স্বাভাবিক, নাক সিটকে বললেন সেলডন। গন্ধটাকে কোনোভাবেই সুরভিত বলা যাবে না।
ট্র্যান্টরের কোথাও সুগন্ধ নেই, তবে আপনি অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।
এখানে আসতে পেরে আমি খুশি। জায়গাটা আমার পছন্দ হয়েছে তা কিন্তু বলছি না, তবে ট্যাক্সিতে বসে থেকে হাতে পায়ে খিল ধরে গেছে। ট্র্যান্টরে ঘুরে বেড়ানো নিশ্চয় সবার কাছেই আতঙ্কের। হ্যালিকনে আমরা বাই এয়ারে যাতায়াত করি। এখানে দুহাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আসতে যে সময় লেগেছে, ওখানে সময় লাগত আরো কম।
আমাদের এখানেও জেট আছে।
তাহলে-
এয়ার-ট্যাক্সির ব্যবস্থা করা আমার জন্য সহজ, কারণ নিজেকে গোপন রাখতে পেরেছি। এয়ার জেট-এর বেলায় সেটা সম্ভব হতো না। সমস্যা দেখা দিত। আপনি এখানে নিরাপদ। তারপরেও আমি চেয়েছি ডেমারজেল যেন জানতে না পারে আপনি কোথায় আছেন। সত্যি কথা বলতে কী, আমাদের যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। আসল গন্তব্যে পৌঁছাতে আমাদের এক্সপ্রেস ওয়ে ধরতে হবে।
শব্দটা সেলডনের পরিচিত। মনোরেইল। ইলেকন্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড-এর সাহায্যে চালানো হয়, তাই না?
হ্যাঁ।
আমাদের হ্যালিকনে অবশ্য এই জিনিস নেই। সত্যি কথা বলতে কী প্রয়োজনও নেই। ট্র্যান্টরে প্রথম দিনেই একটা এক্সপ্রেসওয়েতে চড়েছিলাম। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে আসার জন্য। চমৎকার অভিজ্ঞতা, কিন্তু আমার মনে হয়েছে ভিড় এবং কোলাহল অত্যধিক বেশি।
আপনি কী হারিয়ে গিয়েছিলেন? আমুদে গলায় জিজ্ঞেস করল হামিন।
না, নির্দেশনামূলক যে সাইনগুলো আছে সেগুলো যথেষ্ট সাহায্য করেছে। উঠা-নামায় একটু অসুবিধা হচ্ছিল, তবে আমি অনেক সাহায্য পেয়েছি। এখন বুঝতে পারছি যে আমার পোশাক পরিচ্ছদ দেখে সবাই বুঝতে পেরেছিল আমি আউটওয়ার্ল্ডার। সবাই সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল; বোধহয় আমার হতচকিত ভাব এবং পদে পদে হোঁচট খাওয়া দেখে ওরা বেশ আনন্দ পাচ্ছিল।
বেশ, একবার যখন অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তাহলে আর অসুবিধা হবে না। যথেষ্ট ভদ্রভাবে বলল হামিন তবে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে বাঁকা হাসি চোখ এড়ালো না। চলুন তাহলে।
অলস ভঙ্গিতে ফুটপাথ ধরে হাঁটা শুরু করল দুজন। আলো দেখে সবারই মনে হবে বেশ চমৎকার একটা রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন। হঠাৎ হঠাৎ আলোর পরিমাণ কমছে। বাড়ছে। যেন সূর্যটা মেঘে ঢেকে গিয়েই আবার বেরিয়ে আসছে। ঘটনাটা আসলেই সত্যি কী না দেখার জন্য নিজের অজান্তেই উপরে তাকালেন সেলডন। কিন্তু মাথার উপরে আকাশ শুধুই উজ্জ্বল।
ব্যাপারটা লক্ষ্য করে হামিন বলল, আলোর এই কম বেশির ব্যবস্থা বোধহয় মানুষের মনের কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়েছে। কখনো আপনি দেখবেন যে রাস্তায় চমৎকার দিনের আলো। আবার কখনো দেখবেন আজকের চেয়েও কম।
কিন্তু কখনো বৃষ্টি বা তুষারপাত হয় না।
না। শিলাবৃষ্টি বা বৃষ্টিসহ তুষারপাত কিছুই হয় না। না প্রচণ্ড গরম না প্রচণ্ড শীত। ট্র্যান্টরে এখনো অনেক কিছু টিকে আছে, সেলডন।
প্রচুর মানুষ রাস্তায়। অধিকাংশই বয়সে তরুণ। হামিন জন্মহার সম্বন্ধে যাই বলুক না কেন বয়স্কদের সাথে বেশ কিছু শিশুও দেখা যাচ্ছে। সবাইকে মনে হলো বেশ সুখী। নারী পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। পোশাকআশাকে রঙের ব্যবহার ইম্পেরিয়াল সেক্টরের তুলনায় অনেক কম। হামিন তাকে যেগুলো এনে দিয়েছে চমৎকার মানিয়ে গেছে পরিবেশের সাথে। দুএকজন টুপি পড়েছে, বাকি সবার মাথা খালি। কৃতজ্ঞ চিত্তে সেলডন নিজের টুপি খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখলেন।
দুটো ফুটপাথ আলাদা করার জন্য মাঝখানে কোনো গভীর খাদ নেই। বোধহয়। হামিনের বক্তব্য অনুযায়ী তারা এখন রয়েছেন গ্রাউন্ড লেভেলে। কোনো যানবাহনও দেখা গেল না। কারণটা জিজ্ঞেস করলেন হামিনকে।
ইম্পেরিয়াল সেক্টরে প্রচুর যানবাহন চোখে পড়ে কারণ সম্রাটের অফিসাররা সেগুলো ব্যবহার করে। অন্যান্য জায়গায় ব্যক্তিগত যানবাহন দুর্লভ। যারা ব্যবহার করে তাদের জন্য রয়েছে আলাদা টানেল। ব্যক্তিগত যানবাহন থাকার কোনো। আবশ্যিকতা নেই যেহেতু এক্সপ্রেস ওয়ে আছে। স্বল্প দূরত্বের জন্য আছে চলমান করিডর। তারচেয়েও কম দূরত্বের জন্য আছে ফুটপাথ, সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের পা দুটোকে ব্যবহার করতে পারি।
হুশ হাশ আর ঘ্যাস ঘোস শব্দ শুনে সেদিকে তাকালেন সেলডন। সামান্য দূরেই দেখতে পেলেন অনেকগুলো এক্সপ্রেস ওয়ে বিভিন্ন দিকে ছুটে চলেছে।
ঐ যে। আঙ্গুল তুলে দেখালেন তিনি।
দেখেছি। কিন্তু আমরা বোর্ডিং স্টেশনে যাব। ওখানে গাড়ির সংখ্যা বেশি এবং চড়াও সহজ হবে।
নিরাপদে একটি এক্সপ্রেসওয়ে কার-এ চড়ে বসার পর হামিনের দিকে ঘুরে সেলডন বললেন, আমাকে যা সবচেয়ে বেশি অবাক করে তা হলো এগুলো কত শান্ত নীরব। একেবারেই শব্দহীন। অথচ আমার ধারণা ইলেকক্টোম্যাগনেটিক প্রপালশন এর কারণে কান ঝালাপালা করার মতো শব্দ হওয়ার কথা। কান পেতে তিনি ম্যাগনেটিক ফিল্ড-এর অতি মৃদু শব্দ শোনার চেষ্টা করলেন।
হ্যাঁ, চমঙ্কার নেটওয়ার্ক, হামিন বলল। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়েগুলো একসময় ছিল আরো চমৎকার। তখন তো আপনি দেখেননি। আমার যখন তরুণ বয়স তখন শব্দ হতো আরো কম। বয়স্কদের কাছে শুনেছি তারও আগে নাকি ফিসফিসানির মতো শব্দও ছিল না–যদিও আমার মনে হয়