দাঁত চেপে সে খাবার নিয়ে ওপরে উঠতে গেলো তার পা থেকে মাথা এমন জ্বলে গেল যে হাত থেকে ট্রে-টা কেঁপে গেল। মিস আমানদা তাকে বকবেন বা আদর করবেন এটা মনে হচ্ছিল, ক্যরোশা তখন মনে মনে খুশী হয়েই ভাবছিল। ডাইনিবুড়ির উপর চোটপাট করতে করতে ও ঘর ছেড়ে বেরুবে, কিন্তু তা কিছুই ঘটল না। ও মনে সাহস নিয়ে ট্রে-টা নামাল। ও কিছু বলতে পারছিল না। ওর যে কি হয়েছে ও নিজেই জানে না। জীবনে কখনও এরকম কষ্ট পায়নি।
রাত্তিরে সব কাজ শেষ করে সে ডোনাল্ডের জন্য অপেক্ষা করল, সবে কোটের বোতাম লাগাতে শুরু করেছে, হঠাৎ জানালা দিয়ে ঘোড়ার গাড়িটা দেখতে পেলো–ডোনাল্ড চালক হয়ে চাবুক হাঁকাচ্ছে, ক্যরোশা ভাবল যে ডোনাল্ডকে যদি সব বলে দেয় এখুনি সে বাড়িতে আগুন ধরাবে। ক্যরোশা তাড়াতাড়ি টুপি পরল, মিস আমানদার ঘর থেকে ঘন্টি বেজে উঠল।
হিগিনসন বললেন যে, ক্যরোশাকে ডাকা হয়েছে। তাকে বলবেন উপরে উঠে দেখা করতে। তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলবেন। ক্যরোশা ভেবেছিলো আর ওই বুড়িটার সঙ্গে দেখা করতে হবে না। তবুও তাকে করতে হবে।
তাকে ম্যাডাম বললেন যে, সে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে, এ সময় তার সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার জন্য তিনি দুঃখিত। এ বিষয়টা ক্যরোশার মোটেই পছন্দ হচ্ছিল না। ডোনাল্ডের কথা জিজ্ঞেসা করলেন ম্যাডাম।
গিন্নিমা কিছু চান কিনা জিজ্ঞাসা করতে তিনি বালিশ কমাতে বললেন। এটা করে চলে যাবার মুহূর্তে মিস আমানদা শক্ত করে ওর কাঁধ টানলেন ও বিছানায় টেনে আনলেন। ওর হাতে এত শক্তি থাকতে পারে ক্যরোশা স্বপ্নেও ভাবেনি। ক্যরোশা মুক্তি চাইছিল। তার মাথা যন্ত্রণায় কাঁপছে। ম্যাডাম বললেন যে তাকে ছাড়া হবে না। তুমি কখনও বন্ধুর কাছে ফিরতে পারবে না। ও জানতে পারবে না তুমি ক্যরোশা নও।
ক্যরোশার ভায়ানক অস্বস্তি লাগল। চীনা ঘড়ির বাজনা, অন্ধকার হওয়ার পর মনকে আরো অদ্ভুত করে তুলল। কয়েক মুহূর্ত পরেই চোখের কোটর ছাড়া ও মিস আমানদার মুখটা দেখতে পেলো না। তারপর চোখের কোটর অন্ধকার কোথায় মিলিয়ে গেল।
ঘরের পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। তার পায়ে পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল যন্ত্রণা। সে স্তব্ধ বিস্ময়ে দেখলো লেপতোষকের মধ্যে ও শুয়ে আছে। ওর সামনে মিস আমানদা দরজা খুলে বেরোচ্ছেন। সে পায়ের শব্দ শুনলেও তাকে অনুসরণ করতে পারল না। এমন কি বিছানা থেকে উঠে সে আয়নায় মুখ দেখবে তারও কোনো উপায় নেই। তার ডান হাতের কড়ে আঙুল ছোট হয়ে কেন বাঁকল সে বুঝল না। তবে সে যে আর মুক্তি পাবে না তা বুঝতে পারল।
ডোনাল্ডের কথা মনে হতে সে জানালা দিয়ে দেখল যে ডোনাল্ড গাড়ির উপর বসে রয়েছে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ও হাসছে।
ক্যরোশা স্পষ্ট শুনল ডোনাল্ডের ভরাট কণ্ঠস্বরে। সে বলছে যে তোমার জন্য বসে আছি। ক্যরোশা তাকে দেখে চিৎকার করে বলল চোর চোর। হিগিনসন ঝড়ের মতো ছুটে এলেন। তিনি শুনলেন যে মেয়েটি আংটি নিয়ে পালাচ্ছে।
হিগিনসন বাইরে গিয়ে টেনে হিঁচড়ে মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এলেন। ডোনাল্ড মুহূর্তের মধ্যে বুদ্ধ বনে গেল। হিগিনসন মেয়েটাকে ঘরের মধ্যে এনে ফেলল।
ডোনাল্ড ঘন ঘন দরজা ধাক্কা দিচ্ছিল। সে কিছুই করতে পারছিল না। একটু পরে সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। একসময়ে দরজা ঠেলে হিগিনসন মেয়েটাকে ঢুকিয়ে দিল।
ক্যরোশা তাকে দেখতে মিসেস হিগিনসন বলল, সে তার থেকে আংটিটা আদায় করতে পারে। তবে পুলিশে খবর দিতে পারেন। ক্যরোশাকে বললেন মিস আমানদা যে এভাবে তাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখা যাবে না। তার মতে সবই বাক্সে আছে যা পুলিশ জানতে পারলে তাকেই নিয়ে টানাটানি করবে। সে ডোনাল্ডের কাছে যাবে।
ক্যরোশা নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। ক্যরো-র গলাটা ধরে ফেলল। ওর মাংসল হাতদুটো যে এত ক্ষিপ্ত গতিতে ছুটে যেতে পারে সে সম্পর্কে ক্যরোশার ধারণা ছিল না। তক্ষুনি আমানদার গলায় সে টিপে দিল।
হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ এল। ভারী বুটের শব্দ যখন বারান্দা পেরিয়ে খোলা দরজায় দাঁড়াল তখন ক্যরোশা অমানুষিক মেয়েটির গলা টিপে আছে। ডান হাতের কড়ে আঙুলটা অদ্ভুতভাবে উঁচিয়ে আছে।
হিগিনসন বললে যে, ভদ্রমহিলা প্রায় ৪০ বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন তাকে যদি সাহায্য করতে না পারলেন তাহলে দেশে আইনশৃঙ্খলা থাকার কি প্রয়োজন।