-বারোটা। বান্ডল বললো, ঠিক আছে তৈরি থাকবো।
–আর একটা কথা। জর্জ লোম্যাক্স আগামী সপ্তাহে প্যারীতে যাওয়ার কথা বলেছিল। আমি ওটা নাকচ করে দিয়েছি।
-ভালো করেছে। কোনো উদ্ভট ব্যাপারে না জড়ানোই ভালো।
-কেন সেরকম কিছু ঘটার আশঙ্কা আছে নাকি? আচমকা লর্ড কেটারহ্যাম আগ্রহ প্রকাশ করলেন?
-না, তুমি তো কি যেন ভয় দেখানো চিঠির কথা বলছিলে।
— বোধ হয় জর্জ খুন হতে চলেছে। বান্ডল, আমার কি যাওয়া উচিত?
-তুমি বরং বাড়িতে চুপ করে বসে থাকো। আমি মিসেস হাওয়েলের সঙ্গে কথা বলবো। বান্ডল বললো।
চিমনির আসল গৃহকত্রী হলেন মিসেস হাওয়েল। বান্ডল যখন ফ্রক পরে খেলা করতো তখন থেকে তিনি এখানে আছেন।
বেশ অনায়াসে বান্ডল তার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেল মিসেস হাওয়েলের কাছ থেকে। বাড়ির চাকর-বাকরদের সম্পর্কে বান্ডল যা জানতে পারলো, তাতে ওদের সন্দেহ করার কিছু নেই। তবে লেডি কুটকে যে বেগ দিয়েছিল মিসেস হাওয়েল তা তার কথা শুনে বোঝা গেল।
-স্যার অসওয়াল্ড কুটকে আমি কখনও দেখিনি। বান্ডল বললো।
-খুব চালাক ভদ্রলোক। অবশ্য সমস্ত কাজ দেখাশোনা করতেন মিঃ বেটম্যান। কোন কাজ কেমন ভাবে করা উচিত সে বিষয়ে তিনি দক্ষ ছিলেন।
বান্ডল এবার কৌশলে জেরি ওয়েডের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে আনলো।কিন্তু মিসেস হাওয়েলের কাছ থেকে নতুন কিছু আবিষ্কার করা গেল না। বান্ডল নিচে নেমে এসে ট্রেডওয়েলকে ডেকে পাঠালো।
–ট্রেডওয়েল, আর্থার কেন এবং কবে চলে গিয়েছিলো, বলতে পারো।
–ও একমাস আগে নিজের ইচ্ছাতেই চলে গেছে, মাই লেডি। মনে হয় ও লন্ডনে গেছে। তবে নতুন যে এসেছে, জন সে-ও ভালো কাজ করে।
-ও কোথা থেকে এসেছে?
–আগে জন লর্ড মাউন্ট ভারননের কাছে কাজ করতো।
–ওর পদবী কি?
–বাওয়ার, মাই লেডি।
–বান্ডল চিন্তার মধ্যে ডুবে গেল। সেই অবসবে ট্রেডওয়েল ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
একটু পরেই জন ঘরে এসে ঢুকলো। বান্ডল তাকে লক্ষ্য করলো। একজন পাকা চাকর বলে মনে হয়, হাবভাব একজন দক্ষ সৈনিকের মত। কিন্তু ওর পেছন মাথার দিকটা কেমন যেন অদ্ভুত।
বান্ডল একমনে একটা ব্লটিং পেপারে বাওয়ার নামের বানান লিখে চললো।
হঠাৎ ওর দৃষ্টি ব্লটিং-এর এক জায়গায় আটকে গেল। ডেকে পাঠালো ট্রেডওয়েলকে।
–ট্রেডওয়েল বাওয়ার বানানটা কি রকম? –বি.এ.ইউ.ই.আর, মাই লেডি। এটি সম্ভবতঃ সুইশ নাম। ট্রেডওয়েলকে বিদায় দিয়ে সে আবার ভাবতে লাগলো, এটা জার্মান নাম ছাড়া অন্য কিছু নয়। মাথাটা ঐরকম। তাছাড়া জেরি ওয়েড মারা যাওয়ার পনেরো দিন আগে ও চিমনিতে এসেছিল।
বান্ডল বাবার কাছে ফিরে এলো।
-বাবা, আমি মার্সিয়া কাকিমার কাছে যাবো।
–এমন মতলব মাথায় এলো কেন তোর? লর্ড কেটারহ্যাম মেয়ের দিকে আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকালেন।
মর্সিয়া অর্থাৎ মার্সিওনেস হলেন তার ভাই হেনরির বিধবা স্ত্রী। একসময় এই মহিলার নামডাক ছিল। পররাষ্ট্র দপ্তরের সেক্রেটারিরপদ তার ভাই পেয়েছিল। ওর স্ত্রীর গুণে এটা নিশ্চিত। আবার এদিকে লর্ড কেটারহ্যাম ভাবেন, অমন চোরের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে তার ভাই অকালে মৃত্যু হয়ে শান্তি লাভ করেছে। মহিলাটি অত্যন্ত সন্দেহজনক। কেনসিংহের গুহায় বান্ডল বোকার মতো মাথা গলাতে যাচ্ছে, বুঝে পেলেন না লর্ড কেটারহ্যাম।
-বাবা, তোমাকে আবার বিরক্ত করছি, বান্ডল বললো, স্যার অসওয়াল্ড কি ভাবে ধনী হলেন?
ইংল্যান্ডে যে ইস্পাতের কারখানা আছে সেটা ওর। বর্তমানে লিমিটেড কোম্পানী হয়ে গেছে। তার একটার ডিরেক্টার ওর অনুরোধে আমি হয়েছি। কাজকর্ম কিছু থাকে না। বছরে কেবল দু একবার ক্যাসন স্ট্রিটে বা লিভারপুল স্ট্রিটের বড় হোটেলে খাওয়াদাওয়া ছাড়া।
এসব শোনার আর প্রয়োজন নেই বান্ডলের। সে লন্ডনের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
শিশু পরিচর্যা আর ইস্পাতের সঙ্গে খাপ খায় না। অর্থাৎ মিসেস মার্কাটার সঙ্গে স্যার অসওয়াল্ডকে মেলানো যায় না। হাঙ্গেরির কাউন্টেসকে বাদ দেওয়া যায় বোধহয়। হের এবারহোর্ড হল আসল। তিনি এমন কোন কেউকেটা নন যে জর্জ লোম্যাক্স তাকে আমন্ত্রণ জানাবেন। ইস্পাত সম্রাট স্যার অসওয়াল্ড তো আছেনই
এরকম আকাশ-পাতাল ভেবে কিছু থৈ পাওয়া যাবে না ভেবে বান্ডল তার কাকিমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলো।
বিশাল চেহারা লেডি কেটারহ্যামের। লন্ডনের উচ্চবিত্ত এলাকায় একটি মস্ত বড় গোমড়ামুখো বাড়িতে তিনি থাকেন।
বাড়িতে ঢুকতেই বান্ডলের নাকে ভেসে এলো মোমবাতি, পাখির দানা আর শুকনো ফুলের গন্ধ।
বান্ডলকে দেখে লেডি কেটারহ্যাম অবাক হলেন একটু।
-এইলিন, তুমি হঠাৎ দারুণ আনন্দের ব্যাপার। ঠান্ডা কণ্ঠস্বর লেডি কেটারহ্যামের।
–আমরা সবে ফিরেছি, কাকিমা। বাবা চিমনিতে এখন রয়েছেন।
–চিমনি ভাড়া দেওয়া আমরা কোনো কারণেই পছন্দ নয়। কত ঐতিহাসিক চিহ্ন আছে ঐ বাড়িতে। একে সস্তা করে দেওয়া উচিত নয়।
-বাবার রাজনীতি ভালো লাগে না। কিন্তু রাজনীতির মধ্যে কত ভালো ভালো ব্যাপার আছে সেটা জানতে পারলে আরো কত সুন্দর হয়।
বান্ডল আহ্লাদে আটখানা হয়ে মিথ্যে বলে গেল কায়দা করে। লেডি কেটারহ্যাম অবাক চোখে তাকালেন।
-তোমার ভাবনার ধরন দেখে খুব অবাক লাগছে। মনে হয় তোমার ভালো ঘরে বিয়ে হলে তুমি একসময় রাজনীতিতে বেশ চমৎকার জায়গা করে নিতে পারবে।