-হ্যাঁ, সাতটা ঘড়ি পরপর সাজানো ছিল। জিমি বলে উঠলো। আটটা নয়। ভাবলেই কেমন লাগে। ঐরকম ঘড়ি অন্ধকার কোনো ঘরে থাকলে আমি ঢুকছি না সেই ঘরে।
-যদি রেডিয়াম বসানো না থাকে তাহলে অন্ধকারে তো দেখতে পাবেন না। বান্ডল বললো, সে মাথা ঝাঁকিয়ে আবার বললো, আমি নিশ্চিত, এটা হবে। একটু চুপ করে আবার বললো, ঘড়িগুলো কে কিনেছিল?
–আমরা সবাই মিলে?
–মতলবটা কার?
আমরা সবাই ভেবেছিলাম। আসলে জেরি ওয়েডকে কিভাবে ঘুম ভাঙিয়ে তোলা যায়, তারই শলা পরামর্শ চলছিল। অ্যালার্ম দেওয়া ঘড়ির কথা প্রথম বলেছিল পঙ্গো। আমরা রাজী হয়েছিলাম। খুব সম্ভব বিল বলেছিল, বারোটা ঘড়ি কেনার জন্য। শেষ পর্যন্ত আটটা ঘড়ি কেনা হয়। আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটা করে, বাকি দুটো পঙ্গো আর লেডি কুটের জন্য। কিছু ভেবে চিন্তে এটা করা হয়নি। নিছক ঘটে গিয়েছিল।
বান্ডল ঠিক মেনে নিতে পারলো না। কিন্তু চুপ করে রইলো।
জিমি সমস্ত ঘনা গুছিয়ে বলার চেষ্টা করলো।
-মাফিয়া গোষ্ঠীর গন্ধ রয়েছে এর মধ্যে নিঃসন্দেহে। জেরি ওয়েডের কাছে এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে যায়। তবে এটা যে বিপজ্জনক কিছু সেটা সে বুঝতে পারেনি। অথবা পরে এমন কিছু ঘটেছিল যা ওর ধারণাকে পালটে দিয়েছিল। মনে হয় রনি ডেভেরোকে এ বিষয়ে কিছু বলেছিল। ফলে জেরিকে প্রাণ দিতে হলো। যতটুকু রনি জানতে পেরেছিল সেটাকে সম্বল করে সে এগোবার চেষ্টা করেছিল। সে-ও খুন হলো। কিন্তু ওরা দুজন যা জেনেছে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে এগোতে হবে।
-মনে হয় এটা ভালোই হবে। ওরা আমাদের সন্দেহ করতে পারবে না। লোরেন বললো। ফলে আমাদের বিপদের সম্ভাবনা কম হবে।
হঠাৎ কি মনে হতে জিমি দেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকালো। তারপর মুখ দিয়ে একটা অস্পষ্ট শব্দ করে দরজা খুলে স্টিভেনসনকে ডাকলো মাধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করার জন্য।
প্রথমে ওমলেট দিয়ে খাওয়া শুরু হলো। এছাড়া রয়েছে পাখির মাংস ও হালকা একটা স্যুপ।
খেতে খেতে কথা হচ্ছিল।
হঠাৎ বান্ডল চিৎকার করে উঠলো।আমি একটা গাধা, ভাবতে ভাবতে কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম।
-কি?
–আপনি নিশ্চয়ই কর্ডাসকে চেনেন, যার নাম জর্জ লোম্যাক্স?
–হ্যাঁ, নামটা নিশ্চয় শুনেছি। বিল আর রনি দুজনেই বলেছিল।
–তিনি সেভেন ডায়ালস-এর কাছ থেকে একটা সাবধানী চিঠি পেয়েছেন।
–এটা কি সত্যি? জিমি ঝুঁকে পড়লো।
-সত্যি, বাবাকে তিনি কথাটা বলেছেন, এবার বুঝেছেন, এটা কোনো ব্যাপার নির্দেশ করছে?
জিমি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে খুব ভালো ভাবে চিন্তা করলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, তাহলে কর্ডাসের দেওয়া পার্টিতে কিছু একটা হতে চলেছে।
-হ্যাঁ। আমার ধারণাও তাই। বান্ডল বললো।
এবার জিমি লোরেনের দিকে তাকিয়ে বললো, যখন বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তখন মনে হয় জেরির বয়স ছিল কুড়ি বছর। সবাই ঐ বয়সে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু জেরি করেনি। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত জেরি ইংল্যান্ডে ছিল না। ঐ সময় ও কোথায় ছিল তা কেউ জানে না। কিন্তু আমি বেশ খুঁটিয়ে দেখেছি। ও ঐ সময় জার্মানিতে ছিল। কারণ ও জার্মান ভাষা বেশ ভালো বলতে পারতো।
লোরেনের গালদুটো লাল হয়ে উঠলো।
জিমি আবার বলতে শুরু করলো, জেরি পররাষ্ট্র দপ্তরে চাকরি করতো। সে ছিল হাসিখুশী, বোকা বোকা গোছের। কিন্তু এটা তার ওপরের আবরণ। আমার ধারণা ভেতরে ও ঐ দপ্তরে বেশ উঁচু পদে বহাল ছিল।
-এর থেকে কি বোঝা যাচ্ছে? বান্ডল জানতে চাইলো।
–এটা আন্তর্জাতিক ব্যাপার। লোম্যাক্সের বাড়ির ঐ পার্টিতে নামকরা কেউ একজন থাকছে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। বিল নিশ্চয়ই সেখানে কর্ডাসের ডান হাত হয়ে হাজির থাকবে। ও আমাকে কায়দা করে সেখানে নিয়ে যেতে পারে।
তার আগে বিলকে তালিম দিয়ে নিতে হবে। কারণ ও এ ব্যাপারে একদম আনাড়ী।
–আপনিই বলুন, সরল মনে জিমি বললো।
–বিল আমাকে এক ধনী তরুণ রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচয় দেবে। এই সব পার্টিতে ওরা ধনীদের কবজা করতে ব্যস্ত থাকে। আমি আগামীকাল বিলের সঙ্গে ডিনারে দেখা করছি। ওর কাছ থেকে জেনে নেবো কারা কারা পার্টিতে আসছেন।
–আপনি তো ঐ পার্টিতে থাকছেন না?
-কার্ডস আমাকে বিষের মতো ঘেন্না করে জানি। তবে এটাও ঠিক, উপায় অনেক আছে।
ঠিক হলো লোরেন যাবে না। বাইরে থাকবে। তাকে এখন বাড়ি গিয়ে শান্ত হয়ে বসে থাকতে হবে।
–তাহলে ঐ কথাই রইলো, জিমি বললো, তুমি কিছু করছে না।
–আমি কিছুই করছি না। লোরেন তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জবাব দিলো।
লোরেন যেমন ভীরুর মতো কথাটা উচ্চারণ করলে, বান্ডলের কাছে সেটা অস্বাভাবিক ঠেকলো।
.
বান্ডল গেল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে
সবাই সব কথা বলে না, এটা একটা প্রবাদ বাক্য আছে। জিমি থেসিজার, বান্ডল ও লোরেনের মধ্যে কথাবার্তা হলো ঠিকই, কিন্তু তারা পরস্পরের কাছে কিছু কথা গোপন করে রেখেছে, এটা স্পষ্টতই বলা যেতে পারে।
জিমি থেসিজারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বান্ডল সোজা চলে গেল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সারে অফিসে।
সুপারিন্টেন্ডন্ট ব্যাটল বেশ ভারিক্কি চেহারার মানুষ। গোপন রাজনৈতিক কাজকর্ম দেখা তার প্রধান দায়িত্ব। এই ধরনের একটা তদন্তের কাজে জিমি চিমনিতে বছর চারেক আগে এসেছিলেন।
যখন বান্ডলকে সুপারিন্টেন্ডেটের ঘরে নিয়ে আসা হলো তখন তিনি জানলা দিয়ে বাইরে চড়াইপাখির খেলা লক্ষ্য করছিলেন।