আপনার যেমন অভিরুচি–লিউক কথাটা বলে একটু ঝুঁকে বিদায় জানায়।
নিজের মনে লিউক ভাবে–আমি বোধহয় বড্ড বেশি কল্পনাপ্রবণ হয়ে উঠেছি–আসলে লোকটা একটা প্রথম শ্রেণীর গাধা।
আরও তাড়াতাড়ি পা চালায় ও। যখন ও রোজ আম্বলবির সঙ্গে কথা বলছিলো, তখন মেঘশূন্য আকাশে সূর্যের আলো ছিলো; এখন আবার বেশ ঘন হয়ে মেঘ করেছে।
লিউক রাস্তার কোণে এসে বাঁক নিতেই একটা সবুজ মাঠে এসে পড়লো। ও শুনেছে, এই মাঠটাকে ডাইনীদের চারণভূমি বলা হয়।
ও ব্রিজেটকে দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। লিউক প্রায় ছুটে ব্রিজেটের কাছে পৌঁছলো।
ব্রিজেট?
ব্রিজেট মুখ তুলে লিউকের দিকে তাকালো। ওর মুখখানা দেখে লিউকের বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে। ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন ও অন্য আর এক দুনিয়ায় বাস করছে।
লিউক বলল–তুমি–তুমি ভালো আছো তো?
কোনো উত্তর দিলো না ব্রিজেট। লিউকের মনে হলো যেন ওর প্রশ্নটা সুদূর পথ অতিক্রম করে ব্রিজেটের কাছে তখনও পৌঁছয়নি।
ব্রিজেট কিছুক্ষণ পর উত্তর দিলো–আমি তো ভালোই আছি। ভালো না থাকার মতো, কিছু কি হয়েছে?
হেসে উঠলো লিউক–আমি নিজেই কি আর জানি যে, কী হয়েছে? তবে হঠাৎ তোমার সম্পর্কে একটা দুশ্চিন্তা দেখা দিলো।
কেন?
সব ব্যাপারেই আমার মাত্রা জ্ঞানটা একটু কমে গেছে, ঘণ্টা খানেকের জন্যেও তুমি যদি আমার চোখের আড়াল হও আমার তখন মনে হয় যে, এরপর হয়তো দেখবো তোমার মৃতদেহটা যে-কোনো খানা-খন্দে পড়ে আছে–যেমন নাটক বা গল্পে হয়ে থাকে।
ব্রিজেট বললো–কিন্তু নায়িকারা কখনো খুন হয় না।
তা হয়না, কিন্তু মাঝপথে লিউক থেমে যায়।
তুমি যেন কী বলতে চাইছিলে?
না, কিছু না।
নিজের কথার সূত্র ধরে ব্রিজেট বলে যায়-নায়িকারা নানারকম বিপদের সম্মুখীন হতে পারে কিংবা ঘরের মধ্যে আটকে রেখে বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে হত্যা করবার চেষ্টাও হতে পারে। এমনকি জলে ডুবিয়ে পর্যন্ত খুন করার চেষ্টাও সম্ভব–কিন্তু তারা কখনোই মারা যেতে পারে না।
লিউক বলে–এটাই কি সেই ডাইনীদের মাঠ?
হ্যাঁ।
লিউক ওকে বললো–এখন তোমার হাতে একগাছি ঝাটা দরকার।
ধন্যবাদ। মিঃ এলসওয়ার্দিও প্রায় এইরকমই একটা কথা বলছিলেন।
তার সঙ্গে তো আমার একটু আগেই দেখা হলো।
তুমি কি তার সঙ্গে কোনো কথা বলেছে?
হ্যাঁ, আমার মনে হয় ও আমাকে রাগাবার চেষ্টা করছিলো?
তুমি রেগেছিলে?
লিউক বললো–লোকটা কেমন যেন অদ্ভুত। কখনো মনে হবে যে, ও একটা নেহাই বাজে লোক। আবার মনে হয় যতটা বাজে ভাবা যায় ততটা বাজে নয়।
ব্রিজেট লিউককে বললো-তোমারও একথা মনে হয়েছে?
তুমি তাহলে আমার সঙ্গে একমত?
হ্যাঁ।
ব্রিজেট বলে–ভদ্রলোক সত্যিই যেন কেমন বিচিত্র ধরনের। আমার মনে হয় যে এখানে যদি সত্যি সত্যিই কোনো খুনী থাকে, তাহলে তাকে আমি চিনতাম। গভীর ভাবে অনুধাবন করবার চেষ্টা করেছি–কে সেই লোক? একটা সত্যিই যে–যেই হোক না কেন সে একজন উন্মাদ।
লিউক বললো তুমি কি একথা বিশ্বাস করো না যে, একজন আততায়ী ঠিক তোমার আমার মতই সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে পারে?
না, এ জাতীয় খুনী তা হবে না। আমার যতদূর ধারণা–এই খুনী একজন উন্মাদ আর সে ধারণা থেকেই এলসওয়ার্দির ওপর আমার সন্দেহ হয়েছে।
তুমি লক্ষ্য করেছে ওর হাত দুটো কি কুৎসিত?
হাত দুটো ওর সাদা নয়–কেমন যেন সবুজ।
দেখে তাই মনে হয় বটে। তবে তাকে তুমি খুনী সাব্যস্ত করতে পারো না।
সে তো ঠিকই। দরকার-অকাট্য প্রমাণের।
লিউক বললো–প্রমাণ! এই প্রমাণেরই সবচেয়ে বড় অভাব। লোকটা অত্যন্ত সতর্ক, একজন চতুর খুনী! চতুর উন্মাদ!
আমি তোমার কাজে খানিকটা সাহায্য করবার চেষ্টা করছিলাম।
এলসওয়ার্দির ব্যাপারে?
হ্যাঁ, আমার মনে হলো, এলসওয়ার্দিকে কায়দা করতে তোমার চেয়ে আমি ভালো পিরবো এবং আমি আরম্ভও করেছি।
কী করলে বলো।
আমার ধারণা, কতকগুলো বাজে ধরনের বন্ধুবান্ধব নিয়ে তৈরি ওর একটা চক্র আছে। কিছুদিন পর পর তারা সব এখানে আসে উৎসব করতে।
আমার মনে হয়, ওরা কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে নেচে নেচে শয়তানের পুজো করে।
ওই রকমই করে এবং তাতে ওরা দারুণভাবে মেতে ওঠে।
লিউক বলে–আমিও কিন্তু একটা খবর দিতে পারি। টমি পিয়ার্স এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত ছিলো। ওর ভূমিকা ছিলো একজন ছোটোখাটো যাজকের।
এ ঘটনা তাহলে ওর জানা ছিলো?
তা ছিলো।
তোমার কি মনে হয়, ও এসব ঘটনা লোকের কাছে বলে বেড়াতো?
হয়তো বলতো; তা না হলে বলে দেবার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করতো।
ব্রিজেট বললো–সমস্ত ব্যাপারটাই যেন কেমন অবাস্তব বলে মনে হয়। কিন্তু এলসওয়ার্দির কথা মনে হলেই এমন অবাস্তব ঘটনার কার্যকারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
ঠিক বলেছো।
এ পর্যন্ত যতগুলো খুন হয়েছে, তার মধ্যে দুজনের সম্পর্কে একটা যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেল–টমি পিয়ার্স আর অ্যামি গিব।
সেই মাতাল আর আম্বলবি–এই দুজনেরও কি এই ঘটনার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো?
আপাততঃ কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।
মাতালের সঙ্গে হয়তো নেই, তবে আম্বলবিকে সরাবার একটা উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে।
ব্রিজেট বলে–খুবই সম্ভব। আমার আজ সকালের প্যাটো কিন্তু বেশ ভালোই কাজে এসেছে। আমি সকালেই বললাম যে, আমার এক প্ৰ-মাতামহীকে ডাইনীবিদ্যা চালাবার জন্য প্রায় পুড়িয়ে মারবার ব্যবস্থা হয়েছিলো, তারপর আর কথা নেই–আমাকে একেবারে নিজের দলের বলে ধরে নিয়েছে। আমার তো মনে হয় যে, ওদের পরবর্তী উৎসবে ও হয়তো আমাকে নিমন্ত্রণ করে বসবে।