–সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, বান্ডল ফিসফিস করে বললো।
-হ্যাঁ, সবকিছুর ওপর নজর রাখতে এসেছি। মিঃ লোম্যাক্স ঐ সাবধানী চিঠি পেয়ে খুব ভয় পেয়ে গেছেন। আমার ওপর ওর ভীষণ বিশ্বাস। তাই আমাকে আসতে হলো।
কিন্তু আপনি কি ভাবেন, বান্ডল বলতে গিয়েও বলতে পারলো না, ছদ্মবেশের। আড়ালে একজন পুলিস অফিসারের ভাব স্পষ্ট ফুটে আছে।
–আপনি কি ভাবছেন, অপরাধীরা সতর্ক হয়ে যাবে? কিন্তু এটা করলে ক্ষতিই বা কি?
–ক্ষতি কি? বোকার মত বান্ডল কথাটার পুনরাবৃত্তি করে এগিয়ে গেল। ড্রয়িং রুমে একটা কমলা রঙের খাম হাতে নিয়ে ভুরু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছেন।
–খুবই বিরক্তিকর। জর্জ বললেন, টেলিগ্রাম এসেছে, মিসেস মার্কাটার ছেলেমেয়েরা মাম্পসে আক্রান্ত, তাই তিনি হাজির হতে পারছেন না।
কথাটা শুনে বান্ডল স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো, ওর মুখোমুখি হতে সে চায় না।
–এইলিন, তুমি দুঃখ করো না, আমি জানি কত আগ্রহ নিয়ে তুমি এখানে এসেছে, তার সঙ্গে দেখা করবে বলে। জর্জ বলতে থাকেন, এজন্য অনেক সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কাউন্টেস বেচারি শুধু
বান্ডল আচমকা বলে উঠলো, উনি হাঙ্গেরিয় না?
-হ্যাঁ, কাউন্টেস ঐ তরুণ হাঙ্গেরীয় দলের নেত্রী। শিশু মৃত্যুর সমস্যা নিরসনে তিনি নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্যবতী, অল্প বয়সে স্বামী হারান। আরে, ঐ এবারহোর্ড এসে গেছেন।
তেত্রিশ বা চৌত্রিশ বছরে এক সপ্রতিভ হাসিখুশী মানুষ এই জার্মান ইঞ্জিনীয়ার এবারহোর্ড। ভদ্রলোকের চেহারা দেখলে মনে হয় রক্তশূন্যতায় ভুগছেন।
ওরা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল তখন এসে হাজির হলেন মিঃ ও’রুরকে। এর একটু পরেই হাঁফাতে হাঁফাতে বিল এলো।
হ্যালো বান্ডল, তুমি এসেছো শুনেছি আগে, বিল বলতে থাকে। কিন্তু সারা বিকেল নাকে দড়ি দিয়ে যা ঘুরিয়েছে যে আগে তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি।
–সেই কাউন্টেসের সেবায় মনোনিবেশ করেছিলে নিশ্চয়ই। জিমি বললো।
–মানে, ইয়ে, আমি বাধা দেবো কি করে বলো? বিলের গালদুটো লাল হয়ে উঠেছে। তবে ভদ্রমহিলা বেশ মজার, বুদ্ধিমতী। বাড়িটা যখন ঘুরে দেখছিলেন তখন বান্ডল, তুমি দেখলে পারতে, কতরকম প্রশ্ন করছিলেন।
–কি রকম প্রশ্ন?
বান্ডলের প্রশ্ন শুনে বিল হচকচিয়ে গেল। ঠিক সরাসরি জবাব দিলো না। বললো, বিশেষ কিছু নয়। এই বাড়ির ইতিহাস জানতে চাইছিলেন। আসবাবপত্র সম্পর্কেও আগ্রহ তার। এইরকম অদ্ভুত প্রশ্ন আর কি।
ঠিক এই সময় কালো মখমলের আঁটোসাঁটো পোশাক পরে কাউন্টেস ঘরে ঢুকলেন। সেই সময় চশমা পরা গম্ভীর মুখে ঢুকলেন এক ভদ্রলোক যিনি পঙ্গো নামে পরিচিত।
.
নৈশভোজের পর
নৈশভোজের পর মহিলারা ড্রয়িংরুমে ঢোকার পর সান্ধ্য পোশাকে বেশ অপ্রতুল বলেই ভাবতে লাগলেন। অ্যাবীতে আধুনিক তাপ বিকিরণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই তারা ঘরে যে কাঠের চুল্লির ব্যবস্থা ছিল, তার পাশে গিয়ে বসলেন।
লেডি কুট বলে উঠলেন–মিসেস কার্টার ছেলেমেয়েদের মাম্পস হওয়াটা বেশ আশ্চর্য ব্যাপার।
–মাম্পস কি? কাউন্টেস জানতে চাইলেন।
বান্ডল ও লেডি কুট দুজনে মিলে বেশ কায়দা করে মাম্পসের বর্ণনা তাকে দিলেন।
-হাঙ্গেরিয় শিশুদের বোধহয় এ রোগ হয়, লেডি কুট বললেন।
–আমি জানি না, কাউন্টেস বললেন।
-সে কি! আপনি শুনেছি শিশুদের মধ্যে কাজ করেন, লেডি কুট আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকালেন।
–এই কথা, কাউন্টেস পা ছড়িয়ে আরাম করে বসে বলতে আরম্ভ করলেন–কত ভয়ঙ্কর সব ব্যাপার দেখেছি শুনলে স্তম্ভিত হবেন।
যুদ্ধের পর অনাহার আর অন্যান্য ভয়ানক পরিস্থিতি তিনি দেখেছেন, কাউন্টেস একটানা বর্ণনা করে গেলেন, বান্ডলের মনে হলো যেন গ্রামোফোনে রেকর্ড বেজে চলেছে।
লেডি কুট প্রায় মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন তার কথা।
একসময় কাউন্টেস বললেন–আমাদের সমস্যাটা কোথায় জানেন? আমাদের টাকা আছে, কিন্তু ভালো সংগঠন নেই।
-আমার স্বামীও তাই বলেন, লেডি কুট সায় দিলেন। তার মনের পরদায় স্যার অসওয়াল্ডের জীবনের নানা ঘটনার ছবি ফুটে উঠতে চাইছিল।
কি মনে করে তিনি বান্ডলকে বললেন, আচ্ছা, লেডি এইলিন, বলুন তো, আপনাদের বাগানের ঐ প্রধান মালীকে পছন্দ করেন আপনি?
–কে? ঐ ম্যাকডোনাল্ড? মানে, একটু ইতস্ততঃ করলো বান্ডল, ওকে নিজের কাজ করতে দিলে ও ঠিক আছে।
এমন সময় জিমি এসে ঢুকলো। বান্ডলকে লক্ষ্য করে বললো, সেই ছবিগুলো দেখবে নাকি? তোমার অপেক্ষায় আছে।
জিমিকে অনুসরণ করে বান্ডল ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
–কোনো ছবির কথা বললে?
-ধৎ ওসব বাজে কথা। জিমি উত্তর দিলো। লাইব্রেরিতে বিল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানে আর কেউ নেই।
বিল চঞ্চল মনে লাইব্রেরি ঘরে পায়চারি করছিল।
বান্ডলকে লক্ষ করে বললো–তুমি যে এ ব্যাপারে ঢুকে পড়েছো, এটা আমার মোটেই ভালো লাগছে না। এ বাড়িতে একটা ঝামেলা সৃষ্টি হতে চলেছে। তারপর
বান্ডল জিমির দিকে তাকালো-ওকে কি বলেছো?
–সবই বলেছি।
–তোমার ঐ সেভেন ডায়ালসে যাওয়ার ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। বিল কাতরভাবে বান্ডলের দিকে তাকালো, কাজটা তুমি ভালো করোনি বান্ডল।
-কোনো কাজ?
–এই সব ব্যাপারে জড়ানো।
-হ্যাঁ, বান্ডল বললো, আমি যখন জড়িয়েছি তখন তোমার আর চেঁচিয়ে তোক জানাতে হবে না।