–দুটো রিভলবারও ছিল। লেডি কুট ফোড়ন দিলেন। কি ভয়ঙ্কর দেখতে।
–ফাঁসিতে ঝোলার জন্য আমার জন্ম। জিমি বললো।
-একজন রুশী কাউন্টেস নাকি ছিলেন, শকস বললো, বেশ সুন্দরী। বিলকে সহজে কবজা করে নিয়েছিলেন।
–হাতটা কেমন আছে? লেডি কুট জানতে চাইলেন।
–বেশ ভালোই। বাঁ-হাতে আপাততঃ কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।
–সব বাচ্চাকেই দুহাত ব্যবহার করা শেখানো উচিত। স্যার অসওয়াল্ড বলে উঠলেন।
–সরকারী অফিসে ডান হাত বাঁ হাতের কথা না জানলে ভালো হতো, মিঃ ও’রুরকে
জানালেন।
–আপনি দুহাত ব্যবহার করেন?
–না, আমি ডান হাতে কাজ করি।
–কিন্তু আমি সেদিন দেখলাম আপনি বাঁ হাতে তাস বাঁটছেন, মিঃ বেটম্যান বলে উঠলেন।
–সেটা আলাদা ব্যাপার। মিঃ ওরুকে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেন।
রাতের খাওয়া-দাওয়ার পরে আসর বসলো ব্রিজ খেলার।
এরপর কেটে গেল দুটি ঘণ্টা।
জিমি পায়ে কোনো আওয়াজ না করে সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে এলো। রান্নাঘরে একবার উঁকি দিলো। তারপর সোজা পা চালালো স্যার অসওয়াল্ডের স্টাডিরুমের দিকে। টেবিলের ড্রয়ার টেনে দেখলো। কয়েকটা তালা লাগানো। ও একটা তার লাগিয়ে সহজেই ড্রয়ারগুলি খুলে ফেললো৷ কাগজপত্রগুলো ঘেঁটে দেখলো। তারপর আবার জায়গামত গুছিয়ে রেখে দিলো।
জিমি খুঁজছিল সেই তথ্য, হের এবার হোর্ডের সেই ফর্মুলার কোনো উল্লেখ যার সাহায্যে রহস্যময় সাত নম্বরের পরিচয় জানা যায়। কিন্তু কিছু না পেয়ে সে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ করলো। সেই সময় কানে এলো একটা চাপা শব্দ; বুঝলো, হল ঘরে দ্বিতীয় একজন আছে, এটা নিঃসন্দেহে। হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল তার। সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে আলো জ্বালালো ঘরের মধ্যে তীব্র আলোয় ও চোখের সামনে দেখতে পেলো মাত্র কহাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে রিউপার্ট বেটম্যান।
-হা ভগবান। জিমি নিজেকে সামলে নিলো পঙ্গো তুমি অন্ধকারে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছো?
–একটা শব্দ শুনে দেখতে এলাম চোর ঢুকেছে ভেবে। বেটম্যানের পায়ে রবার সোলের জুতো জিমির দৃষ্টি এড়ালো না।
–সর্বত্র তোমার চোখ দুটি বিচরণ করে দেখছি। ওর পকেটের দিকে লক্ষ্য করে জিমি বললো, মারাত্মক অস্ত্রও সঙ্গে আছে।
-কখন কোন বিপদে পড়বো, আগে থেকে তৈরি থাকা ভালো।
–ভাগ্যিস, তুমি গুলি করোনি।
–হ্যাঁ, তোমার কপাল ভালো, তাই বেঁচে গেলে এ যাত্রা।
-তাহলে আর একটু হলেই একজন নিরীহ অতিথিকে খুন করছিলে, এটা আইনত অপরাধ। মনে রেখো আর ভবিষ্যতে আরো সাবধানী হয়ো।
–তুমি এখানে কি করছিলে? পঙ্গো প্রশ্ন করলো।
-ভীষণ খিদে পেয়েছে। তাই ভাবলাম, এখানে কিছু বিস্কুট পাওয়া যায় কিনা। অবশ্য আমার বিছানার পাশে একটা বিস্কুটের কৌটো আছে যার উপরে রয়েছে উপোসী অতিথিদের জন্য। অথচ খুললে দেখবো, টিন খালি। অগত্যা নিচে নেমে এলাম।
জিমি ওর ড্রেসিং গাউনের পকেট থেকে বেশ কিছু বিস্কুট বের করে ওকে দেখালো। মুখে ওর মিষ্টি হাসি, চোখে বুদ্ধির পরিচয়।
শিং-এর ফ্রেমের মধ্যে দিয়ে পঙ্গো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জিমিকে লক্ষ্য করলো।
জিমি যেন ওকে তোয়াক্কা করে না এমন একটা ভঙ্গী করে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। বেটম্যানও তার পেছন পেছন হাঁটা দিলো।
নিজের ঘরের দরজার কাছে এসে জিমি বললো, শুভরাত্রি পঙ্গো।
–বিস্কুটের ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন গোলমেলে ঠেকছে, বেটম্যান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, যদি দেখি বেচাল কিছু তাহলে?
–নিশ্চয়ই, দেখো।
বেটম্যান জিমির ঘরে ঢুকে বিস্কুটের টিন দেখে হাঁ। ভেতর ফাঁকা।
-কি বিশ্বাস হলো। জিমি বললো, এবার শুভরাত্রি।
বেটম্যান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। জিমি তার বিছানায় বসে কান পেতে রইলো।
-খুব সন্দেহ ঐ পঙ্গোর। জিমি নিজের মনে উচ্চারণ করলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। রাত্রি বেলা না ঘুমিয়ে রিভলবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এক বাজে অভ্যাস।
এবার সে বিছানা থেকে নামলো। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে কাগজপত্রের মধ্যে থেকে কতগুলো বিস্কুট বের করলো।
এখন ইচ্ছে না থাকলেও এগুলো পেটে চালান করতে হবে। নতুনবা কাল সকালে পঙ্গো যদি এসে দেখে
বেজার মুখে সে বিস্কুট একটা একটা করে চিবোতে লাগলো।
.
সন্দেহ
বান্ডল ওর হিসপানোকে একটা গ্যারেজে রেখে ঠিক বারোটার সময় পার্কের গেট দিয়ে লোরেনকে নিয়ে ঢুকলো।
লেটি কুট ওদের দুজনকে বেশ অবাক হয়ে অভ্যর্থনা করলেন। বেশ খুশী মনেই তিনি ওদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করলেন।
একটা বিশাল আরাম কেদারায় মিঃ ও’রুরকে শুয়েছিলেন। তিনি লোরেনের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলেন। কিন্তু লোরেনের কান রয়েছে অন্য জায়গায়। সে শুনতে পেলো, বান্ডলের গাড়িতে কি ধরনের গণ্ডগোল হয়েছে তার ব্যাখ্যা করছে সে নিজে।
–গাড়িটা বিগড়ে যেতেই একটুও চিন্তা হলো না। বান্ডল বলে চললো। এ বাড়ির কাছে খারাপ হয়েছে অতএব ভাবনা কিসের। একবার কি ঝামেলায় পড়েছিলাম। সেদিন ছিল রবিবার। পাহাড়ের কাছে লিট স্পেড়লিংটন নামে একটা জায়গায় গাড়ি গেল খারাপ হয়ে। যেমন জমি তেমনি জায়গা।
–ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য। ও’রুরকে মন্তব্য করলেন।
–মিঃ থেসিজারকে দেখছি না। লেডি কুট বললেন।
–মনে হয় বিলিয়ার্ড রুমে। আমি দেখছি। কথাটা শকস বলে চলে গেল।
ঠিক তখনই গম্ভীর মুখে এসে ঢুকলো রিউপার্ট ব্যেটম্যান।