–আমি ভেতরে ঢুকবোই। বান্ডল উত্তেজনা অনুভব করলো।
–আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, মাই লেডি। চাবি রয়েছে মিঃ মসগোরোভস্কির কাছে। বান্ডল বুঝেছিল, তালাটা অত্যন্ত সাধারণ। অন্য চাবি দিয়েও খোলা যায়। বান্ডলের চাপে পরে আলফ্রেড খুঁজে নিয়ে এলো। কয়েকবারের চেষ্টার ফলে তালা খুলে গেল।
ঘরের মধ্যে বান্ডল ঢুকলো। মাঝখানে একটা টেবিল, কয়েকখানা চেয়ার চারপাশে। ফায়ার প্লেসের দুপাশে দুটো গা-আলমারি। বিশেষ ধরনের তালা লাগানো আছে। অতএব চেষ্টা করা বৃথা।
অ্যালফ্রেড বুঝিয়ে দিলো, সাধারণ তাক বলে মনে হয়, কখানা লেজার রয়েছে। কিন্তু ঠিক বোতামটা টিপলেই ওটা খুলে যাবে।
ঘরের চারপাশে ও চিন্তিত মুখে দেখতে লাগলো। শব্দ নিরোধক ঘর। সাতখানা চেয়ার সাজানো। টেবিলের দুপাশে তিনটে করে আর টেবিলের মাথায় একটি।
বান্ডলের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। এটাই সেই গোপন সমিতির জায়গা, ও নিশ্চিত। আপাতদৃষ্টিতে কিছু বোঝার উপায় নেই।
–অ্যালফ্রেড, বান্ডল বললো, আমার লুকিয়ে থাকার মত একটা জায়গা তোমার ব্যবস্থা করতে হবে।
অ্যালফ্রেড মাথা নেড়ে বললো, এ অসম্ভব, মাই লেডি। আমার চাকরি তাহলে বাঁচাতে পিরবো না।
যখন তুমি জেলে ঢুকবে, তখন এমনিতেই চাকরি যাবে। তুমি চিন্তা করো না, কেউ কোনো কিছু জানতে পারবে না।
বান্ডলকে এখন অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পেয়ে বসেছে।
বান্ডল ঝুঁকি নেবেই। সে খুব ভালো ভাবে ঘরের চারদিকে আবার তাকালো। এগিয়ে গেল দ্বিতীয় আলমারির কাছে। তালা লাগানো ছিল। বান্ডল পাল্লা খুলতেই একরাশ বাসন বেরিয়ে এলো। তাকগুলো খালি করার ইচ্ছাতে সে বললো–অ্যালফ্রেড, সময় খুব কম, তুমি একটা ট্রে নিয়ে এসে বাসনগুলো নিচে নিয়ে যাও। দাঁড়িয়ে তর্ক করলে বিপদে পড়ে যাবে।
অগত্যা অ্যালফ্রেড বাধ্য ছেলের মত বান্ডলের আদর্শে অনুযায়ী কাজ করলো।
তাকগুলো খুলে ফেলা যায়। বান্ডল দ্রুত হাতে তাকগুলো খুলে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজে ভেতরে ঢুকে গেল।
–হু, বড় ছোট, ভেতরে কাঠ হয়ে থাকতে হবে। অ্যালফ্রেড, এবার একটা তুরপুনের ব্যবস্থা করো। যদি এখানে না পাও তাহলে কিনে আনতে হবে।
অ্যালফ্রেড দ্রুত চলে গিয়ে আবার ফিরে এলো কতগুলো যন্ত্র নিয়ে। ঐসব যন্ত্রের মধ্যে থেকে একটা বাছাই করে নিয়ে নিজের চোখ বরাবর কাঠের পাল্লায় একটা ফুটো করলো। ফুটোতে চোখ লাগিয়ে বান্ডল বললো, এতেই কাজ হবে। আমি ভেতরে ঢুকছি, তুমি তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে যাও।
-যদি মিঃ মসগোরোভস্কি চাবি চান?
–কেউই চাবির জন্য মাথা ঘামাবে না। আর যদি চায় বলবে হারিয়ে গেছে। আর শোন, একটু চকোলেট এনে দাও। ওতেই কাজ হবে। সবাই চলে গেলে খুলে দিয়ো। আর একটা কথা মনে রেখো, বেশি করতে যেয়ো না, কোনো গোলমাল হলে তোমার কিন্তু রেহাই নেই।
অ্যালফ্রেড চকোলেট রেখে দিয়ে তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে গেল।
৩. সেভেন ডায়ালস-এর অধিবেশন
ভেতরে ঢুকে বান্ডল ভাবছে, হয়তো, এখান থেকে বেরোতে ছটা বেজে যাবে। খুব কষ্ট হবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু কিছু করার নেই। হঠাৎ দরজার তালা খুলে গেল।
বৈদ্যুতিক আলোতে ঘর ভরে গেল। অনেক লোক যে ঘরে ঢুকেছে সেটা বান্ডল বুঝতে পারলো। দরজায় খিল দেওয়ার আওয়াজ শুনতে পেলো।
একজন লম্বা, শক্তিশালী, কালো দাড়িওয়ালা মানুষকে বান্ডল ফুটো দিয়ে দেখলো যাকে গতরাতে জুয়ার টেবিলে দেখেছিল।
এই তাহলে সেই মিঃ মসগোরোভস্কি, ক্লাবের মালিক। উত্তেজনায় বান্ডলের হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল।
লোকটি পকেট থেকে ঘড়ি বের করে সময় দেখলেন। মাথা দুলিয়ে পকেট থেকে আবার কি বের করলেন। তারপরের ব্যাপারটা বান্ডলের দৃষ্টিতে ধরা পড়ছে না।
পরক্ষণে লোকটি যখন দৃষ্টি বরাবর এলো তখন বান্ডল চমকে উঠলো, লোকটার মুখে একটা মুখোস। আলগা হয়ে চোখের ওপর পরদার মতো ঝুলছিল। অনেকটা ঘড়ির ডায়ালের মত মুখোসটা। ছটার দিকে ঘড়ির কাটা রয়েছে।
–সেভেন ডায়ালস! বান্ডল এবার নিশ্চিত।
দরজায় সাতবার টোকা মারার শব্দ।
বান্ডল যে আলমারির মধ্যে বসে ছিল তার পাশের চেয়ারে মসগোরাভস্কি বসলেন।
ঘরে এসে ঢুকলো দুজন, তাদরে প্রত্যেকের মুখে মুখোস, মুখোসে ঘড়ির কাঁটা চারটে আর পাঁচটায়। তাদের পোশাক ভদ্র অভিজাত সম্পন্ন।
এদের মধ্যে একজন বিদেশী। অন্যজনকে বান্ডল ফরাসি ভেবেছিল। কিন্তু কথা শুনে বুঝলো, অস্ট্রিয়ান বা হাঙ্গেরিয় হতে পারে। রাশিয়ান হবে হয়তো।
–এক নম্বর দারুণ সফল হওয়ায় আপনাকে ঝুঁকি নেবার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। ভদ্রলোক বললেন।
পাঁচটা কাঁধ ঝাঁকালেন।
ঝুঁকি না নিলে…
কথা শেষ হলো না। দরজায় আবার সাতটা টোকা পড়লো।
বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথা শুনতে পেলো না বান্ডল। কারণ ওরা ওর দৃষ্টির বাইরে চলে গিয়েছিল।
–আমরা তাহলে কাজ শুরু করতে পারি। রুশ ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বর শোনা গেল।
টেবিলের মাথায় যে চারটি ছিল সেখানে গিয়ে বসলেন। ফলে বান্ডলের একেবারে মুখোমুখি হলেন তিনি। তার পাশে বসে পাঁচ নম্বর। তৃতীয় চেয়ারটি বান্ডল দেখতে পাচ্ছে না। চার নম্বর আমেরিকান ভদ্রলোক।
টেবিলের ধারে দুটি চেয়ারই বান্ডলের নজরে পড়ছিল।
মসগোরোভস্কির উল্টোদিকের চেয়ারে বসলেন একজন, যার পেছনটা বান্ডলের দিকে। বান্ডল তার পেছনটাই ভালো করে দেখছিল। কারণ তিনি একজন মহিলা।