ইচ্ছা না থাকলেও বান্ডলকে বিলের কথা শুনতে হলো।
–আচ্ছা বিল, জিমি কি আগামী সপ্তাহে অ্যাবীতে আমার কথা কিছু বলেছিলো?
এতক্ষণে বিল বান্ডলের কথায় কান দিলো।
-হ্যাঁ, কর্ডাসকে বলতে হবে সেই ধরনের অনেক কথা বলে গেল। কিন্তু ব্যাপারটা খুবই ঝুঁকির।
–ঐটুকু ঝুঁকি নিতেই হবে। এবার বলল কারা কারা আসছে?
–সব সাধারণ মানুষ। তবে পার্লামেন্টের সদস্য মিসেস মাকাটা থাকছেন। আর থাকছেন সেই তরুণ হাঙ্গেরির বিমান পরিবহন মন্ত্রী স্যার স্ট্যানলি ডিগবি, ও তার সেক্রেটারি টেরেন্স ও’রুরকে। এছাড়া রয়েছেন হের এবারহোর্ড, একজন বিষাক্ত জার্মান ভদ্রলোককে বার দুই লাঞ্চে নিয়ে যাওয়ার হুকুম পেয়েছিলাম আমি। তবে তার সম্পর্কে নানারকম গুজব শোনা যায়। লোকটা সারাক্ষণ দাঁত দিয়ে নিজের আঙুলের নখ কাটে।
-ইস, কি নোংরা, বান্ডল বললো।
–আর হ্যাঁ, স্যার অসওয়াল্ড কুট থাকবেন। লেডি কুটও আসতে পারেন।
বান্ডলের এখন চিন্তা করার অবকাশ নেই। সময় নষ্ট করতে যে চায় না। তাই সরাসরি বিলকে প্রশ্ন করলো–বিল, সেভেন ডায়ালস-এর ব্যাপারটা কি? এ ব্যাপারে তুমি সব জানো।
বিল তার দৃষ্টি বান্ডলের দিক থেকে সরিয়ে নিলো।
বান্ডল বুঝলো, ও এড়িয়ে যেতে চায়। তাই বললো, এত গোপনীয়তার কি আছে, বুঝি না।
-গোপনীয়তার কিছু নেই। মাঝে লোকের হুজুগ উঠেছিল তাই যেতো। বেশি দিন ভালোও লাগতো না।
–জায়গাটা কি?
বিল এবার ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল–তার মানে? তুমি তো সেভেন ডায়ালস-এর সম্বন্ধে জানতে চেয়েছিলে, তার কথাই বললাম।
-ওর যে ঐ নাম জানতাম না।
—-ওটা একটা নোংরা জায়গা, টটেনহ্যাম কোর্ট রোডের দিকে। পুরানো সবকিছু ভেঙে বর্তমানে নতুন করে সবকিছু বানানো হয়েছে। তবে সেভেন ডায়ালস ক্লাবটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। মাছ আর আলু ভাজা পাওয়া যায়। তবে কোনো অনুষ্ঠান দেখে আসার পর বেশ প্রতিক্রিয়া হয়। নানারকমের লোক আসে। বিভিন্ন রকম মজার আলোচনা হয়। সস্তায় সময় কাটাবার বেশ উপযুক্ত জায়গা।
-বাঃ বেশ ভালোই। বান্ডল বললো, তাহলে আমরা আজ রাতে ওখানেই যাবো।
-না না, ওখানে যাওয়া চলবে না, বিল অসহায় ভাবে কথাটা বললো। আগেই তো বলেছি, আজকাল ওখানে কেউ যায় না।
কেউ যাক বা না যাক, আমাকে তুমি আজ রাতে ওখানে নিয়ে যাবে। কথাটা মনে রেখো, বান্ডল জেদ ধরলো, নিশ্চয়ই কোন গপন রহস্য আছে, তাই আমাকে নিয়ে যেতে তোমার আপত্তি?
– গোপন রহস্য? ওসব কিছু নয়। বিল বলতে থাকলো, মানে, একদিন রাতে বেব সেন্ট মাউরকে নিয়ে আমি ওখানে গিয়েছিলাম।
-তারপর? বান্ডল উদগ্রীব হয়ে উঠলো।
-বেব গলদা চিংড়ি খাওয়ার বায়না ধরলো। একটা গলদা চিংড়ি লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। টানাটানিতে সেটা বেরিয়ে পড়লো।
গলদা চিংড়ির গল্প আর শেষ হয় না। অধৈর্য হয়ে বান্ডল বললো, ওসব গলদা চিংড়ির কথা বাদ দাও। তুমি জেনে রাখো, আজ আমরা ওখানে যাচ্ছি-ই।
বিল বার বার আপত্তি জানিয়ে বান্ডলের একগুঁয়েমির কাছে হার স্বীকার করলো।
জায়গাটা দেখে বান্ডল চমকে উঠলো, অবিকল তার ভাবনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সব। ১৪ নং হ্যাঁন্স্যামটন স্ট্রিটের একটি উঁচু বাড়ি। বাড়ির নম্বর বান্ডল লিখে রাখলো।
একটা অপরিচিত লোক দরজা খুলে দিল। বান্ডলকে দেখে সে একটু চমকে উঠলো। সঙ্গে বিলকে লক্ষ্য করে একটু ধাতস্থ হলো। লোকটার লম্বা চেহারা, গায়র রঙ ফর্সা, চঞ্চল দুটি চোখ। কোথায় যেন বান্ডল এই লোকটাকে দেখেছে।
ধোঁয়ায় ভর্তি একটা ঘরে ওরা নাচতে শুরু করলো। ধোঁয়ার জন্য ঘরটা নীলচে দেখাচ্ছিল। কিছু বিদেশী ইহুদী এছাড়া নানাধরনের মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অনেক মহিলাও ছিল, যাদের মধ্যে অনেকে প্রাচীন জীবিকা নির্বাহ করে।
বিল দোতলার যে ঘরে জুয়া খেলা হচ্ছিল সেখানে বান্ডলকে নিয়ে গেল, সেখানেও ঐ লোকটিকে দেখে আচমকা ওর স্মরণে এলো তার পরিচয়।
–আরে এ তো চিমনিতে কিছুদিনের জন্য ফুটম্যানের কাজ করেছিল। অ্যালফ্রেড, ভালো আছো তো? বান্ডল প্রশ্ন করলো।
-হ্যাঁ, ভালো আছি, মাদমোয়াজেল।
–তুমি চিমনির চাকরি কবে ছাড়লে?
একমাস আগে। এটা ভালো চাকরি। খুব ভালো মাইনে পাই।
ঘরে পা দিয়েই বান্ডল বুঝতে পারলো ক্লাবটির আসল বৈশিষ্ট্য। টেবিলের চারপাশে যারা জড়ো হয়েছিল তারা প্রত্যেকে জাত জুয়াড়ি নিঃসন্দেহে।
বিল প্রায় অধঘন্টা পর অধৈর্য হয়ে বান্ডলকে নিয়ে নিয়ে নেমে এলো। মাছ ভাজা, আলু ভাজা খাওয়া হলো।– তারপর ওরা বাড়ির দিকে রওনা হলো।
.
.
চিমনিতে খোঁজখবর
বান্ডলের মেজাজ ও চরিত্র ওর বাবার ঠিক উল্টো। ওর বাবা ঠান্ডা ধরনের অলস প্রকৃতির মানুষ। বান্ডল মনে মনে তিনটে মতলব তৈরি করেছিল। একদিনেই সেগুলো করতে হবে।
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা বান্ডলের বরাবরের অভ্যাস। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে প্রাতঃরাশ সেরে সে হিসপানোয় চড়ে চিমনির দিকে রওনা হলো।
–যাক, তুই এসে আমাকে বাঁচালি। ওর বাবা ওকে দেখে খুব খুশী। টেলিফোন করতে আমার ভীষণ বিরক্তি জানিস তো। গতকাল কর্নেল মেলরোজ ইনকোয়েস্টের জন্য এসেছিলেন। আগামীকাল বেলা বারোটায় রনি ডেভেয়োর ইনকোয়েস্ট হবে। মৃতদেহ যেহেতু তুই আবিষ্কার করেছিস, অতএব সনাক্ত করার দায়িত্ব তোর। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মেলরোজ তোকে নিতে আসবে।