–লোরেন, তোমার কিছু ধারণা আছে?
লোরেনের জানা নেই এই প্রশ্নের জবাব। সে বোবার মত মাথা নাড়লো।
–আচ্ছা, তখন জিমির ডান হাত বাঁধা ছিলো না? বান্ডল বললো।
–আরে, এটা তো ভুলে গিয়েছিলাম, জিমি লাফিয়ে উঠলো। দস্তানাটা বাঁ হাতের তাই ব্যাটল কিছু বলেননি।
–তার সেটা ইচ্ছাও ছিল না। তোমাকে দস্তানাটা হাতে পড়তে বলে অন্য সকলের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সে লোক তোমাকে গুলি করেছিল সে যে বাঁ হাতি সেটা নিশ্চিত।
-তাহলে আমাদের বাঁ হাতি লোককে এবার থেকে খুঁজতে হবে। লোরেন বললো।
–হ্যাঁ, তাছাড়া ব্যাটল চান গলফ ক্লাবগুলি ঘুরে এইধরনের লোকের হদিস করতে।
-একটা কথা মনে পড়েছে। জিমি বললো, গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ভাববার বিষয়। জেরি যে রাতে মারা গেল, তার আগে চিমনিতে ব্রিজ খেলার আসর বসেছিল। তখন দেখেছিলাম স্যার অসওয়াল্ডকে বাঁ হাতে তাস বাঁটতে।
কথাটা ঠিক মনে ধরলো না লোরেনের। প্রবলভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ওর মত একজন মানুষ। না না, এটা সম্ভব নয়।
–অসম্ভব বলে মনে হয়। তবু–জিমি বললো।
বান্ডল শান্ত ভাবে বললো–নিজস্ব কাজের ধারা সাত নম্বরের আছে। স্যার অসওয়াল্ডের মধ্যে যদি সেই আচরণ লক্ষ্য করা যায়? স্যার অসওয়াল্ড এই ভাবেই সৌভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন?
ফর্মুলা যখন নিজের হাতের মধ্যে তাহলে অ্যাবীতে ঐ ধরনের গল্প ফাদার ওর কি দরকার ছিল।
–প্রয়োজন ছিল। লোরেন সায় দিলো। নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো।
–বাওয়ার আর কাউন্টেসকে সন্দেহ করা হচ্ছে। বান্ডল বললো, স্যার অসওয়াল্ডের মত লোককে কে সন্দেহ করবে?
-ব্যাটলের মনে এই সন্দেহ ঢুকেছে কিনা জানি না। জিমি বললো।
মুহূর্তের মধ্যে বান্ডলের চোখে সামনে ভেসে উঠলো স্যার অসওয়াল্ডের বিশাল চেহারা। সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল সেই কোটিপোতি মানুষের কোট থেকে আবিষ্কার করলেন একটা আইভি লতার পাতা।
.
জর্জ লোম্যাক্সের বিচিত্র ব্যবহার
নিঃশব্দে ঘরে এসে ঢুকলেন ট্রেডওয়েল।
-মাই লর্ড, মিঃ লোম্যাক্স আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।
লর্ড কেটারহ্যাম নিজের বাঁ হাতের কব্জি দেখায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একটু চমকে উঠলেন। তিনি রেগে গেলেন না। একটু ব্যথিত কণ্ঠে বললেন–আজ সকালে আমি ব্যস্ত থাকবো এটা তোমাকে প্রাতঃরাশের সময়ে জানিয়েছি।
–হ্যাঁ, মাই লর্ড। কিন্তু
-যাও, তুমি মিঃ লোম্যাক্সকে জানিয়ে দাও যে তোমার ভুল হয়ে গেছে। তুমি তাকে বলল যে আমি বাড়ি নেই বা বলল হাতে কষ্ট পাচ্ছি। তবুও যদি না শোনে তাহলে বলল আমি মরে গেছি।
–মাই লর্ড, একথা এখন বলা যাবে না। উনি আপনাকে বাগানে পলকের জন্য দেখে ফেলেছেন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লর্ড কেটারহ্যাম বললেন, অগত্যা আর কি করা। তুমি যাও, আমি আসছি।
লর্ড কেটারহ্যাম চরিত্রটি বড় বিচিত্র। মনে ঘা থাকলেও আচরণে সেটা প্রকাশ করেন না।
অত্যন্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন–আরে বন্ধু যে, আপনাকে দেখে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। বসুন বসুন। আজ কিছু পান করতেই হবে।
বড় আরাম কেদারায় বসালেন জর্জ লোম্যাক্সকে।
–একটা বিশেষ দরকারে আপনার কাছে এলাম। জর্জ বললেন।
–তাই নাকি, লর্ড কেটারহ্যাম তলিয়ে ভাবতে লাগলেন, এই কথার পেছনে কি আছে।
বিশেষ দরকার ছিল। জর্জ বললেন।
লর্ড কেটারহ্যাম ভেতরে ভেতরে চুপসে গেলেন। তার মানে আরো সাংঘাতিক কিছু মনে হয়।
-এইলিন কি বাড়িতে?
-হ্যাঁ, বান্ডল বাড়িতে আছে। ওর সঙ্গে ওয়েড় মেয়েটা আছে। লর্ড কেটারহ্যাম স্বভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেন। জানেন মেয়েটা ভারী ভালো। দেখবেন ও একদিন গলফ খেলায়
জর্জ তাকে আর বলতে না দিয়ে থামিয়ে দিলেন-বান্ডলের সঙ্গে এখনই দেখা করা প্রয়োজন।
–নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। কিন্তু
–কোনো কিন্তু নেই। জর্জ বললেন, এইলিন আর ছোট্ট মেয়েটি নেই, এটা নিশ্চয়ই আপনার খেয়াল আছে। সে একজন বুদ্ধিমতী এবং সুন্দরী মহিলা হয়ে উঠেছে। যে ওকে ভালোবাসবে সে নিজেকে গর্বিত মনে করবে। আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না সে হবে খুবই ভাগ্যবান ব্যক্তি।
–কথাটা আপনি ভুল বলেননি, কিন্তু ও বড় চঞ্চল। একজায়গায় স্থির হয়ে থাকে না। অবশ্য অজকালকার ছেলেরা এসব গুরুত্ব দেয় না।
-সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আধুনিক সমস্যা ওকে চিন্তিত করে তোলে। মনকেও আধুনিক করতে চায়।
লর্ড কেটারহ্যাম বিস্মিত হয়ে তাকালেন জর্জের দিকে। এসব কি বলছেন? অথচ তার নিজের ধারণা, বান্ডল এসবের বিপরীত। আধুনিক জীবনের ক্ষেত্রেও তাই।
–আপনি কি ঠিক বলছেন?
–উড়িয়ে দেওয়ার মত কথা আমি বলিনি লর্ড কেটারহ্যাম। আমার এখানে ছুটে আসার উদ্দেশ্য আশাকরি খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আমি নতুন দায়িত্ব নিতে রাজী হয়েছি, যা আমার মত লোক সহজে করে না। বংশমর্যাদা, রুচির ব্যাপার, ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা, এমন নানা বিষয় নিয়ে আমি ভেবেছি। আমি আমার স্ত্রীকে সমাজে এমন প্রতিষ্ঠা দিতে পারি যা তাচ্ছিল্য করার মত নয়।
…এইলিন আমার বংশমর্যাদা এবং প্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ উপযুক্ত। চমৎকার ভাবে ও এটা মানিয়ে নিতে পারবে। আমার আশা, ওর বুদ্ধি, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা, এসব আমার প্রতিষ্ঠাকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করবে। তবে বলতে পারেন, আমি এইলিনের থেকে বয়সে অনেক বড়। তবে মনে করবেন না, বয়সের সাথে সাথে আমার মধ্যে প্রাণ-প্রাচুর্যের অভাব আছে। বয়স কোনো ব্যাপার নয়। আমার মত প্রতিষ্ঠিত মানুষকে বিয়ে করা