কাছে চিরঋণী ট্যালবট। আমি ঐ চিত্রকলা নিতে সব সময় রাজী আছি। জেনে রেখো তার জন্য সুইস ব্যাঙ্কে সব রকম অ্যাকাউন্ট বহাল রয়েছে, যা তোমার খুশি রেখে দিও।
এবার ট্যালবট মুখ তুলে তাকাতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না।
সে সব যাক গে। এখন ফ্ৰীমন্ট গোয়েন্দাদের নামগুলো রাখলে দেখি। কোথায় সেগুলো? এ্যালেনের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এসেছিল। এখান থেকে আমি এক্ষুণি বেরিয়ে যেতে চাই।
অবাক বিস্ময়ে ডুরেল তাকিয়ে দেখলো।
আর দেরী নয়। প্যাসেকের মনের পরিবর্তনের জন্য অনেক আগেই আগ্নেয়াস্ত্র নামিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে কতক্ষণই বা অপেক্ষা করবে। সীজারকে অকস্মাৎ অনেক দূর থেকেই আবিষ্কার করল সে।
একটা শক্তিশালী রাইফেল সীজারের হাতে।
ট্যালবটকে প্যাসেক অবিরাম ফ্ৰীমন্ট গোয়েন্দা দপ্তরের ডাটা দেবার জন্য জবরদস্তি শুরু করলো। নাছোড়বান্দা। ট্যালবটও কিছুতেই রাজী নয় মুখ খুলতে।
এমন সময় একটা জ্বলন্ত অঙ্গারের টুকরো সমস্ত পরিবেশকে এক নাটকীয় দৃশ্যে পরিণত করলো। চিৎকার করে ডুরেল ট্রিগারে আঙ্গুল টিপলো। শেষ করতেই হবে শত্রুকে। এই চরম সুযোগ।
ট্যালবট বলল, আমাকে তুমি নিশ্চয়ই মারবে না।
হ্যাঁ, পতঙ্গের মতো। নামগুলো আমি চাই।
তারা মিলানে আছে।
না, তারা মিলানে নেই।
তোমার পকেটেই খবরগুলো আছে। ওগুলো আমাকে দাও।
ডুরেল জানে যা সার্জেন প্যাসেক মনে করবে তা সে করবেই।
প্যাসেক তাকে আর দাদ্রেকে সম্ভবত ট্যালবটকেও মেরে ফেলতে পারে।