এ্যাপোলিও ড্রয়ার টেনে বার করলো খামভর্তি নোটের তাড়া। তার পাশে একটা হাতীর দাঁতের বাঁট।
সীজার অনুমান করলো সেটা কোনো ধারালো অস্ত্র।
কাউন্ট বললেন, কি, চুপ করে রইলে যে। গুনতে চাও কি?
নিশ্চয়ই। আমি এবং আপনি তো প্রায় একরকমই বলা চলে।
তাই বলে নিশ্চয়ই পরস্ত্রী হরণ করে থাকি না। মুহূর্তে কাউন্ট মরিয়া হয়ে বলে উঠল, তোমার কুকীর্তির জন্যে আমার হাতে তোমার মৃত্যু আজ কেউ ঠেকাতে পারবে না। তোমার ব্রাদার ব্রুনো আমার মনুষ্যত্বকে অনেকদিন আগে খুন করেছে। তুমি আমার স্ত্রীর পবিত্র পতিব্রতাকে খতম করেছে–পার অস্বীকার করতে? আমাকে তুমি একটা উঁচড়ে পরিণত করতে চাও। এ রকমও শুনেছি, ডন স্ক্রলের জন্যে বাজারে ওয়েট করবেন। আপনি তাকে বলেছেন স্ক্রলগুলো চুরি করবার জন্যে আমার সঙ্গে আপনি ষড়যন্ত্র করছেন।
হ্যাঁ। সত্যি সত্যি কি আমাকে খুন করতে চান।
নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন এ্যাপোলিও। তোমার প্ল্যানটা আমি বুঝতে পেরেছি। আমাকে স্ক্রলগুলো বিক্রি করে পুলিশকে জানিয়ে বেইজ্জৎ করতে চাও। তাই না?
হা, ওটাই আমার প্ল্যান ছিল ঠিকই
সীজার বলল, সে আমায় ভালোবাসে। এক সঙ্গে বিছানায় রাত কাটিয়ে তার সবটা আমার জানা আছে।
বুঝলাম। এতদিন আলেয়ার মতো কাজ করে গেছে আমার অনুমান। তুমি ছাড়া অন্য কেউ হলে বাধা দিতাম না।
সীজার হেসে উঠলো, আমি বুঝতে পারছি। আমাকে তুমি খুন করতে পারবে না। যেহেতু আমি এক বিছানায় ফ্রান্সির সঙ্গে শুয়েছি। আপনার তাতে বদনামই হবে। এবং পুলিশের কাছে গালগল্প বানিয়ে আমার সব দোষকে খতম করে দেবেন
হ্যাঁ, সব ব্যবস্থাই প্রস্তুত।
কিন্তু আমার সঙ্গে ফ্রান্সিসকার সম্পর্কের কথাটা কাগজে লেখা থাকবে না, সেটা আমার একমাত্র হত্যার কারণ হবে
আস্তে আস্তে বল।
আপনি কি মনে করেন চুপ করে থাকবে ফ্রান্সি।
তুমি কি সন্দেহ করো নাকি। তুমি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে ফ্রান্সি একটা ভালো বউ সেজেই আমার কাছেই থাকবে। সীজার অকস্মাৎ ঘামতে শুরু করলো। আর তাকে উদ্ধত দেখাল না তার পেছনে মাটিতে গড়িয়ে পড়েছেন ডন স্ক্রল। মুখ তুলে সে তাকালো। এ্যাপোলিওর পিস্তল তার দিকে তাহলে একটা ফাঁদই ছিল।
হ্যাঁ। যেমন তুমি ভেবেছিলে আমাকে প্রতারিত করে ছবিটা পুলিশের হাতে তুলে দেবে।
সীজার বলল, বেশ আমাকে তুমি গুলি করো। আমি মারা গেলে ফ্রান্সি আমেরিকানদের কাছে যাবে, অথবা ট্যাবটের সঙ্গে একটা ফয়সালা করবে? যে আদতে প্রথমে চুরি করেছিল।
উঠে দাঁড়ালো এ্যাপোলিও।
সীজার দরজার দিকে যাও। সীজার বুঝতে পারলো সে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গেছে।
সে তখন পিস্তল লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়ল এ্যাপোলিও ওপর।
সে লাফ দিতেই তার চোখ কালো বোরটার ওপরে স্থির। এ্যাপোলিও যেখানে টাকা গোনার সময় ছবিটা রেখেছিল। এ্যাপোলিও পালাবার জন্য ডেস্ক থেকে পিস্তলটা হাতে তুলে বেঁকে গিয়েছিল। তখন সীজারের হাতে ছুরি। সে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। এ্যাপোলিওর কণ্ঠস্বর সে শুনতে পেলো। যখন ছুরির ফলা তার শরীরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।
ফিরে দাঁড়িয়ে সীজার নিঃশব্দে ঘর থেকে পা মেপে মেপে বেরিয়ে গেলো।
.
১৯.
মিনিট পনেরো পরে ডুরেল এ্যাপোলিওর বাড়িতে এসে গেলো। কিন্ত মহলের ভেতরে একটা চাপা গুঞ্জন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ্যাপোলিও বাঁ হাত পেটের ওপর আর ডান হাতের তালুতে পিস্তল অনেকখানি ভয়ার্ত করে তুলল অন্ধকারকে। ডুরেল একি দেখছে। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও আততায়ী আত্মরক্ষা করেছে।
মিস্টার ডুরেল, কাউন্ট জানালেন, জানতাম না আপনি ফিলিবেনো দ্বীপে অবস্থান করছেন।
ডুরেল তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি সীরাজকে চাই
ডুরেলের দিকে তাকিয়ে কাউন্ট বললেন, নিশ্চয়ই পেইন্টিংয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তা হলে আমার সঙ্গে আসুন। কিন্তু একটা কথা।
বলুন
এখন আমার স্ত্রী কোথায়? এবং কেমন আছে?
ফ্রান্সিসকা ভালোই আছে। কিন্তু সীজার এখন কোথায় যেতে পারে?
নিশ্চয়ই বেলারিওদের সেই ভাঙ্গা বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে সে, আমরা সেই আণ্ডারগ্রাউণ্ড পোড়ো জমির মধ্যে পাবই পাবো।
প্রতিটি কথা ডুরেল মন্ত্রমুগ্ধের মতো গিলে যেতে থাকলো। আর তেমনি কাউন্ট তার আহত শরীরটা পাহাড়ের কোল বেয়ে টেনে উঠছে যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা দূরে থাক ভাবাই যায় না।
কাউন্ট বললেন, আমার প্ল্যান ভেস্তে গেছে এ যে কি চরম ব্যর্থতা। যা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না। ওকে চুরির দায়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মরে গেলেও আত্মার শান্তি হতো
না। ডুরেল বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি। কেন ফ্রান্সিসকাকে কাউন্টেস করেছিলেন?
কাউন্ট আবেগভরা গলায় বলতে লাগলেন প্রথম যুদ্ধের পর যখন আমার বংশে বাতি দেবার আর কেউ রইলো না, তেমন এক নিঃসঙ্গ জীবনের দুযযাগে বাঁচার জন্যে জীবনের ভালোবাসাকে স্রেফ বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই ওকে আলমারীতে সাজিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম কাউন্টেস করে। হ্যাঁ, টাকা, শুধু টাকা, টাকা চেয়েছিল। তাকে তেমনি অগুণতি অর্থ দিয়েছি কিন্তু কিছুতেই এক বিছানায় বিভোর থাকতে পারতাম না। আসলে কেন জানি না মন চাইতো না। তাইতো সে সীজারের সঙ্গে গোপনে প্রেমে মশগুল হয়ে পড়লো।
ফ্রান্সিকে আপনি কি এখনো ভালোবাসেন?