-কোনো দুর্ঘটনা না ঘাটিয়ে বসে ছেলেটা। লর্ড কেটারহ্যাম আপনমনে বললেন।
বিল নিরাপদে পৌঁছে গেলো লন্ডনে। সেন্ট জেমস স্কোয়ারে গাড়ি রেখে জিমির ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো।
বিলকে দেখে জিমি এগিয়ে এলো–হ্যালো বিল, কি খবর? তোমার মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে?
-এমনিতেই দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। বিল বললো, তার ওপর চরম ধাক্কা খেয়েছি।
ব্যাপারটা খুলে বল। দেখি, আমি তোমার দুশ্চিন্তা কিছুটা লাঘব করতে পারি কিনা? বিল নিরুত্তর। একদৃষ্টে মেঝের কার্পেটের দিকে তাকিয়ে রইলো।
–উইলিয়াম, অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে? জিমি শান্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করলো।
–এমন অদ্ভুত ব্যাপার, যার মাথা মুণ্ডু বুঝতে পারছি না।
–তুমি সেভেন ডায়ালস-এর ব্যাপারে চিন্তিত?–হ্যাঁ, আজ সকালে একটা চিঠি এসেছে।
–কি ধরনের চিঠি?
–রনি ডেভেলোর আইনজীবী পাঠিয়েছে।
উঃ ভগবান, এতদিন পরে?
–রনি নির্দেশ ছিল, হঠাৎ যদি ওর মৃত্যু হয় তাহলে একটা খাম ঠিক পনেরো দিন পরে আমার কাছে যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
–তুমি কি খামটা পেয়েছো?
হ্যা।
–খুলে দেখেছ, তাতে কি লেখা ছিল?
–বিল চোখ তুলে জিমির দিকে তাকালো। জিমি চমকে উঠলো ওর ঐ অদ্ভুত বিচিত্র চাউনি দেখে।
–বিল, মনে হয় এটা তোমাকে দারুণ ভাবে চিন্তিত করে তুলেছে। তুমি বরং একটু কিছু পান করে নিজেকে তাজা করে নাও।
হুইস্কি আর সোডা মিশিয়ে জিমি বিলের হাতে গ্লাস তুলে দিলো। কিন্তু বিলের স্বাভাবিকত্ব ফিরে এলো না।
–চিঠির বক্তব্য আমাকে পাগল করে দিয়েছে, বিল বললো। আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য।
–বিল, তুমি একটু শান্ত হও। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা খুলে বলল। দাঁড়াও।
জিমি বাইরে এসে স্টিভেনসকে ডেকে সিগারেট কেনার জন্য দোকানে পাঠালো।
বাইরের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেয়ে জিমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর জিমি বসার ঘরে ফিরে এলো। এর মধ্যে বিল তার গ্লাসের তরল পানীয় পান করে নিজেকে একটু চাঙ্গা করে নিয়েছে।
-নাও, এবার শুরু করো। জিমি বললো, স্টিভেনসকে বাইরে পাঠিয়েছি। কেউ কোনো কথা শুনতে পাবে না। এবার বলো। -বিল একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিলোহা, তোমাকেই সব বলবো।
৬. জরুরী ডাক
একটা ছোট্ট কুকুরছানাকে নিয়ে আদর করছিল লোরেন।
প্রায় বিশ মিনিট পরে প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে সেখানে এসে হাজির হলো বান্ডল। এমন তার মুখের চেহারা যা বর্ণনা করাও যায় না।
একটা চেয়ারে বসে সে তখনও হাঁফাতে থাকলো।
-তোমার কি হলো? লোরেন অবাক হলো।
–জর্জ লোম্যাক্স আমাকে বিয়ে করবে বলছে। বান্ডল তখনও স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছে না। একটু চুপ করে থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, মনে হয় কোনো বই পড়ে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তোতলানো পুরুষ আমি একদম পছন্দ করি না। ওকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। এর উত্তরও আমার অজানা সেটাই আমার দুর্ভাগ্য।
–সেটা জানবে কি করে?
–জর্জের মত একটা বোকা তোতলাকে আমি বিয়ে করতে চাই না, এটাই স্বাভাবিক। নহমত শাখায় বইয়ের কোনো উত্তর আমার জানা ছিল না, সেটাই আমায় অসুবিধায় ফেললো। মুখের ওপর স্পষ্ট করে বলতেও পারিনি, যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। বরং আমার বলা উচিত ছিল, আপনার এই অসামান্য সম্মান দেখানোর জন্য আমি কৃতার্থ হয়েছি। এই ধরনের আর কি। আসলে প্রস্তাবটি শুনেই আমার সংজ্ঞা লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কোনোরকমে জানলা গলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
-বান্ডল, এটা কিন্তু স্বভাবের বিরুদ্ধে হয়ে গেছে।
–এরকম কিছু যে একটা ঘটতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। আমি আগাগোড়া জানতাম জর্জ আমাকে পছন্দ করে না, ঘৃণা করে। এখন খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি, কোনো পুরুষের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা কতখানি সাংঘাতিক। লোরেন, তুমি যদি একবার শুনতে, জর্জ কেমন আমার প্রশংসা করে চলেছে। বলে কিনা, আমার মনকে প্রস্ফুটিত করে তুলতে চায়। ও যদি বুঝত তখন আমার মনে কি উদয় হচ্ছিল তাহলে ভয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যেতো।
বান্ডলের কথা বলা ধরন দেখে লোরেন হেসে উঠলো।
যাক, ছাড়ো ওসব কথা। ঐ যে বাবা রডোডেনড্রন গাছের ফাঁকে বেড়াচ্ছেন। হ্যালো, বাবা।
লর্ড কেটারহ্যাম এগিয়ে এলেন।
–লোম্যাক্স বিদেয় হয়েছে? বেশ জোর করেই খুশী ভাব প্রকাশ করলেন।
–বেশ ঝামেলায় ফেলেছিলে তুমি, বান্ডল বললো, জর্জ বললো, তুমি নাকি সায় দিয়েছে।
–বুঝলাম, আমি এ ধরনের কোনো কথাই বলিনি, বুঝেছিস।
–আমি জানি। বান্ডল বললো, আসলে তোমাকে কোণঠাসা করে দিয়েছিল। ফলে ও বক্তব্য গড়গড় করে বলতে কোনো অসুবিধা হয়নি আর তোমাকেও বাধ্য ছেলের মত ঘাড় নেড়ে যেতে হয়েছে।
–তুই ঠিক ধরেছিস। ওকে কেমন মনে হলো? খুব বাজে তাই না?
–ওসব দেখতে আমার বয়ে গেছে। আমি তার আগেই ওখান থেকে পালিয়েছি।
–এটাই ভালো হয়েছে। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন। ঝামেলা যা করার করে গেছে। আর দ্বিতীয় দিন এসে আমাকে জ্বালাবে না। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আমার গলফের স্টিকটা কোথায়?
–দু একবার খেললে আমার স্নায়ুগুলো টানটান হয়ে যাবে? বান্ডল বললো। লোরেন, তুমিও মাঠে যাবে খেলতে।
একট ঘণ্টা নিরুপদ্রবে কাটলো। তিনজনে প্রফুল্ল মনে বাড়িতে ঢুকলো।
টেবিলের ওপর পড়ে থাকা একটা চিঠি ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।