–আমরা আজ রাতে পাঁচ নম্বরের দেখা পাবো না। মহিলার সুরেলা বিদেশী ছোঁয়া লাগানো কথা শোনা গেল। আপনারা সত্যি করে বলুন তো কোনো কালে আদৌ ওর দেখা পাবো আমরা?
–চমৎকার প্রশ্ন। আমেরিকানটি বললো, বান্ডল সম্মোহিতের মতো মহিলার পিঠের দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রাখলো। ডানদিকের ঘাড়ের পাশে ছোট্ট একটা আঁচিল, ফর্সা চামড়ায় ওটা ঠিক মানাচ্ছে না।
রুশ ভদ্রলোকের কর্তৃত্বব্যাঞ্জক কণ্ঠস্বর শুনে বান্ডলের চমক ভাঙলো।
–যদি দুই নম্বর আমাদের আজ থাকতেন। কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটে গেছে আর অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে।
–বিপদ ঘটার সম্ভবনা আছে। পাঁচ নম্বর বললো।
–হ্যাঁ, আমাদের এই জায়গা সম্পর্কে খুব বেশি জানাজানি হয়ে গেছে।
–তাহলে চিমনি সম্পর্কে নতুন কিছু জানা যায়নি?
–না, মসগোরোভস্কি উত্তর দিলেন।
–আমাদের প্রেসিডেন্ট কোথায় সাত নম্বর? কখনো আমরা ওর দেখা পাই না কেন?
–ওর নিজস্ব কর্মপদ্ধতি আছে। রুশ উত্তর দিলেন।
–আপনি আগাগোড়া ঐ কথাই বলে আসছেন।
কিছুক্ষণের জন্য থমথমে নীরবতার মধ্যে কাটলো।
-এবার আমরা কাজ শুরু করবো। মসগোরাভস্কি বলে উঠলো। তিন নম্বর, আপনি কি ওয়াইভেন অ্যাবীর নকসা পেয়েছেন?
তিন নম্বরকে বান্ডল না দেখলেও গলার স্বরে বুঝতে পারল, একজন শিক্ষিত ইংরেজের গলা। মিষ্টি ও নরম।
টেবিলের ওপর কিছু রাখার আওয়াজ হলো।
–এই যে সেই নক্সা, আর এটা অতিথিদের তালিকা।
রুশ ভদ্রলোক পড়তে লাগলেন।
-স্যার স্ট্যানলি ডিগবি, মিঃ টেরেন্স ও’রুরকে, স্যার অসওয়াল্ড, লেডি কুট, মিঃ বেটম্যান, কাউন্টেস অ্যানা র্যাজকি, মিসেস মার্কাটা, মিঃ জেমস থেসিজার। পড়া থামিয়ে বললেন, এটি আবার কে?
-ওটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ও আজম্মের গাধা একটা। আমেরিকান ভদ্রলোক হেসে বললেন।
-হের এবারহোর্ড আর মিঃ বিল এভারসলে।
–তাহলে ধরে নিতে পারি এবারহোর্ডের আবিষ্কারের ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই?
–না নেই।
–দামের দিক থেকে এর মূল্য লক্ষ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন দেশের লোভের মাত্রা কতখানি সেটা আন্তাতিক দিক থেকে বুঝতে পারছেন।
একটু থেমে আবার বললেন–হ্যাঁ, এটা হলো সোনার খনি। যাইহোক, আপনারা নকসাটা পেয়েছেন। আমার মনে হয় না, আমাদের আগের পরিকল্পনা আরো ভালো করা সম্ভব। একটা কথা, জেরি ওয়েডের লেখা একটি চিঠির কথা শুনলাম, যাতে এই সমিতির নাম উল্লেখ আছে। চিঠিটা কে পেয়েছে?
-লর্ড কেটারহ্যামের মেয়ে, লেডি এইলিন ব্রেন্ট।
–বাওয়ারের কাজে গাফিলতি দেওয়ার ফল। চিঠি কাকে লেখা?
–সম্ভবতঃ ওর বোনকে, তিন নম্বর জবাব দিলো।
–তবে আর কিছুই করার নেই। আগামীকাল রোনাল্ড ডেভেয়োর ইনকোয়েস্ট। সব ব্যবস্থা করা আছে নিশ্চয়ই।
স্থানীয় ছেলেদের রাইফেল ছুঁড়ে অনুশীলন করার কাহিনী চারদিকে রটানো আছে। আমেরিকান উত্তর দিল।
–আর কিছু বলার নেই আমার। এক নম্বর যে ভাবে একাজে অংশ নিয়েছেন, আমার মনে হয় সকলে তাকে অভিনন্দন জানানো উচিত।
সমস্ত হাত অদ্ভুত ভঙ্গীতে চেয়ারের কাছে এগিয়ে এলো। বিদেশী কায়দায় এক নম্বর তা স্বীকার করলেন।
এবার বান্ডল তিন নম্বরকে দেখতে পেলো, বিরাট চেহারার দীর্ঘকায় এক পুরুষ।
সবাই এক এক করে বেরিয়ে যেতে মসগোরোভস্কি দরজায় তালা দিলেন। কয়েকমুহূর্ত অপেক্ষা করার পর আলো নিভিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
সভা শেষ হওয়ার প্রায় দুঘন্টা পর অ্যালফ্রেড এলো। আলমারির দরজা খুলতেই বান্ডলের শরীরটা তার দিকে ঝুঁকে পড়লো।
–শরীর কাঠ হয়ে গেছে। বান্ডল বললো, একটু বসিয়ে দাও।
হাত-পা মালিশ করতে করতে বান্ডল বললো, খুব মজার মানুষ ওরা। অ্যালফ্রেড, শিক্ষার বোধহয় শেষ নেই।
.
ইনকোয়েস্ট
ভোর ছটায় বাড়ি পৌঁছে সাড়ে নটার মধ্যে তৈরি হয়ে নিলো বান্ডল। তারপর জেমি থেসিজারকে ফোন করলো।
ফোনে জিমি দ্রুত কথা বলতে চাইলো। ইনিকোয়েস্টে যাবে বলে তাড়া আছে।
–আমিও যাচ্ছি। বান্ডল বললো, অনেক কথা তোমাকে বলার আছে।
–তাহলে তোমাকে আমি গাড়িতে নিয়ে যাবো। যেতে যেতে কথা হবে।
–বেশ, তবে চিমনি হয়ে যেতে হবে। চিফ কনস্টেবল আমাকে নিতে আসবেন।
–কেন?
–তিনি একটু দয়ালু।
গতরাতে তুমি কি করছিলে বান্ডল?
–ভাবছিলাম, সেটার কথাই বলবো। যেতে যেতে কথা হবে। এখন রাখছি।
বান্ডলের কর্মক্ষমতার ওপর জিমির অপরিসীম শ্রদ্ধা আছে ঠিকই, কিন্তু আবেগ ছিল না তার মধ্যে এতটুকু।
প্রায় কুড়ি মিনিট পর জিমি তার টু-সীটার নিয়ে হাজির ব্রুকলিন স্ট্রিটে। বান্ডল দ্রুত নেমে এলো নিচে। জিমি লক্ষ্য করলো, বান্ডলের চোখে রাত জাগার ছাপ।
গাড়ি চালাতে চালাতে মন দিয়ে বান্ডলের গত রাতের কাহিনী শুনলো। অবশ্য পথে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকেও সে সজাগ।
-বান্ডল, তুমি আমার সঙ্গে মজা করছে না তো?
–কি বলছো?
–মাপ চাইছি, জিমি বললো, আসলে সব যেন স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে ঘটছে।
–বিদেশিনী উত্তেজনা শিকারী, আন্তর্জাতিক দস্যুদল, রহস্যময় ৭ নম্বর, যাকে কেউ কখনো দেখেনি। এরকম তো বইয়ে পড়েছি।
-বইয়ের পড়া কখনোও বাস্তবে রূপ পায়। বান্ডল বলে উঠলো।
–একটা খিচুড়ি মার্কা জমায়েত বলা যেতে পারে। একজন রুশ, একজন আমেরিকান, একজন ইংরেজ, এক অস্ট্রিয়ান বা হাঙ্গেরিয়, আর সেই মহিলা যে কোনো জাতি হাতে পারে।
–আর একজন জার্মান। বান্ডল মনে করিয়ে দিলো। আর দুনম্বর হলো বাওয়ার, যে গতরাতে সভায় ছিল না।