-মিঃ লোম্যাক্স, আপনার জন্য এটা রেখে গেছেন, মাই লর্ড। ট্রেডওয়েল খামটা এগিয়ে দিলো। আপনার সঙ্গে ফের দেখা না হওয়াতে উনি মর্মাহত হয়েছেন।
ট্রেডওয়েল চলে যেতে লর্ড কেটারহ্যাম খাম ছিঁড়ে চিঠি বের করলেন। একটা বিস্ময়সূচক শব্দ তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো।
-বান্ডল, তোর উচিত ছিল ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেওয়া।
–কি বলছো?
–বেশ, তুমি নিজে পড়ে দেখ।
বান্ডল চিঠির দিকে দৃষ্টি দিলো।
প্রিয় কেটারহ্যাম
তোমাকে বলেছিলাম, এইলিনের সঙ্গে কথা বলার পর তোমার কাছে আসছি। কিন্তু, তোমাকে পেলাম না। ভীষণ দুঃখ পেলাম। বেচারা ছোট্ট এইলিন, বুঝতে পারেনি, ওর সম্পর্কে আমি কি মনোভাব পোষণ করি। আমার মনে হয়, আমার প্রস্তাব শুনে ও ঘাবড়ে গেছে। আমি এই মুহূর্তে ওর সিদ্ধান্ত শুনতে চাই না। ও ভেবেচিন্তে জবাব দেবে। ওর বালিকাসুলভ আচরণ আমায় মুগ্ধ করে। ওর রমণীসুলভ মনোভাবও আমার কাছে প্রশংসনীয়। ওর এই বিহ্বলতা দেখে আমার মনে হয়েছে, এ বিয়েতে ও রাজী আছে। আমিও জানি, আমি শেষ পর্যন্ত জয়ী হবো, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ রাখি না।
আমার ওপর বিশ্বাস রাখো, প্রিয় কেটারহ্যান।
তোমার একান্ত প্রিয় বন্ধু
জর্জ লোম্যাক্স
উঃ, আমি বুঝি পাগল হয়ে যাবো। বান্ডল মাথায় হাত দিলো।
নিশ্চয় লোকটার মাথা খারাপ হয়েছে। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন। মাথা না বিগড়ে গেলে কেউ তোর সম্বন্ধে এমন চিঠি লিখতে পারাত। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মত। ধৈৰ্য্য আছে যথেষ্ট। এবার বুঝতে পারছি, ও ক্যাবিনেটে ঢোকার ক্ষমতা পেয়েছে কোথা থেকে। ওকে বিয়ে করলে, ও জব্দ হতো।
এসবের মধ্যে বেজে উঠলো ফোন।
বান্ডল রিসিভার তুলে নিলো। মুহূর্তের মধ্যে তার মন থেকে উধাও হলো জর্জ লোম্যাক্সের বিয়ের প্রস্তাব। সে লোরেনকে আহ্লাদিত স্বরে ডাকলো। লর্ড কেটারহ্যাম নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
–লোরেন, জিমি ফোন করেছে। বান্ডল বললো, মনে হয় কোনো ব্যাপারে ও ভীষণ উত্তেজিত হয়ে আছে।
-শোনো বান্ডল, নষ্ট করার মত সময় নেই। লোরেন কোথায়? এখানে আছে?
–হ্যাঁ, এখানে আছে।
–শোন, সংক্ষিপ্ত সময়। সব কথা বলা যাবে না। তাছাড়া ফোনেও সব কথা বলা অসম্ভব। বিল আমার সঙ্গে দেখা করে যে কাহিনী শোনালো সেটা যেমন অবিশ্বাস্য তেমনি অদ্ভুত। তবুও এটা সত্যি। নিখাদ সত্যি। বলতে পারো, এই শতকের সবচেয়ে চমকপ্রদ খবর। তোমরা কি করবে সেটা মন দিয়ে শোন। এখনই তোমরা দুজনে শহরে চলে আসবে। তোমার গাড়ি যে কোনো গ্যারেজে রেখে সোজা চলে যাবে সেভেন ডায়ালস-এ। আচ্ছা, তুমি কি ওখানে পৌঁছে ঐ ফুটম্যান লোকটাকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে পারবে?
-তুমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকো জিমি। অ্যালফ্রেডের ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।
চমৎকার। তোমার কাজ শেষ করে তুমি সোজা ভেতরে ঢুকে যাবে। বিল আর আমি সেখানে থাকবো, বুঝেছো।
–ঠিক আছে।
–আর একটা কথা। কেউ যেন জানতে না পারে যে তোমরা লন্ডনে আসছে। যাইহোক একটা মিথ্যে বলে দিও। তোমার সঙ্গে যে লোরেন যাচ্ছে, সেটা জানিও। কি পারবে তো?
-অবশ্যই পারবো। ভেবে আমার যা উত্তেজনা হচ্ছে তোমায় কি বলবো, জিমি।
–হওয়া স্বাভাবিক, বেরোনোর আগে তোমরা বোধ হয় উইল করতে পারো।
–খুব ভালো হবে, তাই না? তবে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ জানলে আরো ভালো হতো।
–এখন এই পর্যন্ত থাক। আমার সঙ্গে দেখা হলেই সব জানতে পারবে। তবে এটুকু জেনে রাখো, সাত নম্বরের জন্য আমরা একটা বিরাট চমক হাজির করতে চলেছি।
রিসিভার নামিয়ে রাখলো বান্ডল। ফোনে যা কথা হলো তার সারাংশটুকু লোরেনকে চটপট বলে ফেললল। লোরেন ছুটে গেল নিজের ঘরে। সুটকেস গোছাতে বসলো। বান্ডলও দ্রুতপায়ে বাবার ঘরে গিয়ে উঁকি দিলো।
-বাবা, লোরেন বাড়ি যাচ্ছে। আমি ওকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছি।
–সে কি, ও যে আজ চলে যাবে জানতাম না তো!
–টেলিফোন এসেছিলো, ওরা যেতে বলেছে। বান্ডল বললো। আমি আসছি।
–বান্ডল দাঁড়া। কখন বাড়ি ফিরবি?
–সেটা বলতে পারবো না। যখন ফিরবো, তখন তুমি দেখতেই পারবে।
বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বান্ডল দ্রুত পায়ে ওপরে ফিরে এলো। গাড়ি আগেই বের করতে বলেছিলো। একটা টুপি নিলো, লোমের কোটটা গায়ে পরে নিলো।
লন্ডন পর্যন্ত পৌঁছলো বিনা উত্তেজনায়। শুধু বান্ডল গাড়ি চালালে যেটুকু হয় কেবল সেইটুকু সম্বল ছিলো। গ্যারেজে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে ওরা পা বাড়ালো সেভেন ডায়ালস ক্লাবের উদ্দেশ্যে।
দরজা খুললো অ্যালফ্রেড। প্রায় ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বান্ডল ও লোরেন ভেতরে ঢুকে পড়লো।
-দরজা বন্ধ করো, অ্যালফ্রেড, বান্ডল বললো। শোন, তোমাকে পুলিস অনুসরণ করছে। তুমি সেদিন আমার যা উপকার হয়েছিলে তার বিনিময়ে তোমাকে সাবধান করে দিতে চাই।
-ওহ, মাই লেডি। বান্ডল বলে চললো। মিঃ মসগোরোভস্কির নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বেরিয়েছে। তাই তুমি যদি কোথাও পালাও সেটা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক ব্যাপার হবে। তোমাকে এখানে না পেলে, তোমার জন্য কেউ আর মাথা ঘামাবে না। তুমি যাতে সহজে পালাতে পারো তাই তোমাকে এই দশ পাউন্ড দিলাম। তুমি যেখানেই যাও নিরাপদে যেতে পারবে।
অ্যালফ্রেডের তখন ভয়ে হৃৎপম্পন শুরু হয়ে গেছে। তিন মিনিটের মধ্যে সে বেরিয়ে পড়লো ১৪ নং হান্সটন স্ট্রিট ছেড়ে। আপন মনে বিড় বিড় করতে লাগলো–একবার যেতে পারলে আর এখানে ফিরছি না।