- বইয়ের নামঃ ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন
- লেখকের নামঃ আইজাক আসিমভ
- প্রকাশনাঃ সন্দেশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন
১.১ ইটো ডেমারজেল
ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন (১৯৯৩) – আইজাক আসিমভ
সায়েন্স ফিকশন / অনুবাদ : নাজমুছ ছাকিব
সূচিক্রম
প্রথম পর্ব –ইটো ডেমারজেল
দ্বিতীয় পর্ব –প্রথম ক্লীয়ন
তৃতীয় পর্ব –ডর্স ভেনাবিলি
চতুর্থ পর্ব –ওয়ানডা সেলডন
পঞ্চম পর্ব –উপসংহার
.
প্রথম পর্ব –ইটো ডেমারজেল
ডেমারজেল, ইটো… এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে প্রথম ক্লীয়নের শাসন আমলে ইটো ডেমারজেলই ছিল মূল ক্ষমতার অধিকারী। দ্বিমতটা আসলে তৈরি হয়েছে তার ক্ষমতার প্রকৃতি নিয়ে। সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে অবিচ্ছিন্ন গ্যালাকটিক এম্পায়ারের শেষ শতাব্দীতে ডেমারজেল ছিল সবচেয়ে নিষ্ঠুর রক্তলোলুপ প্রশাসক। এগুলোকে ছাপিয়ে আরো একটা ধারণা সামান্য হলেও তৈরি হয়েছে যেখানে ডেমারজেলকে ধরা হয় মানবদরদী হিসেবে। এই ধারণা গড়ে উঠার পেছনে মূল কারণ হলো হ্যারি সেলডনের সাথে তার সুসম্পর্ক, যদিও এই সম্পর্কের ব্যাপারটা আজ পর্যন্ত অনিশ্চিত রয়ে গেছে, বিশেষ করে লাসকিন জোরানিউম এর অস্বাভাবিক উত্থান এর সময়…
–এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা।*
[* উদ্ধৃত প্রতিটি তথ্য এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকা পাবলিশিং কো. টার্মিনাস এর অনুমতি ক্রমে ১০২০ এফ. ই. তে প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়া গ্যালাকটিকার ১১৬ তম সংস্করণ থেকে নেয়া হয়েছে।]
.
১.
“তোমাকে আবারো বলছি, হ্যারি,” বলল ইউগো এমারিল, “তোমার বন্ধু ইটো ডেমারজেল ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আছে।” বন্ধু কথাটার উপর সে একটু বিশেষ জোর দিল।
বক্তার কথার সুরে তিক্ততা টের পেলেন সেলডন, কিন্তু এড়িয়ে গেলেন। ট্রাই কম্পিউটার থেকে নজর তুলে বললেন, “আমি তোমাকে আবারো বলছি, ইউগো, তার কোনো সম্ভাবনা নেই।” তারপর খানিকটা বিরক্তির সুরে–খুবই সামান্য তিনি যোগ । করলেন, “বার বার একই কথা বলে কেন তুমি আমার সময় নষ্ট করছ?”
“কারণ আমার মনে হচ্ছে বিষয়টা অত্যন্ত জরুরী, এমারিল এর বসার ভঙ্গীতে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠল সহজে সে নড়বে না। এসেছে এবং চূড়ান্ত ফয়সালা করে তবেই যাবে।
আট বছর আগে, এমারিল ছিল ডাল সেক্টরের একজন হিট সিঙ্কার–ওই সামাজিক মাপকাঠিতে একজন মানুষের সামাজিক মর্যাদা যতটুকু নীচু হতে পারে ঠিক তাই। ওই অবস্থা থেকে সেলডন তাকে তুলে নিয়ে আসেন, সুযোগ করে দেন একজন গণিতবিদ, ইন্টেলেকচুয়াল–সর্বোপরি একজন সাইকোহিস্টোরিয়ান হওয়ার।
এমারিল কখনো এক মিনিটের জন্যও ভুলেনি সে কী ছিল, কী হয়েছে এবং কার জন্য হয়েছে। এখন তার কথা শুনে মনে হতে পারে যে সেলডনের প্রতি তার কোনো শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা নেই। আসলে কিন্তু তা নয়। যদি তার মনে হয় যে কোনো কাজ সেলডনের উপকারে আসবে তখন সেটা করা থেকে কেউ তাকে বিরত রাখতে পারবে না। সে বেপরোয়া, কথা বলে সরাসরি, কোনো ঘোরপ্যাঁচ নেই এবং একমাত্র সেই সেলডনের সাথে এভাবে কথা বলতে পারে।
“শোনো, হ্যারি,” বাঁ হাতে বাতাসে একটা কোপ মেরে এমারিল বলল, “এটা বোঝা আমার সাধ্যের বাইরে কেন তুমি ডেমারজেলকে পছন্দ কর, কিন্তু আমি করি না। যে অল্প কয়েকজন মানুষের মতামতকে আমি মূল্য দেই, তাদের কেউই একমাত্র তুমি ছাড়া সবাই ডেমারজেলকে অপছন্দ করে। ওই ব্যাটার কী হলো না। হলো তাতে আমার ব্যক্তিগতভাবে কিছু যায় আসে না, কিন্তু যেহেতু তোমার আসে যায় তাই বিষয়টার প্রতি তোমার মনযোগ আকৃষ্ট না করে আমি পারিনি।”
তরুণ সহকর্মীর আন্তরিকতা দেখে মনে মনে হাসলেন সেলডন। ইউগো এমারিলকে তিনি ভীষণ পছন্দ করেন। এমারিল সেই চারজনের একজন যাদের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল জীবনের এক কঠিন মুহূর্তে যখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ট্রানটরের বিভিন্ন অংশে–ইটো ডেমারজেল, ডর্স ভেনাবিলি, ইউগো এমারিল এবং রাইখ–চারজন, সেই সময় বুঝতে পারেন নি তিনি তাদের কতখানি পছন্দ করেন।
চারজনের প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক ক্ষেত্রে তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউগো এমারিলকে তিনি পছন্দ করেন তার সাইকোহিস্টোরির জটিল সমস্যাগুলো দ্রুত বুঝে নেয়ার ক্ষমতা এবং নিত্য নতুন ধ্যান ধারণা আবিষ্কার করার দুর্লভ যোগ্যতার কারণে। তিনি স্বস্তি বোধ করেন কারণ যদি গণিতটা পরিপূর্ণভাবে তৈরি হওয়ার আগেই তার কিছু হয়ে যায়–যেরকম ধীর গতিতে কাজ এগোচ্ছে, এবং পাহাড় প্রমাণ সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে–ঠিক নিজের সমকক্ষ একটা মেধা তিনি রেখে যেতে পারছেন দুরূহ কাজটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
“দুঃখিত, ইউগো,” তিনি বললেন। “আমি মোটেই অধৈর্য হতে চাইনি তুমি যা নিয়ে উদ্বিগ্ন সেটাও এড়াতে চাইনি। আসলে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে–“
এবার এমারিল হাসল। “দুঃখিত, হ্যারি। হাসা উচিত হয়নি, কিন্তু এই পদের প্রতি তোমার আসলে কোনো আগ্রহ নেই।”
“জানি, কিন্তু একটা ঝামেলাবিহীন কাজ চেয়েছিলাম এবং স্ট্রিলিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান হওয়ার চেয়ে ঝামেলাবিহীন কাজ আর কিছুই নেই। তখন সবাই দেখতো যে আমি সারাদিন ছোট খাটো কাজ নিয়ে ব্যস্ত, ফলে কেউ আর আমাদের সাইকোহিস্টোরিক্যাল রিসার্চের কথা জানতে চাইত না, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে আমি আসলেই রাজ্যের সব গুরুত্বহীন কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি আর তাই সময়ই পাচ্ছি না–“ নিজের কম্পিউটারের দিকে তাকালেন তিনি। এই কম্পিউটারে যে সব তথ্য আছে তা শুধু তিনি আর এমারিলই দেখতে পারেন। আর যদি অন্য কেউ ফাইলগুলো খুলে কিছুই বুঝবে না, কারণ নিজের আবিস্কৃত কিছু সাংকেতিক শব্দ দিয়ে এগুলো তৈরি করেছেন তিনি। যা অন্য কেউ বুঝবে না।