ডাক্তারের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো।-কেন, সন্দেহের কিছু আছে নাকি? নাকি মনে করেন যে এটি একটি আত্মহত্যা?
-না, ওসব কিছু নয়।
ডাক্তার ঠিক খুশী হতে পারলেন না রনির জবাব শুনে–ওর নিকট আত্মীয় থাকলে তাকে খবর দিন।
-হ্যাঁ, ওর এক সৎ বোন আছে। এখান থেকে কুড়ি মাইল দূরে। শহরে না এলে জেরি ওখানেই থাকতো।
-বেশ, তাকে জানান।
রনির ব্যবহারে জিমি একটু অবাক হলো। ও যদি কিছু সন্দেহ করে থাকে সেটা প্রকাশ করছে না কেন?
দুজনে গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লো। পথে যেতে যেতে রনি বললো–জিমি, এখন থেকে তুমি আমার প্রিয় বন্ধু। তাই তোমকে কিছু কথা বলতে চাই। সেটা তোমার জেনে রাখা প্রয়োজন।
জিমি একটু বিস্মিত হয়ে বললো–জেরি ওয়েড সম্পর্কে?
–হ্যাঁ, আমি শপথ করেছিলাম কাউকে বলবো না বলে। কিন্তু তবু বলতে হবে কারণ তুমি আমার চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখো।
বেশ বল।
হঠাৎ রনি চেঁচিয়ে উঠলো-না, আমি পারবো না।
জিমি ওকে বলার জন্য অনুরোধ করলো না। ডিন প্রিয়রি পৌঁছনো পর্যন্ত ওরা চুপ করে রইলো। খবর পেলো জেরির বোন জিম লোরেন বাগানে আছেন।
ওরা পায়ে পায়ে সেই দিকে এগোলো।
দুটো কালো স্প্যানিয়েলের সঙ্গে ফর্সা ছোটখাটো চেহারার একটু পুরোনো টুইডের স্কার্ট পরা। একটি মেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে এলো।
জিমি দ্রুত কথা বলে উঠলো–এ হলো রনি ডেভেরো। জেরি নিশ্চয়ই ওর কথা বলেছে?
-হ্যাঁ, মিস লোরেন জবাব দিল। আপনাদের সঙ্গে জেরি এলো না কেন?
মিস ওয়েড, একটা দুঃসংবাদ আছে।
লোরেন সতর্ক হয়ে উঠলো। অস্থির ভাবে জিজ্ঞাসা করলো, ওর কি হয়েছে? বলুন, চুপ করে থাকবেন না। ও রনির দিকে তাকালো, আপনি বলুন।
-জেরি মারা গেছে।
কথাটা শুনে লাফিয়ে উঠলো লোরেন, তার চোখে সপ্রশ্ন ব্যথা।
রনির মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে লোরেন বললো, জেরি ঘুমের ওষুধ খেয়েছে? অবিশ্বাস ঝরে পড়লো ওর কথায়।
মিস লোরেন, ওদের সঙ্গে আসতে চাইলো না। ওরা আবার চিমনিতে ফিরে এলো।
লেডি কুট বারবার চোখ মুছছিলেন।
জেরির ঘর থেকে রনিকে বেরোতে দেখে জিমি অবাক হলো।
–একবার ওকে দেখে এলাম। রনি বললো, শেষ সম্মান জানানো উচিত।
মন না চাইলে রনির সঙ্গে জিমি ঢুকলো জেরির ঘরে।
শ্বেত ফুলে ঢেকে আছে জেরির নিশ্চল দেহ। জিমির ভেতরটা একটু কেঁপে উঠলো। এই সেই জেরি ওয়েড।
ঘড়িগুলো পরপর সাজানো রয়েছে। কিন্তু আটটার পরিবর্তে সাতটা। আশ্চর্যের ব্যাপার, একটা ঘড়ি কোথায় গেল?
.
একখানা চিঠি
–যারা নিজের ক্ষমতায় বড় হয় তারা প্রচুর টাকা করতে পারে। লর্ড কেটারহ্যাম শান্ত ভাবে বললেন।
বাবার কথা শুনে মেয়ে লেডি এইলিন ব্রেন্ট, বন্ধুদের কাছে যে বান্ডল নামে পরিচিত, হেসে উঠলো।
–তোমার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তবে বুড়ো কুটকে জায়গাটা ভাড়া দিয়ে ভলোই লাভ করেছে।
-হ্যাঁ, তবে লোকটা ভীষণ বিরক্তিকর। আমার ওরকম লোক পছন্দ হয় না।
–এরকম লোক না হলে তোমার ঐ ভাঙাচোরা বাড়িটার জন্য এত টাকা পেতে?
–আঃ, জ্বালাতন করিস না। আগের ঘটনা মনে পড়ে যায় লর্ড কেটারহ্যামের। একজন অচেনা লোক তাই বলে আমার বাড়িটা মৃত্যুর জন্য বেছে নেবে? এই নিয়ে দুবার হলো। চারবছর আগের ঐ ঘটনার জন্য অবশ্য জর্জ লোম্যাক্স দায়ী।
তবে এবারে দোষ পড়লো স্টিম রোলার কুটের ওপর। অবশ্য এটা আগের মত খুন নয়।
–ঐ তো মোটা ইনসপেক্টর যেমন ভাব করছিলেন যে মনে হচ্ছিল, এখানে যত মানুষ মরে সবগুলোই খুন। আমি ট্রেডওয়েলের কাছ থেকে সব শুনেছি।
জেরি ওয়েডকে আমি একবারই দেখেছি। ভারি হাসিখুশী ছেলে। বান্ডল বললো, ওকে কেউ খুন করবে ভাবতেই পারি না।
-কিন্তু ঐ গাধা ইনসপেক্টরের গবেট মাথায় সেটা তো ঢুকছে না।
বান্ডল উঠে পড়ল–যাই, ম্যাকডোনাল্ডের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
বাগানে ম্যাকডোনাল্ডের মুখোমুখি হলো বান্ডল–ম্যাকডোনাল্ড, আমার এক থোকা আঙুর চাই, আধপাকা হলেও চলবে।
সে আবার ঘরে এসে ঢুকলো।
-আচ্ছা বাবা, লেডি কুটকে কেমন লাগে তোমার?
–অনেকটা মিসেস সিডন-এর মতো। ঐ ঘড়ির ব্যাপারটা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। বান্ডল ঘড়ির ব্যাপারটা জানত না। তাই তাকে বুঝিয়ে সব বললো।
-বান্ডল একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি, লর্ড কেটারহ্যাম বললেন। ছেলেটা তোর ঘরে মারা যায়।
বান্ডল মুখ কুঁচকে নিলো-কেন যে লোকে আমার ঘরে মরে।
নিজের ঘরে সন্ধ্যেবেলা আগুনের সামনে বসে বান্ডলের বারবার জেরি ওয়েডের কথা মনে পড়লো।
তাকের দিকে চোখ যেতেই ঘড়ির কথা মনে পড়লো। ওর পরিচারিকার মুখে শুনেছে, সাতটি ঘড়ি ছিল, একটি ঘড়ি বাগানের ঝোপে পাওয়া গেছে। বাগানের মধ্যে ঘড়ি আসবে কি করে? তবে কি জেরি প্রথমটির অ্যালার্ম শুনে বিরক্ত হয়ে ছুঁড়ে দিয়েছিল বাগানের দিকে। ব্যাপারটা খুব ভাবিয়ে তুললো বান্ডলকে। না, এ ব্যাপারে বিল এভারসলের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
সে লেখার টেবিলের সামনে গিয়ে বসলো। কি মনে করে ডেস্কের তলার দিকটা টানলো। কিন্তু আটকে গেল। একটা ছুরি দিয়ে চাপ দিতেই একটু ফাঁক হলো। একটা কাগজের অংশ দেখতে পেয়ে টেনে বের করলো। একটা চিঠি।
২১ শে সেপ্টেম্বর, চিঠির তারিখটা দেখে বান্ডলের চোখ ঐখানেই আটকে রইলো, তার মানে জেরি যেদিন মারা যায় তার আগের দিন চিঠিটা সে লিখেছে। চিঠিটা সম্পূর্ণ লেখা হয়নি।
সে চিঠিটা পড়তে লাগলো।