-আমি জানি, আপনার মনে দুএকটা কথা কাটার মত বিধে আছে। সেগুলো আপনাকে তুলে ফেলতে হবে। লেডি এইলিন, আপনি হয়তো অনেক এই ধরনের সমিতির গল্প পড়েছেন যাদের পেছনে থাকেন একজন পাকা অপরাধী যাকে কেউ কখনো দেখতে পায় না। বাস্তবে যে এমন কোনো সমিতি থাকতে পারে সেটা আমার জানা নেই। অবশ্য আমার অভিজ্ঞতা নেহাত কম নয়।
..তবে পৃথিবীতে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে আছে অনেক। এই ধরনের বই পড়ে অল্প বয়েসের ছেলেমেয়েরা এ কাজে লিপ্ত হয়। আমি এরকম কয়েকজনকে জানি, যারা পেশাদার নয়, কিন্তু আমাদের দপ্তরের জন্য প্রশংসনীয় কাজ করেছে। অনেক সময় তাদের নাটক করতে হয়েছে চাপে পড়ে। এছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না; যখন ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি হয় তারা। দেশের জন্য তারা বিপদকে অগ্রাহ্য করেছে, ভালোবেসেছে।
..লেডি এইলিন, আপনি সামনে তাকিয়ে দেখুন। সকলের সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিই। মিঃ মসগোরোভস্কি, একে আপনি নিশ্চয় চিনেছেন। এই সমিতি এবং আরো কিছু তিনি পরিচালনা করেন। এর সবচেয়ে বড় পরিচয়, ইনি হলেন ইংল্যান্ডে আমাদের সবচেয়ে বড় বলশেভিক বিরোধী বন্ধু এবং সিক্রেট এজেন্ট।
…হাঙ্গেরিয় দূতাবাসের কাউন্ট আন্দ্রাস হলেন পাঁচ নম্বর। মৃত জেরি ওয়েডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। চার নম্বর যাকে দেখছেন, তিনি হলেন মার্কিনী সংবাদিক এবং আমাদের বন্ধু মিঃ হেওয়ার্ড ফেলপস্। আর তিন নম্বর হলেন।
ব্যাটল মুচকি হেসেই বলতে বলতে থেমে গেলেন। বান্ডল ভয়চকিত দৃষ্টিতে তাকালো। দেখলো সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে বিল এভারসেল।
-যে সাহসী যুবক দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, ব্যাটল বলতে শুরু করলেন, সেই রনি ডেভেরার জন্য দুই নম্বর চেয়ারটি নির্দিষ্ট ছিল। সেটা আপততঃ খালি। আর এক নম্বর আসনটি মৃত জেরাল্ড ওয়েডের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সে-ও বীরের মত একইভাবে প্রাণ দিয়েছেন। এখন সেই জায়গায় বসেছেন আমাদের একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী একজন মহিলা, আমাদের কাজে ভীষণ ভাবে সাহায্য করেছেন।
এতক্ষণে এক নম্বর তার মুখোস খুলে ফেললো। চমৎকার, সুন্দর কাউন্টেস র্যাডকির মুখের ওপর বান্ডলের নজর পড়লো।
আমার বোঝা উচিত ছিল। বান্ডল এতক্ষণে ধাতস্থ হয়ে উঠেছে। আপনি কোনো উত্তেজনা শিকারী হতে পারেন না।
কিন্তু বান্ডল, তুমি এখনও এর শেষ চমকপ্রদ কথাটি জানো না। বিল বললো। যার কথা তোমাকে আগেই বলেছিলাম ইনি সেই সেন্ট মাউর। ও প্রমাণ করে দিয়েছে যে কি দারুণ অভিনয় সে করতে পারে।
আমি গর্বিত বোধ করছি না, কারণ আমার বাবা-মা ইওরোপের ঐ এলাকা থেকেই আসে। একটু বিদেশিনী সুলভ নাকি সুর মিস মাউরের কথায় ফুটে উঠলো। তবে অ্যাবীতে যখন বাগান নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তখন প্রায় ধরা পড়েছিলেন আর কি। তবে এর সবটাই মজা নয়। আমি রনির বাগদত্তা ছিলাম। যারা ওকে খুন করেছে তাদের ওপর আমি প্রতিশোধ নেবোই, এই আমার প্রতিজ্ঞা।
–সব যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। বান্ডল বললো, সব কি সত্যি?
লেডি এইলিন, ব্যাটল বললেন, এর সবকিছু জলের মত সহজ। কিছু উত্তেজনা উপভোগ করার জন্য কিছু তরুণ উদ্যোগী হয়ে এই কাজ শুরু করে।
…কথাটা প্রথম আমাকে জানান মিঃ ওয়েড। গোপন সমিতি গড়ে তুলে গোপন গোয়েন্দাগিরি করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। আমি তাকে বলি, এসব কাজে অনেক ঝুঁকি আছে, জীবনও সংশয় হতে পারে। কিন্তু তারা তাদের প্রতিজ্ঞায় ছিল অটল। অতএব শুরু হলো এই ব্যাপারটা।
কিন্তু এর উদ্দেশ্য কি? বান্ডল প্রশ্ন করলো।
আমরা এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে অপরাধ জগতে অসাধারণ ব্যক্তি, তার কাজ ছিল মিঃ ওয়েডের মত নানা রকমের রাইফেলের ব্যবস্থা করা, তবে তার কাজ সাধারণ ছিল না। আন্তর্জাতিক ব্যাপারে তার টান ছিল অত্যন্ত বেশি। এর আগে মূল্যবান গোপন কাগজপত্র এবং আবিষ্কার দুবার খোয়া যায়। এর সঙ্গে যে ভেতরের কেউ রয়েছে, সেটা আমাদের বুঝতে দেরি হয় না। পেশাদার গোয়েন্দারাও এর কোনো কূল-কিনারা করতে পারলো না। ফলে এইসব অপেশাদারী গোয়েন্দারা কাজে হাত লাগালো, অবশেষে সফল হলো।
–সফল হয়েছে?
হয়েছে। তবে এর বিনিময়ে আমাদের দিতে হয়েছে দুটি বীরের প্রাণ আর সে পালায়। লোকটি দারুণ বিপজ্জনক। কিন্তু সেভেন ডায়ালস পরাজয় স্বীকার করতে জানে না। তারা আঠার মতো লেগেছিল। অবশেষে জয় হলো সেভেন ডায়াল-এর। ধন্যবাদ জানাই বিল এভারসলেকে। গতকাল হাতে হাতে ধরা পড়েছে লোকটি।
আমি তাকে চিনি? বাঙল প্রশ্ন করলো। লোকটার নাম কি?
-লেডি এইলিন, আপনি তাকে খুব ভালো ভাবে জানেন। তার নাম মিঃ জিমি থেসিজার। আজ বিকেলে তাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।
.
ব্যাখ্যা করলেন ব্যাটল
আয়েস করে বসলেন সুপারিন্টেন্টে ব্যাটল। সমস্ত রহস্য ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন।
জিমি থেসিজার যে অপরাধী একথা প্রথমে আমার মনে আসেনি। কিন্তু মি ডেভেরো শেষ কথাগুলো শোনার পর আমার মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। মিঃ থেসিজারকে মিঃ ডেভেরো জানাতে বলেছেন সেভেন ডায়ালস তাকে মেরেছে।
..আদৌ ব্যাপারটা তা নয়। মিঃ ডেভেরো বলতে চেয়েছিলেন যে জিমি থেসিজার সম্পর্কে সেভেন ডায়ালসকে জানাতে।
..মিঃ ডেভেরো আর মিঃ থেসিজার ছিলেন অন্তরঙ্গ বন্ধু, অতএব এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য লাগবে। তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম অপরাধী বাড়ির মধ্যেই আছে। সে পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ না করেও সেখানকার অনেক কথা জানতো। তাছাড়া কোনো কাজ কর্ম না করে বিলাসিতার মধ্যে দিন কাটাতে মিঃ থেসিজার প্রচুর টাকা কোথা থেকে পেতেন?