-ধন্যবাদ কাকিমা। বান্ডল এবার তার দিক পরিবর্তন করলো, ভাবছিলাম, তুমি মিসেস মার্কাটকে চেনো কিনা।
খুব চিনি। দারুণ বুদ্ধিমতী মহিলা। তবে, সাধারণতভাবে মেয়েরা পার্লামেন্টে দাঁড়াক এটা আমার পছন্দ নয়। লেডি কেটারহ্যাম বলে চললেন, অবশ্য তিনি যে কাজ করেন, তার দাম এখন খুব। ভদ্রমহিলার সঙ্গে তোমার পরিচয় হওয়া দরকার।
বান্ডল ছদ্ম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, জর্জ লোম্যাক্সের বাড়ির এক পার্টিতে উনি যাচ্ছেন, আমি জানি বাবাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন, কিন্তু যাবেন না, অবশ্য আমাকে নেমন্তন্ন করেননি। উনি মনে কবেন আমি একটা গবেট।
ভাসুরঝির এত উন্নতি দেখে লেডি কেটারহ্যাম খুশী হলেন।
–তুমি চিন্তা করো না এইলিন, তুমি যে বড়ো হয়েছে, এটা জর্জ লোম্যাক্স ভাবতেই পারছে না। আমি জর্জকে দিয়ে একাজ করাবোই। রাজনীতিতে অল্পবয়েসী মেয়েদের প্রয়োজন আছে, ওটা ও বুঝবে। দেশের স্বার্থে এটা দরকার।
লেডি কেটারহ্যামের পছন্দ করা কিছু বইপত্র নিয়ে বান্ডল ব্রুক স্ট্রিটের দিকে রওনা হলো।
জিমি থেসিজারকে ফোন করলো। রাজনীতি গুলে খাওয়া মার্সিয়া কাকিমার কথা বান্ডল জানালো। পড়ার জন্য অনেক বই দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা জর্জের পার্টিতে নেমন্তন্ন করাচ্ছেন।
জিমি জানালো, সে বিলকে শেষপর্যন্ত বোঝাতে পেরেছে। একগাদা কাগজপত্র দিয়েছে পড়ার জন্য। একেবারে নীরস ব্যাপার। সান্টা ফে সীমান্ত বিরোধ কেউ কোনো কালে শুনেছে নাকি সন্দেহ।
লোরেনকে এসব না বলাই ভালো। জিমি বললো, এরকম মেয়েকে বিপদের মুখে ফেলা ঠিক নয়।
–বোধ হয়।
–কাল ইনকোয়েস্টে যাচ্ছেন তো?
–হ্যাঁ, আপনি?
–আমিও যাবো। আজই সন্ধ্যার কাগজে এককোণে খবরটা ছাপা হয়েছে। খুব হৈ চৈ পড়ে গেছে।
-এবার পড়ায় মন দেবো, আপনি?
–আমিও তাই। শুভরাত্রি।
দুজনেই মিথ্যেবাদী নিঃসন্দেহে। লোরেন ওয়েডকে নিয়ে জিমি এখনই নৈশভোজে যাবে, সেটা সে ভালো ভাবে জানে। ওদিকে বান্ডল একজন সাধারণ পরিচারিকার পোশাক পরে সোজা রাস্তায় এলো। সেভেন ডায়ালস-এ যেতে বাসে না টিউবে গেলে সুবিধা হবে সেটাই ভাবছিল।
.
দি সেভেন ডায়ালস ক্লাব
১৪ নং হ্যান্সস্ট্রামট স্ট্রিটে যখন বান্ডল পৌঁছলো তখন সন্ধ্যে ৬টা। ওর উদ্দেশ্য ছিল ফুটম্যান আলফ্রেডের সঙ্গে দেখা করা। যদি তা সম্ভব হয় তাহলে বাকি কাজটা সহজ হয়ে যাবে। বেশি লোকের মুখোমুখি হতে ও চায় না।
মেঘ না চাইতেই জল।
দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালো অ্যালফ্রেড।
বান্ডল মিষ্টি হেসে বললো-শুভসন্ধ্যা, অ্যালফ্রেড।
অ্যালফ্রেড প্রথমে চমকে উঠলো। তারপর নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললো, শুভসন্ধ্যা, মাদমোয়াজেল। আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারিনি।
বান্ডল নিজের মনে মনে ঐ পোশাকের জন্য তারিফ করলো।
–অ্যালফ্রেড, তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। কোথায় গেলে ভালো হয়? ক্লাবে এখন কারা আছে?
-এখন কেউই নেই লেডি।
অ্যালফ্রেড চাবি বের করে দরজা খুললো। বান্ডল ভেতরে ঢুকলো। অ্যালফ্রেড গোবেচারীর মত তার পেছন পেছন এলো।
অ্যালফ্রেড, তুমি নিশ্চয়ই জানো, এখানে যা হয় সব বেআইনী।
অ্যালফ্রেড ভীত পায়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
–এর আগে দুবার পুলিস এসেও আপত্তিকর কিছু পায়নি। কারণ মিঃ মসগোরোভস্কির চালাকি ছিল। এখানে কেবল জুয়া খেলা হয় না। অনেক কিছুই হয়, যা তোমার হয়তো জানা নেই। আমি তোমার থেকে জানতে চাই যে চিমনির চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তুমি কত টাকা পেয়েছিলে? বান্ডল স্পষ্ট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
অ্যালফ্রেড চুপ করে শুনছিল। সাহস সঞ্চয় করছিল মনে হয়। কয়েকবার ঢোক গিললো।
–বলছি, মাই লেডি, যেদিন অনুষ্ঠান ছিল মিঃ মসগোরাভস্কি সেদিন কিছু লোক নিয়ে চিমনিতে এসেছিলেন। মিঃ ট্রেডওয়েলের পায়ে সেদিন পেরেক ফুটে যন্ত্রণা হচ্ছিল বলে আমাকে সব দেখাশোনা করতে হয়েছিলো। মিঃ মসগোরোভস্কি বিশ্রাম করার অজুহাতে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে থাকেন। তিনি আমাকে একশো পাউন্ড হাতের মধ্যে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে যেন চিমনি ছেড়ে চলে যাই এবং তার ক্লাবের দায়িত্ব নিই। ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনে করে আমি মেনে নিলাম। বর্তমান মাইনে তিনগুণ টাকা। কথাটা মিঃ ট্রেডওয়েলকে বলতেই সব ঠিক হয়ে গেল।
বান্ডলের সন্দেহের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, সে মাথা নুইয়ে সায় দিলো।
–মিঃ মসগোরোভস্কি কে?
–এই ক্লাবটা চালান। রাশিয়ান। খুব বুদ্ধিমান লোক।
–এর মধ্যে কোনো রহস্য আছে বলে তোমার মনে কোন সন্দেহ হয়নি?
–রহস্য, মাই লেডি?
–অ্যালফ্রেড, জেল খাটতে রাজী নও নিশ্চয়ই।
–হায় ঈশ্বর, আপনি সেরকম কিছু ভাবছেন না তো?
বান্ডল গম্ভীর ভাবে বললো–গত পরশু স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে গিয়েছিলাম। কিছু অদ্ভুত কথা শুনলাম। তোমার সাহায্য আমার প্রয়োজন। যদি সাহায্য করো, তাহলে তার বিনিময়ে তুমি পাবে নিরাপত্তা।
অ্যালফ্রেড রাজী হতেই বান্ডল প্রথমে সারা বাড়ি ঘুরে দেখতে লাগলো। তারপর এসে পৌঁছলো জুয়াখেলার ঘরে। চোখে পড়ে না, এমন একটা দরজা বান্ডলের দৃষ্টি এড়াতে পারলো না। তালা দিয়ে দরজাটি বন্ধ।
দরজাটা সম্পর্কে অ্যালফ্রেড বলতে শুরু করলো,-পুলিসের ঝামেলা এড়ানোর জন্য অনেকটা দেয়াল আলমারীর মতই এই দরজা করা হয়েছে। দরজার ওপাশে একখানা ঘর আর সিঁড়ি আছে। পাশে রাস্তা। পুলিস হামলা করলে লোকেরা ঐ পথ দিয়ে পালায়।