দরজা খুলে গেল। ওদের চোখের সামনে আবির্ভূত হলেন মিঃ মসগোরোভস্কি, কালো দাড়ির বিশাল চেহারা।
বিল মুহূর্তের মধ্যে বান্ডলকে আড়াল করে লোকটির মুখোমুখি দাঁড়ালো।
-শুনুন আপনার সঙ্গে আমি কিছু কথা বলতে চাই। বিল বললো।
রুশ লোকটি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। রেশমের মতো দাড়িতে হাত বোলাতে লাগলেন, ঠোঁটে স্মিত হাসি।
ধীরে ধীরে তিনি বললেন, ঐ লেডিকে একবার আমার সঙ্গে আসতে হবে।
-বান্ডল, বিল বললো। ঘাবড়ে যেও না। সব ঠিক আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। তুমি ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। ওর কথা মত ওর সঙ্গে তুমি যাও। আমি যা করছি সেটা আমার ঈশ্বর জানেন, তুমি ভীত হয়ো না।
শান্ত মেয়ের মত বান্ডল নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বিলের কণ্ঠস্বরে যেন আদেশের ভঙ্গী। এরকমটা বান্ডল এই প্রথম লক্ষ্য করলো, যেন সমস্ত ব্যাপারটা সে আগেই খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছে। তাই সাহস করে বান্ডলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। বিলের যে একটা মতলব আছে সেটা ভেবে অবাক হলো।
বান্ডল ও রুশ লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। দরজায় আবার তালা পড়লো।
একটা সিঁড়ি ইঙ্গিত করতে বান্ডল বাধ্য মেয়ের মত সেটা অনুসরণ করলো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ও একটা ঘরে এসে ঢুকলো। ঘরটা যে অ্যালফ্রেডের সেটা বান্ডল নিশ্চিত করে বলতে পারে।
-কোনো রকম টু শব্দ না করে এখানে আপনি অপেক্ষা করুন।
মসগোরোভস্কি একথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
বান্ডল একটা চেয়ারে বসে রইলো।
কয়েক মিনিট কাটলো এই ভাবে। চিন্তা করার ক্ষমতাও যেন লোপ পেয়েছে বান্ডলের। মনে হচ্ছে এক ঘন্টা ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে। কি যে ঘটতে চলেছে?
এমন সময় দরজা খুলে প্রবেশ করলেন মসগোরোভস্কি।
-লেডি এইলিন ব্রেন্ট, সেভেন ডায়াল সোসাইটির এক জরুরী সভায় আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দয়া করে আপনি আমার সঙ্গে আসুন।
এবার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো ওরা। কি আশ্চর্য, সেই ঘরটা। একবার সে আলমারির ফুটো দিয়ে যে ঘর দেখেছিল। ঘরের সব কিছু দেখেছিল। মুখোস পরা সেই মানুষগুলি টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে। বান্ডল তাজ্জব বনে গেল। ততক্ষণে মসগোরোভস্কি নিজের আসনে বসে মুখোসটা পরে নিচ্ছিলেন।
টেবিলের মাথার চেয়ারে একজন ছিলেন। তার মানে সাত নম্বর আজ হাজির।
বান্ডলের বুকে ধড়ফড়ানি বেড়ে গেল বহুগুণ। বান্ডল সেই সাত নম্বরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। মুখোসের ওপর ঘড়ির সেই সংখ্যা বান্ডল হাঁ করে স্তম্ভিত ভঙ্গীতে লক্ষ্য করছিল।
লোকটি চুপ করে বসে আছে ঠিকই কিন্তু বাস্তলের মনে হলো যেন একটা ক্ষমতা ওর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে। লোকটি কাঠের পুতুলের মত বসে না থেকে কিছু বলুক বা কোনো অঙ্গভঙ্গী করুন। বান্ডলের একঘেয়ে লাগলোলা। বান্ডলের মনে হলো, মকড়সা যেন তার শিকারের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে আছে।
এই সময় কানে ভেসে এলো মসগোরাভস্কির গলার আওয়াজ, যেন কত দূর থেকে কথা বলছেন।
-লেডি এইলিন, আপনি এই সভায় উপস্থিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো মুখোস পরেননি। তাই আমাদের নীতি ও উদ্দেশ্য আপনাকে মানতে হবে। এটা এই সমিতির নিয়ম। তাকিয়ে দেখুন, দুই নম্বর চেয়ার শূন্য। আপনাকে ঐ চেয়ারে বসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এসব কি শুনছে বান্ডল। রাতের দুঃস্বপ্নে মনে হলো। প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এটা কি সম্ভব, যে সমিতিকে সে ঘৃণা করে সেই রক্তপিপাসুক্লাব তাকে সদস্যা হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে? এই প্রস্তাব বিলকেও কি দেওয়া হয়েছিল? ও কি ঘেন্নায় তা ঠেলে দিয়েছিল?
–আমি এ প্রস্তাবে রাজী নই। বান্ডল স্পষ্ট জবাব দিলো।
–ভেবে চিনেত উত্তর দিন লেডি এইলিন।
মসগোরোভস্কি মুখোসের আড়ালে যে হাসছেন সেটা বান্ডল বুঝতে পারলো।
–আপনি কি আন্দাজ করতে পারছেন, কি প্রস্তাব আপনি প্রত্যাখ্যান করছেন?
–খুব ভালো ভাবেই সেটা ধরতে পারছি। বান্ডল বললো।
এবার সাত নম্বর ওকে চমকে দিলো। কণ্ঠস্বর বেশ পরিচিত। এই গলার আওাজের লোকটিকে সে চেনে। বান্ডলের মনে খুশীর দোলা লাগছে। দম বন্ধ করা অবস্থা তখন ওর। জানতে পারবে সব কিছু। যেটা জানার জন্য ওরা এতদিন উৎকণ্ঠিত হয়েছিল।
ধীরে ধীরে মুখোস খুলে গেল, লোকটির আসল মুখ বেরিয়ে পড়লো। কাঠের পুতুলের মত ওর সামনে ভেসে উঠলো সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটলের মুখ।
.
বান্ডল স্তম্ভিত
প্রায় লাফ দিয়ে উঠে এলেন মিঃ মসগোরাভস্কি। বান্ডলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন-খুব ধাক্কা খেয়েছে দেখছি। একটা চেয়ার দাও।
চোয়ারে গা এলিয়ে দিলো বান্ডল। বিস্ময়ের ধাক্কা ও সহ্য করতে পারেনি। ওর শরীর যেন ওর আয়ত্তের মধ্যে আর নেই। স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ব্যাটল তার নিজের স্বভাব অনুযায়ী কথা বলে উঠলেন।
লেডি এইলিন, আমাকে দেখে আপনি স্তম্ভিত হয়ে গেছেন, তাই না? এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারাও আশা করেনি আমাকে এখানে দেখবেন বলে। বলতে গেলে এক্ষেত্রে মিঃ মসগারোভস্কি আমার সহকারীর কাজ করেছেন। এটা চালনার দায়িত্ব তার ওপর ছিল। অন্যেরা তার নির্দেশ অন্ধের মত পালন করেছেন মাত্র।
বান্ডলের কথা বলা দূরে থাক, ঠোঁট পর্যন্ত নড়লো না। কোনো এক অক্ষম শক্তি তার ওপর যেন ভর করে আছে।
ব্যাটল মাথা হেঁট করলেন, বোঝাতে চাইলেন যে, তিনি বান্ডলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছেন।