- বইয়ের নামঃ I, রোবট
- লেখকের নামঃ আইজাক আসিমভ
- প্রকাশনাঃ সন্দেশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
I, রোবট
I, রোবট – মূল : আইজাক আসিমভ / সায়েন্স ফিকশন – রোবট সিরিজ (৯টি ফিকশন) / অনুবাদ : সাদেকুল আহসান / আই রোবোট
I, Robot by Isaac Asimov / First Published : 1950
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯ / দ্বিতীয় প্রকাশ : বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০১২
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
.
ভূমিকা
নিজের নোটগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজেরই মেজাজ চরমে উঠার অবস্থা। ইউ.এস রোবটস-এ আমি তিনদিন কাটিয়েছি এবং প্রায় একই সময়, বাসায় টেলুরিকা বিশ্বকোষ নিয়ে ধস্তাধস্তি করেও আমি কাটাতে পারতাম।
তারা আমাকে বলেছে, ১৯৮২ সালের কোনো একটা সময়ে সুসান ক্যালভিনের জন্য, সেই অনুসারে এখন তার বয়স পঁচাত্তর হবার কথা। সঙ্গতভাবে, সবাই জানে যে ইউ.এস রোবটস আর যান্ত্রিক মানুষ ইনকের বয়সও পঁচাত্তর বছর, যেহেতু ড. ক্যালভিনের জন্মের বছরেই লরেন্স রবার্টসন পরবর্তীকালে মানুষের ইতিহাসে যা সবচেয়ে শক্তিশালী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত হবে সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করেন। বেশ, মানলাম এটাও সবারই জানা।
সুসান ক্যালভিনের যখন বিশ বছর বয়স, তখন তিনি ইউ,এস রোবটসের ড. অ্যালফ্রেড ল্যানিং যে নির্দিষ্ট সাইকো-ম্যাথ সেমিনারে কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট চলমান রোবট প্রদর্শন করেন সেই দলের সদস্য ছিলেন। সেটা ছিল একটা ঢাউস কুৎসিতদর্শন রোবট, মেশিন তেলের গন্ধে জারিত এবং বুধের খনিঅঞ্চল ছিল তার গন্তব্য।– কিন্তু মানেবহুল কথা বলতে পারদর্শী।
সেই সেমিনারে সুসান কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল; সেমিনারের পরে অনুষ্ঠিত জোরালো আলোচনায় কোনো ধরনের অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত ছিল। সেই সময়ে সে ছিল গম্ভীর সাদাসিধে, চটকহীন এক মেয়ে, যে নিজের নাক উঁচু মনোভাব আর ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা দ্বারা নিজেকে তার অপছন্দের পৃথিবী থেকে আড়াল রাখতেই পছন্দ করতো। কিন্তু যতই সে দেখে আর আলোচনা শোনে, ততই নিজের ভিতরে একটা শীতল উত্তেজনা অনুভব করে।
২০০৩ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে তার স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে এবং সাইবারনেটিক্সে স্নাতকোত্তর কাজ শুরু করে।
এসব বিশ শতকের মাঝামাঝি ‘হিসাবকারী যন্ত্রের’ যা উন্নতি সাধিত হয়েছিল রবার্টসনের পজিট্রনিক বেইন পাথ তার মেজাজ বিগড়ে দেয়। মাইলব্যাপী রিলে আর ফটোসেল মানুষের মস্তিষ্কের সমপরিমাণ স্পঞ্জি প্রাটিনামিরিডিয়াম গোলকের জন্য পথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
সে ‘পজিট্রনিক মস্তিষ্ক’এর ভিতরে সম্ভাব্য ভ্যারিয়েবল নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় প্যারামিটার গণনা করা আয়ত্ত করে; কাগজের উপরে মস্তিষ্ক গঠন করে, নির্ধারিত প্রভাবকের উপস্থিতিতে যার প্রতিক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।
২০০৮ সালে সে তার পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করে, এবং ইউ,এস রোবটিকসে ‘রোবোমনোবিদ’ হিসাবে যোগ দেয় এবং এই নতুন বিষয়ের প্রথম মহান অধ্যয়নকারীতে পরিণত হয়। লরেন্স রবার্টসন তখনও কপোরেশনের প্রেসিডেন্ট; অ্যালফ্রেড ল্যানিং গবেষণা বিভাগের প্রধান।
পরবর্তী পঞ্চাশ বছর সে মানব সমাজের অগ্রগতির দিক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
এখন তার আয়ত্তের মধ্যে যা কিছু ছিল করার পরে তিনি অবসর নিতে চলেছেন। অন্ততপক্ষে তার অফিসের দরজায় অন্য কারো নাম প্রদর্শনের বিষয়টার তিনি অনুমতি দিয়েছেন।
বস্তুতপক্ষে এটুকুই আমার কাছে ছিল। আমার কাছে আরো ছিল তার প্রকাশিত নিবন্ধের একটা লম্বা তালিকা, তার নামে প্যাটেন্টের একটা তালিকা; তার পদোন্নতির একটা সময়ক্রমিক তালিকাও আমার কাছে ছিল।–সংক্ষেপে তার পেশাদার জীবনের সম্পূর্ণ একটা ভিটা আমার কাছে ছিল।
কিন্তু আমি যা চাইছিলাম তা ছিল অন্য কিছু।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রেসের পক্ষে আমার আসন্ন নিবন্ধের জন্য আমি অন্য কিছু একটা খুঁজছিলাম। অনেক বেশী কিছু।
আমি তাকে সেটা খুলে ও বলি।
‘ড. ক্যালভিন,’ যতটা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব আমি বলতে চেষ্টা করি, মানুষের কাছে আপনি আর ইউ.এস রোবটস এক আর অভিন্ন একটা সত্তা। আপনার অবসরের সাথে সাথে একটা যুগের সমাপ্তি ঘটবে এবং–’
‘তুমি মানুষের আগ্রহের দৃষ্টিভঙ্গিটা বিবেচনায় রাখতে চাইছো?’ সে গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়। আমার মনে হয়না ভদ্রমহিলা জীবনে কখনও হেসেছেন। কিন্তু তার চোখ দু’টি অসম্ভব তীক্ষ্ণ যদিও তারা রাগী না। আমি টের পাই তার দৃষ্টি আমাকে আমার মস্তিষ্কের পশ্চাদ্ভাগ ভেদ করে বের হয়ে গিয়েছে এবং বুঝতে পারি আমি তার কাছে অসাধারণভাবে স্বচ্ছ; তার কাছে সবাই তাই।
কিন্তু সাহস না হারিয়ে আমি বলি, ‘ঠিক ধরেছেন।’
‘রোবট সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ? একটা টানাপোড়েন।’
‘না, ডাক্তার। আপনার নিজের তাদের সম্পর্কে।’
‘বেশ, আমি নিজেকে একটা রোবট হিসাবেই বিবেচনা করি। তারা নিশ্চয়ই তোমাকে বলেছে যে আমি মানুষ না।’
তারা বলেছে বটে, কিন্তু সেটা এখানে উল্লেখ করাটা অবান্তর
সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। সে মোটেই লম্বা না এবং তাকে দুর্বল দেখায়। আমি তাকে অনুসরণ করে জানালার কাছে যাই এবং দু’জনে বাইরে তাকাই।