–আমাকে সব কিছুর বাইরে রাখা হয় কেন? জোরের সঙ্গে বান্ডল বললো। প্রথম দিনেই যখন আমায় তোমরা বলেছিলে ঘরে চুপ করে বসে থাকতে, তখনই আমি মন স্থির করে নিয়েছিলাম।
-তোমার ভীরু ভাব দেখে তখনই আমার বোঝা উচিত ছিল, লোরেন বললো।
–তুমি যে এতো বোকা, তা আমি জানতাম না, বান্ডল বললো।
–আমি তোমাকে বিবেচক বলেই জানতাম, জিমি বললো।
প্রিয় জিমি, তোমাকে ঠকানো খুব সোজা, লোরেন বললো। তুমি যখন ফোনে জানালে যে এ কাজে ঝুঁকি আছে, তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, কিছু করবোই। তাই হ্যাঁরোডে গিয়ে একটা পিস্তল কিনলাম, সাহস বাড়ানোর জন্য ওটার প্রয়োজন ছিল।
একটা ছোট্ট পিস্তল বের করে দেখালো লোরেন। আবার বলতে শুরু করলো, এখানে কি ঘটেছে সেটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল, তাই লতাগাছ বেয়ে বারান্দায় আসি। কি করবো এখন সেটা ভাবার মধ্যে পায়ের কাছে এসে পড়লো একটা বাদামী রঙের প্যাকেট। ওটা তুলে ওপরের দিকে তাকালাম। দেখি একটা লোক লতা ধরে নামছে। আমি সেখান থেকে ছুটলাম।
লোকটার চেহারার বর্ণনা লোরেন বিশেষ কিছু দিতে পারলো না। কারণ অন্ধকারে বিরাট চোহারা বলেই মনে হয়েছে, এই পর্যন্ত।
ব্যাটল এবার জিমির কাছে জানতে চাইলেন।
–লোকটার গায়ে অসম্ভব জোর। এইটুকুই বলতে পারি, যখন ওর গলা টিপে ধরি তখন সে চাপাকণ্ঠে কয়েকটা শব্দ করে আমাকে ছেড়ে দাও গোছের। লোকটাকে অশিক্ষিত বলেই মনে হয়েছে।
–প্যাকেটটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলো কেন, বুঝতে পারছি না, লোরেন বললো।
-লোকটা ইচ্ছে করেই আপনাকে দেয়। ব্যাটল বললেন, আমার বিশ্বাস চোর আপনাকে যে মানুষ ভেবেছিল তাকে।
–ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে ঠেকছে, জিমি বললো।
–মিঃ থেসিজার, এ ঘরে আপনি আলো জ্বালান?
–হ্যাঁ।
–ঘরে তখন কেউ ছিল না?
–না, কেউ না।
আলো নিভিয়ে আপনি আবার দরজা বন্ধ করেন? বলতে বলতে সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল একটা স্পেনীয় চামড়ার পরদা টাঙানো দেখে এগিয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে ওটার পেছনে উঁকি দিলেন। অস্ফুট একটা আওয়াজ তার গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো।
ব্যাটলকে লক্ষ্য করে বাকিরা ছুটে গেল।
কাউন্টেস র্যাডকি মেঝের ওপর অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছেন।
.
কাউন্টেস র্যাডকির কাহিনী
অনেক কসরত করার পর কাউন্টেস র্যাডকির জ্ঞান ফিরে এলো। অস্ফুট স্বরে কিছু বলে উঠলেন।
ঠিক তখনই ঝড়ের বেগে ঢুকলো বিল। কাউন্টেসের মুখের সামনে ঝুঁকে পড়ে বোকার মত বলতে লাগলো।
কাউন্টেস, আমি বলছি, ভয়ের কিছু নেই। একটা আঘাত পেয়েছেন, কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে। সুস্থ হয়ে তারপর যা বলার বলবেন। একটু জল খাবেন? বান্ডল, একটু ব্র্যাণ্ডি…
দয়া করে ওকে চুপ করে থাকতে দাও বান্ডল বেশ রেগেই বললো, উনি ঠিক আছেন।
বান্ডল আবার কিছুটা জল কাউন্টেসের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলো। উনি ধড়মড় করে উঠে বসলেন। তিনি তার পাতলা রাতপোষাকটা ভালো করে জড়িয়ে নিলেন।
-সব মনে পড়ছে, বিড় বিড় করে বললেন, তিনি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের মুখের দিকে তাকালেন, কারো চোখে সহানুভূতির স্পর্শ পেলেন না, একমাত্র বিল ছাড়া।
বিলকে লক্ষ্য করে কাউন্টেস বললেন, চিন্তা করবেন না, আমি ভালো আছি, আমাদের হাঙ্গেরিয়দের স্নায়ু ইস্পাতের মত মজবুত।
-এবার বলুন তো কি হয়েছিল? ব্যাটল প্রশ্ন করলেন।
এতক্ষণে তিনি দীর্ঘদেহী সুপারিন্টেন্ডেন্টের দিকে নজর দিলেন।
–আপনার ঘরে অমি গিয়েছিলাম। বান্ডল বললো, আপনি ঘরে ছিলেন না, বিছানাতেও শোননি
-হা হা, মনে পড়ছে, কাউন্টেস বললেন। কি ভয়ঙ্কর ঘটনা!
ব্যাটল বলে উঠলেন–যদি বলেন?
বিল সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, সুস্থ না মনে করলে এখন বলতে হবে না।
সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটলের দৃষ্টিকে কাউন্টেস অগ্রাহ্য করতে পারলেন না।
-আমার ঘুম আসছিল না। তাই বই নিয়ে বসলাম। কিন্তু পড়ায় মন বসলো না। বাড়িটা আমার কেমন যেন লাগছিল। তাই বাইরে বেরোলাম। নিচে নেমে এলাম। নিস্তব্ধ নিঝুম বাড়ি। নিঃশব্দে লাইব্রেরি ঘরে ঢুকে পড়লাম।
–নিঃশব্দে?
-হ্যাঁ, আমি কাউকে জাগাতে চাইনি। আলো জ্বেলে একটা বই খুঁজতে লাগলাম। আচমকা একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেলাম। চাপা পায়ের শব্দ। ভয়াল সে পায়ের আওয়াজ এগিয়ে আসছিল। অমি আলো নিভিয়ে পর্দার আড়ালে আত্মগোপন করলাম। ঘরে ঢুকলো কেউ, সুইচ টিপে আলো জ্বাললো।
-হ্যাঁ কিন্তু, জিমি বলতে গিয়ে বাধা পেলো। ব্যাটল তাকে চুপ করার ইঙ্গিত করলেন
–নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইলাম, ভয়ে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম। লোকটাও একটু থেমে শুনতে চাইলো। আবার পায়ের আওয়াজ।
জিমি আবার কিছু বলার চেষ্টা করলো।
কাউন্টেস বলে চললেন–সে জানলার কাছে গিয়ে মাথা বের করে কি দেখলো। তারপর ফিরে এসে আলো নিভিয়ে দরজা বন্ধ করলো। ঘরের মধ্যে লোকটা নিঃশব্দে ঘুরছে। আমি ভয়ে মরছি। যদি আমার অস্তিত্ব সে টের পায়। সে জানলার কাছে আবার গেল। আবার সব নিস্তব্ধ। ভাবলাম লোকটা চলে গেছে। তাই টর্চ জ্বালার উপক্রম করতেই ব্যাপারটা সেই মুহূর্তে ঘটে গেল।
-তারপর?
–জীবনে কোনোদিন ভুলবো না এ দৃশ্য। দুজন লোকের মধ্যে প্রচণ্ড মারামারি হচ্ছে। ওরা পরস্পরকে খুন করতে চাইছে। জিনিষপত্র লণ্ডভণ্ড হলো। কোথাও কোনো মেয়ে যেন চিৎকার করে উঠলো। লোকটা কেবল কর্কশ ও চাপা গলায় বলছিল, আমাকে ছেড়ে দাও। ইংরেজের মত গলার আওয়াজ।