-ওসব কথা না ভেবে পরিকল্পনা তৈরি করে নাও চটপট। জিমি বললো।
বান্ডল হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
বিল আর কথা না বাড়িয়ে রাজী হয়ে গেল।
-ফর্মুলার ব্যাপারে তোমার কথাই ঠিক। বিল বললো। বোধহয় ফর্মুলাটা হয় এবারহোর্ড নতুবা স্যার অসওয়াল্ডের কাছে আছে। ওরা সবাই এখন স্টাডিতে, তার মানে আসল কাজ শুরু করতে চলেছেন।
-স্যার স্ট্যানলি ডিগবি কতদিন থাকবেন? জিমি জানতে চাইলো।
–তিনি আগামীকাল শহরে ফিরবেন।
–তাহলে কোনো ঝামেলা রইলো না। জিমি বললো, আমার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে স্যার স্ট্যানলি ফর্মুলাটা সঙ্গে নিয়ে যাবেন। অতএব বিশেষ মজার যা ঘটার তা আজ রাত্রিতেই অবশ্যই ঘটবে।
-প্রথম কথা হচ্ছে ফর্মুলাটা রাত্রিতে কোথায় থাকবে? এবারহোর্ডের কাছে না অসওয়াল্ডের কাছে থাকবে?
–আমাদের যদি ধারণা হয়ে থাকে যে আজ রাতে কেউ ওটা চুরি করার ধান্দায় আছে তাহলে আমাদের কাজ হলো সতর্ক দৃষ্টি রেখে সেটা বন্ধ করা।
-তাহলে সে কথাই রইলো। তবে রাতে পাহারা থাকার জন্য টস করে ভাগাভাগি করে নিতে হবে।
বান্ডল চুপ করে শুনছি, কিছু বলার ইচ্ছা থাকলেও বললো না।
–বেশ, টস করো। হেড হলে তোমার আগে, আমার পরে। টেল হলে ওর উল্টোটা হবে। একটা কয়েন বের করে টস করা হলো। প্রথম রাতের দায়িত্ব পড়লো জিমির ওপর।
এতক্ষণে বান্ডল মুখ খুললো–আমি কি করবো?
–তুমি বিছানায় গিয়ে লক্ষ্মী মেয়ের মতো ঘুমোও
–খুব উত্তেজনার ব্যাপার বলে মনে হলো না। বান্ডল বললো।
-কে বলতে পারে, তুমি হয়তো ঘুমের মধ্যে খুন হয়ে গেলে, জিমি বললো, আর আমরা বেকসুর খালাস পেয়ে যাবো।
–জিমি, তুমি হয়তো ঠিকই বলেছো। কাউন্টেসের ভাবভঙ্গী আমার কাছে কেমন বেখাপ্পা লাগছে। ওকে আমার সন্দেহ হয়।
-না, উনি সমস্ত রকম সন্দেহের বাইরে। বিল খুব উৎসাহ নিয়ে কথাটা বললো। কারণ হাঙ্গেরির দূতাবাসের একজন ওর ব্যাপারে সবই আমাকে বলেছে।
-বেশ, তোমার বিশ্বাসের কথাটা ওর কানে কানে বলে এসো। বান্ডল বিরক্ত হয়ে বললো, আমার মাথা ধরেছে, শুতে চললাম।
বান্ডল চলে গেলে বিল জিমির দিকে তাকালোবান্ডলের বুদ্ধি আছে বলল। কখন কোনো ব্যাপার অসম্ভব, সেটা ও ভালো বোঝে। একটা কথা এই ধরনের কাজে নামতে গেলে একটা জোরালো অস্ত্র লাগে। আমাদের সঙ্গে সেই জাতীয় কিছু থাকা দরকার।
আমার কাছে একটা নীল নলের অটোমেটিক আছে। জিমি বললো, কি মনে হলো, তাই সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তোমার পাহারা দেওয়ার সময় তোমাকে ওটা দেবো।
.
জিমির অ্যাডভেঞ্চার
তিনজন মানুষের তিন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দৃশ্যমান হবে আজকের এই রাত।
-তাহলে জিমি, ঐ কথাই রইলো, রাত তিনটে। বিল বিদায় নেবার সময় জিমিকে বললো। কিন্তু কডার্স দেখলাম আমার চেয়েও বোকা। বান্ডলের কথা ও পুরো বিশ্বাস করে বসে আছে। যাক, শুভরাত্রি। আমার ঘুম ভাঙাতে তোমার কষ্ট হবে হয়তো, তবুও সময়মত ভাঙিও বিল ওর দিকে তাকালো। আশা করি তুমি ঠিক মতো থাকবে। যখনই বেচারি জেরি আর রনির কথা ভাবি–
জিমি ভাবলো, বিল তার মনের কথাই বলেছে। তারপর সে পকেট থেকে অটোমেটিক রিভলবার বের করে ওকে দেখালো–এটা সত্যি ভালো জিনিস।
বিল মুগ্ধ হয়ে দেখলো।
-শুধু ট্রিগার টানার অপেক্ষা। তারপরের কাজটুকু এটার দায়িত্বে। জিমি গর্বের সঙ্গে কথাটা বললো।
বিল আবার শুভরাত্রি বলে বিদায় নিলো।
জিমি পাহারা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো।
পশ্চিমের একেবারে শেষ প্রান্তে স্যার স্ট্যানলি ডিগবির ঘর। এই ঘরের একদিকে বাথরুমে, অন্যদিকে আর একটা দরজা দিয়ে যাওয়া যায় ছোট্টো একটা ঘরে যেটা দখল করেছেন মিঃ টেরেন্স ও’রুরকে। এইসব ঘরের বাইরে ছোট্ট বারান্দা। যেখানে সহজেই পাহারা দেওয়া যায়। একটা ওক কাটের আসবাবের আড়ালে শরীর লুকিয়ে রেখে সহজে সম্পূর্ণ জায়গার ওপর নজর রাখা যায়। পশ্চিমে যেতে হলে এই পথ দিয়েই সকলকে যেতে হবে। একটা বৈদ্যুতিক আলোও জ্বলছে।
হাঁটুর ওপর লিওপোন্ড নিয়ে বেশ আরাম করে বসলো জিমি।
চারদিক নিস্তব্ধ। ঘড়িতে একটা বাজতে বিশ মিনিট বাকি।
এইভাবে বসে থাকা একটা বিরক্তিকর ব্যাপার সন্দেহ নেই। ওর মনে পড়লো প্ল্যানচেটের কথা। এই সময় নাকি অদ্ভুত সব ব্যাপার ঘটে। রনি ডেভেরো আর জেরি ওয়েড, ওরা এখন কোথায় আছে কে জানে? ভয়ঙ্কর চিন্তা তার মনে উদয় হলো।
ঘড়িতে একটা বেজে কুড়ি হয়েছে। সময় যেন অত্যন্ত ধীর পায়ে এগোচ্ছে।
সত্যি, বান্ডলের সাহসের প্রশংসা করতে হয়। না হলে সেভেন ডায়ালসের মতো জায়গায় গিয়ে সে ঢোকে।
সাত সম্বর কে হতে পারে? সে কি এখন তার বাড়িতে আছে? নাকি চাকরের ছদ্মবেশ নিয়েছে।
ঘুমে চোখ বুজে এলো। চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করলো। হাই তুললো, ঘড়ির দিকে তাকালো, দুটো বাজতে দশ।
ঠিক এই সময় কানে এলো কিছু। সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ঝুঁকে পড়লো। কান খাড়া করলো।
শক্ত কাঠের ওপর ঠুকলে যেমন শব্দ হয় তেমন আওয়াজ। শব্দটা আস্তে কিন্তু ভয় জাগানো। নিচে কোনো লোক নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে-লাইব্রেরি থেকে আওয়াজটা ভেসে আসছে।
সে সন্তর্পণে লিওপোল্ডকে ডান হাতে ধরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। লাইব্রেরির দরজার সামনে এসে দরজায় কান পাতলো। কোনো শব্দ নেই। সে আচমকা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আলো জ্বালালো।