–সম্ভবতঃ ইস্ট এন্ডের কাছে। শুনেছি ওখানে বাস যায়। আমি কোনদিন যাইনি।
–তুমি জিমি থেসিজার নামে কাউকে জানো?
লর্ড কেটারহ্যাম ক্যাটালগের দিকে চোখ রেখে বললেন, কোন থেসিজার? কত তো থেসিজার আছে। তোর ঠাকুরমার বাবা এক থেসিজারকে বিয়ে করেছিলেন।
-ওঃ, তোমাকে নিয়ে পারা যায় না। বিলকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
–সেই ভালো। লর্ড কেটারহ্যাম এবার ক্যাটালগের দিকে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করলেন।
বান্ডলকে চলে যেতে দেখে তিনি আবার ডাকলেন, সেভেন ডায়ালস-এর কথাটা মনে পড়লো। জর্জ লোম্যাক্স এসেছিল। তুই তো ওকে চিনিস। পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি। আর ক্যাবিনেট মন্ত্রী। সামনের সপ্তাহে প্যারিতে কি একটা রাজনৈতিক সভা আছে। ও একটা চিঠি পেয়েছে, যাতে সাবধান এমন ধরনের কিছু লেখা আছে। চিঠিটা পাঠিয়েছে সেভেন ডায়াল। স্টকল্যান্ড ইয়ার্ডে যাবে পরামর্শ করতে।
বান্ডল অন্যমনস্ক হয়ে জেরির চিঠিটার কথা ভাবতে লাগলো। যতই ভাবলো ততই ওর মনে হলো, এ ধরনের চিঠি কোনো বোনকে লেখা সত্যিই আশ্চর্য।
-বাবা, জেরি ওয়েডের বোন লোরেন ওয়েডের কথা তুমি বলেছিলে। বান্ডল প্রশ্ন করলো।
-সত্যি কথা বলতে কি লোরেন ওর বোন নয়। ওয়েড দ্বিতীয়বার যে মহিলাটিকে বিয়ে করেছিলেন তার প্রথম স্বামীর মেয়ে লোরেন। লোকটি মেয়েকে দেখাশোনা করতো না। তাই ওয়েড তাকে বড়ো করে তোলে এবং তার পদবী দেয়।
-বুঝলাম। এবার সব পরিষ্কার হলো।
.
দেখা করলো বান্ডল
পরদিন সকালে গাড়ি নিয়ে বান্ডল সোজা এলো শহরে। ফোনের মাধ্যমে বিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলো। ওর ফোন পেয়ে বিল আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো। সিনেমা বা রেস্তোরাঁয় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। কিন্তু বান্ডল জানালো, সে খুব ব্যস্ত। কয়েকদিন পরে ওসব নিয়ে ভাববে।
–বিল, কাজের কথা শোন। জিমি থেসিজার নামে কাউকে চেনো?
–অবশ্যই চিনি। তুমিও চেনো।
–না, আমি চিনি না।
–নিশ্চয়ই চেনো। গাধার মতো লালচে মুখ। তবে আমার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি ধরে।
–কি করে? বান্ডল জানতে চাইলো।
কাজকর্মের কথা বলছো? কিছু করে না। ঘোরা ওর চাকরি। আর চাকরি করার প্রয়োজন ওর নেই।
বান্ডল একটুক্ষণ চুপ করে রইলো। জিমি থেসিজার কি তাকে সাহায্য করতে পারবে, অবশ্য মৃত লোকটি তার নাম-ই উচ্চারণ করেছিল।
রনি ওর বুদ্ধির প্রশংসা করতো। বিলের কণ্ঠ ভেসে এলো বান্ডলের কানে। রনি ডেভেরো, জিমি থেসিজারের প্রিয় বন্ধু।
বান্ডল বুঝলো, বিল এখনো রনির মৃত্যুর খবর জানে না। কোনো কারণে পুলিস হয়তো সেটা চেপে রেখেছে।
-রনির সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি। সপ্তাহখানেক আগে তোমাদের বাড়িতে শেষ দেখা হয়েছিল। ঐ সময়ে বেচারী জেরি মারা গেল। বান্ডল, তুমি নিশ্চয়ই শুনেছে।
রনির ব্যাপারটা ফোনে জানাতে চায় না বান্ডল।
–তুমি কি জিমি থেসিজারের ঠিকানা জানো?
জারমিন স্ট্রিট। একটু ধরো, নম্বরটা দেখে দিচ্ছি।
খানিকক্ষণ নীবর রইলো ফোনের দু প্রান্ত।
-বান্ডল, নম্বরটা লিখে নাও। ১০৩, জারমিন স্ট্রিট। তুমি যে বললে ওকে চেনো না। তবে ওর ঠিকানা নিয়ে কি করবে?
চিনি না ঠিকই। তবে আধঘণ্টার মধ্যে চিনে নেবো। আর শোন, আগামীকাল রাতে ডিনারে তোমার সঙ্গে দেখা করছি।
বান্ডল ঘড়ি দেখলো। এগারোটা পঁচিশ। একটা ট্যাক্সি নিয়ে সে জারমিন স্ট্রিটের দিকে ছুটলো।
একজন বয়স্ক ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলো। তাকে বসবার ঘরে নিয়ে গেল। বড় ঘর। কয়েকটা সোফা রয়েছে। একটি সোফায় ছোটখাটো চেহারার কালো পোষাক পরে একটা ফর্সা মেয়ে বসে আছে।
বান্ডল লোকটিকে জানালো জিমি থেসিজারের সঙ্গে দেখা করতে চায়। নাম তাকে না বললেও চলবে।
লোকটি ঘাড় কাত করে ভেতরে চলে গেল।
বান্ডল মেয়েটিকে দেখে বিরক্ত হয়েছিল। কারণ সে চায় না কোনো অপরিচিতার সামনে জিমির সঙ্গে কথা বলতে। সে মেয়েটিকে খুঁটয়ে দেখতে লাগলো। পরনে শোকের পোশাক। তবে কি এই মেয়েটিই সে?
বান্ডল সময় নষ্ট না করে প্রশ্ন করলো, আপনি কি মিস লোরেন ওয়েড?
-হ্যাঁ, আপনি আমাকে চিনলেন কি করে?
–আমি বান্ডল ব্রেন্ট। গতকাল আপনাকে একটা চিঠি পাঠিয়েছি।
–ধন্যবাদ, জেরির চিঠিটা আমি পেয়েছি, কিন্তু আপনি এখানে?
–আপনি রনি ডেভোরোকে চিনতেন?
–হ্যাঁ, যেদিন জেরি–যাক, ও সেদিন এসেছিল। জেরির কাছের বন্ধু ছিল।
–সে মারা গেছে।
লোরেন হাঁ করে তাকিয়ে রইলো, বান্ডল গতকালের ঘটনার বিবরণ দিলো।
লোরেনের চোখে ভয়ের ছায়া–তাহলে গত একসপ্তাহ ধরে যা ভাবছিলাম তাই। জেরির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। ওকে কেউ খুন করেছে।
-আপনারও ধারণা এইরকম?
কারণ জেরি ছিল ঘুম কাতুরে। তাকে ঘুমের জন্য ওষুধ খেতে হতো না। আপনার পাঠানো চিঠিটা নিয়ে রনির কাছে এসেছিলেন। ওকে না পেয়ে জিমির কাছে এসেছি। আমার এখন কি করা উচিত ওর কাছ থেকে পরামর্শ নেবার আশায়।
.
জিমির অতিথি
–স্যার, আপনার সঙ্গে একজন তরুণী দেখা করতে চাইছেন।
ঘুম জড়ানো গলায় জিমি বললো, কি বললে স্টিভেনস? আর একবার বলো।
–একজন অল্পবয়স্কা সুন্দরী তরুণী, স্যার। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।
জিমি বিরক্ত হলো–কেন?
কারণ কিছু বলেননি। স্যার, এই চা ঠান্ডা হয়ে গেছে, আপনার জন্য আর এক কাপ আনছি।
স্টিভেনস খানিক বাদেই এক কাপ গরম চা এনে জিমির সামনে ধরলো।