–মোটেই তুমি এটা ভালো করোনি। স্যার অসওয়াল্ড বললেন। ওকে আমি কিছুতেই এখানে ঢুকতে দেবো না, মরিয়া। বেটম্যানের কাছ থেকে অনেক কিছু শুনেছি ওর সম্বন্ধে। ছেলেটি ওর সঙ্গে একই স্কুলে পড়াশুনা করতো।
–মিঃ বেটম্যানের কাছ থেকে কি শুনেছো? লেডি কুট জানতে চাইলেন।
–ওর ব্যাপারে আমাকে সাবধান করে দিয়েছে। বেটম্যানের কথা আমি এড়াতে পারি না। ওর ওপর আমার বিশ্বাস আছে যথেষ্ট।
–তাহলে ভুল আমি করে বসেছি। আগে যদি জানতাম, লেডি কুট বলতে থাকেন, তাহলে ওকে থাকতে বলতাম না। বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
লেডি কুট এগিয়ে চললেন।
স্যার অসওয়াল্ড তার দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকালেন।
স্বামীকে তিনি খুব ভালোবাসেন কথাটা ভাবতে গিয়ে লেডি কুটের ঠোঁটে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো।
৫. প্রধানতঃ গলফের কথা
এক সপ্তাহ ধরে লোরেন চিমনিতে রয়েছে। লর্ড কেটারহ্যামের কাছে গলফ খেলা শিখে সে প্রশংসা অর্জন করেছে।
-বান্ডল, লর্ড কেটারহ্যাম বললেন, লোরেন খুব ভালো মেয়ে।
গলফ খেলায় লর্ড কেটারহ্যাম ভীষণ পারদর্শী। গলফ বলে শট নেওয়া তার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে পড়ে।
-জানিস তো, ওকে ভালো করে খেলাটা শেখাচ্ছি। কটা যা শট মেরেছে, দারুণ। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন।
-বাবা, ম্যাকডোনাল্ড কুটদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার জন্য বেশ শাস্তি ভোগ করেছে। বান্ডল অন্য প্রসঙ্গে এলো।
-কেন? আমার বাগানে আমি ইচ্ছেমত কাজ করতে পারি না? আমার ইচ্ছেটাই মাকডোনাল্ড প্রাধান্য দেয়। গলফের ব্যাপারে ঐ কুটরাও মন্দ নয়।
এমন সময় ট্রেডওয়েল এসে জানালো, মিঃ থেসিজার বান্ডলের সঙ্গে কথা বলতে চান ফোনে।
লোরেনকে সঙ্গে নিয়ে বান্ডল ছুটলো ফোনের কাছে।
-হ্যালো, জিমি নাকি?
–হ্যালো, কেমন আছো?
–খুব ভালো।
–লোরেনের খবর কি?
–দারুণ। কথা বলবে? ও এখানেই আছে।
-ওর সঙ্গে পরে কথা বলছি। শোন বান্ডল, আগামী সপ্তাহের শেষে আমি কুটদের বাড়িতে যাচ্ছি সময় কাটাতে। তুমি কি বলতে পারবে, সব-খোল চাবি কোথায় পাবো?
–তুমি কি ওদের বাড়ি সব-খোল চাবি নিয়ে যাবে? কিন্তু এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।
–এটার দরকার হতে পারে। ভাবলাম, তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি। একটা উপায় বাতলে দিতে পারো। তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এখন দেখছি স্টিভেনসকে বলতে হবে। আমি অপরাধ জগতের সঙ্গে মিশে গেছি, এটা হয়তো ও ভাববে।
–জিমি, একটা কথা মনে রেখো, সব সময় হুশিয়ার হয়ে থাকতে হবে। ঐ সব-খোল চাবি নিয়ে তোমাকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে স্যার অসওয়াল্ড ব্যাপারটা খুব জটিল করে দিতে পারেন।
–মেনে নিলাম তোমার কথা। কিন্তু পঙ্গো যেমন বেড়ালের মতো নিঃশব্দে সব জায়গায় হঠাৎ আবির্ভূত হয়, তাই ভয়টা ওকে নিয়েই বেশি আমার।
-বেশ ত তোমার ওপর নজরদারি করার জন্য আমি আর লোরেন ওখানে যেতে পারি।
-ধন্যবাদ। কিন্তু আমার একটা পরিকল্পনা আছে। মনে করো, লেদারবাড়ির কাছে তোমাদের দুজনের একটা গাড়ি দুর্ঘটনা হলো। ওটা কতটা দূরে হবে?
–চল্লিশ মাইল। এমন কিছু নয়।
-বেশ, তোমরা বারোটা, সাড়ে বারোটা নাগাদ কাজটা সারবে। দেখো, লোরেনের মৃত্যু যেন না হয়। ও আমার ভালোবাসা।
তার মানে, তুমি বলতে চাইছে তাহলে ওরা আমাদের লাঞ্চের জন্য নেমন্তন্ন করবে?
–ঠিক ধরেছে। ও’রুরকেও থাকছেন সেখানে। জানো শকসের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।
–আচ্ছা জিমি, তোমার কি ধারণা
সন্দেহের দৃষ্টি থেকে কাউকে বাদ দিতে নেই, বুঝেছো। গোপন সভায় তিনি থাকতে পারেন। তিনি এবং কাউন্টেস একজোট হতে পারেন। গত বছর তিনি হাঙ্গেরিতে গিয়েছিলেন।
-ফর্মুলাটা তো তিনি যখন খুশী নিজের হাতের মধ্যে নিতে পারতেন?
-যাতে কেউ তাকে সন্দেহ না করে, এমন ভাবে নেওয়া সম্ভব হতো না তার পক্ষে। শোন, তোমাদের মত সুন্দরীদের পক্ষে কোনো কাজ অসম্ভব নয়। তোমরা দুজনে মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত পঙ্গো আর ও’রুরকে আটকে রাখবে।
-বুঝলাম। এবার লোরেনের সঙ্গে কথা বলো জিমি।
.
রাতের অ্যাডভেঞ্চার
রোদ ঝলমল করা এক বিকেল। জিমি হাজির হলো লেদারবাড়িতে। লেডি কুট এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা জানালেন। ঠান্ডা বিতৃষ্ণা ফুটে উঠেছে স্যার অসওয়ার্ল্ডের দৃষ্টিতে।
জিমি নিজেকে আদর্শবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করলো শকস ডেভেনট্রির কাছে।
ও’রুরকে ভীষণ খুশীতে ছিলেন। তিনি সে রাতের অ্যাবীর ঘটনার ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করে গেলেও শকসের প্রশ্নের দাপটে এমনভাবে বর্ণনা দিলেন যে কোনটা সত্যি, আর কোনটা মিথ্যে সেটা উদ্ধার করা কষ্টকর ব্যাপার।
–চারজন মুখোস পরা লোক! তাদের হাতে একটা করে রিভলবাস? বাপরে! শকসের মূৰ্ছা যাওয়ার উপক্রম।
–প্রায় ছজন লোক আমাকে চেপে ধরেছিল মনে পড়ছে। জোর করে আমাকে হাঁ করিয়ে কিছু দেওয়া চেষ্টা করছিল। ভাবলাম বিষ, মৃত্যু আমার শিয়রে নিশ্চিত।
–কি খোয়া গেল?
-ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডে জমা দেওয়ার জন্য মিঃ লোম্যাক্সকে পাঠানো রাশিয়ার রত্ন ছাড়া আর কি?
–আপনি ভীষণ মিথ্যে কথা বলেন। শকস জোরালো অভিযোগ করলো।
-আমি মিথ্যে বলছি? যা বলছি সম্পূর্ণ গোপন ইতিহাস। আচ্ছা, বিশ্বাস না হয় মিঃ থেসিজারকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে। অবশ্য ও যদি অন্য কিছু বলে তার জন্য আমি দায়ী নই।
–মিঃ লোম্যাক্স তার নকল দাঁত না পরেই নিচে নেমে আসেন, এটা কি সত্য? শকস জানতে চাইলো।