শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারটা ভালোয় ভালোয় মিটলো। বান্ডল খুশী।
এত বাড়াবাড়ি করার কি প্রয়োজন ছিল? লোরেন প্রশ্ন করলো।
–এটাই নিরাপদ। বান্ডল বললো। কিন্তু ওদের মতলবটা যে কি সেটা বুঝতে পারছি না। তবে সব কিছুর মধ্যে অ্যালফ্রেডের উপস্থিতি সমস্ত পরিকল্পনাটা মাটি করে দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মনে হয় ওরা কোথাও লুকিয়ে থেকে অ্যালফ্রেডের চলে যাওয়া দেখছে। লোরেন, তুমি এক কাজ করো, দরজাটা খুলে রাখো।
লোরেন বান্ডলের কথামত কাজ করলো। ঠিক তখনই জিমি ওর গাড়ি থেকে নামলো।
–বিল, তুমি এখানে অপেক্ষা করো। কেউ লক্ষ্য করলে হর্ন বাজিও।
জিমি প্রায় দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলো।
ওদের দেখে খুশীতে প্রায় চিৎকার করে উঠলো-হ্যালো, বান্ডল, তোমরা এসে গেছে। এবার তাহলে অভিযান শুরু হোক। তুমি আগেরবার যে ঘরে ঢুকেছিলে তার চাবি কোথায়?
নিচের তলায় চাবির গোছর মধ্যে ছিল। সবগুলো নিয়ে এলেই হবে।
–তাহলে চটপট চাবি নিয়ে এসো। হাতে সময় খুব কম।
চাবি আনা হলো। সহজেই দরজা খুলে নির্দিষ্ট ঘরে তিনজনে ঢুকে পড়লো।
এর আগের দিন বান্ডল ঘরের চেহারা যেমন দেখেছিল তেমনিই আছে। মাঝখানে বড় টেবিল, তার চারপাশে সাতখানা চেয়ার সাজানো। জিমি সহজ দৃষ্টি মেলে ঘরের চারদিকে দেখলো। দেওয়াল আলমারি দুটোর দিকে ওর দৃষ্টি আটকে গেল।
-বান্ডল, তুমি কোনো আলমারির মধ্যে ঢুকেছিলে?
–এটা। বান্ডল আঙুল তুলে দেখালো।
জিমি এগিয়ে গিয়ে পাল্লা দুটো মেলে ধরলো। একরাশ বাসনে আলমারি ভর্তি।
–এগুলো এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। জিমি বললো, লোরেন, তুমি বিলকে ডেকে আনো, ওর আর বাইরে থাকার দরকার নেই।
লোরেন চলে গেল।
–তুমি কি করতে বলছো? বান্ডল অসহিষ্ণু গলায় বললো।
আলমারি পরীক্ষা করতে করতে জিমি বললো–দাঁড়াও, আগে বিল আসুক। ওর সবকথা আগে শোন। এসব ওরই কাজের ফল। আরে লোরেনের কি হলো? ওকে পাগলা কুকুরে ধাওয়া করেছে?
লোরেন সত্যি প্রাণপণে ছুটে আসছিল। সিঁড়ি বেয়ে উঠে হাঁফাতে লাগলো। মুখ সাদা, চোখে রাজ্যের ভয়
-বিল-বিল-ওহ-বান্ডল-বিল?
–বিলের কি হলো?
জিমি ওর কাঁধে ঝাঁকুনি দিলো। লোরেন ভগবানের দোহাই, কি হয়েছে বলো?
লোরেন অস্পষ্ট স্বরে বললো-বিল-বিল, মনে হচ্ছে মরে গেছে। গাড়ির মধ্যে রয়েছে। নড়ছেও না, কথাও বলছে না। নিশ্চয়ই ও মরে গেছে।
কি একটা শপথ উচ্চারণ করতে করতে জিমি সিঁড়ি থেকে লাফিয়ে নামলো, পেছনে বান্ডল।
-হায় ভগবান, বিলের একি পরিণতি হলো। না কখনোও না।
লোরেনও ওদের পেছন পেছন গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো।
জিমি যখন বাড়ির মধ্যে ঢুকেছিল তখন বিল যেমন অবস্থায় ছিল এখনও সেইভাবে আসনে পিঠ রেখে বসে আছে। চোখ বন্ধ। ওর হাত ধরে টানলো জিমি। কিন্তু একটুও কেঁপে উঠলো না।
কি হলো? জিমি বললো। তবে ও মারা যায়নি। বান্ডল, তুমি মন খারাপ করো না। ওকে আগে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, এখন যেন পুলিস এসে হাজির না হয়। তাহলেই বিপদ। কেউ কিছু জানতে চাইলে বলবে, আমাদের বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাই বাড়ির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছি।
সহজেই তিনজনে ধরাধরি করে বিলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির মধ্যে নিয়ে গেল। একজন ভদ্রলোক দেখতে পেয়ে কিছু বললেন, মনে হয় পেটে একটু বেশি রঙিন জল পড়ে গিয়েছিল।
নিচের তলার পেছনের ঘরে একটা সোফায় শুইয়ে দিলো।
বান্ডল ওর একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিলো।
বুকে ধুকপুকানি চলছে। বান্ডল বললো, তাহলে ওর কি হলো?
একটু আগে আমি যখন এলাম, তখন তো ভালোই ছিল। জিমি বললো। মনে হয় কেউ ওকে ইনজেকশান দিয়েছে। এ তো আর কঠিন কাজ নয়। একজন ডাক্তার ডাকতে হবে। ততক্ষণ ওর ওপর লক্ষ্য রাখা।
দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিমি আবার ফিরে তাকালো।
-তোমরা কিন্তু নির্ভয়ে থাকবে। আমি বরং আমার রিভলবারটা রেখে যাই। প্রয়োজন হলে কাজে লাগাবে। আমি কাজ সেরেই ফিরে আসবো।
রিভলবার সোফার ওপর রেখে জিমি লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল। সদর দরজা বন্ধ করার শব্দ ওদের কানে পৌঁছলো।
বাড়িটায় কেমন থমথমে ভাব। ওরা দুজন চুপ করে বিলের পাশে বসে ছিল। বিলের নাড়ী আস্তে আস্তে চলছে ওরা সেটা টের পেলো।
–কিছু যদি করতে পারতাম। বান্ডল প্রায় ফিস ফিস করে বললো।
লোরেন ঘাড় নেড়ে বললো–ঠিক বলেছো। জিমি মাত্র দেড় মিনিট হয়ে গেছে। অথচ মনে হচ্ছে কখন গেছে।
–কি সব আমার কানে আসছে। মনে হয় ওপরে কারা যেন আসছে। বান্ডল বললো, নাকি এ আমার কল্পনা মাত্র।
–জিমি কেন রিভলবারটা রেখে গেছে, এবার বুঝতে পারছি। লোরেন বললো, সত্যিই কোনো বিপদ নেই কোথাও।
–যদি ওরা বিলের সন্ধান পেয়ে যায় তাহলে–শেষটা আর গলা দিয়ে বেরোলো না বান্ডলের।
–ঠিকই। তবে আমরা রয়েছি বাড়ির মধ্যে। আমাদের জানিয়ে তবে ওদের ঢুকতে হবে। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে অস্ত্র আছে।
বান্ডল বিলের দিকে তাকালো–এ অবস্থায় একটু গরম কফি হলে ভালো হতো।
–আমার ব্যাগে ব্র্যান্ডি আর স্মেলিং সল্ট আছে। লোরেন বলল। ব্যাগটা রেখেছি ওপরের ঘরে।
দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি। বান্ডল বললো, ফল ভালো হতে পারে।
বান্ডল সিঁড়ি দিয়ে উঠে খেলার ঘরের দিকে হন হন করে চললো। দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখলো, টেবিলের ওপর লোরেনের ব্যাগটা পড়ে আছে।