…লর্ড কেটারহ্যাম, আপনি দেখে নেবেন, যৌবনমতী এইলিনের কোনো সম্মান নষ্ট হবে না।
কথাটা এত দেরিতে বুঝেছি বলে আফসোস হচ্ছে। আগে কেন বুঝিনি।
জর্জ লোম্যাক্স সম্মতির জন্য অপেক্ষা করলেন।
তার মানে, ইয়ে, লর্ড কেটারহ্যাম কেমন অসহায় বোধ করলেন, তুমি তাহলে বান্ডলকে বিয়ে করতে চাও?
আশ্চর্য হচ্ছেন? তাহলে কি বান্ডলের সঙ্গে কথা বলতে পারবো না?
কথা বলতে পারবে। তুমি যদি অনুমতি চাও আমি বাধা দেবো না। তবে একটা কথা জেনে রাখো, তোমার জায়গায় আমি হলে, এ প্রস্তাব করতাম না। আমি বলি বাড়ি যাও, এক থেকে কুড়ি গুনতে গুনতে বার বার ভাবো। বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বোকা বনে যাওয়ার চেয়ে ওটা ঢের বেশি মঙ্গলের হবে।
–আপনি যে হৃদয় থেকে কথাটা বললেন, সেটা মনে হলো না। আপনার কথাগুলো কেমন অদ্ভুত শোনালো, তবু আমি একবার আমার ভাগ্য পরীক্ষা করবোই। আমি কি এইলিনের সঙ্গে দেখা করতে পারি?
এ ব্যাপারে আমার মতামত খাটবে না। লর্ড কেটারহ্যাম উঠে দাঁড়ালেন, বান্ডল তার নিজের ব্যাপারে কারো কর্তৃত্ব পছন্দ করে না, ও যদি কাল এসে বলে, বাড়ির সোফারকে বিয়ে করবে তাহলেও আমি আপত্তি করবো না। ছেলেমেয়েদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে নিজের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। এটা আজকালকার নিয়ম। আমি তাই বান্ডলকে জানিয়ে রেখেছি–যে এমন কোনো কাজ কখনো করিস না, যা আমাকে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে। সত্যি কথা বলতে কি, এ পর্যন্ত আমার কথা রেখেছে।
জর্জ যেন প্রতিজ্ঞা করেই এসেছে। এমন ভঙ্গীতে উঠে দাঁড়ালো।
-কোথায় পাবো ওকে?
-বলতে পারবো না। লর্ড কেটারহ্যাম চটপট জবাব দিল। আগেই বলেছি ও স্থির হয়ে থাকে না। ওর বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। ও যে কোনো জায়গায় থাকতে পারে।
–লর্ড কেটারহ্যাম, আপনি যদি বাটলারকে ডেকে বলেন যে একবার এইলিনকে ডেকে দিতে, আমি তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। তাহলে খুব ভালো হয়।
ঘন্টা ধ্বনি শুনে ট্রেডওয়েল ঘরে এসে ঢুকলো। লর্ড কেটারহ্যাম তাকে বললেন, লেডি এইলিনকে ড্রইংরুমে পাঠিয়ে দিতে, মিঃ লোম্যাক্স ওর সঙ্গে কথা বলতে চান।
জর্জ লোম্যাক্স আহ্লাদে ডগমগ হয়ে উঠলেন। লর্ড কেটারহ্যামের হাত ধরে বললেন, অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি ভালো খবর দিতে পারবো। জর্জ দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলেন।
লর্ড কেটারহ্যাম নিজের মনে বললেন, বান্ডল যে কি করছে কে জানে।
একটু পরেই দরজা খুলে কলো ট্রেডওয়েল–মিঃ বিল এভারসলে এসেছেন, মাই লর্ড।
লর্ড কেটারহ্যাম বিলের হাতটা জড়িয়ে ধরে বললেন, হ্যালো বিল, তুমি কি জর্জের খোঁজে এসেছো? তুমি আমার একটা উপকার করলে খুশী হবো। ড্রইংরুমে লোম্যাক্সকে পাবে। তাকে জানাবে যে ক্যাবিনেটের জরুরী সভায় তার ডাক পড়েছে। নতুনবা তোমার যেমন খুশী বলে ওকে বিদায় দাও। একটা যুবতী মেয়ের পাল্লায় পড়ে এমন একজন বুড়ো লোককে হেনস্থায় ফেলা উচিত নয়।
–আমি বান্ডলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। বিল বলনো। জর্জ লোম্যাক্স যে এখানে এসেছেন আমি তা জানি না। তার খোঁজে আমি আসিনি। বান্ডল কোথায়? ধারে কাছে আছে কি?
-ওর সঙ্গে তোমার এই মুহূর্তে দেখা হবে না। ও জর্জের সঙ্গে কথা বলছে। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন।
-তাতে কি ক্ষতি হবে?
–হবে, অনেক কিছুই। এতক্ষণে সব মনে হয় গুবলেট করে দিয়েছে। ব্যাপারটা ওর পক্ষে আরো খারাপ করে না দেওয়াই ভালো।
–কিন্তু ওর বক্তব্য কি?
-সেটা ঈশ্বরই জানেন। মনে হয় পাগলের প্রলাপ বকছে। বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করি না। মেয়েটার হাত ধরো, দেখবে জলের মত এগিয়ে যাচ্ছে ঘটনা।
বিল অবাক হলো।
–কিন্তু স্যার, আমার সময় খুব কম। আমি এখুনি বান্ডলের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
–আমার মনে হয় বেশি সময় তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে না। কাজ মিটে গেলে লোম্যাক্স নিজেই আমার কাছে ফিরে আসবে। তুমি ততক্ষণ আমার কাছে থাকো সেটাই আমি চাই।
-কি কাজ? লোম্যাক্স কি করছে? বিল উগ্রীব হয়ে জানতে চাইলো।
-সে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে বান্ডলকে। কারণ জানতে চেয়ো না। তবে আমার মনে হয় জর্জের এই বয়সে ভীমরতি হয়েছে। আমার তো আর কিছু মনে আসছে না।
–এই বয়সে বিয়ে? শুয়োর, শয়তান। বিলের মুখ কালো হয়ে গেল।
–জর্জ জানিয়েছে, ওর যৌবনে নাকি ভাঙন ধরেনি। লর্ড কেটারহ্যাম ফিস ফিস করে বললেন।
-লজ্জাশরমের বালাই নেই লোকটার। হতচ্ছাড়া
–ও আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট।
–বান্ডলের মত মেয়ে? বান্ডল আর কডার্স। এ ব্যাপারে সায় দেওয়া আপনার উচিত হয়নি।
–এসবে আমি নাক গলাই না।
–হা ঈশ্বর! বেশ অনুভূতির সঙ্গে বিল কথাটা বলে উঠলো। আমাকে এখনই যেতে হবে স্যার। আমি চলি।
-না না, তুমি যেও না। তাছাড়া তুমি বান্ডলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।
-এখন থাক। আপনি যা বললেন, শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেছে। দয়া করে আপনি বলবেন জিমি থেরিজারকে এখন কোথায় পাবো? ও নাকি কুটদের বাড়িতে ছিল, এখনও কি সেখানেই আছে? আপনি জানেন?
–মনে হয় গতকাল সে শহরে ফিরেছে। কারণ বান্ডল আর লোরেনও সেখানেই ছিল, গতকাল ফিরেছে। তুমি যদি ধৈর্য ধরে একটু বসো
বিলের একদম ভালো লাগছিলো না। অসহ্য লাগছিল সবকিছু। সে দ্রুত ঘাড় নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
নিঃশব্দে হলঘরে ঢুকলেন লর্ড কেটারহ্যাম। নিজের টুপিটা নিয়ে আবার চটপট পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। একটু দূরে বিলকে গাড়িতে উঠতে দেখলেন।