ব্রিজেটের দিকে লিউক এগিয়ে আসে।
ব্রিজেট কনওয়ে, আমি তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসি। যাকে আমি বালোবাসি, আমি চাই না তার একটা ভুড়িওয়ালা জবুথবু লোকের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাক।
তুমি আমাকে কী করতে বলো?
আমার কথা হয়তো হেসেই উড়িয়ে দেবে–কিন্তু আমি নাচার। তোমার উচিত ওকে বাদ দিয়ে আমাকে বিয়ে করা।
এ কথা শুনলে কে না হাসবে? তবু তো আকাশ ফাটিয়ে হাসিনি। আশ্চর্য! গর্ডনের মতো তুমিও হেরে গেলে রেগে যাও?
হঠাৎ ব্রিজেটের কাঁধ দুটো করে লিউক ঝাঁকুনি দেয়।–তোমার মুখে কি কিছুই বাধে না?
আমার প্রতি তোমার আকর্ষণ যতই তীব্র হোক না কেন, একথা কিন্তু সত্যি যে তুমি আমায় খুব একটা পছন্দ করো না।
তোমায় আমি একেবারেই পছন্দ করি না।
ব্রিজেট বলে–দেশে ফিরে এসেই বিয়েথা করে স্থিতু হবে–এমন একটা আশা নিয়েই তো তুমি ফিরেছিলে?
হাঁ।
নিশ্চয়ই আমার মত একজনকে নিয়ে নয়?
তোমার মত মেয়ের কথা আমার চিন্তায় ছিলো না।
আমি জানি ছিলো না–তোমার এই ধাতটাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।
আহা ব্রিজেট, তোমার কি দারুণ বুদ্ধি!
তোমার দারুণ পছন্দ হলো একটা শান্তশিষ্ট ভালো মেয়ে–যে পা থেকে মাথা পর্যন্ত নির্ভেজাল ইংরেজ।
অহো! বড়ই মধুর দৃশ্য!
সুন্দর–সে আমি জানি। চলো টেনিস কোর্টে ফেরা যাক।
এবার তোমার শেষ কথাটা বলতে পারো।
থমকে দাঁড়ায় দুজনেই। লিউক ব্রিজেটের কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়। দুজনের চোখে মুখেই কি যেন এক না-বলা অভিব্যক্তি।
ব্রিজেট আচমকা ঘুরে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চলে গেল। পৌঁছানো মাত্র পরের গেমটা শেষ হলো।
ব্রিজেট একটু জেদই করে–আমি বড্ড ক্লান্ত, আর খেলতে পারছি না। তুমি আর মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম, মিস জোস্ আর মেজর হর্টনের বিরুদ্ধে খেলো।
কিন্তু কিছুতেই রোজ রাজী হয় না; শেষে চারজন পুরুষ নিজেদের মধ্যে জুটি বেঁধে খেলতে নামে। তারপর আসে চা।
কদিন আগে লর্ড হুইটফিল্ড ওয়েলারম্যান ক্রেইৎস রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে গিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন ডাঃ টমাসের কাছে এবং যথারীতি নিজেকে জাহির করলেন।
বুঝতেই পারছেন যে, আমায় একটা কাগজ চালাতে হয়।–লর্ড বললেন-কাগজে কী বেরোবে, তার মান সম্পর্কে আমায় সদা সতর্ক নজর রাখতে হয়। এই যুগটাই হচ্ছে গিয়ে বিজ্ঞানের যুগ এবং এই বিজ্ঞানকে জনসাধারণের কাছে সহজপাচ্য করে দেওয়াও আমার একটা পবিত্র দায়িত্ব।
কিন্তু তাতে ফললাভ অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করীর মতো হতে পারে।–ডাঃ টমাস ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলেন।
এমন ভাবে আমাদের কাজ করতে হবে যাতে বিজ্ঞানকে আমরা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারি।-বলেই চলেন লর্ড–অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষকে হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত।
অর্থাৎ গবেষণা সচেতন হতে হবে।-ব্রিজেট গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।
যা দেখে এলাম, তার প্রত্যেকটিই দেখবার মতো, বোঝবার মতো ব্যাপার। আমি অবশ্য ওয়েলারম্যানকে বলেছিলাম একজন সাধারণ কর্মচারী সঙ্গে দিতে; কিন্তু তা কিছুতেই শুনলেন। শুধু তাই নয়, আমার কাগজে এ সম্পর্কে প্রথম লেখাটা উনি নিজে লিখবেন বলে কথাও দিলেন। ব্রিজেট আলোচনার গতি বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ পাল্টাবার জন্য প্রস্তাব করে–আর দুএক হাত খেললে কেমন হয়?
খেলা শেষ হলে সবাইকে বিদায় জানিয়ে রোজ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। লিউকও পেছনে প্রস্তুত হয়।
চলুন, আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই। আপনার সঙ্গে গাড়ি আছে? ব্যাটগুলো আমায় দিন।
না না, আমায় পৌঁছে দিতে হবে না। এই তো কাছেই আমার বাড়ি।
তা হোক, আমার নিজেরই একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
এতক্ষণ কি আপনার খুব খারাপ লাগছিলো?
বাঃ, আপনি বুঝেও কি চমৎকার না বোঝার ভান করতে পারেন। আমার মনে হচ্ছে, যেন মেঘাচ্ছন্ন এক অন্ধকার রাজ্য থেকে স্বচ্ছ ঝলমলে আলোর দেশে এলাম।
এ কথা কিন্তু আন্তরিকভাবে সত্যি। আমরা যখন ম্যানর থেকে বেরোই তখন কিন্তু আকাশ ভরা মেঘ ছিলো; অথচ দেখুন কোথায় উড়ে গেলো সেই মেঘ।
কী আশ্চর্য, দেখুন, দুদিক থেকেই এটা সত্যি। দুনিয়াটা দেখছি এখনও বেশ বাসোপযোগী।
ঠিক বলেছেন।
মিস আম্বলবি, আপনার দুএকটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে একটু নাক গলাতে পারি?
আপনার মতো লোক কখনও তা করতে পারে না।
আমার সম্পর্কে অতটা উচ্চাশা রাখবেন না। আমি বলছিলাম কি-ডাঃ টমাস কিন্তু খুব ভাগ্যবান লোক।
রোজ বললো–আপনিও তাহলে শুনেছেন?
কেন? এটা কি গোপন ব্যাপার? তাহলে কিন্তু আমি যথার্থই লজ্জিত।
রোজ বলে–তা নয়, তবে আমাদের এ অঞ্চলে কিছুই গোপন থাকতে পারে না।
তাহলে এ কথা সত্যি যে, আপনি ডাক্তারকে বিয়ে করছেন?
স্বীকার করে রোজ–তবে আমরা এ কথা কখনো সামাজিক ভাবে ঘোষণা করিনি। বুঝতেই পারছেন, মাত্র কদিন হলো বাবা মারা গেছেন–এই সময়ের বিয়ের কথা বলা অত্যন্ত শ্রুতিকটু মনে হবে।
আপনাদের এই ব্যাপারে আপনার বাবার অমত ছিলো?
ঠিক অমত নয়–তবে কতকটা তাই।
লিউক বলে–উনি বোধহয় ভাবতেন যে, এখনো বিয়ে করার বয়স আপনার হয়নি।
মুখে সেই কথাই উনি বলতেন।
লিউক এবার সরাসরি প্রশ্ন করেন–আপনার কি মনে হয়, ওঁর অমত করার অন্য কোনো কারণ ছিলো?
রোজ বললো–হ্যাঁ, বাবার আচার-আচরণে এটা স্পষ্ট ছিলো যে উনি–উনি জিওফ্রেকে ঠিক পছন্দ করতেন না।
ওঁরা কি পরস্পরের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন?