-শুভ সন্ধ্যা, লেডি এইলিস। উনি জানলা থেকে মুখ ফিরিয়ে বললেন।
ধন্যবাদ।
বান্ডল কোনো ভূমিকা না করে কাজের কথায় এলো।
–স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে লন্ডন বা তার আশেপাশে যতগোপন ডেরা আছে তার একটা তালিকা আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি। এদের মধ্যে অনেকগুলো বিপজ্জনক বলে মনে হয় না। আপনাদের?
এ ব্যাপারে একটা চমৎকার নিয়ম আছে। ব্যাটল বললেন। যারা যত বেশি কথা বলে, তারা তত কম বিপজ্জনক হয়ে থাকে।
–তাই আপনারা তাদের কাজে বাধা দেন না।
-ঠিক তাই। ওরা নিজেদের বুদ্ধির দূত বলে। সপ্তাহে যদি কোথাও গোপনে বসে রক্তের নদী নিয়ে কথাবার্তা বলে, তাহলে বাধা কোথায়। এতে আমাদের বা ওদের কারো ক্ষতি হয় না।
-কিন্তু কখনও কখনও এমনও তো হতে পারে যে, কোনো সমিতি যা তারা চায় তার চেয়েও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠেছে? বান্ডল প্রশ্ন করলো।
হতে পারে।
-সুপারিন্টেভেট ব্যাটল, আপনি এমন একটা তালিকা আমাকে দিতে পারেন…যাদের সদর দপ্তর সেভেন ডায়ালস-এ আছে?
কথাটা শুনে ব্যাটল একটু চমকে উঠলেন। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, লেডি এইলিন, বর্তমানে ঐ নামে কোনো জায়গা নেই। জায়গাটা আগে বেশ খারাপ ছিল। বর্তমানে বেশ কিছু অংশ ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। জায়গাটা কখনোই কোনো সমিতির তীর্থক্ষেত্র নয়। তবে রোমান্টিক জায়গাও বলা যায় না।
–ওহ! বান্ডল কি বলবে বুঝতে পারলো না।
–আচ্ছা, এই জায়গাটার কথা আপনার মনে এলো কেন, বলতে পারেন?
বান্ডল একটু ইতস্ততঃ করে বলে ফেললোগতকাল একজন লোককে কেউ গুলি করেছিল। আমার ভয় হচ্ছিল লোকটি আমার গাড়িতে চাপা পড়েছে ভেবে।
–মিঃ রনি ডেভেরো কি?
–আপনি ব্যাপারটা জানেন, অথচ কাগজে কিছু ছাপা হয়নি।
–আমরা ঘটনাটা চব্বিশ ঘন্টা চেপে রাখতে চেয়েছিলাম। আগামীকাল সব কাগজেই এই ঘটনা প্রকাশিত হবে।
বান্ডল বললো, উনি মারা যাওয়ার আগে সেভেন ডায়ালস কথাটা বলেছিলেন।
মনে রাখবো।
বান্ডল এবার অন্য পথে এগোল।
–গতকাল আপনার কাছে একটা ভয় দেখানো চিঠি নিয়ে মিঃ লোম্যাক্স এসেছিলেন। চিঠিটা সেভেন ডায়ালস-এর লেখা।
হতে পারে।
বান্ডল ভাবলো, বৃথায় ওঁর সঙ্গে কথা বলছে, যেন একটা শক্ত কাঠ।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল বললেন, আপনাকে একটা কথা বলবো, লেডি এইলিন।
–আমি জানি, আপনি কি বলতে চান। আমি বাড়ি গিয়ে চুপ করে বসে থাকবো। আর এই ব্যাপারটা আপনাদের হাতে ছেড়ে দেবো। বান্ডল বললো, তবে মনে রাখবেন, আপনাদের মত পেশাদারী জ্ঞান বা দক্ষতা আমার নেই। কিন্তু আমি আড়ালে থেকে সব কিছু কাজ করতে পারি। সেটা ভালো করে জানবেন।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল যেন একটু মর্মাহত হলো।
–অবশ্য, বান্ডল বললো, আপনি যদি গোপন রহস্যময় সমিতিগুলোর ঠিকানা আমাকে না দেন।
–নিশ্চয়ই দেবো।
ব্যাটল চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজায় মুখ বাড়িয়ে কাউকে কিছু বলে আবার নিজের জায়গায় ফিরে এলেন। বান্ডলের কেমন সন্দেহ হলো, ব্যাটলের তৎপরতা লক্ষ্য করে।
একসময় একজন লোক একটা টাইপ করা কাগজ সুপারিন্টেন্ডন্ট ব্যাটলের হাতে দিয়ে গেল।
কাগজটি হাতে নিয়ে ব্যাটল বললেন, নামগুলো শুনুন, ব্লাড ব্রাদার্স অব সেবাস্তিয়ান। দি উলফ হাউন্ডস, দি কমরেডস্ অপ পিস, দি কমরেডস ক্লাব, দি ফ্রেন্ডস অব অপ্রশেন, দি চিলড্রেন অব মস্কো, দি রেড স্কটল্যান্ড বেয়ারার্স, দি হেরিংস, দি কমরেডস অফ দি ফলস, এমনই আরো অনেক।
বান্ডল চিন্তা করল, এই নামগুলো দিয়ে ওর কোনো কাজ হবে না। তাই তাকে ওগুলো দেওয়া হলো। তাই সে বললো–আপনি কি চান, সব ব্যাপারটা আপনাদের ওপর ছেড়ে দিই?
-হ্যাঁ, আমি সেটাই চাই।
বান্ডল উঠে দাঁড়ালো। এই শক্ত কাঠকে কিছুতেই গলানো গেল না। হঠাৎ তার একটা কথা মনে পড়লো। তুরুপের তাসের মতো কাজে লাগালেন।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, আমি আপনার কাজে বাধা দিতে চাই না। কিন্তু আপনি জানেন, আমি সব কিছুতেই নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পড়ি। চার পছর আগে চিমনির ব্যাপারটার জন্য আপনি আমাকে সাহায্য করতে দিয়েছিলেন, তাই বলছি, যদি কোনো আপেশাদারের পক্ষে কিছু করার থাকে তাহলে সেই দায়িত্ব আমাকে দিন।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল চুপ করে রইলেন খানিক্ষণ। তারপর বললেন, আপনার জন্য একটা ছোট্ট ইঙ্গিত দিচ্ছি। আপনি বলি এভারসলের সঙ্গে দেখা করুন। সেভেন ডায়াল-এর ব্যাপারে ও আপনাকে অনেক কথা বলতে পারবে। ওর কাছ থেকে জেনে নিন। আর এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
.
বিলের সঙ্গে ডিনার
পরদিন সন্ধ্যায় কথামত বান্ডল এলো ডিনার খেতে। বিল ওকে দেখে খুশীতে উপচে পড়লো। সে তার খুশী নানারকম ভঙ্গী করে প্রকাশ করলো।
-বিল, তুমি কিছুদিন ধরে কি কাজ করছিলে? বান্ডল প্রশ্ন করলো।
–তোমাকে সেই কথাটাই বলার চেষ্টা করছিলাম। তোমার বুদ্ধি আছে যথেষ্ট। তাই তোমার সঙ্গে পরামর্শ করতে চাই। জুটেছে এক ইয়াঙ্কি মেয়ে, নাম সেন্ট মাউর। ওর আসল নাম গোল্ড স্মিথ বা আব্রোসিয়ার।
বিলের বান্ধবীদের বায়নার ব্যাপারটা নানারকম। ওদের সংখ্যাও কম নয়। ওসব উড়িয়ে দিয়ে বান্ডল কাজের কথায় এলো, বললো–বিল, গতকাল আমি জিমি থেসিজারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওর সঙ্গে তোমার দেখা হয়?
–আজই সকালে দেখা হয়েছে। বিল নিজের কথায় ফিরে এলো। জানো, বেবকে যেমন সুন্দরী দেখতে, তেমনি গুণের। অন্য মেয়েরা হিংসে করে ভীষণ।