আমার প্রিয় লোরেন,
আগামী বুধবার আমি তোমার কাছে যাচ্ছি। বেশ আছি। খুব মজা হবে। আর সেই সেভেন ডায়ালের যে কথা বলছিলাম সেটা ভুলে যেও। ব্যাপারটা ঠাট্টা মনে করে তোমাকে বলেছিলাম। কিন্তু সে ধারণা আমার নষ্ট হয়েছে। তুমি কিছু মনে করো না। তোমার মত ছোটদের এই ধরনের ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত নয়।
ভীষণ ঘুম পেয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও আর লিখতে পারছি না।
ঐ লার্চারের ব্যাপারে আমার ধারণা…
সেভেন ডায়ালস। জায়গাটা কোথায়? মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু বান্ডল পারলো না। তার মানে চিঠির কয়েকটা কথা খচখচ করে বিধতে লাগলোবেশ আছি, ভীষণ ঘুম পেয়েছে কথাগুলো খাপ খাওয়াতে পারছে না বান্ডল। চিঠির কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে সে ঘুমের ওষুধ খাবে কেন?
নিঃস্তব্ধ ঘরে বান্ডল বসে ভাবছে। কেবল শোনা যাচ্ছে ঘড়ির টিকটিক শব্দ। ঘরের চারপাশে তাকিয়ে বান্ডল একটু কেঁপে উঠলো।
.
পথের সেই লোকটি
বান্ডল তাড়াহুড়ো করে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করলো। তাড়াহুড়ো করা তার স্বভাব। এতে যে বিপদে পড়েনি কখনোও তা নয়। অবশ্য সে ভালো গাড়ি চালায়।
অক্টোবর মাস। রোদ্দুর ঝলমল করছে। বান্ডল তাই যেন চঞ্চলতায় মুখর।
জেরি ওয়েডের অর্ধসমাপ্ত চিঠির সঙ্গে দুলাইন লিখে সকালেই লোরেনের কাছে সে পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার সে বিল এভারসেলের সঙ্গে দেখা করে সেদিনের পার্টির সব কথা জানবে।
মাইলের পর মাইল পার হলো বান্ডলের হিসপানো। বান্ডল নিজের চিন্তার মধ্যে ডুবে ছিল।
হঠাৎ একটা লোক ঝোঁপের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে টলতে টলতে রাস্তায় পড়লো। লোকটাকে বাঁচানোর জন্য বান্ডল প্রাণপণে ব্রেক কষলো। একটা নয়ানজুলির মধ্যে গিয়ে পড়তে পড়তে দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেলো বান্ডল। লোকটাকে বাঁচাতে পেরেছে ভেবে নিশ্চিন্ত হলো।
কিন্তু পেছনে তাকাতেই তার চক্ষু বিস্ফারিত হলো। লোকটি চাপা পড়েনি ঠিকই, কিন্তু ধাক্কা খেয়েছে মনে হয়। নতুবা উপুড় আর স্থির হয়ে আছে কেন?
সে প্রায় ছুটে এলো লোকটির কাছে। তার বুকে তখন হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ হচ্ছে।
লোকটাকে চিৎ করলো। সুন্দর চেহারার এক যুবক। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। বান্ডল নিশ্চিত যে লোকটা মারা গেছে বা মরতে চলেছে। এমন সময় লোকটির দুটি ঠোঁট নড়ে উঠলো। অস্ফুট স্বরে কিছু বলার চেষ্টা করলো। বান্ডল ঝুঁকে পড়লো একটু।
-সেভেন ডায়ালস…ওকে বললেন…
বান্ডল আরো একটু কান নামিয়ে আনলোবলুন, কি বলবো?
–জিমি থেসিজারকে…বলবেন
লোকটির মাথা একপাশে হেলে পড়ে স্থির হয়ে গেল।
এরকম ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে সেটা জানা ছিল না বান্ডলের। একটা মানুষকে সে চাপা দিয়ে মেরে ফেললো। কিছুক্ষণের মধেই নিজেকে সংযত করল। লোকটা জ্ঞানও হারাতে পারে। সে লোকটাকে টানতে টানতে গাড়িতে তুললো।
দুমাইল পার হয়ে একটা ছোট শহরে একজন ডাক্তারের দেখা পেল।
ডাঃ ক্যাসল তার চেহারা দেখে একটু বিচলিত হলেন।
–মনে হয় আমি একজন লোককে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছি। বান্ডল বলে উঠলো।
ডাক্তার তাকে ওখানে বসতে বলে নির্দিষ্ট ঘরে ঢুকলেন। পাঁচ মিনিট পরে ফিরে এলেন।
-এবার বলুন তো, ঠিক কি ঘটেছে?
ডাক্তারের প্রশ্নে বান্ডল সব ঘটনা গুছিয়ে বললো।
-না, গাড়িটা ওর দেহের ওপর দিয়ে যায়নি। লোকটা কি টলছিল?
–হ্যাঁ, আমি মনে করেছিলাম, লোকটা মাতাল।
-লোকটাকে গুলি করা হয়েছে। তাতেই ওর মৃত্যু হয়।
.
আবার সেভেন ডায়ালস
এতক্ষণে বান্ডল একটু ধাতস্থ হলো।
-কিন্তু ওকে কি করে কেউ গুলি করলো? বান্ডল জানতে চাইলো।
-সেটা বলতে পারবো না। ডাক্তার জবাব দিলেন। রাইফেলের বুলেট বিঁধেছে ওর শরীরে। ভিতরে রক্তপাত হয়েছে। আচ্ছা, ওর পেছন পেছন কেউ কি ছুটে এসেছিল?
–না, কাছাকাছি কাউকে দেখিনি।
–মারা যাওয়ার আগে কিছু বলেছে?
-খুব অস্পষ্ট ভাবে কয়েকটা কথা বলেছিল। ও একজনকে কিছু বলতে বলেছিল। সেভেন ডায়ালস কথাটা সে বলেছিল।
-হুম। ডাক্তার একটু চিন্তিত হলেন, এই ধরনের মানুষের ওটা জায়গা নয়। মনে হয় খুনী সেখান থেকে এসেছিল। পুলিসকে জানানো দরকার। আপনি বরং আমার সঙ্গে থানায় চলুন।
পুলিশ ইনসপেক্টর বান্ডলের পরিচয় পেয়ে শিরদাঁড়া টান করে বসলো। তাকে বিস্তারিত জানানো হলো।
–মৃতের নাম জানেন? ইনসপেক্টর জানতে চাইল।
–ওর নামের কার্ড সঙ্গে ছিল। রনি ডেভেলরা। ঠিকানা আলবাম।
নামটি শুনে বান্ডলের ভুরু কুঁচকে গেল। নামটা নিশ্চয়ই আগে কোথায় শুনেছে।
.
চিমনির কাছাকাছি আসতেই বান্ডলের পরিস্কার মনে পড়লো রনি ডেভেরো ছিল বিল আর জেরি ওয়েডের বন্ধু। পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করতো। এই মৃত্যুর পেছনে একটা রহস্যের গন্ধ পেল সে।
সেভেন ডায়ালস–শব্দ দুটি তাকে বার বার ভাবিয়ে তুললো। জেরির চিঠিতে এবং রনির মুখে এই শব্দটা সে পেয়েছে।
বাড়িতে ঢুকে সে সোজা বাবার কাছে এগিয়ে এলো। এই মুহূর্তে তাকে ভীষণ প্রয়োজন। লর্ড কেটারহ্যাম তখন বইয়ের নতুন একখানা ক্যাটলগ দেখতে ব্যস্ত ছিলেন।
পথে যা যা ঘটেছে সমস্ত সে তার বাবাকে শোনালো।
-বুঝলাম। লর্ড কেটারহ্যাম একটা চাপা নিঃশ্বাস ফেললেন। যারা ঝামেলায় জড়াতে চায় তাদের কপালে ঠিক জুটে যায়।
-বাবা, সেভেন ডায়ালস কোথায় জানো?