.
অ্যালার্ম ঘড়ি নিয়ে
ইতিমধ্যে দুপুরের খাওয়ার পাট চুকেছে।
ব্রিজ খেলতে বসেছেন স্যার অসওয়াল্ড, তার পার্টনার হলেন রিউপার্ট বেটম্যান। অন্যদিকে লেডি কুট ও জেরি ওয়েড। মাঝে মাঝে তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল, দুটো নো ট্রামস, ডাবল, তিনটে ইস্কাবন..ইত্যাদি।
অন্যদিকে জেরির ঘরে ঘড়িগুলি লুকিয়ে রাখার তোড়জোড় চলছে। সেই সঙ্গে চলছে চাপা হাসির মস্করা।
এবার শুরু হলো ঘড়িগুলি কিভাবে রাখা হবে এবং কটার সময় অ্যালার্ম দেওয়া হবে তার জল্পনা-কল্পনা। অনেক তর্কবিতর্কের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, সাড়ে ছটা থেকে পর পর অ্যালার্ম বাজতে শুরু করবে।
কারো এদিকে এগিয়ে আসার আওয়াজ পেয়ে সকলে সচকিত হলো।
–ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জিমি বললো, পঙ্গো আসছে।
এবার সকলে পঙ্গোকে চেপে ধরলো; উপায় বলে দেওয়ার জন্য।
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে পঙ্গে বললো, অতগুলো ঘড়ির একসঙ্গে টিকটিক শব্দ শুনে জেরি আগেই ধরে ফেলবে।
শেষে স্থির হলো, জেরি ঘুমিয়ে পড়লে চুপি চুপি ওর ঘরে ঢুকে ঘড়িগুলি মেঝেতে বসিয়ে দিলেই চলবে।
অন্যদিকে ব্রিজ খেলা বেশ পুরোদমে চলছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় বসেছেন স্যার অসওয়াল্ড ও লেডি কুট। অন্যদিকে জেরি ওয়েড আর বেটম্যান।
-তোমাকে কতবার বলেছি, লিড দেওয়ার সময় অত সময় নেবে না।
স্যার অসওয়াল্ড তখন ডামি। তার কথা বলা উচিত নয় জেনেও লেডি কুট মুখে কিছু না বলে একটু হাসলেন।
–আবার আমিই জিতলাম।
হাতের তাস নামিয়ে রেখে লেডি কুট বাজির টাকা গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত হলেন।
রাত সাড়ে বারোটায় শুভরাত্রি জানিয়ে যে যার ঘরের দিকে এগোলেন। জেরি ওয়েডের পাশে রনি ডেভোনোর ঘর। ততক্ষণে ষড়যন্ত্রকারীরা নৈশ-পোশাক পরে জমা হয়েছে। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে ফিসফিসানি আর চাপা হাসি।
-ওর ঘরে কুড়ি মিনিট আগে আলো নিভেছে। জেরির ঘরে নজর রাখার দায়িত্ব ছিল রনির ওপর–এখন কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
পঙ্গোর ওপর দায়িত্ব পড়লো ঘরে ঢুকে ঘড়িগুলো রেখে আসার। কারণ পঙ্গে বেড়ালের মত নিঃশব্দে চলতে পারে। তাছাড়া ধরা পড়ে গেলে সামলে নেওয়ার কায়দাও সে জানে।
অবশেষে একটি একটি করে আটখানা ঘড়ি পঙ্গো জেরির ঘরে যথাস্থানে বসিয়ে রেখে চলে এলো। জেরি তখন নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছে।
.
যে মজা ব্যর্থ হলো
বেলা বারোটার সময় জেরি ওয়েডের দেখা পাওয়া গেল না।
ব্যাপারটা মজার হলো না মোটেও। ঠিক ভোর সাড়ে ছটায় এক এক করে আটটা ঘড়ির আলার্ম বেজে উঠলো। রানি এগিয়ে শিগগির দরজায় কান পাতলো।
কোনো সাড়াশব্দ নেই ঘরে। আটটা অ্যালার্ম ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দেবার ক্ষমতা জেরির আছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আবার মিটিং বসলো।
মনে হয় কানের কোনো রোগ আছে। ওর ডাক্তার দেখানো উচিত।
—আমার মনে হয়, ওর ঘুম ঠিকই ভেঙেছে, শকস বলে উঠলো। কিন্তু ও আমাদের সেটা বুঝতে দিয়ে চায় না।
-আচ্ছা, পঙ্গো ঘড়িগুলো কোথায় রেখেছিলে? রনি জানতে চাইলো।
–ওর কানের কাছে একটা ছোট টেবিলের ওপর।
-আমি হলেও তাই করতাম। কিন্তু অন্য কেউ হলে কি করতো? রনি সংশয় প্রকাশ করলো। এবার বোঝা যাচ্ছে, সত্যিই ওর কানে কোনো অসুখ আছে।
এ সময়ে ঘরে ঢুকলো ট্রেডওয়েল। জিমি আর রনির দিকে তাকাতেই ওরা উঠে এলো বাইরে।
–কি ব্যাপার, ট্রেডওয়েল? রনি প্রশ্ন করলো।
–মিঃ ওয়েড এখনও নিচে নামেননি দেখে উইলিয়ামকে উপরে পাঠিয়েছিলাম। পরমুহূর্তে উইলিয়াম ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ছুটে এলো। ট্রেডওয়েল কপালের ঘাম মুছলো। মনে হয় মিঃ ওয়েড ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন?
–কি যা তা বলছো? রনি ধমকে উঠলো। উইলিয়াম একটা গণ্ডমূর্খ। দাঁড়াও আমি গিয়ে দেখে আসছি।
ট্রেডওয়েল তার যাওয়ার পথ আটকে দিলো। বললো, ঘরের দরজা এখন বন্ধ, ডাঃ কার্টরাইটকে খবর দিয়েছি। এখন স্যার অসওয়াল্ডকে জানাতে হবে। তার আগে বেটম্যানকে প্রয়োজন।
ট্রেডওয়েল চলে যেতেই রনি বিড়বিড় করে উঠলো–জেরি…
জিমির ধারনা ছিল না, রনির সঙ্গে জেরির বন্ধুত্ব কত গভীর ছিল।
ঘড়ির ব্যাপারটা বিশ্রী লাগছে। জিমি উত্তর দিল। একটা মজা করতে গিয়ে সেটা এমন মর্মান্তিক ব্যাপারে দাঁড়াবে সেটা কে জানতো।
রনি তখনও নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি।
–কি করে জেরি মারা গেল সেটা জানতে চাই।
–হয়তো হার্টের ব্যাপার। জিমি ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে বললো।
এমন সময় ট্রেডওয়েল ঘরে এসে ঢুকলো।
-স্যার, আপনাদের দুজনের সঙ্গে ডাক্তারবাবু কথা বলতে চান।
ওরা দুজনে বেরিয়ে গেল।
পঙ্গো ডাক্তারের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলো। ডাঃ কার্টরাইট, রোগা চেহারার অল্পবয়সী মানুষ। চোখে বুদ্ধির ছাপ।
রনিকে লক্ষ্য করে ডাক্তার বললো–আপনি তো মিঃ ওয়েডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু?
-হ্যাঁ, ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
–আচ্ছা, আপনি কি জানেন আপনার বন্ধু ঘুমের জন্য বড়ি ব্যবহার করতেন?
রনি যেন আকাশ থেকে পড়লো।ঘুমের ওষুধ। ও তো নাক ডেকে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোত।
–অত্যন্ত দুঃখপূর্ণ ব্যাপার। ওর পাশে ওষুধের বোতল ও গ্লাস পাওয়া গেছে। অত্যাধিক বেশি মাত্রায় ক্লোরাল পান করার ফলে ওর মৃত্যু ঘটেছে।
–এই মৃত্যুর পেছনে কারো কোনো ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে হয় না?
কথাটা জিমি বলতে চেয়েছিল। তার আগে রনি সন্দেহ প্রকাশ করলো।