সেলডন তার স্যান্ডউইচের প্রায় পুরোটাই শেষ করে ফেলেছেন। এখন আর ততটা খারাপ মনে হচ্ছে না। এটা আমার কোনো ক্ষতি করবে না?
পেট খানিকটা সমস্যা তো করবেই, কপাল খারাপ হলে ডায়রিয়া হয়ে যেতে পারে। তবে সেরকম ঘটনা খুবই কম। এটাতে ডায়রিয়ার প্রতিশেধক মেশানো আছে, ভয় থাকবে না আর। আপনি যেহেতু এই ব্যাপারে বেশ স্পর্শকাতর।
এটা নিয়ে ঠাট্টা করবেন না, হামিন। ঝগড়া বাধানোর সুরে সেলডন বললেন। প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
.
১৩.
আবার পথ চলা শুরু হলো। টানেলের ভিতর দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে তাদের এয়ার ট্যাক্সি।
এতক্ষণ যে প্রশ্নটা বুকের ভেতর খচখচ করছিল এবার সেটাকে ভাষায় রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিলেন সেলডন।
গ্যালাক্টিক এম্পায়ার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ কথা আপনি কেন বললেন?
সেলডনের দিকে মুখ ঘুরালো হামিন। সাংবাদিক হিসেবে চারদিক থেকেই আমার কাছে প্রচুর তথ্য উপাত্ত আসে। খবর শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যায় কিন্তু খুব অল্প পরিমাণই আমি প্রচার করতে পারি। ট্র্যান্টরের জনসংখ্যা কমছে। পঁচিশ বছর পূর্বে জনসংখ্যা ছিল কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ বিলিয়ন।
জনসংখ্যা কমে যাওয়ার আংশিক কারণ হচ্ছে জন্মহার হ্রাস। অবশ্য ট্র্যান্টরে জন্মহার কখনোই বেশি ছিল না। এই যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আপনি খুব বেশি শিশু দেখেছেন? মনে হচ্ছে না যা দেখেছেন তা বিশাল জনসংখ্যার অনুপাতে খুবই কম। আরেকটা কারণ হচ্ছে অভিবাসন। ট্র্যান্টরে যে পরিমাণ লোক আসছে চলে যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি।
বিশাল জনসংখ্যার কথা চিন্তা করলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেলডন। বললেন।
কিন্তু এটা অস্বাভাবিক। কারণ এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। তাছাড়া ব্যবসা বাণিজ্যেও স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে কোথাও কোনো বিদ্রোহ নেই, অরাজকতা নেই, গত কয়েক শতাব্দীর অস্থির সময়ের কোনো ছোঁয়া নেই। যত যাইহোক রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিদ্রোহ, অশান্তি বিশৃঙ্খলা একদিক দিয়ে গতিশীলতা, বহমান জীবনের নিদর্শন। এখন চারদিকে কেমন যেন ক্লান্তি। সবকিছুই শান্ত, সুস্থির। তার কারণ কিন্তু এই না যে মানুষ আসলে সন্তুষ্ট, তারা আসলে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে।
আমি কিছুই বলতে পারব না।
আমি পারি। এ্যান্টিগ্র্যাভিটি হলো একটা প্রমাণ। অল্প কয়েকটা গ্র্যাভিটিক লিফট বসানো হয়েছে, নতুন করে আরো বসানোর কোনো পদক্ষেপ নেই। পুরো প্রজেক্টটাই অলাভজনক পর্যায়ে চলে গেছে, অথচ মনে হচ্ছে লাভজনক করে তোলার আগ্রহ কারো নেই। কারিগরি অগ্রগতির হার গত এক শতাব্দী থেকে। কমতে কমতে এখন হামাগুড়ি দিয়ে চলার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই থেমে গেছে। এগুলো আপনি লক্ষ্য করেননি? আপনি তো একজন গণিতজ্ঞ।
লক্ষ্য করলেও কখনো কারণ নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি তা বলা যাবে না।
কেউই মাথা ঘামায়না। সবাই মেনে নিয়েছে। বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা একটা কথা বলতে খুব ভালোবাসেন–এটা করা অসম্ভব, অব্যবহারিক, অকার্যকর। তারা চিন্তা ভাবনা না করেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যেমন আপনি সাইকোহিস্টোরী। নিয়ে আপনি কী ভেবেছেন? কাগজে কলমে জিনিসটা মজাদার কিন্তু বাস্তবে পুরোপুরি অকার্যকর। ঠিক বলেছি?
হ্যাঁ এবং না। বিরক্ত সুরে বললেন সেলডন। বাস্তবে ব্যবহারের অনুপযোগী। তার কারণ এই না যে আমার ভেতরে আগ্রহের অভাব আছে বা আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি। আসলেই এটা অকাজের জিনিস।
এটাও যে ক্ষয়িষ্ণু সময়ের আবর্তে এম্পায়ার হাবুডুবু খাচ্ছে তারই প্রভাব। হামিনের কণ্ঠে তিরস্কার।
যে ক্ষয়িষ্ণু সময়ের কথা বলছেন, রাগের সাথে বললেন সেলডন, সেটা আপনার ধারণা। আপনার ভুলও তো হতে পারে?
এক মুহূর্ত চিন্তা করল হামিন। হতে পারে। সবটাই আমার অভিজ্ঞতা আর অনুমান। আসলে আমার দরকার সাইকোহিস্টোরীর একটা কার্যকরী কৌশল।
কাঁধ নাড়লেন সেলডন। আপনাকে দেওয়ার মতো এমন কোনো কৌশল আমার কাছে নেই। কিন্তু ধরা যাক আপনার অনুমান নির্ভুল, ভেঙ্গে যাচ্ছে এম্পায়ার। মানবজাতির অস্তিত্ব তারপরেও থাকবে।
কোন নিয়ম বা কাঠামোর অধীনে? প্রায় বারো হাজার বছর ধরে ট্রাক্টর শক্তিশালী শাসকদের অধীনে থেকে শান্তি বজায় রেখেছে। মাঝখানে অনেক বাধা এসেছে–বিদ্রোহ, স্থানীয় গৃহযুদ্ধ, আরো অনেক ঝড় ঝাপ্টা–কিন্তু সামগ্রিকভাবে এবং বিশাল এলাকা জুড়ে শান্তি বজায় রাখতে পেরেছিল। হ্যালিকন কেন এত বেশি প্রো-ইম্পেরিয়াম? আপনার নিজের গ্রহের কথা বলছি। কারণ এটা ছোট গ্রহ এবং প্রতিবেশীরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত যদি না এম্পায়ার তাকে নিরাপত্তা দিত।
আপনি বলতে চাইছেন এম্পায়ারের পতনের পর পুরো মহাবিশ্বে যুদ্ধ আর অরাজকতা ছড়িয়ে পড়বে?
অবশ্যই। সম্রাট বা ইম্পেরিয়াল ইনস্টিটিউশন আমি পছন্দ করি না, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার হাতে কোনো বিকল্প নেই। আমি জানি না কীভাবে শান্তি বজায় রাখা যাবে। তাই আমার হাতে বিকল্প কোনো উপায় না আসা পর্যন্ত আমি এটাকে ছেড়ে দিতে পারি না।
এমনভাবে কথা বলছেন যেন গ্যালাক্সির নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে। ছেড়ে দিতে পারি না। বিকল্প উপায় পেতে হবে। এভাবে কথা বলার আপনি কে?।