ব্যাগটা হাতে নিয়ে ফিরতেই পেছনে একটা আওয়াজ শুনতে পেলো। একটা বালির ব্যাগ নিয়ে একটা লোক দরজার আড়ালে লুকিয়ে ছিলো। বান্ডল মাথা ঘোরাবার আগেই ঐ বালির বস্তার আঘাত লাগলো তার মাথায়। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো অস্ফুট শব্দ। তারপরেই জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো।
.
সেভেন ডায়ালস
ধীরে ধীরে বান্ডলের জ্ঞান ফিরে আসছিল। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করলো। চারপাশে চাপ চাপ অন্ধকার যেন তাকে ঘিরে ধরেছে। বহুদূর থেকে যেন ভেসে আসছে কোনো চেনা প্রিয় কণ্ঠস্বর।
অন্ধকার আস্তে আস্তে ফিকে হলো। মাথার একপাশে যন্ত্রণায় দপদপ করছে। এবার সে কান পেতে রইলো, কে যেন বলছে।
-বান্ডল, আমার প্রিয় বান্ডল। নিশ্চয়ই ও আর বেঁচে নেই।
–বান্ডল, তুমি আমার একান্ত নিজের। তোমায় আমি ভালোবাসি। দারুণ ভালোবাসি। বান্ডল এখন সম্পূর্ণ সচেতন। চোখ বন্ধ করে নীরবে শুনে যাচ্ছিল। বিলের দুহাতের মধ্যে ও নিজেকে আবদ্ধ রেখেছে।
-ভগবান, আমি যে এখন কি করি? বান্ডল, আমার সোনা, তোমাকে আমিই মেরে ফেলেছি। এর জন্য আমি-ই দায়ী প্রিয়তমা।
বান্ডলের শুনতে খুব ভালো লাগছিল। চোখ খুলতে ইচ্ছা করছিল না। তবু আস্তে আস্তে ঠোঁট খুললো সে।
-না, তুমি আমাকে মারোনি। হাঁদারাম কোথাকার।
–বান্ডল তুমি বেঁচে আছো? বিল চমকে প্রায় লাফিয়ে উঠলো।
–নিশ্চয়ই, বেঁচে আছি।
–কখন তোমার জ্ঞান ফিরেছে?
–প্রায় পাঁচ মিনিট আগে।
–তুমি পাঁচ মিনিট ঘাপটি মেরে শুয়েছিলে।
–তোমার কথাগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগছিল। এত সুন্দর সুন্দর কথা তুমি তো আর বলবে না কখনোও। কারণ তুমি সারাক্ষণ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকো।
বিলের মুখ লাল হয়ে উঠলো।
-বান্ডল, তুমি কিছু মনে করো না। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। এটি আমি বহুদিন ধরে মনের মধ্যে পুষে রেখেছি। তোমাকে বলার সাহস হয়নি কখনো।
-তুমি একটা আহাম্মক। বান্ডল মিষ্টি সুরে ধমকে উঠলো। কেন বলতে পারোনি?
–কথাটা শুনে যদি তুমি ব্যঙ্গ করো। আমার মত সাধারণ একটা ছেলেকে বিয়ে করবে, এটা তো ভাবতে সাহস হয় না।
–তাহলে কি জর্জ লোম্যাক্সের মত লোককে বিয়ে করবো?
–আমি কর্ডাসের কথা বলছি না। বিল বললো। এমন কোনো নামী প্রতিষ্ঠিত লোক যে তোমার সবদিক থেকে উপযুক্ত, তেমন কেউ তোমার আছে কিনা জানি না।
-সত্যি, বিল তোমার তুলনা হয় না।
-বান্ডল, তাহলে তুমি কি কোনোদিন তোমার মনকে তৈরি করতে পারবে, আমাকে বিয়ে করার জন্য। আমি জানি, তোমার কাছে আমি নির্বোধ। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। পোষা কুকুর যেমন মনিবের কথা শুনে চলে, তেমনি আমি তোমার ক্রীতদাস হয়ে থাকবো।
সত্যি, কুকুরের সঙ্গে তোমার কোনো তফাত নেই। বান্ডল বললো।কুকুর আমি ভালোবাসি। ওরা ভীষণ বিশ্বাসী হয়, প্রভুভক্ত হয়, ওদেরও ভালোবাসা আছে। অবশ্য তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমি আমার মনকে জোর করে পাল্টে দিতে পারি।
বিল বান্ডলকে ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
-তুমি কি অন্তর থেকে একথা বলছো?
–এবার চুপ করো, বান্ডল বলে উঠলো। মনে হচ্ছে, আবার অজ্ঞান হয়ে যাই।
–বান্ডল, তুমি জানো, তোমাকে আমি কতখানি ভালোবাসি। উত্তেজনায় বিল কাঁপছিল।
পরের দশ মিনিট একই কথাবার্তার মধ্যে কেটে গেল।
-তুমি এবার তোমার কথা বন্ধ করে মন দিয়ে আমার কথা শোনো। বান্ডল বললো, আমার মাথার ভেতরটা এখনও যন্ত্রণা করছে। তাছাড়া তুমি এমন জোরে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে যে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এখন বলল, আমরা কোথায় এবং কি ঘটেছে?
বান্ডল দৃষ্টি মেললো চারপাশে। ওর বুঝতে দেরি হলো না, ওরা সেই গোপন ঘরে বন্দী হয়ে আছে। কারণ বাইরের লুকোনো দরজাটা বন্ধ।
-বিল, বান্ডল বললো, নিজেকে সংযত করো। আমাদের এখান থেকে বেরোবার পথ বাতলাতে হবে।
–আঁ, বিল যেন সম্বিত ফিরে পেলো, তাই বুঝি। এর জন্য ভেবো না।
-তোমার মাথার কলকজা বিগড়ে দিয়েছে ঐ ভালোবাসা। বান্ডল বললো। আমারও মনে হচ্ছে, কাজটা কোনো কঠিন নয়।
-সত্যিই তাই। আমার আর কিসের ভাবনা, তুমি আমায় ভলোবাসো, একবার যখন জেনেছি, তখন কুছ পরোয়া নেহি।
-তুমি দয়া করে চুপ করবে? বান্ডল একটু ধমকে উঠলো। আসল কথাই চাপা পড়ে যাবে। তুমি নিজেকে সংযত করো। নতুবা দেখবে আমি মত পাল্টে ফেলেছি।
-না না, বান্ডল কখনো ওটা করো না। তোমাকে যখন একবার পেয়েছি, তখন আর পালিয়ে যেতে দিচ্ছি না।
আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুমি নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে যেতে পারবে না। বালের কণ্ঠে গর্বিত ভাব।
–তাই বুঝি? বিল বললো। একবার পরখ করে দেখবে নাকি?
–সত্যি তোমার ভালোবাসা অতুলনীয়, ভেবেছিলাম, তুমি বুঝি ভীতু। এখন দেখছি তুমি সাংঘাতিক। মনে হয় আবার আধ ঘন্টা পরেই তুমি আমাকে হুকুম করা শুরু করবে। কিন্তু বিল, আবার বোধহয় আমরা সেই আগের মতো শুরু করতে চলেছি। শোন বিল, এখান থেকে বেরোবার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।
–আমি তো আগেই বলেছি, এর জন্য ভেবো না। আমি
বান্ডল ওর হাতে এটা ছোট্ট চাপ দিল। বিল চুপ করে গেল। বান্ডল কান সজাগ করলো।
হাঁ, একটা শব্দ আসছে। পায়ের শব্দ দরজার কাছে এসে থামলো। তালায় কেউ চাবি লাগাচ্ছে। বান্ডল ভাবলো, জিমি কি তাদের উদ্ধার করতে এসেছে না কি অন্য কেউ?