-তারপর? ব্যাটল বললেন।
-তারপর গুলির শব্দ। আমার পাশের বইয়ের আলমারিতে গুলিটা লাগলো। আমি যে কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি জানি না।
কাউন্টেসের কথামত সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল বইয়ের আলমারির কাছে এগিয়ে গেলেন এবং মেঝে থেকে কিছু কুড়িয়ে নিলেন।
–এটা বুলেট নয়, কাউন্টেস। ব্যাটল বললেন, বুলেটের খোল। মিঃ থেইজার, গুলি করার সময় আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন?
জানলার কাছে গিয়ে একটা জায়গা দেখলো জিমি।
-তাহলে গুলিটা আলমারির গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে জানলা দিয়ে। যদি আক্রমণকারীরা সেটা না নিয়ে পালায়, তাহলে কাল সকালে পেয়ে যাবো।
–আপনার হাতে ব্যান্ডেজ। কাউন্টেস সপ্রশংস দৃষ্টিতে জিমির দিকে তাকালেন, তাহলে আপনিই কি কিন্তু কি হয়েছিল সেটা আমি জানতে চাই।
ব্যাটল বললেন–স্যার স্ট্যানলি ডিগবির কাছ থেকে কিছু দরকারী রাজনীতি সংক্রান্ত কাগজ নিয়ে চোর পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু এই তরুণীটিকে ধন্যবাদ। চোরেরা তা পারেনি, তিনি লোরেনকে দেখালেন।
কাউন্টেস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন–শরীরটা আবার খারাপ লাগছে।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য বিল তার হাত ধরলো। বান্ডলের হঠাৎ নজর কাড়লো কাউন্টেসের কাঁধের ওপর ছোট্ট কালো একটা আঁচিল যা তার পাতলা রাত্রিবাসের পোষাকের ওপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। বান্ডল প্রায় কাঠ হয়ে গেল।
-এবার ঘর বন্ধ করে চাবি দিয়ে দেবো। সুপারিন্টেন্ডেন্ট বললেন, লেডি এইলিন, আপনি কিছু বলবেন?
-হ্যাঁ, এখুনি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
এই সময় ঘরে এসে ঢুকলেন জর্জ লোম্যাক্স ও ডঃ কার্টরাইট।
–শোন ব্যাটল, ও’রুরকের বিশেষ কিছু হয়নি। কড়া ইনজেকশান তাকে দেওয়া হয়েছিল। কাল সকালেই ভালো হয়ে যাবেন।
ডাক্তারের সঙ্গে জিমি আর লোরেন চলে গেল।ব্যাটলের দিকে বান্ডল কাতর চোখে তাকালো।
ব্যাটল আগ্রহান্বিত হয়ে বললেন, স্যার স্ট্যানলি ডিগবির সঙ্গে একটু আড়ালে কথা বলা । যাবে কি?
নিশ্চয়। জর্জ বললেন, আমি ওকে ডেকে আনছি।
সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটল বান্ডলকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকলেন এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
বান্ডল সংক্ষেপে ওর সেভেন ডায়ালস-এ যাওয়া, সেখানে কি কি কথা শুনেছে, সব বলে গেল। শুনে ব্যাটলের একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো। এই প্রথম তার কঠিন মুখে শিথিলতা ফুটে উঠলো।
-আপনার মত মেয়েদের কোনা পূর্বাভাস দেওয়া বিপজ্জনক। আমি কল্পনা করতে পারিনি যে এতদূর আপনি এগোবেন।
–ঠিক আছে, আমার মৃত্যু আপনাকে ঝামেলায় ফেলতে চায়নি।
এখনও পর্যন্ত নয়। একটু থেমে ব্যাটল কি ভাবলেন। তারপর বললেন, জিমি থেসিজারের কাজটা বুঝলাম না, আপনাকে এরকম বিপদে ঠেলে দিলেন কেন, বুঝতে পারছি না।
-আগে ও জানতো না। বান্ডল বললো, তাছাড়া মিস ওয়েডকে নিয়েই সে ব্যস্ত।
-তাই নাকি? ব্যাটল একটু হাসলেন। তাহলে বিল এভারসেলকে বলবো, আপনার ওপর নজর রাখতে।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, আপনি আমার কথার শেষটুকু শোনেননি। যে মহিলাকে দেখলাম–একনম্বর, উনি হলেন কাউন্টেস র্যাডকি।কাউন্টেসেরকাঁধেরআঁচিলেরকথা বান্ডল বললো।
ব্যাটল কেবল হাই তুললেন, কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য না করে বান্ডল বিস্মিত হলো।
গালে হাত বোলাতে বোলাতে ব্যাটল বললেন–দেখুন লেডি এইলিন, কাউন্টেসের ব্যবহার সন্দেহজনক, আপনাকে বিশ্বাস করে কথাটা বললাম। খুবই সন্দেহজনক, এ ব্যাপারে আপনার এবং আমার মত এক। দূতাবাসের সঙ্গে কোনো অপ্রিয় ব্যাপার ঘটানো ঠিক নয়। তাই আমাদের অত্যন্ত পা মেপে এগোতে হবে। পুঁটি মাছদের দিয়েই রুই কাতলা ধরা যাবে। অতএব চূড়ামণি একদিন ধরা পড়বেই।
.
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল দায়িত্ব নিলেন
সকাল ছটা থেকে সুপারিন্টেন্ডন্ট ব্যাটল লাইব্রেরি ঘরে কাজ করলেন, তারই অনুরোধে বেলা দশটা নাগাদ ঘরে এসে ঢুকলেন স্যার অসওয়াল্ড কুট, জর্জ লোম্যাক্স এবং জিমি থেসিজার।
পাশের টেবিলে সাজানো রয়েছে নানা জিনিষপত্র যেগুলো পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জিমির লিওপোল্ড-ও আছে।
–সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, জর্জ বললেন। ভাবছিলাম কতখানি কাজ এগোলো। লোকটার হদিস পাওয়া গেল?
-ধরা সে পড়বেন, তবে সময় লাগবে। ব্যাটল জোরের সঙ্গে বললেন, দুটো বুলেট আমরা পেয়েছি। বড়টা সেডার গাছে বেঁধা অবস্থায়। ৪.৫৫ পেয়েছি যেটি মিঃ থেসিজারের কোল্ট থেকে বেরিয়েছিল। আর মাউসার-২৫ থেকে ছোটটা বেরিয়েছে। ওটা মিঃ থেসিজারের হাতের মধ্যে দিয়ে ঐ আরাম কেদারায় আটকায়।
পিস্তলে কোনো হাতের ছাপ পেয়েছেন? খুব আগ্রহ ভরে স্যার অসওয়াল্ড জানতে চাইলেন।
না, অপরাধীদের হাতে দস্তানা ছিল। আমি কি ঠিক বলছি, যে অসওয়াল্ড পিস্তলটা সিঁড়ির বিশ গজ দূরে পেয়েছিলেন?
জানলার দিকে মুখ রেখে স্যার অসওয়াল্ড বললেন–হবে হয় তো।
-স্যার, কিছু মনে করবেন না, পিস্তলটা যেখানে ছিল সেখানে ফেলে রাখলেই ভালো করতেন।
-আমি দুঃখিত, স্যার অসওয়াল্ড কাঠ হয়ে বললেন।
–আমি সবটাই পর্যালোচনা করেছি। বাগান থেকে আসা আপনার পায়ের ছাপ দেখেছি, নিচু হয়ে পিস্তলটা তোলায় ওখানকার ঘাসগুলো লেপ্টে গেছে। স্যার, আপনি কি বলতে পারেন, পিস্তলটা ওখানে গেল কেন?
-মনে হয় পালানোর সময় লোকটা ফেলে গেছে।